01/10/2025
ধর্ম পরিবর্তন না করে হিন্দু মুসলিম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধন দেশের প্রচলিত আইন এবং ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী অবৈধ বলেছেন বাংলাদেশ হাইকোর্টের তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ বেঞ্চ।
আদালতের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, যে দম্পতিকে কেন্দ্র করে এই রায়টি দেওয়া হয়েছে, তারা কেউই নিজেদের ধর্ম পরিবর্তন করেননি। ধর্ম পরিবর্তন না করেই বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা ইসলামী শরীয়ত এবং দেশের প্রচলিত আইন দুটির সঙ্গেই সাংঘর্ষিক। ফলস্বরূপ, এই বিয়ে আইনিভাবে বৈধ নয়।
যদিও বিশেষ বিবাহ আইনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিয়ের প্রচলন ছিলো। তবে হাইকোর্ট তাদের রায়ে বিশেষ বিবাহ আইন (Special Marriage Act), ১৮৭২ এর সীমাবদ্ধতার দিকটিও তুলে ধরেন। আইনটি মূলত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ভিন্ন ধর্মের কাউকে বিয়ে করার সুযোগ দিলেও, মুসলিমদের ক্ষেত্রে এর প্রযোজ্যতা আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আদালত স্পষ্টভাবে বলেন, মুসলিম নারী ও পুরুষ মুসলিম পারিবারিক আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন বিধায় এই বিশেষ বিবাহ আইনের আওতায় তাদের এমন বিবাহ বৈধ হতে পারে না। ইসলামি শরিয়া আইন মোতাবেক কেবল একজন মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী কিংবা শর্তসাপেক্ষে আহলে কিতাব নারী (ইহুদি, খ্রিস্টান) বিবাহ বৈধ। তবে মুসলিম নারীদের জন্য কোনোভাবেই মুসলিম পুরুষ ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীকে বিয়ে করা বৈধ নয়।
কেবল বাংলাদেশেই নয়, সম্প্রতি ভারতের আইনি জগতেও একই ধরনের নজির দেখা গেছে। গত বছর ভারতের মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়েছিল, ধর্ম পরিবর্তন না করে হিন্দু-মুসলিম বিবাহ বৈধ নয়। উভয় আদালতের পর্যবেক্ষণে একটি সাধারণ বিষয় উঠে এসেছে: ধর্মান্তর ছাড়া এ ধরনের বৈবাহিক সম্পর্ক মানসিক দ্বন্দ্ব ও বিচ্ছেদের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
প্রসঙ্গত, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিবাহের সুযোগ দিতে ১৮৭২ সালে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ বিবাহ আইন প্রণয়ন করে। ১৯৫৪ সালে এতে সংশোধন আনা হলেও, মুসলিমদের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই এই আইন প্রযোজ্য নয়। হাইকোর্টের এই যুগান্তকারী রায়টি সাম্প্রতিক যে লাভ জিহাদ, ভাগওয়া ট্যাপের বিতর্ক চলছে তার লাগাম টানতে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা যায়।