16/05/2023
একবার আব্বার সাথে ঢাকা যাচ্ছিলাম। কোন এক স্টেশন থেকে একজন লোক ওঠলেন। কয়েক মিনিট পর আমি টয়লেটে যেতে ওঠে দাঁড়ালে আমাকে ডেকে বললেন "ভাই কি ওয়াশরুমে যাচ্ছেন, আপনি ফিরে আসতে আসতে আমি কি আপনার সিটে একটু বসতে পারি?" আব্বার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি ইশারা করছেন রাজি না হতে। তবুও মানবতা দেখিয়ে বসতে বললাম, কয়েক মিনিটের ব্যাপারই তো।
তো মূত্র বিসর্জন শেষে ওয়াশরুম থেকে ফিরে দেখি বান্দা আমার সিটে গভীর ঘুমে চলে গেছেন। বড়জোর ২-৩ মিনিটের ভেতরে কিভাবে ঘুমে চলে গেলেন আমি বুঝলাম না।
ভাবলাম, হয়তো বেচারা অনেক ক্লান্ত, ঘুমাক একটু। আধা ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলাম আমার সিটের পাশে। এরপর হালকা করে ডাক দিলাম, নড়ন-চড়ন নাই। আরো ২০ মিনিট পর আবার ডাকলাম। ঘুম।
ততোক্ষণে আব্বা ও ঘুম। আমি পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছি। এভাবে আরো, ১ ঘন্টা। এরমধ্যে অনেকবার ডাকলাম হালকা করে। একজন ঘূমন্ত মানুষকে কিভাবে ডাকি। পাশের মানুষজন পরামর্শ দিলো উনি ভং একটু জোরের সাথে ডাকার জন্য। আমার বিবেকে সাড়া দিচ্ছে না।
সামনের স্টেশন পড়ায় ট্রেনের হুইসেলে হোক যে কোন ভাবে বান্দা একটা চোখ হালকা করে খুললেন, আমি ও তাকিয়ে ছিলাম উনার চোখের দিকে। বললাম, 'ভাই, প্লিজ ওঠেন'
হালকাতালে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলতে 'আপনি ওয়াশরুম সেড়ে এসেছেন?' ততক্ষণে অলমোস্ট ২ ঘন্টা পাড়।
অনেকক্ষন পর নিজের সীটে বসতে পারলাম। বান্দা দরোজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবলাম, বাঁচা গেলো অবশেষে। এইবার বাকি পথ একটু রেস্ট নিয়ে যাবো।
এমন সময় ছোট প্রকৃতি আবার ডাক দিলো। ২ মিনিট লাগলো আমার আসতে আর যেতে। তাড়াহুড়ো করে ফিরে এলাম।
এবং এই দু'মিনিটের ভেতরেই আমাকে হতবাক করে দিয়ে বান্দা আবার আমার সিটে এসে ঘুমের ভং ধরে বসলো।
এইবার বেশ ভালোভাবেই ডেকে গেলাম একটু পরপর। না, যে জেগে ঘুমায় তাকে কি আর জাগানো যায়!!!!
এভাবেই বাকি যাত্রা গেলো।
বিমানবন্দর স্টেশনে আসার ঘোষণা এলো, অদ্ভুত ভাবে সুদির ভাই সাথে সাথেই ঝাঁকি দিয়ে ওঠে গেলো। আমার দিকে ফিরেও না তাকিয়ে নিজের ব্যাগেজ নিয়ে ট্রেন থেকে নেমে গেলো।
আমি আবার আমার সিটে বসার সুযোগ পেলাম।
এতক্ষনে আব্বা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ খুললেন, 'সোদানির ফুয়া, এলা তোর মানবতার বিষ মইজ্জি না?'
© Xahid Hasan