04/08/2025
"বে চেঁ থাকলে দেখা হবে"
৪ আগষ্ট ২০২৪ থেকে ৪ আগষ্ট ২০২৫। নতুন জীবনের ১ বছর 📌
স্মৃতিচারণ - ১৮ জুলাই কোটবাড়ি বিশ্বরোডে আন্দো লন দিয়ে শুরু।তখন ১টি পাবলিকেশনে মার্কেটিং অফিসার হিসাবে জব করতাম। কুমিল্লা শহর থেকে কোটবাড়ি এরিয়া আমার ডিউটি ছিলো। তাই যত আন্দো লন হয়েছিলো সব গুলো আমার সামনেই হয়েছিলো। সুযোগ হলেই ছাত্রদের সাথে দাড়িয়ে পড়তাম। অফিস থেকে বস নি ষে ধ করেছিলো আ ন্দো লনে না জড়ানোর জন্যে।২৯ জুলাই ২০২৪ আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। ৩১ জুলাই শ্বশুর বাড়িতে যাই।২ আগষ্ট সন্ধায় বাড়িতে ফিরে আসি। ৩ আগষ্ট আবারও চাকরির কাজে অফিসে যাই। অফিস থেকেই বেরিয়ে পড়ি ৩ তারিখের পুলিশ লাইনের আন্দো লনে। তখন অফিস থেকে আবারো নি ষে ধ করা হয়েছিলো যেনো কেউ আন্দো লনে না জড়ায় এবং নিরাপদে বাসায় অবস্থান নেয়।তখনি শপথ করি চাকরি গেলে যাবে কিন্তু পিছু পা হবোনা।৪ আগষ্ট কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সবচেয়ে বড় আন্দো লন। বিয়ে করার মাত্র ৬দিন। নতুন জীবনসঙ্গী নিয়ে বাড়িতে থাকার সময় কিন্তু মনকে বেধে রাখতে পারিনি। মা বোনেরা রান্নার ঘরে কাজে ব্যস্ত। স্ত্রীকে বলেছিলাম 'তুমি মাকে বইলোনা আমি বাহিরে যাচ্ছি " বেচেঁ থাকলে দেখা হবে" ইনশাআল্লাহ। এটা বলেই বন্ধুদের নিয়ে বের হয়ে পড়ি। নাজিরাবাজার থেকেই বা ধা দিচ্ছিলো যে আর সামনে যাওয়া যাবেনা,লীগের স ন্ত্রা সীরা ক্যান্টনমেন্ট এলোপাতাড়ি গু লি করতেছে।আমরা বাধা ঠেলে সামনে চলে যাই। তখন লীগের স ন্ত্রা সীরা গু লি বন্ধ করে নিরাপদ স্থানে অবস্থান করে। আমরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর গাড়ি সহ বিশ্বরোডের দিকে রওনা দেই। বিশ্বরোডের মায়ামী রেস্তোরাঁর সামনে ১টা ঝা মেলা বাধে সেখানে আমার পায়ে প্রচুর পিটানো হয়। র ক্ত জমাট বেঁধে পা ফুলতে শুরু করে। পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে আবার সামনের দিকে অগ্রসর হই। ততক্ষনে লীগের অ স্র ধারী স ন্ত্রা সীরা দল নিয়ে আলেখারচর থেকে শহরের রোড দলবদ্ধ হয়ে বন্ধ করে দেয়। আমরা তখন সেনাবাহিনীর সাথে বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থানরত। হঠাৎ করেই লীগের স ন্ত্রা সীরা এলোপাতাড়ি গু লি শুরু করে। আমরা কয়েকজন সামনের দিকে ছিলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অনুভব করলাম আমরা পেটে বুলেট ঢুকেছে। পেটের দিকে তাকিয়ে দেখি টিশার্ট ছিদ্র হয়ে গেছে।একটু সরে গিয়ে মুর্তি গুলোর পিছনে দাঁড়াই। ১ মিনিটের মধ্যে কোনো ১ ভাই বাইকে উঠিয়ে আমাকে ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তাররা অরজিনাল স ট গানের বুলেট দেখে তাড়াতাড়ি কুমিল্লা মেডিকেলে ট্রান্সফার করে। এম্বুলেন্স ছুটে চলে কিন্তু শহরের প্রায় রাস্তা তখন লীগের দখলে। কান্দিরপার পৌছানোর পর লীগের স ন্ত্রা সীরা আওয়ামী অফিসের সামনে ২ পাশে অ স্ত্র হাতে দাড়িয়ে ছিলো।আমি তখন সব শক্তি হারিয়ে সব ঝাপসা দেখছিলাম।২০ মিনিটের রাস্তা ঘুরে যেতে যেতে ১ ঘন্টা লাগে।কুমিল্লা মেডিকেলে নেয়ার পর অনেক অবহেলা শুরু হয়।এক্সরে করার জন্য দাড়াতে পারছিলাম না। শরীর নিস্তেজ হয়ে বারবার ঢেলে পড়ছিলাম।তীব্র ব্যাথা আর বমির বেগ শুরু হয়। একটা সময় মনে হয়েছিলো হয়তো আর বেচে ফেরা হবেনা। বেলা আড়াইটায় হাসপাতালে অবস্থান করি আর অপারেশন হয় রাত ৮টার দিকে। অপারেশন শুরু হয় আমার চোখ খোলা রেখেই। পেট কেটে নাড়ি বুড়ি গুলো বের হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। ইনজেকশন পোস করার জন্য কোনো ব্যাথা অনুভব করিনি। একটু পরেই নাড়িবুড়ি গুলো সব বের করে ফেলে। শরীর একবারে হালকা হয়ে একটা ঝাকুনি আসে। তারপর হয়তো অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম। জ্ঞান ফেরার পর ৫ আগষ্ট বিকালে MD Shirajul Islam কানের কাছে এসে বলছিলো "আমরা জয়ী" আপা দেশ থেকে পালিয়েছে। তখন অন্তরে যে শান্তিটা পেয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারবোনা।
সবশেষে একটাই চাওয়া ভালো থাকুক দেশ, ভালো থাকুক প্রত্যেকটা মানুষ। সবাইকে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। দলের হয়ে কি করছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ না ,মানুষ হয়ে কি করছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। সবাই নিজের জায়গায় সলিড হই। প্রত্যেকটা ইউনিয়ন ,থানা, জেলায় যে আমাদের দেশকে ভালো রাখার মতো শাসক হবে তাকেই নির্বাচন করুন। দলকে প্রাধান্য না দিয়ে ভালো মানুষকে প্রাধান্য দেন। ভালো থাকবেন আপনি, আপনার সমাজ, আপনার দেশ ♥️
লাভ ইউ বাংলাদেশ ✅
কৃতজ্ঞতা: Faksar Alam