24/01/2025
রহস্যময় রাতের ঘটনা
নির্জন গ্রামে সন্ধ্যা নামতেই চারপাশ যেন অদ্ভুত নিস্তব্ধতায় ভরে যায়। আকাশে ঘন মেঘ জমেছে। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় মাঝে মাঝে দূরের বড় বটগাছটাকে যেন ভৌতিক দেখায়। গ্রামের সবাই জানে, সেই বটগাছের নিচে কিছু একটা আছে, কিন্তু কী—তা কেউ জানে না।
রাতের বেলা সেখানে যেতে সাহস করে না কেউ। গল্প প্রচলিত আছে, কয়েক বছর আগে একজন মানুষ সেই গাছের কাছে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। তারপরে মাঝরাতে অনেকেই সেখানে কান্নার শব্দ শুনেছে।
একদিন শহর থেকে আসা তরুণ গবেষক রাহুল এই রহস্য সমাধানের উদ্যোগ নিল। গ্রামবাসী তাকে অনেক সতর্ক করল, কিন্তু রাহুল শুনল না। তার মতে, সবকিছুর একটা ব্যাখ্যা আছে। সে বলল, “রহস্য বলেই তো তা জানার চেষ্টা করতে হবে।”
সেই রাতে রাহুল একটা লণ্ঠন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। গ্রামের সবাই দূর থেকে দেখছিল, কেউ কিছু বলতে পারছিল না। রাহুল বটগাছের কাছে পৌঁছাল। গাছের চারপাশ ঘুরে দেখতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে সে গাছের গোড়ায় এক পুরনো পাথরের মূর্তি দেখতে পেল। মূর্তিটা কেমন যেন অদ্ভুত দেখাচ্ছিল—যেন কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ গাছের ডাল থেকে একটা আওয়াজ এল। রাহুল তাকাল ওপরে। মৃদু বাতাসের সঙ্গে একটা অদ্ভুত গন্ধ ভেসে আসছিল। তার মনে হল, যেন কেউ তার নাম ধরে ডাকছে। ঘাড় ফিরিয়ে দেখল, কিন্তু আশপাশে কেউ নেই।
রাহুল পাথরের মূর্তিটা ভালোভাবে দেখতে গেল, তখনই পেছন থেকে একটা ঠান্ডা হাত তার কাঁধে পড়ল। সে চমকে উঠে ঘুরে তাকাল, কিন্তু পেছনে কেউ নেই। হঠাৎ মাটিতে একটা চাপা আওয়াজ হলো। রাহুল মাটির দিকে তাকিয়ে দেখল, গাছের গোড়া থেকে একটা ছোট দরজা খুলে গেছে।
ভয় আর কৌতূহল মিলিয়ে রাহুল সেই দরজার ভেতর ঢুকল। ভেতরে একটা সরু গলিপথ, যার শেষে একটা পুরনো কক্ষ। সেই কক্ষে কয়েকটা কাঠের বাক্স, যেগুলোতে সোনার গয়না আর অলংকার ছিল। তার মনে হল, এটা কোনো ডাকাতের গুপ্তধন।
কিন্তু হঠাৎ কক্ষের বাতাস ভারি হয়ে এল। পেছন থেকে সেই কণ্ঠ আবার ডাকল, “তুই এখানে কী করছিস?” রাহুল পিছনে তাকাল। কক্ষের কোণায় একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে। তার চোখ জ্বলজ্বল করছে।
রাহুল আর কিছু না ভেবে দৌড়ে গলিপথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এল। কিন্তু গাছের নিচে পৌঁছে দেখল, গ্রামের লোকজন জড়ো হয়েছে। কেউ কিছু বলার আগেই সেই পাথরের মূর্তিটা আবার জেগে উঠল।
সেই রাতের পর রাহুল আর কোনোদিন গ্রামে ফিরে আসেনি। লোকমুখে শোনা যায়, সে নাকি সেই রহস্যের ভার সইতে পারেনি। বটগাছটা আজও দাঁড়িয়ে আছে, আর গ্রামের মানুষগুলো সেই গল্প বলেই যায়—কিন্তু কেউ আর গাছের কাছে যায় না।
শেষ।