29/04/2022
কাঠখোট্টা ইতিহাসকে সুখপাঠ্য করে তুলতে অনেকে আশ্রয় নেন গল্পভাষ্যের৷ তবে, গল্পের কল্পনাপ্রধান সত্তা এখানেও বহাল থাকে৷ সে হিসেবে স্মৃতিগদ্যের বয়ানে ইতিহাস বলে যাওয়া প্রায় পুরোটা সত্যের কাছাকাছি৷ গল্পের চরিত্রের খাতিরে এখানে বাস্তব-কল্পনার মাখামাখির সুযোগ কম৷ প্রয়োজন পড়ে না জোড়াতালি দেওয়ার জন্য কোনো বানোয়াটকাণ্ডের৷
স্মৃতিগদ্যের আড়ালে গল্প বলা, ইতিহাস উদ্ধৃত করা ও রম্য-স্যাটায়ারে বেশ মুনশিয়ানা দক্ষতায় অনন্য অবস্থানে আছেন আবুল হাসান মুহাম্মদ আজীজুর রহমান—যাকে আমরা চিনি হাসান আজীজ নামে৷ তার অপ্রকাশিত গ্রন্থ তবু অনন্ত জাগে পড়লে আশা করি তার ও তার লেখার প্রতি আপনার ভিন্নরকম টান ও সম্পর্ক তৈরি হবে৷
নবধ্বনি ঈদসংখ্যা ২০২২-এ প্রকাশিত ‘স্বপ্নভ্রমণে শামেলি’র কথাই ধরা যাক৷ দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তিপরীক্ষা দেওয়ার পর রেজাল্ট আসার আগের দিনগুলোতে বিশেষত মাওয়ায়েজে খামসাতে সফরের একটা রেওয়াজ আছে বলা যায়৷ হাসান আজীজরাও ঘুরতে গিয়েছেন, যেই স্মৃতি তিনি বিস্তারিত বলেছেন তার বইতে৷ এখানেও তিনি সেই কাহিনি বলতে শুরু করে বলে ফেললেন শামেলিযুদ্ধ ও তার মহানায়ককে নিয়েছ
যেকোনো রচনার শুরুটা যদি একটা নাটকীয় কিংবা বিষেশ ঢংয়ের হয়, শুরুতেই পাঠককে আকৃষ্ট করে ফেলে৷ গল্পকাহিনি কার না ভালো লাগে! নসিহতের উদ্দেশ্য হলেও কুরআনে কত গল্প-কিসসা! কজন ঘুরতে যাবেন, কিন্তু ক্যাচাল হবে না শুরুতে এ হতে পারে না! এরকমই একটা দৃশ্যের অবতারণা করলেন তিনি, বিশেষ কায়দায়! তারপর তিনি মাওয়াজেয়ে খামসা ঘোরার মাঝপথেই আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবেন শামেলিপ্রান্তর থেকে—দেড়-দুশো বছর আগের দারুল হরবের সচিত্র আখ্যান!
[একটা কথা না বললেই নয়; আমার মনে হয় অনেকে বুঝে কিংবা না বুঝে সীমাবদ্ধ পাঠকশ্রেণি কল্পনা করেই লিখতে বসেন৷ এ এক দুর্বলতা যা তারা কাটিয়ে ওঠার সাহস রাখেন না হয়তোবা৷
বিশেষ কোনো ব্যক্তি, ঘটনা—কিংবা ধরুন নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের পরিভাষা ইত্যাদি ওই নির্দিষ্ট ঘরানার সংশ্লিষ্টরাই ভালো বুঝে থাকেন, কিন্তু লেখকও কেন যেন লেখার সময় ওই নির্দিষ্ট পরিমণ্ডলের লোকদের জন্যই লেখেন, যখন কিনা লেখার প্রতিপাদ্য ও আবেদন সার্বজনীন৷
পরিভাষার বিষয়টা আপেক্ষিক; কিন্তু, ঘটনা ও ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের পরিচয়টা এসব ক্ষেত্রে কেবল টাচ দিয়ে গেলে (কিংবা আমার কাছে বিরক্তিকর বাক্য—এ/তার ব্যাপারে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন বোধ করছি না) কেউ কেউ হয়তো বুঝবে, কিন্তু কেউ কেউ না বোঝার ফলে লেখাটা পড়ে পরিতৃপ্ত হবে না৷
এসব ক্ষেত্রে নিজ নৈপুণ্যে অল্পকথায়, দুয়েক বাক্যে সুন্দর করে পরিচয়/ঘটনার বয়ান পেশ করা যায়! দেখা যাবে, পাঠকের জানার পরিধি কিংবা বিস্তারিত রচনার পরিবর্তে আপনার ওই দুই কথাই উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে অভিনবত্বের সাথে উপস্থাপন করে! সমকালে অনেককেই দেখি এটা করতে৷ আরও বিরক্ত হই, যখন দেখি, টীকাভাষ্যেও তারা এ কথা বলেন! তাহলে টীকার প্রয়োজন কী? কী দরকার অহেতুক ফুটনোট দেওয়ার?]
যেকোনো সংকলন হাতে নিয়ে আমরা ভাবি—কোনটা দিয়ে শুরু করা যায়! আমার মনে হয় আমার নির্বাচনটা সঠিক ছিল—সার্বিক বিচারে৷ স্বপ্নভ্রমণে শামেলি (শিরোনামটা মনে হচ্ছে যথাযথ হয়নি) শীর্ষক সুখপাঠ্য এই রচনার মাধ্যমে শুরু হলোপ্রথম এই ইদে আমার সংগৃহীত প্রথম ঈদসংখ্যার প্রথম পাঠ৷ আপনার পাঠও সুখপাঠ্য হোক৷
অন্যান্য লেখা নিয়েও ওয়াজ কিংবা বকওয়াস শুনতে চাইলে প্যান্ডেলের ভেতরেই থাকুন