09/02/2018
আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৫খলিফার এক খলিফা বৃহত্তর কুমিল্লার সন্তান, জাতীয় বীর আব্দুল কুদ্দুস মাখন এর ২৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। আসুন আমরা আজকে এই বীরের একমাত্র সন্তান তারেক মাখন বাঘার কিছু লেখা পড়ি,,
১০ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮ আমার আব্বু জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন এর ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী । আপনারা সবাই আমার আব্বুর জন্য দোয়া করবেন।
"আমার বাবা আমার গর্ব,
আমার বাবা আমার অহংকার"
নিম্নে আব্বুর সংক্ষিপ্ত জীবনী দেওয়া হলো
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় বীর আবদুল কুদ্দুস মাখন ১৯৪৭ সালের ১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌড়াইল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মোহাম্মদ আবদুল আলী এবং মাতা মরহুমা আলহাজ্ব আমেনা খাতুন। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে জনাব মাখন ছিলেন তৃতীয়। তিনি শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।
স্কুল জীবনেই তাঁর ছাত্র রাজনীতির গোড়াপত্তন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার স্কুল ছাত্র/ছাত্রীদের সংগঠিত করে ছাত্র আন্দোলনে এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মোহাম্মদ হাই স্কুল থেকে ১ম বিভাগ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ক্লাশে ভর্তি হন। অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজে পরিচিত হয়ে উঠেন এবং ছাত্র লীগের নেতৃত্বে আসীন হন।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ছয় দফা আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রেখে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্র আন্দোলনকে গতিশীল করেন। তিনি ১৯৬৬-৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৮-৬৯ সালে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র নেতা হিসাবে ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯ সালে এম এ পাশ করে একই বৎসরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে তিনি সর্ব প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন ডাকসুর নেতৃত্বে গোটা ছাত্র সমাজকে ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করতে অসামান্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৭১ সালে গঠিত স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার সদস্যের অন্যতম এক সদস্য জনাব আবদুল কুদ্দুস মাখন। স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ঐতিহাসিক ভূমিকা বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে এ দেশের ছাত্রজনতা সুসংগঠিত হয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করার কাজে অতি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ২রা মার্চ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সম্মুখে সর্ব প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় এবং ৩ রা মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মুখে রেখে পল্টন ময়দানের ঐতিহাসিক ছাত্র জনসভায় স্বাধীনতার প্রথম ইস্তেহার পাঠ করা হয় এবং এই ইস্তেহারেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি ও বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক ঘোষণা করা হয়। ২৩ শে মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন পূর্বক অভিবাদন প্রদান করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলার পতাকা উপহার দেয়া হয়।
জনাব মাখন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র সমাজের নেতৃত্ব দান করেন। এই অসহযোগ আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে সুসংগঠিত করার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। ৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে মহান মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রদান করেন। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার (চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিল্লা, নোয়াখালী এবং ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে গঠিত) সকল শ্রেণীর মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটমেন্ট, ট্রেনিং ও অস্ত্র সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পূর্বাঞ্চলীয় লিবারেশন কাউন্সিলের ছাত্রনেতা ছিলেন।
ইতিহাস লিখে শেষ করতে পারবো না আমার বাবার। প্রিয় কুমিল্লাবাসী, আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।
ধন্যবান্তে,
তারেক মাখন বাঘা।