
01/09/2025
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন, বড় বড় সুপার শপে বা নামীদামি ব্র্যান্ডের জুতা-কাপড়ের শো রুমে যারা সার্ভিস দেয়, সেই ছেলে-মেয়েরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটানা দাঁড়িয়ে থাকে? তাদের পায়ের নিচে যেন মাটি শক্ত হয়ে যায়, কিন্তু বসার জন্য একটা ছোট্ট টুল পর্যন্ত থাকে না। নিয়ম নাকি এমন—গ্রাহক আসবে, তাদের দাঁড়িয়েই সেবা দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কেন? একজন মানুষ তো মেশিন না, মানুষও তো ক্লান্ত হয়, অবসন্ন হয়, শরীর ব্যথায় কাতর হয়। ঘোড়া নয়, তারা তো রক্ত-মাংসের মানুষ।
একবার নিজেই চেষ্টা করে দেখুন, একটানা কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা কতটা কষ্টকর। কোমর ব্যথা করবে, পা ফুলে যাবে, মাথা ঝিমঝিম করবে। অথচ এই তরুণ-তরুণীরা দিন পর দিন, মাসের পর মাস একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হাসিমুখে গ্রাহকদের সেবা দেয়। মুখে কিছু বলে না, ভদ্রতায় চাপা দিয়ে রাখে সবকিছু। কিন্তু অন্তরের ভেতরে কেমন যন্ত্রণা জমে থাকে, সেটা আমরা ক’জন বুঝতে চেষ্টা করি?
ব্যবসা-বাণিজ্য, টাকা-পয়সা—সবই ঠিক আছে। তবে মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখা কি আমাদের দায়িত্ব নয়? একটা ছোট্ট টুল, যাতে গ্রাহক না থাকলে তারা বসতে পারে—এটা দিতে কি এত সমস্যা? এতে ব্যবসার কি এমন ক্ষতি হবে? সামান্য মানবিকতার প্রকাশই তো যথেষ্ট, যাতে এই তরুণ-তরুণীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পায়।
সবচেয়ে কষ্টের জায়গা হলো, তারা অনেক সময় লজ্জায় নিজের কষ্টও প্রকাশ করতে পারে না। কাস্টমার চলে গেলে, দোকান ফাঁকা হলেও দাঁড়িয়ে থাকে কাচুমাচু হয়ে। যেন বসার অনুমতি চাওয়ার সাহসও তাদের নেই। অথচ তাদের শরীর ভেঙে পড়ে, চোখ-মুখ ক্লান্তিতে নিস্তেজ হয়ে যায়।
আমরা ভুলে যাই, একদিন এই ব্যবসা-বাণিজ্য, টাকা-পয়সা সবকিছুই রেখে চলে যেতে হবে। তবে এর মাঝেই যদি সামান্য মানবিকতা দেখাই, কারো ক্লান্ত শরীরকে একটু বিশ্রাম দিই, তাহলে সেটাই হয়তো জীবনের বড় অর্জন হয়ে দাঁড়াবে। একটি চেয়ার, একটি টুল—এতটুকুই তো দরকার। সত্যিই, এতে দুনিয়ার কিছু উল্টে যাবে না। উল্টো, মানুষ হিসেবে আমাদের মানবিকতাই আরও বড় হয়ে উঠবে।