22/05/2025
হরে কৃষ্ণ 💞শুভ সন্ধ্যা সবাইকে 🙏 আগামীকাল শুক্রবার একাদশী সবাইকে জানিয়ে দিলাম আসা করি পালন করা চেষ্টা করবেন।
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
পঞ্চম অধ্যায়: কর্মসন্ন্যাস-যোগ
শ্লোক নম্বর : ০১
অর্জুন উবাচ
সন্ন্যাসং কর্মণাং কৃষ্ণ পুনর্যোগং চ শংসসি।
যচ্ছ্রেয় এতয়োরেকং তন্মে ব্রূহি সুনিশ্চিতম্ ।।
অনুবাদঃ
অর্জুন বললেন- হে শ্রীকৃষ্ণ, প্রথমে তুমি আমাকে কর্মত্যাগ করতে বললে এবং তারপর ভক্তিযুক্ত কর্মের অনুষ্ঠান করতে বললে। এই দুটির মধ্যে কোনটি অধিক শ্রেয়স্কর, তা সুনিশ্চিতভাবে আমাকে বল।
শ্রীল প্রভুপাদকৃত প্রাঞ্জল তাৎপর্যঃ
ভগবদগীতার এই পঞ্চম অধ্যায়ে ভগবান বলছেন যে, শুষ্ক জ্ঞানের মানসিক জল্পনাকল্পনার থেকে কৃষ্ণভাবনাময় ভক্তিমূলক কর্ম শ্রেয়। ভক্তিযোগে ভগবানের সেবা শুষ্ক জল্পনাকল্পনার থেকে সহজতর, কারণ এই ধরনের কর্ম অপ্রাকৃত এবং তা সাধন করার ফলে মানুষ কর্মফলের প্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত হয়।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে আত্মার প্রাথমিক জ্ঞান এবং জড় দেহে তার বন্ধনের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। বুদ্ধিযোগ বা ভক্তিযোগের অনুশীলনের মাধ্যমে কিভাবে সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায়, তার ব্যাখ্যাও সেখানে করা হয়েছে।
তৃতীয় অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, যিনি জ্ঞানের স্তরে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, তাঁর পালন করার জন্য আর কোন কর্তব্যকর্ম থাকে না। আর চতুর্থ অধ্যায়ে ভগবান অর্জুনকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সব রকমের যজ্ঞের পরিসমাপ্তি হয় জ্ঞানে।
তবে চতুর্থ অধ্যায়ের শেষে ভগবান অর্জুনকে উপদেশ দিলেন পূর্ণজ্ঞানে অধিষ্ঠিত হয়ে ও মোহ থেকে মুক্ত হয়ে যুদ্ধ করতে। সুতরাং, এভাবে যুগপৎভাবে ভক্তিমূলক কর্মে নিয়োজিত হতে এবং জ্ঞানে অধিষ্ঠিত হয়ে কর্ম পরিহার করতে বলে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং অর্জুন তাঁর সঙ্কল্পে বিচলিত হয়ে পড়েছেন।
অর্জুন বুঝতে পেরেছেন যে, জ্ঞানের প্রভাবে কর্মত্যাগের অর্থ ইন্দ্রিয়গত সমস্ত কর্ম থেকে বিরত থাকা। কিন্তু ভক্তিযোগ সাধন করার মাধ্যমে যদি কর্ম করা হয়, তা হলে কর্মত্যাগ করা হল কি করে?
পক্ষান্তরে তিনি মনে করেন যে, জ্ঞানের প্রভাবে কর্মত্যাগ বা সন্ন্যাস হচ্ছে সব রকমের কর্ম থেকে বিরত হওয়া; কারণ কর্ম এবং ত্যাগ তাঁর কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। যেটি তিনি বুঝতে পারেননি সেটি হলো, পূর্ণজ্ঞানে অধিষ্ঠিত হয়ে সম্পাদিত কর্ম তার ফল থেকে মুক্ত এবং তাই তা অকর্মের মতোই। তাই তাঁর প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, তিনি কি সর্বতোভাবে কর্ম পরিত্যাগ করবেন, না পূর্ণজ্ঞানে অধিষ্ঠিত হয়ে কর্ম করবেন।
এখানে শ্রীল প্রভুপাদকৃত প্রাঞ্জল তাৎপর্য সমাপ্ত। .. হরে কৃষ্ণ 🙏 🌺
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা
পঞ্চম অধ্যায়: কর্মসন্ন্যাস-যোগ
শ্লোক নম্বর : ০২
শ্রীভগবানুবাচ-
সন্ন্যাসঃ কর্মযোগশ্চ নিঃশ্রেয়সকরাবুভৌ।
তয়োস্ত কর্মসন্ন্যাসাৎ কর্মযোগো বিশিষ্যতে ।।
📕📙 অনুবাদঃ
পরমেশ্বর ভগবান বললেন- কর্মসন্ন্যাস এবং কর্মযোগ উভয়ই মুক্তিদায়ক। কিন্তু এই দুটির মধ্যে কর্মযোগ কর্মসন্ন্যাস থেকে শ্রেয়।
📓📔 শ্রীল প্রভুপাদকৃত প্রাঞ্জল তাৎপর্যঃ
সকাম কর্ম (ইন্দ্রিয়তৃপ্তির উদ্দেশ্যে) মানুষকে জড় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। জীব যখন তার শারীরিক সুখস্বাচ্ছন্দ্যের মান উন্নত করার আশায় নানাবিধ কর্ম করে চলে, তখন সে নিশ্চিতভাবে তার কর্মের ফলস্বরূপ একটির পর একটি বিভিন্ন ধরনের দেহধারণ করে এই জড় জগতে ঘুরে বেড়ায় এবং তার ফলে তার জড় বন্ধন অনন্তকাল ধরেই চলতে থাকে।
সেই সম্বন্ধে শ্রীমদ্ভাগবতে (৫/৫/৪-৬) প্রতিপন্ন করে বলা হয়েছে-
নূনং প্রমত্তঃ কুরুতে বিকর্ম যদিন্দ্রিয়প্রীতয় আপূণোতি।
ন সাধু মন্যে যত আত্মনোহয়মসন্নপি ক্লেশদ আস দেহঃ ।।
পরাভবস্তাবদবোধজাতো যাবন্ন জিজ্ঞাসত আত্মতত্ত্বম্।
যাবৎ ক্রিয়াস্তাবদিদং মনো বৈ কর্মাত্মকং যেন শরীরবন্ধঃ ।।
এবং মনঃ কর্মবশং প্রযুক্তে অবিদ্যয়াত্মন্যুপধীয়মানে।
প্রীতির্ন যাবশ্বয়ি বাসুদেবে ন মুচ্যতে দেহযোগেন তাবৎ ।।
"ইন্দ্রিয়সুখভোগ করবার জন্য মানুষ উন্মাদ এবং সে জানে না যে, তার ক্লেশদায়ক বর্তমান দেহটি তার পূর্বকৃত সকাম কর্মের ফল। যদিও এই দেহটি অস্থায়ী,অথচ এটিই মানুষকে সর্বদা নানা রকম দুঃখকষ্ট প্রদান করছে। তাই জড় ইন্দ্রিয়সুখভোগ করবার আশায় কর্ম করা ভাল নয়। নিজের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে যে মানুষ কোনও অনুসন্ধান করে না, তার জীবন ব্যর্থ বলেই বিবেচনা করা হয়। যতদিন মানুষ প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে না পারে, ততদিন তাকে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের জন্য কর্মফলের আশায় কর্ম করতে হয় এবং যতদিন ইন্দ্রিয়সুখভোগ করবার বাসনায় তার চেতনা আচ্ছন্ন থাকে, ততদিন তাকে এক দেহ থেকে আর এক দেহে দেহান্তরিত হতে হয়। অজ্ঞানতার অন্ধকারে আচ্ছন্ন মন সকাম কর্মে নিবিষ্ট হতে পারে, কিন্তু মানুষের কর্তব্য ভক্তিযোগে বাসুদেবের প্রতি প্রেমময়ী সেবা সম্পাদন করা। কেবল তখনই সে এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হবার সুযোগ পেতে পারে।"
তাই জ্ঞানই (সে তার জড় দেহ নয়, তার প্রকৃত স্বরূপ হচ্ছে তার আত্মা) কেবল জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হবার পক্ষে যথেষ্ট নয়। আত্মার স্বরূপ উপলব্ধি করে আত্মার শাশ্বত ধর্ম পালন করতে হয়, তা না হলে জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হবার কোন উপায় নেই।
কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হয়ে ভগবানের সেবা করার জন্য যে কর্ম করা হয়, সেই কর্ম সকাম কর্ম নয়। জ্ঞানময় কর্ম মানুষের প্রকৃত জ্ঞানের প্রগতিকে শক্তিশালী করে। কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত না হয়ে কেবল সকাম কর্মত্যাগ করলেই বদ্ধজীবের হৃদয় কলুষমুক্ত হয় না। যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদয় সম্পূর্ণভাবে কলুষমুক্ত না হচ্ছে, ততক্ষণ সকাম কর্মের স্তরে কর্ম করতে হয়। কিন্তু কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম সাধিত হলে তা আপনা থেকেই কর্মফলের বন্ধন থেকে মানুষকে মুক্ত হতে সাহায্য করে এবং তখন তাকে আর জড় স্তরে পতিত হতে হয় না। তাই কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম সর্বদাই কর্মত্যাগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, কেননা কর্মত্যাগ থেকে সব সময়েই পতনের সম্ভাবনা থাকে।
কৃষ্ণভক্তিবিহীন বৈরাগ্য অপূর্ণ, যেটি শ্রীল রূপ গোস্বামী তাঁর ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে (১/২/২৫৬) প্রতিপন্ন করেছেন-
প্রাপঞ্চিকতয়া বুদ্ধ্যা হরিসম্বন্ধিবস্তুনঃ।
মুমুক্ষুভিঃ পরিত্যাগো বৈরাগ্যং ফন্তু কথ্যতে ।।
"মুমুক্ষুরা ভগবান সম্বন্ধীয় বস্তুকেও প্রাকৃত জ্ঞানে পরিত্যাগ করে এবং সেই ত্যাগ সম্পূর্ণ হয় না। এই ধরনের বৈরাগ্যকে 'ফল্গুবৈরাগ্য' বলা হয়।"
আমরা যখন বুঝতে পারি যে, সব কিছুই ভগবানের, আমাদের কিছুই নয়, তখনই ত্যাগের সম্পূর্ণতা আসে। মানুষের বোঝা উচিত, বাস্তবিকই কোন কিছুই তার নিজের নয়। তা হলে ত্যাগের প্রশ্ন আসে কোথা থেকে?
যে জানে সব কিছুই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের সম্পত্তি, সে নিত্য বৈরাগ্যযুক্ত। যেহেতু সব কিছুই শ্রীকৃষ্ণের, তাই সব কিছুই শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিয়োগ করা উচিত। শুদ্ধ কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হয়ে এই ধরনের যথার্থ কর্ম মায়াবাদী সন্ন্যাসীদের কৃত্রিম বৈরাগ্যের চেয়ে অনেক গুণে শ্রেষ্ঠ।
এখানেই শ্রীল প্রভুপাদকৃত প্রাঞ্জল তাৎপর্য সমাপ্ত।
হরে কৃষ্ণ।
শ্রীল প্রভুপাদ কী, জয়।
নিতাই-গৌর প্রেমানন্দে, হরিবোল।
『꧁○•★★ হরে কৃষ্ণ ★★•○꧂』 🙏