02/11/2025
অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরে পুনরায় চালু, এলাকাবাসীর ক্ষোভ
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে পরিবেশ দূষন করে তিন ফসলী জমি,স্কুল, মাদরাসা ও বসতবাড়ী পাশে লাইসেন্সবিহীন ও নিষিদ্ধ এলাকায় ইট প্রস্তত ও বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কারণে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ নামক অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে দেয় প্রশাসন। গুঁড়িয়ে দেওয়া অবৈধ ইটভাটাটি কোন অনুমোদন না নিয়ে ১১ মাস পরে পুনরায় চালু করে আবার ইট প্রস্তত ও নতুন বয়লার নির্মাণ করায় ক্ষোভ জানিয়ে এলাকাবাসী।
এলাবাসীর পক্ষ থেকে অবৈধ ইটভাটাটি পুনরায় চালু করে এলাকাবাসীর ক্ষতি হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়, কুমিল্লা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তরে আইননুসারে ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায় কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশনিগর ইউনিয়নের বসন্তপুর গ্রামে মা ব্রিকস এন্টারপ্রাইজ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্ত্বাধিকারী খোরশেদ আলম। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন" (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) এর ধারা ৪ ও ৮ অমান্য করে দীর্ঘদিন পরিবেশ দূষন করে লাইসেন্সবিহীন ও নিষিদ্ধ এলাকায় ইট প্রস্তত ও বিক্রয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। আইনের ৮ ধারা মতে, সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, আবাসিক এলাকা, ফসলি জমি, ফলজ ও বনজ বাগান থেকে ১০০০ মিটার বা ১ কিলোমিটারের মধে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিদিষ্ট দুরত্বের মধ্যে উপজেলার মনিকান্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, বসন্তপুর বাজার, সরকারী স্বাস্থ্য ক্লিনিক, ইটভাটার লাগোয়া আবাসিক ঘরবাড়ি ও ফসলি মাঠ রয়েছে। যা ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লা আঞ্চলিক অফিস তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা প্রাপ্ত হয়ে মা ব্রিকস ইটভাটা নামীয় ছাড়পত্র বাতিলের জন্য বিভাগীয় অফিসে সুপারিশ প্রেরণ করে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য ও আইনের তোয়াক্কা না করে ইটভাটাটি বেআইনীভাবে পরিচালনা করায় গত ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাকিয়া সরওয়ার লিমা, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খন্দকার মাহমুদ পাশা ও পরিদর্শক জোবায়ের হোসেন সহ অন্যান্য কর্মকর্তা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, পল্লি বিদ্যুৎ কর্মীদের সহযোগীতায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে এলাকার হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে বুলডোজার দিয়ে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় এবং ইটভাটার মালিককে নগদ ১,০০০০০ (একলক্ষ) টাকা জরিমানা করা হয়। ইটভাটার মালিক আইন আদালত তোয়াক্কা না করে গুঁড়িয়ে দেওয়া ইটভাটা পুনরায় একই স্থানে চালু করে নতুন বয়লার নির্মাণ সহ ইট তৈরীর কাজ করছে, এতে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা বসন্তপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হানু মিয়া জানান তিন ফসলী জমি, স্কুল, বাজার ও মাদরাসা মধ্যে অবৈধভাবে ইটভাটা প্রশাসন ভেঙে দেওয়ার পর কিভাবে আবার চালু করে আমরা জানিনা। এ ইটভাটা যাতে বন্ধ করা হয় আবারও প্রশাসনকে অনুরোধ জানাই।
শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন সরজমিনে এসে তদন্ত করেছে। মা বিকস নামক ইটভাটাটির কারণে স্কুল, মাদরাসার শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন অসুস্থ থাকে, জমিতে ফসল হয়না, আশেপাশের বাড়ির লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণে প্রশাসন এ ইটভাটা ভেঙে দিয়েছে বলেছে এ জায়গায় ইটভাটা করা যাবে না। অবৈধ এ ইটভাটা চালু হলে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হবে এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে মা ব্রিকসের স্বত্ত্বাধিকারী খোরশেদ আলম বলেল আমি হাইকোর্টের আদেশ নিয়ে ইটভাটা চালু করেছি। তবে আদেশ কাউকে দেখানো যাবে না।
কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব জানান চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের মা ব্রিকসের ইটভাটাটি পুনরায় চালু করার কোন অনুমতি নাই। অবৈধভাবে চালু করলে আবারও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামাল হোসেন বলেন উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়নের মা ব্রিকসের ইটভাটাটি অবৈধভাবে চালু করা হয়েছে এমন একটি অভিযোগ এলাকাবাসী কাছ থেকে পেয়েছি, অনুমতি ও বৈধ কাগজপত্র ছাড়া প্রশাসন গুড়িয়ে দেওয়া ইটভাটা চালু করার সুযোগ নেই।বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।