15/03/2025
মহর্ষি মনোমোহনের গুরু-ধাম কালীকচ্ছে যাত্রা
আষাঢ় ১৩০৩ বাংলা ।
রাত্রিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হোটেলে উপস্থিত হইলাম ও যৎসামান্য কিছু আহারাদির পর ঘুমাইয়া পড়িলাম। প্রভাতে জাগিয়া মনে করিলাম, পুস্তকগুলি আর বোঝা বহিয়া সেখানে লইয়া যাইব না, যেহেতু দুই তিন দিনের মধ্যেইত ফিরিয়া আসিব, তাই বলিয়া হোটেলের অধ্যক্ষের নিকট পুস্তকের বস্তা রাখিয়া জীবনযাত্রাতে রওয়ানা হইলাম। প্রায় দুই মাইল পথ বাকী আছে তখন এক বারুই বাড়ীতে জল পিপাসায় জলের জন্য যাইয়া দাঁড়াইলাম । জল দিল, ইচ্ছামত পান করিয়া বিশ্রাম করিতে বসিলাম। কথাবার্তা আরম্ভ হইল- তখনই সেই বাড়ীর লোকটি স্বামীজীর নানা কলঙ্ক করিতে লাগিল। কিন্তু মন ভাঙ্গিল না, ভাবিলাম- ইহা আমার পরীক্ষা। তাহার কথাতে বড় বিরক্ত হইয়া তাড়াতাড়ি গাত্রোত্থান করিয়া আবার ছুটিলাম। বেলা তখন দেড় প্রহর হইয়াছে এমন সময় ব্রহ্ম মন্দিরের দ্বারে গেলাম, যাইয়া দেখি অটল অচল মহাপুরুষ স্বকীয় জ্যোতিতে ঘর আলোকিত করিয়া বসিয়াছেন, পার্শ্বে ময়মনসিংহ গোপালাশ্রম নিবাসী তীব্র অনুরাগী প্রিয়শিষ্য দ্বারকানাথ দত্ত উপবিষ্ট। স্বামীজী আমাকে দরজায় দেখিয়াই বড় আনন্দের সহিত বলিলেনঃ- মনোমোহন আসিয়াছে?
আমি আত্মাহারার ন্যায় শ্রীচরণে প্রণত হইলাম, হাত বুলাইয়া দিলেন, যেন আমার সকল ব্যাথা দূর হইয়া গেল- নিকটে বসিলাম। অমনি দ্বারকাকে বলিলেন- যাও দ্বারকা তাহাকে নিয়া গাছতলাতে যাও- কিছু
জলখাবার দিতে বল, ছেলেমানুষ ক্ষুধা হইয়াছে। প্রাণ প্রিয়তম দ্বারকানাথ অসীম প্রেমভরে আমাকে আলিঙ্গন করিয়া ছোট পুস্করিণীর পূর্ব-উত্তর কোণে লইয়া গেল।
সেখানে দেখি কয়েকটি আম গাছ, দুই তিন খান কুঁড়েঘর, স্বামীজী তথায় রাত্রে থাকেন ও উপাসনা করেন এবং প্রিয় শিষ্য সকলকে লইয়া উপদেশ দেন। শিষ্যদের পাকাদি ও খাওয়ার বন্দোবস্ত সেখানেই হয়, মাতাঠাকুরানী এবং তাঁরও অনেক শিষ্যা স্ত্রীলোক
সেখানে আছেন। তথায় যাইয়া মাতাঠাকুরানীকে ভক্তি করিলাম- তিনি পরিচয় নিলেন। ইহার পূর্বে পিতৃদেব একবার আমাকে তথায় লইয়া গিয়াছিলেন, তখন গাছতলায় ঘরের স্থানটি মাত্র পরিস্কার ছিল, আহারাদি বাড়ীর মধ্যে হইত, সন্ধ্যায় উপাসনা তথায় হইত।
পূর্বের পরিচয়ে মায়ের কাছে পরিচিত হইলাম, জল খাবার দধি চিড়া দিলেন, খাইলাম ও তখনকার নিয়মমত সেখানে বসিয়া
“ #সর্বসিদ্ধি_মহাশক্তি_জয়_দয়াময়” নাম কিছু জপ করিয়া ও লম্বা ভক্তি দিয়া পুনরায় স্বামীজীর নিকট চলিয়া আসিলাম। তিনি বলিলেন- তোমাকে এখানে সতের দিন থাকিতে হইবে, আমি বিনা বাক্যব্যয়ে স্বীকার করিলাম। দ্বারকা আমাকে লইয়া দালানের উপরের কোঠায় গেল। সেখানে মহাজ্ঞানী ফরিদপুর
নিবাসী প্রিয় ভক্ত প্রিয়নাথ দত্ত, চৌদ্দগ্রাম নিবাসী গিরীশ চন্দ্র চৌধুরী, হরেন্দ্র চন্দ্রদাস, ললিত চন্দ্র ব্যানার্জ্জি এই সকল লোক ছিলেন, তাঁহারা সকলেই অতি প্রিয় ভাবে আমাকে গ্রহণ করিলেন। বেশ পরমানন্দে পড়িলাম, তখন প্রিয়বাবু গাছতলাতে প্লানচেট ধরেন ও নানা বিষয়িনী আলাপ আলোচনা, ভবিষ্যৎ বাণী, জপ ধ্যান সেখানে হইয়া থাকে। এই ভাবে
দিনের পর দিন দুই তিন দিন কাটিয়া গেল। কিন্তু প্রাণ নিতান্ত অস্থির হইয়া পড়িল, সেখানে আর থাকিতে ক্ষণমাত্রও ইচ্ছা হইতেছে না আবার চলিয়া আসিতেও মনে ভয় হইতেছে। স্বামীজীকে দেখিলে যেন সাক্ষাৎ যম-স্বরূপ বোধ হইতে লাগিল, তিনিও আমাকে বড় ডাকেন না, উপেক্ষা ভাব বুঝিতে লাগিলাম, মন আর কিছুতেই শান্তিপ্রাপ্ত হয় না। কে জানে ইহার ভিতরে তাঁহার কি কৌশল লুক্কায়িত ছিল। এমতাবস্থায় দশ
বার দিন কাটিয়া গিয়াছে, একদিন প্রাতে স্বামীজীর নিকটে বসিয়া, মানুষকে যে সকল নাম প্রদান করিতেন সে দিনের মত আমি তাহা লিখিতেছি। নিকটে একটি ব্যবসায়ী তাহার ব্যবসায় সম্বন্ধে নানাবিধ কূটকাটব্য প্রশ্নজাল উপস্থিত করিতেছে, তখন হঠাৎ আমার শরীর কম্পিত হইল, মন উত্তেজিত হইল, শিরায় শিরায় ধর্মণীতে ধর্মণীতে তড়িৎ প্রবাহ ছুটিতে লাগিল, চক্ষু স্থির হইয়া গেল অতিমাত্র উত্তেজিত হইলাম। কিছু
সুস্থির হইলাম, ঐ লোকটির সেই সকল বিষয় রাজ্যের প্রশ্ন জাল যেন আমার বক্ষে বিষমিশ্রিত শল্যের ন্যায় বিদ্ধ হইয়াছিল। আমি যেন কোন অজানিত আনন্দময়ের নির্ম্মল রাজ্যে পহুঁছিয়াছিলাম, সে কথার ভাব ভাষায় ব্যক্ত করা নিতান্তই দুরূহ বটে। একমাত্র
ভুক্ত ভোগীই তাহা বুঝিতে বা উপলব্ধি করিতে সক্ষম। ক্রমে তিন চার দিন চলিয়া গিয়াছে,ধর্মবন্ধুদের সঙ্গে মিলিয়া মিশিয়া যৎপরোনাস্তি উৎসাহে ও আনন্দে চলিয়াছি। আর একদিন প্রাতে সেই দিনকার মত নাম লিখিবার জন্য নিকটে বসিয়াছি, স্বামীজী বালিশে ঠেস দিয়া অর্ধ্ব নিমিলিত অবস্থায় ধ্যানস্থ আছেন। লোকজন একরকম বিদায় হইয়াছে, বসিয়া বসিয়া নানা চিন্তা করিতেছি, হঠাৎ যেন দেখিলাম একটি কালবর্ণ পুরুষ স্বামীজীর খাটের নীচে বসিয়া আছে, চমকিয়া উঠিলাম, স্বামীজীও উঠিয়া বসিলেন এবং
আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন তুমি কি দেখিলে ? আরও বিস্মিত হইলাম, ভাবিলাম ব্যাপারখানা কি ? তিনি কি মতে এই ব্যাপার বুঝিলেন, চিন্তিত হইয়াই বলিলাম- একটি কালবর্ণ পুরুষ দেখিয়াছি ।
স্বামীজী— তুমি ইহাকে চিনিতে পারিয়াছ ?
আমি- না ।
স্বামীজী— দেখ এক বৎসর হইল তোমাদের বাড়ীর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এক বাড়ীতে সে আসিয়াছিল, তুমি দেখা করিতে গিয়াছিলে, কিন্তু যাইয়া শুনিলে সে চলিয়া গিয়াছে।
আমি- মনে হয় না।
স্বামীজী— ইনি একজন সাধক, উহার বাড়ী তোমাদের বাড়ী হইতে পনের ষোল ইহাতে কালীকাযোগ আসিয়াছে। আজ অনেকদিন যাবত মাইল দূরে, লোকটি কৃষ্ণভক্ত, স্বপ্নে অন্ধকার দর্শন করিয়া চিৎকার করিয়া উঠেন এবং চক্ষু দুইটি অন্ধ হইয়াছে, আরও
কতকদিন কাটাইতে পারিলে জীবন্মুক্ত হইবেন। বড়ই উচ্চদরের লোক, সে যোগবলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে আসিয়াছে, –
চিনিতে পার ?
আমি- না, চিনিলাম না।
স্বামীজী— তোমাদের গ্রামে খ্যাতনামা একটি মেয়ে গায়িকা আছে, ইনি তাহারই গুরু- চিনিতে পার ?
অমনি আমার মনে সকল বিষয় আনুপূর্বক বৃত্তান্ত জাগিয়া উঠিল। আমাদের গ্রামে রামায়ণ কীর্তনীয়া সোনাই নাম্নি নট্টবংশীয়া এক প্রতিভাশালিনী গায়িকা ছিল। সে নবদ্বীপ যাইয়া দেহত্যাগ করিয়াছে, তাহার গুরু জাফরগঞ্জ বিষ্ণুপুরের কৃষ্ণ চন্দ্র মহন্ত,বাস্তবিক তাঁহাকে শৈশবে দেখিয়াছি এবং এক বৎসর পূর্বে বাড়ীর দক্ষিণ-পূর্বে তাঁহার শিষ্য কর্মকার বাড়ীতে তিনি আসিয়াছিলেন। তথায় তাঁহাকে দেখিতে যাইয়া ফিরিয়া
আসিয়াছিলাম, অভাবনীয় আনন্দে অভিভূত হইয়া
বলিলামঃ-কৃষ্ণ চন্দ্ৰ মহন্ত !
স্বামীজী- হ্যাঁ।
আমি- সে ত কালবর্ণ নয়, (গৌরবর্ণ ছিল)।
স্বামীজী— হ্যাঁ, এখন সে কালবর্ণ হইয়া গিয়াছে।
আমি- সে কেমন করিয়া আসিল !
স্বামিজী— যোগবলে, এখনও আছে। দেখিবে ?
আমি- দেখিব ।
অমনি তিনি ধ্যানস্থ হইলেন এবং বলিলেন-আমার দিকে চাহিয়া দেখ,পুনরায় জিজ্ঞাসা করিলেন কিছু দেখিয়াছ ?
আমি- না, দেখি নাই ।
(বাস্তবিক পরে যাইয়া উক্ত ব্যক্তির সহিত সাক্ষাৎ করিয়া জানিলাম ঘটনা সত্য; ইহার প্রায় ছয় সাত বৎসর পর তাঁহার মৃত্যু হইয়াছে।)
স্বামীজী-
(একটি নাম বলিয়া) এই নামটি জপ কর ।
আমি জপ করিলাম- স্বামীজী বলিলেন, দেখ— এই বলিয়া ধ্যানস্থ হইলেন— চাহিয়া দেখি,— কপালে, বক্ষে, হাতে, নাসিকায়, কণ্ঠে, বৈষ্ণবের সাদা তিলক- ঠিক একটি বৈষ্ণব। অনিমেষলোচনে চাহিয়া রহিয়াছি, একেবারে সম্বিদ হারা। তিনি ধ্যানভঙ্গ করিয়া বলিলেন— দেখিয়াছ !
আমি চমকিয়া উঠিয়া বলিলাম- হ্যাঁ দেখিয়াছি, এই
বলিয়া বড়ই অস্থির হইলাম। তিনি স্পর্শ করিয়া শান্তি দান করিলেন। এই রহস্যে মন প্রাণ বিগলিত হইল, অজানিত রাজ্যে মূহুর্মুহু মন ডুবিতে লাগিল এবং যেন কি এক আনন্দময় নির্ম্মল দেশের কল্পনা জল্পনা হইতে লাগিল। বিশ্বাসের বলে হৃদয় ভরিয়া গেল মনে আর নিরানন্দ নাই, নব বলে বলীয়ান হইয়া পড়িলাম। তাহাতে ভবিষ্যৎ জগতের অবতীর্ণ ভাব, মৃত মানুষ্যের আগমন বার্ত্তা, সাধকদের সিদ্ধাবস্থার আনন্দের কথা সর্বদা শুনিতে শুনিতে আমি যেন আর একরকম হইয়া পড়িলাম। তখন সংসার নাই, বিষয় নাই, ক্ষোভ নাই, দুঃখ নাই, অনুতাপ নাই, মনে করিলাম সাধকতাই জীবনের কর্ত্তব্য। এই ভাবে দুই এক দিনের পর আমার ঐ সতের দিন প্রায় শেষ হইয়াছে এমন সময় আবার ডাকিয়া বলিলেনঃ- মনোমোহন তোমার আরও সতের দিন থাকিতে হইবে।।
ইহাতে মনে আরও আনন্দ হইল তখন আর বাড়ীর কথা মনে নাই, প্রাণে মমতা নাই, অভিমান নাই, আমি একজন নুতন মানুষ হইয়া পড়িয়াছি,— কেবল ঐ ভাবনা ঐ চিন্তা ঐ আলাপ, ঐ কথা দিবস-রজনী নূতন নূতন কথা, নূতন নূতন ভাব সকলই আমার পক্ষে তখন নূতন এবং অমিয়মাখা বোধ হইতে লাগিল। এইভাবে সাত আট দিন পর আর একদিন বিকালে যাইয়া সামনাসামনি ভাবে বসিয়াছি। স্বামীজীর দিকে চাহিয়াই
শরীর শিহরিয়া উঠিল, মন উত্তেজিত হইল, চাহিয়া দেখি যেন দণ্ড-কমণ্ডুল হাতে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু-🙏
চিৎকার আরম্ভ করিলাম, তখন সন্ধ্যার অল্প বাকী এই অবস্থা দেখিয়া তিনি বলিলেন- আরও দুই বৎসর বাকী বুঝিবা। এই বলিয়া আসন হইতে নামিয়া আসিয়া
হাতে ধরিয়া উঠাইলেন, এবং টানিয়া গাছতলার দিকে লইয়া চলিলেন। সেখানে নিয়া সুস্থ করিয়া বলিলেনঃ–
তুমি কি চাও ?
আমি যেন আত্মহারার ন্যায় বলিয়া উঠিলামঃ-
নিষ্কাম ধর্ম
- #স্বামীজী উত্তেজিত হইয়া দাঁড়াইলেন, বলিলেনঃ-
--নিষ্কাম ধর্ম ?
-ধর্মের পথ শাণিত ক্ষুরধারের ন্যায়-
যা হক্ অদ্য হইতে তোমার মনে যে সকল কথা জাগরিত হয় তাহা লিখিয়া রাখিও।
মনে ভাবিলাম আমার একটা মনই বা কি, কি কথা আবার উঠিবে— কিবা লিখিব । যাক সে কথা— দেখি কি হয়। ক্রমে ধর্ম বন্ধুদের সঙ্গে মাখামাখি করিয়া অকপট প্রেমে মিলিত হইয়া, মহাপুরুষের চরণামৃত পানে দ্বিতীয় আদেশের সতের দিনও অতীত হইল। সেদিন সন্ধ্যার সময় ডাকিয়া বলিলেন- অদ্য তোমার সঙ্গে স্বপ্নে রাত্রিযোগে হযরত মহম্মদ (দঃ) আসিয়া দর্শণ দান করিবেন। বাস্তবিক তাহাই স্বপ্নযোগে শ্বেতশশ্রু একজন জ্যোতির্ময় পুরুষ দণ্ডায়মান হইয়া বলিলেন- আমার নাম মহম্মদ তোমাকে দর্শন দিতে আসিয়াছি। প্রভাতে জাগিয়া গুরুদেবকে প্রণাম করিতে গেলাম- দেখিয়া গুরুদেব হাসিলেন,
আমি বলিলাম হযরত মহম্মদকে (দঃ) তো দর্শন লাভ করিলাম। তখন বলিলেন আরও পাঁচ দিন তোমার থাকিতে হইবে। আমার আর দ্বিরুক্তি নাই, তবে বাড়ী হইতে দুই তিনখানা চিঠি আসিয়াছে, শেষে পিতামাতা অভিভাবকগণ কি বলেন মাত্র এইটুকু ভয় হইয়াছিল, তাহাও আবার ক্ষণমাত্র থাকিয়াই লয় হইয়া ধর্মভাবে
মন বিভোর হইয়া যাইত। এই ভাবে সেই কয়েকদিনও কাটিতে লাগিল, খুব সুন্দর সুন্দর দেবদেবী মহাপুরুষ গণকে স্বপ্নে দেখিতে লাগিলাম। প্রাতঃকালে স্বামীজীর নিকট দাঁড়াইলেই কোন্ দিন রাত্রিতে কি দেখিয়াছি তিনি একটু ধ্যানস্থ হইয়া বলিয়া দিতেন ও অর্থ
বুঝাইয়া দিতেন এবং ভবিষ্যৎ আশাতে উৎসাহিত করিতেন। এইভাবে সেই পাঁচদিনও কাটিয়া যাইতে লাগিল অনেক লোকের সঙ্গে অকপট বন্ধুত্ব পাইয়া যৎপরোনাস্তি তৃপ্তি লাভ করিলাম এবং স্বামীজী বলিলেন-
১/ তোমার বিষয় হইবে না।
২/ দুই বৎসর পর আত্মজ্ঞান আসিবে।
৩/ ছয় বৎসর কাল সাংসারিক বৈষয়িক যন্ত্রণায় ভুগিতে হইবে।
৪/ ছয় বৎসর পর দুই বৎসর কাল উন্মাদ অবস্থায় ঘুরিতে হইবে।
৫ / এই আট বৎসর পর আরও ছয় বৎসর কাল উঠাপড়া ভাব আসিবে।
৬/ এগার বৎসর পর বিশুদ্ধ ভাবের অনেকটা আভাষ পাইবে।
৭/ চৌদ্দ বৎসর পর বিশুদ্ধ ব্ৰহ্মযোগ আসিবে।
#আমার হৃদয়ে নিম্নলিখিত ভাব জাগরিত হইল :
১/ নিষ্কাম ধর্ম উপার্জন করিব।
২/ ভালবাসাই ধর্ম সাধনের মোক্ষ পথ।
৩/ আমি ও ব্রহ্মময় জগৎ একই পদার্থ ।
৪/ মানুষের স্বাধীনতা নাই, নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে মহাশক্তি প্রেরণায় প্রত্যেকেই চালিত ।
৫/ মানুষ দেব ভাব লাভ করিতে পারে।
৬/ মন্ত্র সকলের অর্থ প্রার্থনা ।
৭/ আমার হৃদয় অনন্ত জ্ঞানের খনি, সকল বিদ্যা ও তত্ত্ব হৃদয় হইতেই লাভ করা যাইতে পারে।
এই সকল তত্ত্ব ও আশা হৃদয়ে লইয়া পরমানন্দে স্বামীজীর শ্রী চরণে প্রণাম করিয়া ধর্ম্ম ভ্রাতাদের সহিত প্রেমালিঙ্গনে বিদায় হইয়া বাড়ী অভিমুখে ছুটিলাম। কিন্তু আমাতে যেন আমি নাই, যে মনোমোহন একমাস পূর্বে কালীকচ্ছ গিয়াছিল, ভেবে দেখি অদ্যকার মনোমোহন আর সে মনোমোহন নয়, সম্পূর্ণ বদল হইয়া নূতন হইয়া গিয়াছে, যেন ঠিক পুনর্জন্ম হইয়াছে। প্রায় দুই মাইল পথ চলিয়া আসিয়াছি, পথ হাটিতেছি কিন্তু
আত্মহারা। হঠাৎ চমকিত হইলাম—এদিক ওদিক চাহিতে লাগিলাম, শূন্যপানে তাকাইলাম- চেয়ে দেখি অনন্ত সূক্ষ্ম শ্বেত পরমাণু জগৎ ভরিয়া নৃত্য করিতেছে, প্রত্যেকেই জাগ্রত জীবন্ত, একি দৃশ্য ! স্তন্তিত হইয়া দাঁড়াইলাম, ক্ষণিক পরেই পশ্চাতে পথিকের কলরব শুনিয়া হৃদয়ে ধৈৰ্য আনিয়া খুব বেগে ছুটিলাম, কিন্তু মানুষ দেখিতে বড় ভয় হইতেছে, যেন কোন অজানা মানবীয় স্বভাব ছাড়া দেশের স্বভাব লইয়া এই মর্ত্যলোকে মানুষের দেশে আমি হঠাৎ আসিয়া পড়িয়াছি এরূপ বোধ হইতে লাগিল । ক্রমে বেলা এক প্রহরের সময় পূর্বের হোটেলে আসিলাম। সেখানে আগমনের পর পুস্তকের বস্তা অধ্যক্ষের নিকট হইতে ভয়ে ভয়ে চাহিয়া লইয়া তীব্র বেগে ছুটিলাম। সেদিন রাস্তায় অবস্থান করিয়া পরদিন বেলা দুই প্রহরের পূর্বেই গ্রামে আসিলাম। কিন্তু বাড়ীতে আসিতে নিরতিশয় লজ্জা ও ভয় হইতে লাগিল, তবে আমার পিতৃদেবের সাধু চরিত্রের কথা মনে হওয়াতে আমার সেই ভয় দূরীকৃত হইল। অপরাধীর ন্যায় বাড়ীর প্রাঙ্গনে আর না দাঁড়াইয়া বেগের সহিত ঘরে ঢুকিলাম, মা দু'চার কথা বলিলেন, আর কেহই কিছু কহিল না- আশ্বস্ত হইলাম !।
©লীলারহস্য
মহর্ষি মনোমোহন👑