29/01/2022
প্রায় ৩০০ বই দিয়ে উপন্যাসের প্রথম সংস্করণ বাজারে আনে আমার নতুন লেখক এক বন্ধুর বহুত পুরানো এক প্রকাশক।
প্রকাশকের চুক্তি হলো, সেই ৩০০ ছাপানো বইয়ের অর্ধেক অর্থাৎ ১৫০ টি বইয়ের ব্যায়ভার বহন করবেন আমার লেখক বন্ধু এবং বাকী ১৫০ টি বই ছাপাবেন মহাশয় প্রকাশক। উপরন্তু, দয়া পরবশত হয়ে নবীন লেখকের বই ছাপানোর রিক্স নেবার জন্য প্রকাশক তার নিজের ছাপানো সেই দেড়শত খানা বইয়ের ভিতর থেকে আবার অর্ধ শতখানা লেখক বন্ধুকে ফ্লাট রেটে বেচে দিবেন। অর্থাৎ সরলীকরণ করলে দাঁড়ায়, আমার বন্ধুটির কাজ হবে ১৫০ খানা বইয়ের খরচ বহন এবং প্রকাশকের ছাপানো ৫০ খানা বই নিজ অর্থে ক্রয় (নিজের বই নিজে কেনা...) এবং বেচে দেয়া।
বই প্রকাশের প্রথম দু মাস দেখা হলেই প্রকাশক অন্তরিকভাবে তার অফিসে বসিয়ে বন্ধুকে লেবু চা খাওয়াতেন আর গভীর দুঃখের সাথে জানাতেন বইটার বিক্রি বাট্টা একদম নাই। ভালো লেখা কেউ নাকি পড়ে না। তবে তিনি প্রচুর উৎসাহ দিতেন লেখা চালিয়ে যেতে এবং মাঝে মাঝে ফোন করে বন্ধুর নতুন লেখার খোঁজ খবরও নিতেন। তৃতীয় মাসেই প্রকাশক সাহেব আমার বন্ধুটির কাছ থেকে তার দ্বিতীয় বইটিও আদায় করে নেন।
দুঃখের ঘটনা হলো সেইবারও আমার লেখক বন্ধুটির বইখানি প্রথম সংস্করণের মায়া কাটিয়ে উঠতে পারলো না।
আমার সেই বন্ধুটি সেই আমলে লিটিলম্যাগের নিয়মিত লেখক ছিলো, তার পরিচিতের গণ্ডীও কম বৃহৎ ছিলো না এবং বেশ অনেক বছর পরেও আমরা প্রায়শই বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক আড্ডায় চেনা অচেনা মানুষদের হাতে তার বই দুটো দেখতাম। তবে সবই সেই প্রথম সংষ্করন, ফার্ষ্ট এডিশন।
আমার লেখক বন্ধুটি দেড় বছরের মাথায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্ত নেয়। প্রথম সিদ্বান্ত, সে আর লেখালেখি করবে না। দ্বিতীয় সিদ্বান্ত, সে প্রকাশক হবে, প্রকাশনী দিবে সে।
সম্ভবত, ১৩/১৪ সালে বন্ধুর সাথে বইমেলায় দেখা। মেলায় দোকান পাতানো রীতিমতো ঝানু ব্যাবসায়ী সে। অনেক নামী পরিচিত লেখকের বই ছাপা হয় তার প্রকাশনী থেকে। কথায় কথায় জানলাম বহু বছর আগে কেন তার চমৎকার দুটি বই কখনো প্রথম সংষ্করনের গোলকধাঁধা থেকে বের হতে পারেনি এখন সেটা সে জানে। তার প্রকাশনীতেও বেশ কিছু নবীন পোষ্য ভালো লেখক আছে যাদের লেখা বই কখনোই ৩০০ কপির বেশি বিক্রি ছোঁবে না।
সেদিন বিচ্ছিন্ন হবার আগে লেখক/প্রকাশক বন্ধুটি একটা আশাব্যাঞ্জক কথা শুনিয়েছিলো আমাকে। তার অতীত বই বিক্রির রহস্য উদঘাটনের পর থেকে সে নাকি মাঝে মাঝে আবার লেখালেখির পায়তারা করে।
কিছুটা বিব্রত ভাঙ্গীতে তাৎক্ষনিক কয়েক পাতা পড়েও শোনালো সে আমাকে। তবে ব্যাবসার জন্য নাকি বন্ধু আমার লেখালেখিতে সময় দিতে পারে না আর ওর বদ্ধমূল ধারনা প্রকাশনীর মতো ব্যাবসা বন্ধ না করলে তার লেখক স্বত্তার পুনর্জীবন এ জীবনে ঘটবে না...
কিছুদিন আগে বন্ধুটি ফোন করে জানালো, তার লেখক জীবনের দুঃসহ প্রথম সংষ্করনের ফাঁড়া কাটতে যাচ্ছে অচিরেই। তার আগের দুটি বই এক মলাটে এনে, নিজেই পুনঃপ্রকাশ করতে যাচ্ছে নিজের বই। তার কথার মূল সুর, "শুধু লেখক বলে এতোদিন শুধু ঠকেই গেলাম, এবার আমায় ঠকায় কে?"
বিদ্রঃ নট ফর সেল ক্লাবের অন্যতম একটা উদ্দেশ্য প্রকাশকের এই শৃঙ্খলা থেকে লেখককে মুক্ত করা। কিন্তু কিভাবে? জানতে আমাদের সাথে থাকুন। ❤️