islamic daowah

islamic daowah আমরা আল্লাহরই এবং অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। follow দিয়ে সাথে থাকুন নতুন নতুন ইসলামি পোস্ট পেতে

কোন সিনেমার দৃশ্য নয় 💔🇵🇸প্যালেস্টাইন 🙂
07/11/2024

কোন সিনেমার দৃশ্য নয় 💔🇵🇸
প্যালেস্টাইন 🙂

- সময় যার যখন আসবে ঠিক সেই সময়েই আল্লাহ পাকড়াও করবে, সবার উপরে সত্য।
24/08/2024

- সময় যার যখন আসবে ঠিক সেই সময়েই আল্লাহ পাকড়াও করবে, সবার উপরে সত্য।

পার্ট (৬) সংশয় নিরসন(১) দাঊদ (আঃ)-এর উপরে প্রদত্ত তোহমত : ছোয়াদ ২৪ : وَظَنَّ دَاوُوْدُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ ‘দাঊদ ধারণা ক...
08/12/2023

পার্ট (৬) সংশয় নিরসন
(১) দাঊদ (আঃ)-এর উপরে প্রদত্ত তোহমত : ছোয়াদ ২৪ : وَظَنَّ دَاوُوْدُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ ‘দাঊদ ধারণা করল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করছি’। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে, أوقعناه في قةنة أى بلية بمحبةه ةلك المرأة ‘অর্থাৎ উক্ত মহিলার প্রতি আসক্তির মাধ্যমে আমি তাকে পরীক্ষায় ফেলেছি’। ভিত্তিহীন এই তাফসীরের মাধ্যমে নবীগণের উচ্চ মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। বিশেষ করে দাঊদ (আঃ)-এর মত একজন মহান রাসূলের উপরে পরনারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার অমার্জনীয় তোহমত আরোপ করা হয়েছে। অথচ এটি পরিষ্কারভাবে ইহুদী-নাছারাদের বানোয়াট গল্প ব্যতীত কিছুই নয়। যারা তাদের নবীদের বিরুদ্ধে চুরি, যেনা ও অনুরূপ অসংখ্য নোংরা তোহমত লাগিয়েছে ও হাযার হাযার নবীকে হত্যা করেছে (বাক্বারাহ ৯১)। তাদের রচিত তথাকথিত তওরাত-ইঞ্জীল সমূহ (বাক্বারাহ ৭৯) এ ধরনের কুৎসায় ভরপুর হয়ে আছে।

(২) একই সূরায় ২২ আয়াতের ব্যাখ্যায় মাননীয় তাফসীরকার বর্ননা করেছেন যে, দাঊদ (আঃ)-এর ৯৯ জন স্ত্রী ছিল। অথচ তিনি অন্যজনের একমাত্র স্ত্রীকে তলব করেন এবং তাকে বিবাহ করেন ও তার সাথে সহবাস করেন’ (নাঊযুবিল্লাহ)। একাজটি যে অন্যায় ছিল, সেটা বুঝানোর জন্য দু’জন ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে বাদী-বিবাদী সেজে অতর্কিতভাবে তাঁর এবাদতখানায় প্রবেশ করে। অতঃপর বিবাদী তাকে বলে যে, সে আমার ভাই। সে ৯৯টি দুম্বার মালিক আর আমি মাত্র একটি দুম্বার মালিক। এরপরেও সে বলে এটি আমাকে দিয়ে দাও এবং কথাবার্তায় আমার উপরে কঠোরতা আরোপ করে’ (ছোয়াদ ২৩)। দাঊদ (আঃ) এটিকে অন্যায় হিসাবে বর্ণনা বর্ণনা করলেন। অতঃপর তিনি বুঝতে পারলেন যে, এর মাধ্যমে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়েছে। ফলে তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন ও সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন, যা ২৪ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
এ ঘটনাটিকে সাদা চোখে দেখলে একেবারেই স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে হয় হবে, যা সাধারণতঃ যেকোন বিচারকের নিকটে বা রাজদরবারে হয়ে থাকে। অথচ কাল্পনিকভাবে দু’জনকে ফেরেশতা সাজিয়ে ও দুম্বাকে স্ত্রী কল্পনা করে তাফসীরের নামে রসালো গল্প পরিবেশন করা হয়েছে।
প্রশ্ন হতে পারে, তাহলে দাঊদ (আঃ)-এর ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণ কি?
জবাব এই যে, দাঊদ (আঃ) আল্লাহর ইবাদতের জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করেছিলেন। ঐ সময়টুকু তিনি কেবল ইবাদতেই রত থাকতেন। কিন্তু হঠাৎ পাঁচিল টপকিয়ে দু’জন অপরিচিত লোক ইবাদতখানায় প্রবেশ করায় তিনি ভড়কে যান। কিন্তু পরে তাদের বিষয়টি বুঝতে পারেন ও ফায়ছালা করে দেন। তাদের থেকে ভীত হওয়ার বিষয়টি যদিও কোন দোষের ব্যাপার ছিল না, তবুও এটাকে তিনি আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুলের খেলাফ মনে করে লজ্জিত হন এবং বুঝতে পারেন যে, এই ঘটনার দ্বারা আল্লাহ তাঁর তাওয়াক্কুলের পরীক্ষা নিলেন। দ্বিতীয়তঃ অধিক ইবাদতের কারণে প্রজাস্বার্থের ক্ষতি হচ্ছে মনে করে তিনি লজ্জিত হন এবং এজন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।

part (5) দাউদ (আঃ)-এর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাবলী(১) ছাগপাল ও শস্যক্ষেতের মালিকের বিচার:━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ইমাম বাগাভী হযরত ...
07/12/2023

part (5) দাউদ (আঃ)-এর জীবনের স্মরণীয় ঘটনাবলী
(১) ছাগপাল ও শস্যক্ষেতের মালিকের বিচার:
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
ইমাম বাগাভী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস, ক্বাতাদাহ ও যুহরী থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা দু’জন লোক হযরত দাঊদের নিকটে একটি বিষয়ে মীমাংসার জন্য আসে। তাদের একজন ছিল ছাগপালের মালিক এবং অন্যজন ছিল শস্য ক্ষেতের মালিক। শস্যক্ষেতের মালিক ছাগপালের মালিকের নিকট দাবী পেশ করল যে, তার ছাগপাল রাত্রিকালে আমার শস্যক্ষেতে চড়াও হয়ে সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট করে দিয়েছে। আমি এর প্রতিকার চাই। সম্ভবতঃ শস্যের মূল্য ও ছাগলের মূল্যের হিসাব সমান বিবেচনা করে হযরত দাঊদ (আঃ) শস্যক্ষেতের মালিককে তার বিনষ্ট ফসলের বিনিময় মূল্য হিসাবে পুরা ছাগপাল শস্যক্ষেতের মালিককে দিয়ে দিতে বললেন। বাদী ও বিবাদী উভয়ে বাদশাহ দাঊদ-এর আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় দরজার মুখে পুত্র সুলায়মানের সাথে দেখা হয়। তিনি মোকদ্দমার রায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা সব খুলে বলল। তিনি পিতা দাঊদের কাছে গিয়ে বললেন, আমি রায় দিলে তা ভিন্নরূপ হ’ত এবং উভয়ের জন্য কল্যাণকর হ’ত’। অতঃপর পিতার নির্দেশে তিনি বললেন, ছাগপাল শস্যক্ষেতের মালিককে সাময়িকভাবে দিয়ে দেওয়া হউক। সে এগুলোর দুধ, পশম ইত্যাদি দ্বারা উপকার লাভ করুক। পক্ষান্তরে শস্যক্ষেতটি ছাগপালের মালিককে অর্পণ করা হউক। সে তাতে শস্য উৎপাদন করুক। অতঃপর শস্যক্ষেত্র যখন ছাগপালে বিনষ্ট করার পূর্বের অবস্থায় পৌঁছে যাবে, তখন তা ক্ষেতের মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হবে এবং ছাগপাল তার মালিককে ফেরৎ দেওয়া হবে’। হযরত দাঊদ (আঃ) রায়টি অধিক উত্তম গণ্য করে সেটাকেই কার্যকর করার নির্দেশ দেন। এই ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেন,
وَدَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ إِذْ يَحْكُمَانِ فِي الْحَرْثِ إِذْ نَفَشَتْ فِيهِ غَنَمُ الْقَوْمِ وَكُنَّا لِحُكْمِهِمْ شَاهِدِينَ- فَفَهَّمْنَاهَا سُلَيْمَانَ وَكُلاًّ آتَيْنَا حُكْماً وَّعِلْماً- (الأنبياء ৭৮-৭৯)-
‘আর স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানকে, যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করেছিল, যাতে রাত্রিকালে কারু মেষপাল ঢুকে পড়েছিল। আর তাদের বিচারকার্য আমার সম্মুখেই হচ্ছিল’। ‘অতঃপর আমি সুলায়মানকে মোকদ্দমাটির ফায়ছালা বুঝিয়ে দিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম’ (আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)।
বস্ত্ততঃ উভয়ের রায় সঠিক ও সুধারণা প্রসূত ছিল। কিন্তু অধিক উত্তম বিবেচনায় হযরত দাঊদ স্বীয় পুত্রের দেওয়া পরামর্শকেই কার্যকর করার নির্দেশ দেন। আর সেকারণেই আল্লাহ উভয়কে সমগুণে ভূষিত করে বলেছেন যে, ‘আমি উভয়কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করেছি’। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, বিচারক উত্তম মনে করলে তার পূর্বের রায় বাতিল করে নতুন রায় প্রদান করতে পারেন।

(২) ইবাদত খানায় প্রবেশকারী বাদী-বিবাদীর বিচার:
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
হযরত দাঊদ (আঃ) যেকোন ঘটনায় যদি বুঝতেন যে, এটি আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা, তাহলে তিনি সাথে সাথে আল্লাহর দিকে রুজু হতেন ও ক্ষমা প্রার্থনায় রত হতেন। এরই একটি উদাহরণ বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতগুলিতে। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَهَلْ أَتَاكَ نَبَأُ الْخَصْمِ إِذْ تَسَوَّرُوا الْمِحْرَابَ- إِذْ دَخَلُوْا عَلَى دَاوُودَ فَفَزِعَ مِنْهُمْ قَالُوْا لاَ تَخَفْ خَصْمَانِ بَغَى بَعْضُنَا عَلَى بَعْضٍ فَاحْكُم بَيْنَنَا بِالْحَقِّ وَلاَ تُشْطِطْ وَاهْدِنَا إِلَى سَوَاءِ الصِّرَاطِ- إِنَّ هَذَا أَخِيْ لَهُ تِسْعٌ وَتِسْعُوْنَ نَعْجَةً وَلِيَ نَعْجَةٌ وَاحِدَةٌ فَقَالَ أَكْفِلْنِيْهَا وَعَزَّنِيْ فِي الْخِطَابِ- قَالَ لَقَدْ ظَلَمَكَ بِسُؤَالِ نَعْجَتِكَ إِلَى نِعَاجِهِ وَإِنَّ كَثِيْراً مِّنَ الْخُلَطَاءِ لَيَبْغِيْ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ إِلاَّ الَّذِيْنَ آمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَقَلِيْلٌ مَّا هُمْ وَظَنَّ دَاوُودُ أَنَّمَا فَتَنَّاهُ فَاسْتَغْفَرَ رَبَّهُ وَخَرَّ رَاكِعاً وَّأَنَابَ- فَغَفَرْنَا لَهُ ذَلِكَ وَإِنَّ لَهُ عِنْدَنَا لَزُلْفَى وَحُسْنَ مَآبٍ (ص ২১-২৫)-
‘আপনার কাছে কি সেই বাদী-বিবাদীর খবর পৌঁছেছে, যখন তারা পাঁচিল টপকিয়ে দাঊদের ইবাদতখানায় ঢুকে পড়েছিল’? (ছোয়াদ ২১) ‘যখন তারা দাঊদের কাছে অনুপ্রবেশ করল এবং দাঊদ তাদের থেকে ভীত হয়ে পড়ল, তখন তারা বলল, আপনি ভয় পাবেন না, আমরা দু’জন বিবদমান পক্ষ। আমরা একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করেছি। অতএব আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করুন, অবিচার করবেন না। আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করুন’ (২২)। ‘(বিষয়টি এই যে,) সে আমার ভাই। সে ৯৯টি দুম্বার মালিক আর আমি মাত্র একটি মাদী দুম্বার মালিক। এরপরও সে বলে যে, এটি আমাকে দিয়ে দাও। সে আমার উপরে কঠোর ভাষা প্রয়োগ করে’ (২৩)। ‘দাঊদ বলল, সে তোমার দুম্বাটিকে নিজের দুম্বাগুলির সাথে যুক্ত করার দাবী করে তোমার প্রতি অবিচার করেছে। শরীকদের অনেকে একে অপরের প্রতি বাড়াবাড়ি করে থাকে, কেবল তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। অবশ্য এরূপ লোকের সংখ্যা কম। (অত্র ঘটনায়) দাঊদ ধারণা করল যে, আমি তাকে পরীক্ষা করছি। অতঃপর সে তার পালনকর্তার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়ল ও আমার দিকে প্রণত হল’ (২৪)। অতঃপর আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। নিশ্চয়ই তার জন্য আমার নিকটে রয়েছে নৈকট্য ও সুন্দর প্রত্যাবর্তন স্থল’ (ছোয়াদ ৩৮/২১-২৫)।
উপরোক্ত পাঁচটি আয়াতে বা অন্য কোথাও এরূপ কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি যে, সে পরীক্ষা কি ছিল, দাঊদ (আঃ) কি ভুল করেছিলেন, যে কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন এবং যা আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ফলে সেই প্রাচীন যুগের কোন ঘটনার ব্যাখ্যা নবী ব্যতীত অন্য কারু পক্ষে এ যুগে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে যেটাই বলা হবে, তাতে ভ্রান্তির আশংকা থেকেই যাবে। কিন্তু পথভ্রষ্ট ইহুদী পন্ডিতেরা তাদের স্বগোত্রীয় এই মর্যাদাবান নবীর উক্ত ঘটনাকে এমন নোংরাভাবে পেশ করেছে, যা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। বলা হয়েছে, দাঊদ (আঃ)-এর নাকি ৯৯ জন স্ত্রী ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি তাঁর এক সৈন্যের স্ত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন। অতঃপর উক্ত সৈনিককে হত্যা করে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আল্লাহ দু’জন ফেরেশতাকে বাদী ও বিবাদীর বেশে পাঠিয়ে তাকে শিক্ষা দেন (নাঊযুবিল্লাহ)।

(৩) শনিবার ওয়ালাদের পরিণতি:
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
বনু ইস্রাঈলদের জন্য শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট ও পবিত্র দিন। এ দিন তাদের জন্য মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ ছিল। তারা সমুদ্রোপকুলের বাসিন্দা ছিল এবং মৎস্য শিকার ছিল তাদের পেশা। ফলে দাঊদ (আঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই তারা ঐদিন মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তাদের উপরে আল্লাহর পক্ষ হ’তে ‘মস্খ’ বা আকৃতি পরিবর্তনের শাস্তি নেমে আসে এবং তিনদিনের মধ্যেই তারা সবাই মৃত্যু মুখে পতিত হয়। ঘটনাটি পবিত্র কুরআনে নিম্নরূপে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ মদীনার ইহুদীদের উদ্দেশ্যে বলেন,
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِيْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خَاسِئِيْنَ- فَجَعَلْنَاهَا نَكَالاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ- (البقرة ৬৫-৬৬)-
‘আর তোমরা তো তাদেরকে ভালভাবে জানো, যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লংঘন করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও’। ‘অতঃপর আমি এ ঘটনাকে তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীদের জন্য দৃষ্টান্ত হিসাবে এবং আল্লাহভীরুদের জন্য উপদেশ হিসাবে রেখে দিলাম’ (বাক্বারাহ ২/৬৫-৬৬)।
তাফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে যে, ইহুদীরা প্রথমে গোপনে ও বিভিন্ন কৌশলে এবং পরে ব্যাপকভাবে নিষিদ্ধ দিনে মৎস্য শিকার করতে থাকে। এতে তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে যায়। সৎ ও বিজ্ঞ লোকেরা একাজে বাধা দেন। অপরদল বাধা অমান্য করে মাছ ধরতে থাকে। ফলে প্রথম দলের লোকেরা শেষোক্তদের থেকে পৃথক হয়ে যান। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমনকি তাদের বাসস্থানও পৃথক করে নেন। একদিন তারা অবাধ্যদের এলাকায় চরম নীরবতা লক্ষ্য করেন। অতঃপর তারা সেখানে পৌঁছে দেখলেন যে, সবাই বানর ও শূকরে পরিণত হয়ে গেছে। ক্বাতাদাহ বলেন যে, বৃদ্ধরা শূকরে এবং যুবকেরা বানরে পরিণত হয়েছিল। রূপান্তরিত বানরেরা নিজ নিজ আত্মীয়-স্বজনকে চিনতে পেরেছিল এবং তাদের কাছে গিয়ে অঝোর নয়নে অশ্রু বিসর্জন করেছিল।
উক্ত বিষয়ে সূরা আ‘রাফের ১৬৪-৬৫ আয়াতের বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, সেখানে তৃতীয় আরেকটি দল ছিল, যারা উপদেশ দানকারীদের উপদেশ দানে বিরত রাখার চেষ্টা করত। বাহ্যতঃ এরা ছিল শান্তিবাদী এবং অলস ও সুবিধাবাদী। এরাও ফাসেকদের সাথে শূকর-বানরে পরিণত হয় ও ধ্বংস হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَإِذَ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْماً اَللهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَاباً شَدِيداً، قَالُوْا مَعْذِرَةً إِلَى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ- فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوْا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوْا يَفْسُقُونَ- (الأعراف ১৬৪-১৬৫)-
‘আর যখন তাদের মধ্যকার একদল বলল, কেন আপনারা ঐ লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন, যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দিতে চান কিংবা তাদের আযাব দিতে চান কঠিন আযাব? ঈমানদারগণ বলল, তোমাদের পালনকর্তার নিকট ওযর পেশ করার জন্য এবং এজন্য যাতে ওরা সতর্ক হয়’। ‘অতঃপর তারা যখন উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি সেসব লোকদের মুক্তি দিলাম, যারা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করত এবং পাকড়াও করলাম যালেমদেরকে নিকৃষ্ট আযাবের মাধ্যমে তাদের পাপাচারের কারণে’ (আ‘রাফ ৭/১৬৪-৬৫)।
এতে স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধকারীদের পক্ষাবলম্বন না করে নিরপেক্ষতা অবলম্বনকারী ব্যক্তিগণ যালেম ও ফাসেকদের সাথেই আল্লাহর গজবে ধ্বংস হবে। অতএব হকপন্থীদের জন্য জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকার ব্যতীত অন্য কোন পথ খোলা নেই।
সহীহ মুসলিমে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসূল! এ যুগের বানর-শূকরগুলো কি সেই আকৃতি পরিবর্তিত ইহুদী সম্প্রদায়? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন, কিংবা তাদের উপরে আকৃতি পরিবর্তনের আযাব নাযিল করেন, তখন তাদের বংশধারা থাকে না। আর বানর-শূকর পৃথিবীতে পূর্বেও ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।[মুসলিম, ‘তাক্বদীর’ অধ্যায় হা/৬৭৭০] ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, তারা খায় না, পান করে না এবং তিন দিনের বেশী বাঁচে না।[কুরতুবী, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ৬৫, পৃ: ১/৪৭৯]
তালূতের পরে বনু ইস্রাঈলগণের অবস্থা ক্রমেই শোচনীয় পর্যায়ে চলে যায়। যালেম বাদশাহদের দ্বারা তারা শাম দেশ হতে বিতাড়িত হয়। বিশেষ করে পারস্যরাজ বুখতানছর যখন তাদেরকে শাম থেকে বহিষ্কার করলেন, তখন তাদের একদল হেজাযে গিয়ে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিল। এই উদ্দেশ্যে যে, আমরা দাঊদ ও সুলায়মানের নির্মিত বায়তুল মুক্বাদ্দাস হারিয়েছি। ফলে এক্ষণে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষ ইবরাহীম-ইসমাঈলের নির্মিত কা‘বা গৃহের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। যাতে আমরা বা আমাদের বংশধররা শেষনবীর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়। সেমতে তারা আরবে হিজরত করে এবং ইয়াছরিবে বসবাস শুরু করে।

পার্ট(4) দাউদ (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহআল্লাহ প্রত্যেক নবীকে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। সেমতে দাঊদ (আঃ)-কে প্রদত্...
06/12/2023

পার্ট(4) দাউদ (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য সমূহ

আল্লাহ প্রত্যেক নবীকে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। সেমতে দাঊদ (আঃ)-কে প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নে বিবৃত হল।-

১. আল্লাহ দাঊদ (আঃ)-কে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান করে সৃষ্টি করেছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَاذْكُرْ عَبْدَنَا دَاوُودَ ذَا الْأَيْدِ إِنَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৭)- ‘স্মরণ কর, আমার বান্দা দাঊদকে। সে ছিল শক্তিশালী এবং আমার প্রতি সদা প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৭)। আয়াতের প্রথমাংশে তাঁর দৈহিক ও দুনিয়াবী শাসন শক্তির কথা বলা হয়েছে এবং শেষাংশে তাঁর আধ্যাত্মিক শক্তির কথা বলা হয়েছে। এজন্য যে, বিরাট ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহ হওয়া সত্ত্বেও তিনি সর্বদা আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। সকল কাজে তাঁর দিকেই ফিরে যেতেন।
বুখারী ও মুসলিমের এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকটে সর্বাধিক পসন্দনীয় সালাত হ’ল দাঊদ (আঃ)-এর সালাত এবং সর্বাধিক পসন্দনীয় সিয়াম ছিল দাঊদ (আঃ)-এর সিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ সালাতে কাটাতেন এবং শেষ ষষ্টাংশে নিদ্রা যেতেন। তিনি একদিন অন্তর একদিন সিয়াম রাখতেন। শত্রুর মোকাবিলায় তিনি কখনো পশ্চাদপসরণ করতেন না’।[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১২২৫]

২. পাহাড় ও পক্ষীকুল তাঁর অনুগত ছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ- وَالطَّيْرَ مَحْشُوْرَةً، كُلٌّ لَّهُ أَوَّابٌ-(ص ১৮-১৯)-
‘আমি পর্বতমালাকে তার অনুগত করে দিয়েছিলাম। তারা সকাল-সন্ধ্যায় তার সাথে পবিত্রতা বর্ণনা করত’। ‘আর পক্ষীকুলকেও, যারা তার কাছে সমবেত হত। সবাই ছিল তার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/১৮-১৯)। একই মর্মে বক্তব্য এসেছে সূরা সাবা ১০ আয়াতে। অন্যদিকে আল্লাহ দাঊদ-পুত্র সুলায়মানের অধীনস্ত করে দিয়েছিলেন বায়ুকে ও জিনকে। পাহাড় ও পক্ষীকুল হযরত দাঊদ (আঃ)-এর কিভাবে আনুগত্য করত- সে বিষয়ে কোন বক্তব্য কুরআনে আসেনি। তাফসীরবিদগণ নানাবিধ সম্ভাবনা ব্যক্ত করেছেন। আমরা সেগুলিকে এড়িয়ে গেলাম। কেননা ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন, أَبْهِمُوا مَا أَبْهَمَهُ اللهُ ‘আল্লাহ যে বিষয়কে অস্পষ্ট রেখেছেন, তোমরাও তাকে অস্পষ্ট থাকতে দাও’।[বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/৪৩৮৮]

৩, ৪ ও ৫. তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সুদৃঢ় সাম্রাজ্য, গভীর প্রজ্ঞা ও অনন্য বাগ্মিতা। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَشَدَدْنَا مُلْكَهُ وَآتَيْنَاهُ الْحِكْمَةَ وَفَصْلَ الْخِطَابِ-(ص ২০)- ‘আমি তার সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় করেছিলাম এবং তাকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও ফায়ছালাকারী বাগ্মিতা’ (ছোয়াদ ৩৮/২০)। উল্লেখ্য, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) ও ইমাম শাবী বলেন যে, ‘তিনিই সর্বপ্রথম বক্তৃতায় হাম্দ ও সালাতের পর أما بعد (‘অতঃপর’) শব্দ যুক্ত করেন’।[1] পূর্বেই আমরা বলেছি যে, তাঁর এই সাম্রাজ্য ছিল শাম ও ইরাক ব্যাপী। যা আধুনিক সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ফিলিস্তীন ও ইরাককে শামিল করে। আল্লাহ বলেন,
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيْفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ إِنَّ الَّذِيْنَ يَضِلُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِ اللهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيْدٌ بِمَا نَسُوْا يَوْمَ الْحِسَابِ-(ص ২৬)-
‘হে দাঊদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে খলীফা করেছি। অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গত ফায়ছালা কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর না। তাহলে তা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়’ (ছোয়াদ ৩৮/২৬)।

৬. লোহাকে আল্লাহ তাঁর জন্য নরম করে দিয়েছিলেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلاً يَا جِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَهُ وَالطَّيْرَ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ- أَنِ اعْمَلْ سَابِغَاتٍ وَقَدِّرْ فِي السَّرْدِ وَاعْمَلُوْا صَالِحاً إِنِّيْ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِيْرٌ- (سبا ১০-১১)-
‘এবং আমি তার জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম’ ‘এবং তাকে বলেছিলাম প্রশস্ত বর্ম তৈরী কর ও কড়াসমূহ যথাযথভাবে সংযুক্ত কর এবং তোমরা সৎকর্ম সম্পাদন কর। তোমরা যা কিছু কর, তা আমি দেখে থাকি’ (সাবা ৩৪/১০-১১)।
উল্লেখ্য যে, হযরত দাঊদ (আঃ) একজন দক্ষ কর্মকার ছিলেন। বিশেষ করে শত্রুর মোকাবিলার জন্য উন্নত মানের বর্ম নির্মাণে তিনি ছিলেন একজন কুশলী কারিগর। যা বিক্রি করে তিনি সংসার যাত্রা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিজের ভরণপোষণের জন্য কিছুই নিতেন না। যদিও সেটা নেওয়া কোন দোষের ছিল না। এখানে লোহাকে বাস্তবে মোমের মত নরম করার প্রকাশ্য অর্থ নিলে সেটা হবে তাঁর জন্য মু‘জেযা স্বরূপ, যা মোটেই অসম্ভব নয়। অবশ্য নরম করে দেওয়ার অর্থ লোহাকে সহজে ইচ্ছামত রূপ দেওয়ার ও উন্নতমানের নির্মাণ কৌশল শিক্ষাদানও হ’তে পারে। যেমন অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوْسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُمْ مِّنْ بَأْسِكُمْ فَهَلْ أَنْتُمْ شَاكِرُوْنَ-(الأنبياء ৮০)-
‘আর আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা যুদ্ধের সময় তোমাদেরকে রক্ষা করে। অতএব তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? (আম্বিয়া ২১/৮০)।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, ভারতবর্ষের বাদশাহ আওরঙ্গযেব (১৬৫৮-১৭০৭ খৃ:) নিজ হাতে টুপী সেলাই করে তা বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কিছুই নিতেন না। বস্ত্ততঃ নবী-রাসূলগণই ছিলেন সকল উন্নত চরিত্রের পথিকৃৎ।

৭. আল্লাহ পাক দাঊদকে নবুঅত দান করেন এবং তাকে এলাহী কিতাব ‘যবূর’ দান করে কিতাবধারী রাসূলের মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। যেমন তিনি বলেন, -وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوْراً ‘আমি দাঊদকে ‘যবূর’ প্রদান করেছিলাম’ (নিসা ৪/১৬৩)। হযরত দাঊদকে যে আল্লাহ অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করছিলেন, সেটা যেন যবূরের ভবিষ্যদ্বাণীরই বাস্তব রূপ। কেননা যবূরে আল্লাহ তাঁর সৎকর্মশীল বান্দাদেরকে পৃথিবীর অধিকারী হওয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُوْنَ-(الأنبياء ১০৫)-
‘আমি বিভিন্ন উপদেশের পর যবূরে একথা লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’ (আম্বিয়া ২১/১০৫)।

৮. তাঁকে অপূর্ব সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছিল। যখন তিনি যবূর তেলাওয়াত করতেন, তখন কেবল মানুষ নয়, পাহাড় ও পক্ষীকুল পর্যন্ত তা একমনে শুনত। এ দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ آتَيْنَا دَاوُودَ مِنَّا فَضْلاً يَا جِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَهُ وَالطَّيْرَ وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ- (سبا ১০)-
‘আমি দাঊদের প্রতি আমার পক্ষ হতে অনুগ্রহ প্রদান করেছিলাম এই মর্মে আদেশ দান করে যে, হে পর্বতমালা! তোমরা দাঊদের সাথে বারবার তাসবীহ সমূহ আবৃত্তি কর এবং (একই নির্দেশ দিয়েছিলাম আমি) পক্ষীকুলকেও ...’ (সাবা ৩৪/১০)। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করে দিয়েছে যে, পাহাড় ও মাটির এক ধরনের জীবন রয়েছে, যা তাদের জন্য উপযোগী।[2] এ বিষয়টি আল্লাহ অন্যত্র বলেন এভাবে,
وَسَخَّرْنَا مَعَ دَاوُودَ الْجِبَالَ يُسَبِّحْنَ وَالطَّيْرَ وَكُنَّا فَاعِلِيْنَ-(الأنبياء ৭৯)-
‘আমি পাহাড়কে ও পক্ষীকুলকে দাঊদের অনুগত করে দিয়েছিলাম, তারা তাসবীহ পাঠ করত এবং আমি এটা করে থাকি’ (আম্বিয়া ২১/৭৯)।
অতএব দাঊদের কণ্ঠস্বর শোনা, তাঁর অনুগত হওয়া ও আল্লাহর বাণী যবূরের আয়াতসমূহের প্রতি মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা পাহাড় ও পক্ষীকুলের জন্য মোটেই আশ্চর্যের বিষয় নয়। শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্য বনের পশু, পাহাড়, বৃক্ষ তাঁর সামনে মাথা নুইয়েছে ও ছায়া করেছে, এমনকি স্বস্থান থেকে উঠে এসে বৃক্ষ তাঁর সম্মুখে দাঁড়িয়েছে, এগুলি সব চাক্ষুষ ঘটনা।[3] একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তাঁর তিন সাথী আবুবকর, উমর ও উসমান একটি পাহাড়ে উঠলেন। তখন পাহাড়টি কাঁপতে শুরু করল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাহাড়টিকে ধমক দিয়ে বললেন, স্থির হও! তোমার উপরে আছেন একজন নবী, একজন ছিদ্দীক্ব ও দুজন শহীদ’।[4] এর দ্বারা উদ্ভিদ ও পর্বতের জীবন ও অনুভূতি প্রমাণিত হয়। অতএব আল্লাহর অপর নবী দাঊদ (আঃ)-এর জন্য পাহাড়, পক্ষী, লৌহ ইত্যাদি অনুগত হবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। যদিও বস্ত্তবাদীরা চিরকাল সন্দেহের অন্ধকারে থেকেছে, আজও থাকবে। আল্লাহর রহমত না হ’লে ওরা অন্ধকারের ক্রিমিকীট হয়েই মরবে।

[1]. কুরতুবী বলেন, ‘যদি উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়, তবে সেটি ছিল দাঊদ (আঃ)-এর নিজের ভাষায়, আরবী ভাষায় নয়’ (ঐ, তাফসীর ছোয়াদ ২০)।
[2]. দ্রঃ হামীম সাজদাহ ৪১/১১; মুহাম্মাদ আবদুর রহীম, স্রষ্টা ও সৃষ্টিতত্ত্ব (ই,ফা,বা, ২০০৩) পৃঃ ৩৫৭, ৩৮৬-৮৯।
[3]. তিরমিযী, শারহুস সুন্নাহ, দারেমী, মিশকাত হা/৫৯১৮, ২২,২৪-২৬ ‘মো‘জেযা’ অনুচ্ছেদ-৯।
[4]. তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৬০৬৬ ‘উসমানের মর্যাদা’ অনুচ্ছেদ; হাদীছ হাসান, ইরওয়া হা/১৫৯৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ৬/৩৯-৪০ পৃ:। এর দ্বারা আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, আমৃত্যু উসমান (রাঃ) ছিলেন সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত। আর তার বিরোধীরা ছিল স্রেফ মিথ্যারোপকারী। এযুগেও তারা মিথ্যা রটনাকারী। অতএব সত্যসন্ধানীরা এদের অপপ্রচার থেকে সাবধান থাকবেন। -লেখক ।

Part (3) দাউদ (আঃ)-এর কাহিনীতালূত ‘আমালেক্বা দখলদারদের হটিয়ে শামের শাসনকর্তার পদ লাভ করেন। অতঃপর দাঊদ কতদিন পরে নবী হন এ...
03/12/2023

Part (3) দাউদ (আঃ)-এর কাহিনী

তালূত ‘আমালেক্বা দখলদারদের হটিয়ে শামের শাসনকর্তার পদ লাভ করেন। অতঃপর দাঊদ কতদিন পরে নবী হন এবং তালূতের পরে কখন তিনি শাসনক্ষমতায় আসেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায় না। তবে অন্যান্য নবীদের ন্যায় তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুঅত লাভ করেন বলে আমরা ধরে নিতে পারে। তিনি শতায়ু ব্যক্তি ছিলেন এবং তাঁর পুত্র সন্তানের সংখ্যা ছিল ১৯ জন। তন্মধ্যে সুলায়মান (আঃ) নবুঅত ও শাসন ক্ষমতা উভয় দিক দিয়ে (নমল ২৭/১৬) পিতার স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। আল্লাহ পিতা ও পুত্রকে অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে সৃষ্টি করেছিলেন। আমরা কুরআন থেকে যা প্রাপ্ত হয়েছি সেটুকুই পেশ করব সত্যসন্ধানী পাঠকের জন্য। মনে রাখা আবশ্যক যে, কুরআন কোন গল্পগ্রন্থ নয়। মানুষের হেদায়াতের জন্য যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই মাত্র সেখানে পাওয়া যায়। বাকী তথ্যাবলীর উৎস হ’ল ইস্রাঈলী বর্ণনা সমূহ, যার কোন নির্ভরযোগ্য ভিত্তি নেই। বরং সেখানে অন্যান্য নবীগণের ন্যায় দাঊদ ও সুলায়মানের চরিত্রকে মসীলিপ্ত করা হয়েছে। আর সেইসব নোংরা কাহিনীকে ভিত্তি করে আরবী, উর্দূ, ফার্সী এমনকি বাংলা ভাষায়ও লিখিত হয়েছে ‘নবীদের কাহিনী’ নামে বহু বাজে বই-পুস্তিকা। নবীগণের নিষ্পাপত্বে বিশ্বাসী ঈমানদার পাঠকগণ ঐসব বইপত্র থেকে দূরে থাকবেন, এটাই আমরা একান্তভাবে কামনা করব। বরং আমাদের পরামর্শ থাকবে, ঐসব উদ্ভট ও নোংরা গল্পগুজবে ভরা তথাকথিত ধর্মীয় (?) বই-পত্র আগুনে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিন। তাতে নিজের ও পরিবারের এবং অন্যদের ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে বেঁচে যাবে।

Address

Cumilla
3500

Telephone

+97430824219

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when islamic daowah posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to islamic daowah:

Share