12/10/2025
দেওবন্দ হামারা মাদারে ইলমি হ্যায়!
—আবুল আনসার মাহমুদ হাসান মাসরুর
দেওবন্দ হামারা মাদারে ইলমি হ্যায়!!
ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকী দামাত বারাকাতুহুমের এই সরল অথচ গভীর স্বগতোক্তি আজ পুরো উম্মাহর হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। অনেক বড় বাস্তবতার সংক্ষিপ্ততম শিরোনাম—দেওবন্দ হামারা মাদারে ইলমি হ্যায়! আমরাও তাঁর সাথে সর্বান্তকরণে বলি—দেওবন্দ হামারা মাদারে ইলমি হ্যায়!!!
আফগানিস্তানে যে ইসলামী বিপ্লব ঘটেছে, তার শেকড় নিহিত রয়েছে ফিকরে দারুল উলুম দেওবন্দের মাটিতে। শাহ অলিউল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শাহ আবদালী পর্যন্ত এক ঐতিহাসিক সংযোগ এই চিন্তার ভিত্তি রচনা করেছে। শাহ আব্দুল আজিজ রহ., সৈয়দ আহমদ রায় বেরেলভী রহ., শাহ ইসমাইল শহীদ রহ., কাসেম নানুতুবী রহ., রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী রহ. এবং শাইখুলহিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহিম—তাঁদের ত্যাগ, চিন্তা ও কর্মপদ্ধতিই আজকের আফগান বিপ্লবের মেরুদণ্ড।
তবে বাস্তবতা এই যে, নব্বইয়ের দশকের আন্তর্জাতিক রাজনীতি, পাকিস্তানি এস্টাবলিশমেন্টের সহযোগিতা ও আরব মুজাহিদদের চিন্তাধারাও এতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা কামনা করি, ইমারাতে ইসলামিয়ার এই বিপ্লব যেন অন্তত শত বছর স্থায়ী হয়, আফগানিস্তান যেন একটি সুসংহত ইসলামী রাষ্ট্রের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যায়।
আমাদের দোয়া—এটি যেন একটি সুন্নি সংবিধানের আদর্শ নমুনা হয়; ইসলামী বিচারব্যবস্থার সমৃদ্ধ লিখিত নজির, শরঈ অর্থব্যবস্থার বাস্তব মডেল, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ কাঠামো, উন্নয়ন-উৎপাদন ও সামরিক শক্তির কেন্দ্রবিন্দু এবং বিশ্বমঞ্চে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে ওঠে।
তবে আজ আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে যে সাফল্য এসেছে, প্রশাসনিক কাঠামোয় তার সমান দৃঢ়তা এখনও আসেনি। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্কেও বাস্তব পরিস্থিতি আশানুরূপ নয়। আগের শাসনামলে নীতিগত ভুলের কারণে আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের কাজ পিছিয়ে গিয়েছিল; এবারো কিছু বিদ্রোহী মানসিকতার কারণে পাকিস্তানের মতো প্রধান মিত্রের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়ছে। এতে উভয় রাষ্ট্রই দুর্বল হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা মুসলিম উম্মাহ। পাকিস্তানের আলেমসমাজের সমর্থনও ক্রমশ কমছে ইমারতের ওপর থেকে। আশঙ্কা জাগে—আধুনিক ইসলামী রাষ্ট্রের যে স্বপ্ন, তা যেন অধরাই না থেকে যায়!
মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভী আমির খান মুত্তাকী দামাত বারাকাতুহুম যথার্থই বলেছেন—
"دارالعلوم دیوبند ہر سطح پہ کام کرنے کا منہج دیا ہے۔"
অর্থাৎ—যখন, যেখানে, যেভাবে কাজ করা প্রয়োজন, তার মানহাজ ও কর্মপদ্ধতি আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছে আকাবিরে দারুল উলুম দেওবন্দ। ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান—প্রত্যেক ভূখণ্ডের বাস্তবতায় আলাদা কর্মধারা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তাঁরা। আর এই কারণেই এসেছে কামিয়াবি।
হে আল্লাহ! তুমি দারুল উলুম দেওবন্দের ইলমি ও ফিকরি নেতৃত্ব অক্ষুণ্ন রাখো। উম্মতকে রাহনুমা করার মতো যোগ্য আহলে ইলম দান করো।
হে আল্লাহ! তুমি তোমার কুদরতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ মুছে দাও, তাদের পরস্পরের হৃদয়ে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন স্থাপন করো। সকল ষড়যন্ত্র ও বিভেদ দূর করে ইসলাম ও মুসলমানের কল্যাণে একসাথে এগিয়ে আসার তৌফিক দান করো।
আমিন।
লেখক: প্রশিক্ষণ সম্পাদক, যুব জমিয়ত বাংলাদেশ