14/06/2025
"নীল অঞ্জনা"
বিকেলটা ছিল অদ্ভুত রকমের শান্ত। ধানমণ্ডির পুরনো গলিতে একখানা ছায়াঘেরা বাড়ি, জানালার পাশে বসে আছে অনিন্দিতা। তার সামনে রাখা চায়ের কাপ, ধোঁয়া উঠছে কিন্তু সে একফোঁটাও ছুঁয়ে দেখছে না। তার চোখদুটো যেন সময়ের ওপারে তাকিয়ে আছে, অতীতের কোনো এক চিলতে গল্পে।
নীল অঞ্জনা ছিল সেই গল্পেরই নাম।
একটা নাম, একটা মানুষ, আর একটা অসমাপ্ত ভালোবাসা।
অঞ্জনা তার কলেজ জীবনের সহপাঠী ছিল। কিন্তু সবার থেকে আলাদা। ধীরে কথা বলা, সোজা হাঁটা, বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা এক মেয়ে। তার পছন্দ ছিল নীল রঙ—শাড়ি হোক বা খাতা, সব কিছুতেই নীলের ছোঁয়া। তাই বন্ধুরা ভালোবেসেই ডাকত, নীল অঞ্জনা।
তাদের বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে গড়িয়েছিল অন্য এক দিকে। কোনো ঘোষণা ছিল না, তবু প্রতিটি দুপুরের আড্ডা, প্রতিটি হাতে লেখা চিঠি বলেছিল—ভালোবাসা জন্ম নিচ্ছে।
কিন্তু সময় তাদের অপেক্ষা করেনি।
স্নাতক শেষ হওয়ার আগেই অঞ্জনার পরিবার তাকে তুলে নিয়ে যায় শিলিগুড়ি।
কোনো ফোন নম্বর, কোনো ঠিকানা, কিছুই রেখে যায়নি।
অনিন্দিতা শুধু জেনেছিল, অঞ্জনা নাকি “ঠিকঠাক একটা জীবন” পেয়ে গেছে।
বছর দশেক কেটে গেছে আজ।
অনিন্দিতা এখন লেখিকা। তার প্রথম বইয়ের নাম—“নীল অঞ্জনা”।
গল্প নয়, স্মৃতিচারণ নয়—
এ যেন এক খোঁজ। প্রতিটি পাতায় সে ডেকে গেছে অঞ্জনাকে, যদি কোনো একদিন সে ফিরে আসে।
চায়ের কাপ ঠান্ডা হয়ে এসেছে।
জানালার পাশে বসে অনিন্দিতা এবার একটু হাসে।
হয়তো কোনো এক সকালে ডাকপিয়ন আসবে,
একটা খাম নিয়ে, যেটার প্রেরক লিখবে—
“তোমার নীল অঞ্জনা”।