05/12/2025
রাস্তায় বেলী ফুলের মালা বিক্রি করা সেই ছোট্ট মেয়েটার হাতে আজ মোবাইল ফোন। একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর তাকে “কনটেন্ট বানানোর” জন্য আইফোন কিনে দিয়েছেন।
ভাবলাম—
ওকে একটা মোবাইল ফোন না দিয়ে কি বই-খাতা কিনে দেয়া যেত না?
স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া যেত না? বা ওর পরিবারকে একটা ছোট্ট ব্যবসায় ইনভেস্ট করিয়ে দেয়া যেত না, যাতে ওর জীবন টা সহজ হয়?!
ওর কি এখনই মোবাইল ফোন ব্যবহার করার বয়স হয়েছে?
উন্নত দেশগুলোতে নির্দিষ্ট একটা বয়সের আগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার নিষেধাজ্ঞা আছে। কারণ তারা জানে, অল্প বয়সে সোশ্যাল মিডিয়া বাচ্চাদের জীবন বিপথে নিতে পারে।
কিন্তু আমরা?
ছোট-বড় সবাইকে মোবাইল কিনে দিয়ে বলছি - ভিডিও বানাও, ভাইরাল হও, টাকা কামাও!
আমার নিজের একটা সৃতি মনে পড়ে গেলো...
আমি জীবনে প্রথম একটা বাটন ফোন পেয়েছিলাম এইচএসসি পাস করার পর, তাও আব্বুর পুরনো, ভাঙাচোরা ফোন। আব্বু নতুন একটা ফোন কিনলো আর আমাকে ওনার ব্যবহার করা ফোনটা দিয়ে দিল।
ছাত্রজীবন মানেই তখন ছিলো পড়াশোনা আর ভয়!
পরীক্ষায় খারাপ করলে আব্বুর সম্মান থাকবে না! কি হবে না হবে!
এইসব চিন্তা করতে করতেই ছোটবেলা থেকে কিশোরী বেলা কেটে গেলো।
ক্যারিয়ার সম্পর্কে আমি আমার নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রাজুয়েট হবার পর। আমি আসলে চাকুরী করবো, নাকি অন্য কিছু করবো। ভেবে চিন্তে যা আমার জন্য সঠিক মনে হয়েছে তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অথচ আজকের বাচ্চাদের হাতে অল্প বয়সেই স্মার্টফোন তুলে দেয়া হচ্ছে!
একদিন যদি ফেসবুক–ইউটিউব থেকে আর্নিং বন্ধ হয়ে যায়।
তখন কি করবে ওরা?!
প্রথম বিনিয়োগ হওয়া উচিত ‘শিক্ষা’তে, মোবাইল ফোনে নয়।
আপনার সন্তান যখন পর্যন্ত এইচএসসি শেষ না করছে,
তার হাতে দামী ফোন দেবেন না।
যদি যোগাযোগের প্রয়োজন হয়, একটা বাটন ফোন দিলেও দিতে পারেন।
একটা শিশু বা কিশোরের আসল শক্তি হচ্ছে শিক্ষা, দক্ষতা ও বিবেক।
যে বয়সে বই হাতে থাকার কথা, সে বয়সে মোবাইল ফোন ধরিয়ে দিলে ওরা দিক হারিয়ে ফেলে।
সন্তানেরা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে নিক।
সন্তান পড়াশোনা শেষ করে -
চাইলে চাকরি করবে,
চাইলে ব্যবসা করবে,
চাইলে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবে,
চাইলে তারাভরা আকাশ দেখে কবিতা লিখে কাটাবে।
যা-ই করবে, তা করবে পূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে, নিজের ভালো-মন্দ বুঝে।
✍️মোহনা মনি
(ঢাকা, বাংলাদেশ)