10/02/2025
ফিতনার যুগে আমাদের করণীয়: কোরআন ও হাদিসের আলোকে
আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি, যেখানে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য দিন দিন অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সমাজে বিভ্রান্তি, পক্ষপাতিত্ব, এবং ধর্মীয় ও নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকেই বর্তমান সময়কে "ফিতনার যুগ" বলে থাকেন, কারণ মিথ্যার প্রচার, অন্যায় ও ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়ার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে।
তবে ইসলাম আমাদের এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
১| দ্বীনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"একসময় আসবে, যখন দ্বীনে অটল থাকা হবে আগুনের কয়লা হাতে রাখার মতো।"
📖 (তিরমিজি: ২২৬০)
🔹এই যুগে টিকে থাকতে হলে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, কোরআন ও হাদিস মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
২| ফিতনার উৎস থেকে দূরে থাকা
বর্তমান সময়ে ফিতনার উৎস অনেক: মিথ্যা প্রচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, সন্দেহজনক আলোচনা, অশ্লীলতা—এসব থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখা উচিত।
রাসুল (সা.) বলেন:
"শীঘ্রই এক ফিতনা আসবে, যে বসে থাকবে সে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির চেয়ে উত্তম, যে দাঁড়িয়ে থাকবে সে চলমান ব্যক্তির চেয়ে উত্তম..."
📖 (বুখারি: ৩৬০১)
🔹 অর্থাৎ, ফিতনার সময় অপ্রয়োজনীয় বিতর্ক, উসকানি ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
৩| কোরআন ও হাদিসের জ্ঞান অর্জন করা
আজকাল মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হলো সঠিক জ্ঞানের অভাব। তাই রাসুল (সা.) বলেছেন:
"আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি তা আঁকড়ে ধরো তবে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না—আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাহ।"
📖 (মুয়াত্তা মালিক: ১৬০১)
🔹 সত্য-মিথ্যা পার্থক্য বুঝতে হলে আমাদের কোরআন ও হাদিসের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
৪| ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া
আল্লাহ বলেন:
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর সাহায্য) প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।"
📖 (সুরা বাকারা: ১৫৩)
🔹 ফিতনার সময়ে ধৈর্য ধরা ও নামাজে মনোযোগী হওয়া আমাদের একমাত্র রক্ষা।
৫| সত্যের পক্ষে থাকা এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া
বর্তমানে গুজব, অর্ধসত্য ও প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। ইসলাম আমাদের সত্য বলা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে।
রাসুল (সা.) বলেছেন:
"তোমরা অন্যায়কে অন্যায় বলো, না হয় আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন।"
📖 (তিরমিজি: ২১৭৩)
🔹 তবে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে হবে।
৬| সৎ ও দ্বীনদার বন্ধু নির্বাচন করা
যে সমাজে আমরা থাকি, তার প্রভাব আমাদের ওপর পড়ে। তাই দ্বীনদার ও সৎ মানুষের সঙ্গ গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের অনুসারী হয়। তাই তোমরা দেখে নাও কাকে বন্ধু বানাচ্ছো।"
📖 (তিরমিজি: ২৩৭৮)
🔹 সঠিক সঙ্গ বেছে নেওয়া মানে নিজেকে সঠিক পথে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
৭| দোয়া ও ইস্তেগফার করা
ফিতনার সময় আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা, যেন তিনি আমাদের সঠিক পথে রাখেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) দোয়া করেছেন:
اللهم إني أعوذ بك من الفتن، ما ظهر منها وما بطن
"হে আল্লাহ! প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের ফিতনা থেকে আমি আপনার আশ্রয় চাই।"
📖 (মুসলিম: ২৮৬৭)
🔹 নিয়মিত ইস্তেগফার ও আল্লাহর কাছে দোয়া করা ফিতনার মোকাবিলায় বড় অস্ত্র।
বর্তমান যুগে বিভ্রান্তি, নৈতিক অবক্ষয় ও সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে আমাদের অবস্থান করা কঠিন হয়ে গেছে। তবে ইসলাম আমাদের পথ দেখিয়েছে—দ্বীনকে আঁকড়ে ধরা, সত্যের পক্ষে থাকা, ধৈর্য রাখা, নামাজে মনোযোগী হওয়া এবং আল্লাহর সাহায্য চাওয়া।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফিতনার ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
©Muslim UMMAH ✒️📜