
05/08/2025
কপি করা নিষিদ্ধ
তুমি কেন নিজেকে কেন এতো অবহেলা করো শ্যামল লতা । তুমি তো আর জানো না তোমার অসুস্থতা আমাকে কতটা পুড়ায়। বুকে ব্যথা করে কত রাত যে ঘুমহীন কাটে তুমি জানোই না । এমন কইরা কেন অবহেলা করো লতা । শরীরটা তোমার হলেও তুমি মানুষটা তো আমার । তুমি বড় হও । তোমার বড় হওয়ার প্রতীক্ষায় যে বসে আছি। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে এতোক্ষণ কথা গুলো বলল আগুন্তক।
প্রেম তুমি আসবে এভাবে
হারিয়ে যাবে ভাবি নি
আজও আছো সেই তুমি
শুধু নেই আমি ।
গানটা মোবাইল ফোনে চালু করে হেড ফোন লাগিয়ে শুনতে লাগলো লতা । আজ তার ভালো লাগছে নাহ । আর তার মা ও তাকে স্কুলে যেতে দেন নি ।
মা : বললেন আগে শরীর ঠিক পরে সব। তার মানে এই না যে পড়াশুনা লটে তুলে ফেলবে । বাড়িতে আগের পড়া গুলো রিভিশন দেওয়ার কথা বললেন ।
কিন্তু লতা শুনলে তো সে হেড ফোন লাগিয়ে গান শুনছে। তার মস্তিষ্কে অতীতের কিছু স্মৃতি ভেসে ওঠে বার বার । স্মৃতি গুলো খুবই ঝাপসা স্পষ্ট নয়। তবে তাকে স্মৃতি গুলো নাড়িয়ে দেয় ।
এই তো কিছু দিন আগে সে তার চাচাতো বোনের জন্মদিনে গিয়েছি । রাত দশটায় খাওয়া দাওয়া করে সে চলে এসেছে বাড়িতে । অবশ্য তার চাচা তাকে বাড়ির গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
পারিবারিক ঝামেলার জন্য তার বা- মা , চাচা-চাচি কেউ কারুর বাড়িতে আসেন না আবার কথাও বলেন না । তবে লতা তার বোন নাইমার সাথে তার চাচাতো ভাই বোনদের সাথে যোগাযোগ হয় আর সবাই সবার বাড়িতে আসা যাওয়ার করে । তারা সবাই অনেক সময় আফসোস করে কেন তার বাবা চাচাদের মিল নেই । থাকলে আরো সুন্দর লাগতো পরিবারটাকে।
লতা বাড়িতে এসেই বুঝে ফেলল আজ বাড়িতে মেহমান আসছে । ঘরে রান্নার তীব্র ঘ্রাণ ।
তবে সে তার বোন নাইমার মাধ্যমে জানলো মেহমানরা অনেক আগেই চলে গেছে । লতা জন্মদিনের জামাটা পাল্টে একটা সুতি থ্রিপিচ পড়ল। বিছানার বালিশ টা সরিয়ে বসতে নিলেই একটা কাগজ দেখতে পায় । সে সেটা হাতে নিয়ে দেখলো । এটা একটা চিরকুট । ছোট্ট করে লেখা পড়ার টেবিলের ড্রয়ারটা খুল।
লেখাটা অপরিচিত হাতের লেখা । সে ভাবলো দেখি কি আছে ড্রয়ারে ।
সে ড্রয়ার খুলে দেখলো একটা গিফট বক্স । বক্সের উপরে লেখা শুধুই শ্যামল লতার জন্য ।
লতা বক্সটা খুলল । দেখলো বারোটা রঙের চুড়ি ছয়টা কাঁচের আর বাকি ছয়টা রেশমি চুড়ি। চুড়ি গুলোর উপরে আরেকটি চিরকুট । তাতে লেখা তোমার খুব চুড়ি পছন্দ তাই এগুলো তোমার । লতার যেন খুশি ধরেই নাহ । বয়সটা খুব চঞ্চলতার বেশি কিছু ভাবতে চায় না । বেলি খুশিতে আত্মহারা । ভাবলো মাকে জানাবে ।
পরোক্ষণে মনে হলো তার ছোট বোন এতে ভাগ বসাবে । তাই সে আর কাউকে জানালো না । সে এক মুঠো চুড়ি পড়লো । দেখলো তার হাতে চুড়ি গুলো খুব মানালো ।
সে মনে মনে আগন্তুকে ধন্যবাদ জানালো এতো গুলো চুড়ি উপহার দেওয়ার জন্য ।
কাল স্কুলে টিফিন টাইমে কে যেন একটা চিঠি পাঠালো । বাচ্চা ছেলে দিয়ে গেছে চিঠিটা ।
প্রিয় মনরমনী
কেমন আছো জানতে চাইবো না । কারণ তুমি কেমন আছো আমি খুব করে জানি । সাবধান মনরমাণী
যদি কোনো ছেলের পেছনে পড়েছ । তোমার মনে যাতে কোনো ছেলের না থাকে । আমি জানি কেউ নেই তবু ও সাবধান করে রাখলাম যেন এমন ভুল না করো । যে হৃদয়ে আমি থাকবো না সে হৃদয় আমি রাখবো না । সোজা সালাদ বানিয়ে খেয়ে ফেলব। তুমি জানোনা মনরমনী আমি কি করতে পারি। আর যে ছেলেটা তোমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাচ্ছে তার থেকে দূরে থাকো মনরমনী । আমি তোমাকে অন্য কারোর সাথে সয্য করতে পারি না । বুকে রক্তক্ষণন হয় মনরমনী ।
ইতি
তোমার চুড়িওয়ালা
এই চিঠি সে কতো বার যে পড়লো । সে ভয় পেয়ে গেল এমন চিঠি পেয়ে । কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে তো সর্বনাশ । তাই সে চিঠিটা ছিড়ে পুকুরে ফেলে দিল। চিছির চিন্তায় আর না খাওয়ার জন্য তো তার শরীর অসুস্থ হয়ে গেছে ।
চলবে
#বন্যা_আক্তার
#শ্যামল_লতা
#পর্ব_02