পুঁথি

পুঁথি পুঁথি মূলত ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, মিথলজি, অর্থনীতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নন ফিকশন বই এবং বইয়ের সামারি প্রকাশ করে।
(1)

উত্তরে সাহারা মরুভূমি আর দক্ষিণে সুদানের সাভানা তৃণভূমি–এর মাঝখানে যে অঞ্চলটা আছে সেটা হলো আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। সাহেলের...
29/10/2025

উত্তরে সাহারা মরুভূমি আর দক্ষিণে সুদানের সাভানা তৃণভূমি–এর মাঝখানে যে অঞ্চলটা আছে সেটা হলো আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। সাহেলের দশটি দেশই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে অ/শান্তির জায়গা। কারণ অনেকগুলো। বেশিরভাগ দেশেই হয় সা/মরি/ক শাসন চলছে, অথবা সরকার খুবই দুর্বল। স/ন্ত্রা/স, জ/ঙ্গিবা/দ, গোলা/গু/লি থামানোর মতো শক্তি প্রশাসনের নেই। তার ওপর প্রতিনিয়ত লিবিয়া থেকে অ/স্ত্র ঢুকছে অবাধে। জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে খুব দ্রুত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলটি মহাখরার কবলে আছে প্রায় চারশ বছর ধরে। পাশাপাশি আছে বিদেশি শক্তির নাক গলানো। এছাড়াও এই অঞ্চলের যাযাবর পশুপালক ও কৃষকদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব আছে। এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে। সঙ্গে আছে স্থানীয় ক্রি/মি/নাল গ্যাং। এই অঞ্চলটা নরক হওয়ার জন্য এগুলোই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বোনাস হিসেবে আছে কয়েকটি জ/ঙ্গি গোষ্ঠী এবং তাদের মধ্যে বিবাদ। আ/ইসি/স, বো/কো হারাম, আল/কা/য়েদা সবাই আছে এই অঞ্চলে। এতসব সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলে সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও মারাত্মক অপ/রা/ধপ্রবণ হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এই অঞ্চলের সমস্যা আর অ/শান্তি শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। রপ্তানি হচ্ছে। শুধুমাত্র বিগত কয়েক বছরেই এই অঞ্চলের ৩.৮ মিলিয়ন মানুষ এই অঞ্চল থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে গিয়ে ঢুকেছে। তুলনামূলক কম জনসংখ্যার অঞ্চল হলেও ইউরোপে ২৬ মিলিয়নের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এই হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে শর/ণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইউরোপ ইতিমধ্যে প্রচুর চাপের মধ্যে আছে। তার ওপর সাহেল অঞ্চল থেকে আসা শর/ণার্থীরা এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতি থেকে এসেছে যে তারা ইউরোপীয় সমাজের সঙ্গে মোটেই খাপ খাওয়াতে পারছে না। অন্যদিকে বেশিরভাগ ইউরোপীয় নাগরিক এই অঞ্চলের মানুষ এবং তাদের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এর ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে একটা নতুন ভয়ংকর পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশ এই খারাপ প্রভাব বুঝতে পেরেছে এবং সেই সমস্যা সামাল দিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সুইডেনে ঘন ঘন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, নরওয়েতে ব/ন্দু/ক হা/মলা হচ্ছে। তাহলে ইউরোপ কি শর/ণার্থী বিষয়ে তাদের অবস্থান বদলাতে যাচ্ছে? আর ইতোমধ্যে যে সমস্যার বীজ তৈরি হয়েছে– ইউরোপ কি এই সমস্যা সামাল দিতে পারবে? অন্যদিকে সাহেল হলো একটা সমস্যার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতে যে বোমা তৈরি হচ্ছে সেই বোমা কখন বি/স্ফো/রিত হবে? কারাই বা বি/স্ফোরণ ঘটাবে? এখানে ফ্রান্স এবং আমেরিকার সেনাবাহিনী যে স/ন্ত্রা/সবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তার ভবিষ্যৎ কী? সাহেল অঞ্চল আগামী দিনে কিভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে?

এবার আসি সৌদি আরবের দিকে। ১৭৪০ সালে মধ্য আরবের নাজদ অঞ্চলের বেশ কিছু অংশ স্থানীয় আমির মুহাম্মাদ বিন সৌদ নিয়ন্ত্রণ করতেন। ১৯৩০ সালের মধ্যে তাঁর এক বংশধর নিজেদের শাসন এলাকা আরও অনেকখানি বৃদ্ধি করেন এবং এলাকার নাম বদলে নাম রাখেন সৌদি আরব। এখন একটা দেশের নাম যদি একটা পরিবারের নামে রাখা হয়, তাহলে ওই দেশের অন্য পরিবারগুলোর কী হবে! শুনতে আজব শোনালেও সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। এর ফলে দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক জটিলতা। দেশটির উপসাগর অঞ্চলে রয়েছে বেশ কিছু শিয়া ধর্মা/বলম্বী। উ/গ্র সুন্নি মতবাদের বিকাশের ফলে সেখানে জন্ম নিয়েছে অসন্তোষ। কিন্তু ১৯৩৮ সালে আমেরিকানরা সৌদি আরবে তেলের সন্ধান পায়, ফলে বদলে যায় সৌদি আরবের পরবর্তী ইতিহাস। তেল এনে দেয় সম্পদ, সম্পদ এনে দেয় বিশ্বের বড় বড় শক্তির ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু তেল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এক সময় তেল শেষ হয়ে যাবে, আর অন্যদিকে বিশ্বেও তেলের চাহিদা কমবে। তাই সৌদি আরবকে এখন বিকল্প খুঁজতে হচ্ছে। এই বিকল্প অর্থনীতি কি ঘনিষ্ঠতা পরিবর্তন করবে? কোন পথে যাচ্ছে সৌদি আরব? সৌদির পরবর্তী অর্থনীতি কি কয়েক শত বছরের পুরোনো ইসলামী সংস্কৃতিকে বিলুপ্ত করে দেবে? কেমন হবে সৌদি আরবসহ বাকি আরব বিশ্ব?

অন্যদিকে ভূ-রাজনীতি ভূমি থেকে আকাশে উঠতে যাচ্ছে। কারণ ভূমিতে যেমন সম্পদ আছে, তেমনি চাঁদেও আছে। ভূমিতে জায়গা দখল করলে ব/ন্দু/ক রাখার স্টেশন বানানো যায়, তেমনি মহাকাশ বা চাঁদেও স্টেশন বানানো প্রয়োজন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং লুক্সেমবার্গ আর্টেমিস চুক্তি নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী তারা ২০২৮ সালে চাঁদে ১৩তম মানুষ এবং প্রথম নারী পাঠাবে। এই অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো চাঁদে একটি বেস ক্যাম্প তৈরি করা এবং খনিজ সম্পদ আহরণ করা। কিন্তু এই বেস ক্যাম্পটিই পরবর্তীতে দূর-মহাকাশে মানব বসতি স্থানান্তরের জন্য লঞ্চপ্যাড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। চুক্তি অনুযায়ী যেসব দেশ এতে অংশ নেবে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে তাদের অবশ্যই ২০২৪ সালের মধ্যে স্বাক্ষর করতে হবে এবং কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে হবে। এতে পরবর্তীতে ২১টি দেশ স্বাক্ষর করলেও বাকি দেশগুলো স্বাক্ষর করেনি। কিন্তু সমস্যা সেটা না। সমস্যা হলো— এতে না স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া, না স্বাক্ষর করেছে চীন। প্রথমত এরা স্বাক্ষর করবে না, আর স্বাক্ষর করতে চাইলেও সম্ভবত এদের স্বাক্ষর করতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে স্পেস স্টেশন নিয়েও আমেরিকার সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব হয়েছে। তাই স্পেস স্টেশনেও আর আমেরিকা ও রাশিয়া একসঙ্গে কাজ করছে না। চীন আর রাশিয়া আলাদা আলাদাভাবে চাঁদে তাদের বেস স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এখন রাশিয়া, চীন বা আমেরিকা— কেউই চাইবে না চাঁদে বেস ক্যাম্প করার জন্য প্রতিপক্ষ কোনো নিয়ম তৈরি করুক। কেই-ইবা অন্যের তৈরি করা নিয়ম মানতে চায়! রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রধান Dmitry Rogozin (দিমিত্রি রোগোজিন) ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে— কোনো রকম সম্মতিতে না এসে চাঁদে বা মহাকাশে আগ্রাসন চালালে আরেকটি আফগানিস্তান বা ইরাক তৈরি হতে পারে। তাহলে এতসব দ্বন্দ্বের মধ্যে কেমন হতে যাচ্ছে আগামী দিনের মহাকাশ রাজনীতি?

বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক ও লেখক টিম মার্শালের মতে, দশটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আগামী দিনের বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে। এই অঞ্চলগুলো হলো— ইরান, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, তুরস্ক, গ্রিস, সাহেল, ইথিওপিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া এবং মহাকাশ। তিনি তাঁর The Power of Geography (দ্য পাওয়ার অব জিওগ্রাফি) বইতে এই অঞ্চলগুলোর ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছেন। যারা লেখকের প্রথম বই Prisoners of Geography ( প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি) সম্পর্কে জানেন, তাঁদের কাছে লেখককে নতুন করে পরিচয় করানোর প্রয়োজন নেই। ভদ্রলোকের ভাষা একদম পরিষ্কার; যা বলতে চান, তা খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। ভূ-রাজনীতি নিয়ে যদি আপনার আগ্রহ থাকে, তাহলে অবশ্যই বইটি পড়ে ফেলুন।

'পাওয়ার অব জিওগ্রাফি' বইটা চলে এসেছে এবং কুরিয়ার করা হয়েছে, প্রি অর্ডারের বইগুলো কাল/পরশুর মধ্যেই হাতে পেয়ে যাবেন। বইটা ...
27/10/2025

'পাওয়ার অব জিওগ্রাফি' বইটা চলে এসেছে এবং কুরিয়ার করা হয়েছে, প্রি অর্ডারের বইগুলো কাল/পরশুর মধ্যেই হাতে পেয়ে যাবেন।

বইটা সময়মত বের করতে না পারায় আমরা অত্যন্ত দু:খিত। আশা করি এর পর থেকে আমাদের আর বিলম্ব হবে না।

বইটির সূচিপত্র পড়ে দেখার লিংক কমেন্টে দেয়া হলো।

20/10/2025

ময়মনসিংহ গীতিকার অন্তর্গত ‘মহুয়া পালা’র পুঁথি পাঠের একাংশ।

Heritage Walk Dhaka এর অসাধারণ এই উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এমন আয়োজন আরও বেশি বেশি হোক। বাংলার সংস্কৃতি বেঁচে থাকুক হাজার বছর ধরে।

#পুঁথি #পুঁথিপাঠ #মহুয়াপালা #ময়মনসিংহগীতিকা

Heritage Walk Dhaka আয়োজিত "হাজার বছর ধরে- পর্ব ৩" এর এই আসরে নলেজ পার্টনার হিসেবে ছিল পুঁথি।১৮ অক্টোবর,  শনিবার সন্ধ্যা...
19/10/2025

Heritage Walk Dhaka আয়োজিত "হাজার বছর ধরে- পর্ব ৩" এর এই আসরে নলেজ পার্টনার হিসেবে ছিল পুঁথি।

১৮ অক্টোবর, শনিবার সন্ধ্যায়, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল ভায়োলিন, চেলো, গিটারবাদনের ঐকতান! ময়মনসিংহ গীতিকার মহুয়া পালার পুঁথি পাঠ, ছিল কবিতা আবৃতি এবং বাংলার ফুল, পাখি, নদী আর ধানের গান!

এমন আয়োজন হাজার বছর ধরে চলতে থাক।

আশ্চর্য শোনালেও সত্য! ঢাকায় এখনো পুঁথি পাঠ হয়! পুঁথি পাঠের এই আয়োজনে নলেজ পার্টনার হিসেবে আছে পুঁথি। বাংলা ভাষা ও ঐতিহ্য...
14/10/2025

আশ্চর্য শোনালেও সত্য! ঢাকায় এখনো পুঁথি পাঠ হয়!

পুঁথি পাঠের এই আয়োজনে নলেজ পার্টনার হিসেবে আছে পুঁথি। বাংলা ভাষা ও ঐতিহ্যের এই চর্চায় পাশে থাকতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

দারুণ এই পুঁথি পাঠের আসরের আয়োজন করেছে Heritage Walk Dhaka। আগামী দিনগুলোতেও পুঁথি ও হেরিটেজ ওয়াক ঢাকা একসাথে কাজ করবে।

ইভেন্টের ডিটেইলস কমেন্টে দেওয়া হলো। টিকেট সংখ্যা সীমিত, তাই অসাধারণ এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে চাইলে এখনই আপনার বুকিং কনফার্ম করে ফেলুন।

মুদ্রন জটিলতার কারনে পাওয়ার অব জিওগ্রাফি বইটি প্রকাশ হতে কয়েকদিন বেশি সময় লাগছে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সবকিছু ব...
12/10/2025

মুদ্রন জটিলতার কারনে পাওয়ার অব জিওগ্রাফি বইটি প্রকাশ হতে কয়েকদিন বেশি সময় লাগছে। এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা আগামী ১৮ তারিখ পর্যন্ত প্রি-অর্ডারের সময় বৃদ্ধি করছি।

আমরা আমাদের বিচক্ষণ পাঠকদের উপর সব সময়ই আস্থা রাখি। আমরা জানি আপনারা সব সময় মানসম্পন্ন বই পেতে চান, কয়েকদিন বেশি সময় লাগলে সেটা আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে ব্যাবিলনের রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার যখন জেরুজালেম শহর দখল করে বহু ই।হুদিকে বন্দি করে ব্যাবিলনে ...
10/10/2025

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে ব্যাবিলনের রাজা দ্বিতীয় নেবুচাদনেজার যখন জেরুজালেম শহর দখল করে বহু ই।হুদিকে বন্দি করে ব্যাবিলনে নিয়ে যায়, তখন কিছু ই।হুদি পরিবার পারস্যের আকেমেনীয় সাম্রাজ্যে স্থায়ী হয়। পারস্যের রাজা সাইরাস দ্য গ্রেট পরে ইহুদিদের জেরুজালেমে ফিরে যেতে অনুমতি দেন, কিন্তু সবাই ফেরেনি। অনেকেই থেকে যায় পারস্যে, অর্থাৎ আজকের ইরান অঞ্চলে। এই ই।হুদীদের কীভাবে ই।সরায়েল কাজে লাগায় তার একটা আভাস দেওয়া আছে জনাথন কুকের ই।সরায়েল ও সভ্যতার সংঘাত বইতে।

কোয়ান্টাম টানেলিং হবে শুধুমাত্র ইলেকট্রনের মতো অতিক্ষুদ্র পার্টিকেলের ক্ষেত্রে, বা এই ধরনের মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে। কিন্ত...
07/10/2025

কোয়ান্টাম টানেলিং হবে শুধুমাত্র ইলেকট্রনের মতো অতিক্ষুদ্র পার্টিকেলের ক্ষেত্রে, বা এই ধরনের মাইক্রোস্কোপিক স্কেলে। কিন্তু কয়েকজন বিজ্ঞানী পরীক্ষা করে দেখেছেন যে কোয়ান্টাম টানেলিংসহ অন্যান্য কোয়ান্টাম মেকানিক্যাল ইফেক্ট আরও বড় ম্যাক্রোস্কোপিক স্কেলেও ঘটে। এবং সেটা মেপে টেপে দেখা বা নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। এইখানে একটা বিশাল এক্সাইটিং বিষয় আছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার নামের যে জিনিসটা তৈরি করতে পারলে কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রে একটা বিশাল বিপ্লব ঘটবে–এই আবিষ্কারের ফলে সেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করার বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই আবিষ্কারের ফলে সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট তৈরি থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি এবং কোয়ান্টাম সেন্সর ইত্যাদি তৈরিতেও অগ্রগতি আসবে। এই আবিষ্কারের জন্যই মূলত ২০২৫ সালের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।

আরও মজার একটা বিষয় বলি।

আমরা স্মার্টফোনে যে প্রসেসরগুলো ব্যবহার করি এই প্রসেসরগুলো তৈরি করতে ন্যানোমিটার স্কেলে সার্কিট প্রিন্ট করতে হয়। এই কাজটা করা হয় এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট লিথগ্রাফি নামের একটা টেকনোলজির সাহায্যে। সার্কিটগুলো এতই সূক্ষ্ম যে এই পর্যায়ে এসে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কোয়ান্টাম টানেলিং ইফেক্ট শুরু হয়ে যায়। ইলেকট্রন দেয়াল ভেদ করে লিক করা শুরু করে। ফলে সার্কিট গরম হয়ে উঠে। ইলেকট্রন যে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়ম মেনে চলে এটা প্রমাণ করার জন্য আর কোনো এক্সপেরিমেন্ট করার দরকার নেই। মাইক্রোপ্রসেসর তৈরি করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা একদম হাতে-নাতে এই সমস্যা ফেস করেছেন। এই বিষয়টা ক্রিস মিলালের চিপ ওয়ার বইতে উল্লেখ আছে। চাইলে বইটা পড়ে দেখতে পারেন। বইটার বাংলা অনুবাদ পুঁথি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

উত্তরে সাহারা মরুভূমি আর দক্ষিণে সুদানের সাভানা তৃণভূমি–এর মাঝখানে যে অঞ্চলটা আছে সেটা হলো আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। সাহেলের...
05/10/2025

উত্তরে সাহারা মরুভূমি আর দক্ষিণে সুদানের সাভানা তৃণভূমি–এর মাঝখানে যে অঞ্চলটা আছে সেটা হলো আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। সাহেলের দশটি দেশই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে অশান্তির জায়গা। কারন অনেকগুলো। বেশিরভাগ দেশেই হয় সামরিক শাসন চলছে, অথবা সরকার খুবই দুর্বল। স/ন্ত্রা/স, জ/ঙ্গি/বাদ, গো/লাগুলি থামানোর মত শক্তি প্রশাসনের নেই। তার উপর প্রতিনিয়ত লিবিয়া থেকে অ/স্ত্র ঢুকছে অবাধে। জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে খুব দ্রুত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলটি মহা-খড়ার কবলে আছে প্রায় চারশ বছর ধরে। পাশাপাশি আছে বিদেশী শক্তির নাক গলানো। এছাড়াও এই অঞ্চলের যাযাবর পশুপালক ও কৃষকদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব আছে । এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে । সাথে আছে স্থানীয় ক্রি/মিনাল গ্যাং। এই অঞ্চলটা ন/রক হওয়ার জন্য এগুলোই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বোনাস হিসেবে আছে কয়েকটি জ/ঙ্গি গোষ্ঠী এবং তাদের মধ্যে বিবাদ। আ/ই/সিস, বো/কো হারাম, আল কা/য়েদা সবাই আছে এই অঞ্চলে। এতসব স/হিংসতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলে সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও মারাত্মক অপ/রাধপ্রবণ হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এই অঞ্চলের সমস্যা আর অশান্তি শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। রপ্তানি হচ্ছে। শুধুমাত্র বিগত কয়েক বছরেই এই অঞ্চলের ৩.৮ মিলিয়ন মানুষ এই অঞ্চল থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে গিয়ে ঢুকেছে। তুলনামূলক কম জনসংখ্যার অঞ্চল হলেও ইউরোপে ২৬ মিলিয়নের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এই হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইউরোপ অলরেডি প্রচুর চাপের মধ্যে আছে। তার উপর সাহেল অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীরা এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতি থেকে এসেছে যে তারা ইউরোপীয় সমাজের সাথে মোটেই খাপ খাওয়াতে পারছে না। অন্যদিকে বেশিরভাগ ইউরোপীয় নাগরিক এই অঞ্চলের মানুষ এবং তাদের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এর ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে একটা নতুন ভ/য়ংকর পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে সুইডেনসহ বেশকিছু দেশ এই খারাপ প্রভাব বুঝতে পেরেছে এবং সেই সমস্যা সামাল দিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সুইডেনে ঘন ঘন আতংক ছড়াচ্ছে, নরওয়েতে ব/ন্দুক হা/মলা হচ্ছে। তাহলে ইউরোপ কি শরণার্থী বিষয়ে তাদের অবস্থান বদলাতে যাচ্ছে? আর ইতোমধ্যে যে সমস্যার বীজ তৈরি হয়েছে– ইউরোপ কি এই সমস্যা সামাল দিতে পারবে? অন্যদিকে সাহেল হলো একটা সমস্যার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতে যে বো/মা তৈরি হচ্ছে সেই বো/মা কখন বি/স্ফো/রিত হবে? কারাই বা বি/স্ফোরন ঘটাবে? এখানে ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকার সেনাবাহিনী যে স/ন্ত্রা/স বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তার ভবিষ্যৎ কী? সাহেল অঞ্চল আগামী দিনে কিভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে?

এবার আসি সৌদি আরবের দিকে। ১৭৪০ সালে মধ্য আরবের নাজদ অঞ্চলের বেশ কিছু অংশ স্থানীয় আমির মুহাম্মাদ বিন সৌদ নিয়ন্ত্রন করতেন। ১৯৩০ সালের মধ্যে তার এক বংশধর নিজেদের শাসন এলাকা আরও অনেকখানি বৃদ্ধি করেন এবং এলাকার নাম বদলে নাম রাখেন সৌদি আরব। এখন একটা দেশের নাম যদি একটা পরিবারের নামে রাখা হয়, তাহলে ওই দেশের অন্য পরিবারগুলোর কি হবে! শুনতে আজব শোনালেও সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। এর ফলে দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক জটিলতা। দেশটির উপসাগর অঞ্চলে রয়েছে বেশকিছু শিয়া ধর্মাবলম্বী। উ/গ্র সুন্নি মতবাদের বিকাশের ফলে সেখানে জন্ম নিয়েছে অসন্তোষ। কিন্তু ১৯৩৮ সালে অ্যামেরিকানরা সৌদি আরবে তেলের সন্ধান পায়, ফলে বদলে যায় সৌদি আরবের পরিবর্তী ইতিহাস। তেল এনে দেয় সম্পদ, সম্পদ এনে দেয় বিশ্বের বড় বড় শক্তির ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু তেল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এক সময় তেল শেষ হয়ে যাবে, আর অন্যদিকে বিশ্বেও তেলের চাহিদা কমবে। তাই সৌদি আরবকে এখন বিকল্প খুজতে হচ্ছে। এই বিকল্প অর্থনীতি কি ঘনিষ্ঠতা পরিবর্তন করবে? কোন পথে যাচ্ছে সৌদি আরব? সৌদির পরবর্তী অর্থনীতি কি কয়েকশত বছরের পুরনো ইসলামী সংস্কৃতিকে বালিত করে দেবে? কেমন হবে সৌদি আরবসহ বাকি আরব বিশ্বে?

অন্যদিকে ভূ-রাজনীতি ভূমি থেকে আকাশে উঠতে যাচ্ছে। কারন ভূমিতে যেমন সম্পদ আছে, তেমনি চাঁদেও আছে। ভূমিতে জায়গা দখল করলে ব/ন্দু/ক রাখার ষ্টেশন বানানো যায়, তেমনি মহাকাশ বা চাঁদেও ষ্টেশন বানানো প্রয়োজন। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে অ্যামেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং লুক্সেমবার্গ আর্টেমিস চুক্তি নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী তারা ২০২৮ সালে চাঁদে ১৩ তম মানুষ এবং প্রথম নারী পাঠাবে। এই অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো চাঁদে একটি বেজ ক্যাম্প তৈরি করা এবং খনিজ সম্পদ আহরন করা। কিন্তু এই বেজ ক্যাম্পটিই পরবর্তীতে দূরমহাকাশে মানব বসতি স্থানান্তরের জন্য লাঞ্চ প্যাড হিসেবে ব্যবহৃত হবে। চুক্তি অনুযায়ী যেসব দেশ এতে অংশ নেবে এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে তাদের অবশ্যই ২০২৪ সালের মধ্যে স্বাক্ষর করতে হবে এবং কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে হবে। এতে পরবর্তীতে ২১ টি দেশ স্বাক্ষর করলেও বাকি দেশগুলো স্বাক্ষর করেনি। কিন্তু সমস্যা সেটা না। সমস্যা হলো- এতে না স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া, না স্বাক্ষর করেছে চীন। প্রথমত এরা স্বাক্ষর করবে না, আর স্বাক্ষর করতে চাইলেও সম্ভবত এদের স্বাক্ষর করতে দেওয়া হবে না।

অন্যদিকে স্পেস ষ্টেশন নিয়েও অ্যামেরিকার সাথে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব হয়েছে। তাই স্পেস স্টেশনেও আর অ্যামেরিকা ও রাশিয়া একসাথে কাজ করছে না। চীন আর রাশিয়া আলাদা আলাদাভাবে চাঁদে তাদের বেজ ষ্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। এখন রাশিয়া, চীন বা অ্যামেরিকা কেউই চাইবে না চাঁদে বেজ ক্যাম্প করার জন্য প্রতিপক্ষ কোন নিয়ম তৈরি করুক। কে’ইবা অন্যের তৈরি করা নিয়ম মানতে চায়! রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রধান Dmitry Rogozin অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন যে– কোন রকম সম্মতিতে না এসে চাঁদে বা মহাকাশে আগ্রাসন চালালে আরেকটি আফগানিস্থান বা ইরাক তৈরি হতে পারে। তাহলে এতসব দ্বন্দ্বের মধ্যে কেমন হতে যাচ্ছে আগামী দিনের মহাকাশ রাজনীতি?

বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং লেখক টিম মার্শালের মতে দশটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আগামী দিনের বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে। এই অঞ্চলগুলো হলো- ইরান, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, তুরস্ক, গ্রিস, সাহেল, ইথিওপিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া এবং মহাকাশ। তিনি তার পাওয়ার অফ জিওগ্রাফি বইতে এই অঞ্চলগুলোর ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন। যারা লেখকের প্রথম বই প্রিজনার্স অফ জিওগ্রাফি সম্পর্কে জানেন তাদের আর লেখক সম্পর্কে নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ভদ্রলোকের ভাষা একদম পরিষ্কার। যা বলতে চান খুব সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে পারেন। ভূ-রাজনীতি নিয়ে যদি আপনার আগ্রহ থাকে তাহলে অবশ্যই বইটি পড়ে ফেলুন।

সূচিপত্রসহ কিছু পেইজ পড়ে দেখুনঃ https://puthii.com/product/power-of-geography/

ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপটি যেন সমুদ্রের মধ্যে অদ্ভুত এক দুনিয়া। সমগ্র দ্বীপ জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি, এদের মধ্যে...
02/10/2025

ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরেস দ্বীপটি যেন সমুদ্রের মধ্যে অদ্ভুত এক দুনিয়া। সমগ্র দ্বীপ জুড়ে রয়েছে অনেকগুলো আগ্নেয়গিরি, এদের মধ্যে কিছু কিছু এখনো সক্রিয়। দ্বীপের পুরো ভূখণ্ড পাহাড়ি ও দুর্গম। অনেক জায়গায় রয়েছে ঘন জঙ্গল, আবার উপকূলে রয়েছে প্রবাল প্রাচীর আর নীল সমুদ্র। এখানে আছে কেলিমুতু আগ্নেয়গিরি—যার তিনটি হ্রদের পানি ভিন্ন ভিন্ন রঙে ঝলমল করে। কখনো নীল, কখনো সবুজ আবার কখনো লালচে। এই দ্বীপের পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বিখ্যাত কোমোডো দ্বীপ ও রিঙ্কা দ্বীপ, যেখানে পাওয়া যায় পৃথিবীর বৃহত্তম টিকটিকি ‘কোমোডো ড্রাগন’। এই ফ্লোরেস দ্বীপের বৃদ্ধ মানুষদের মুখে মুখে শত শত বছর ধরে একটা গল্প প্রচলিত আছে।

সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। তখন এই দ্বীপে কোনো রাস্তাই তৈরি হয়নি। তখন পুরো এলাকা ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা, আর মানুষ বাস করতো ছোট ছোট গ্রামে, একদম প্রকৃতির কাছাকাছি। ছিল না কোনো বাজার বা শহর। দ্বীপের মানুষজন তখন কলা, কচু আর ক্যাসাভার বাগান করত। পাশাপাশি অনেকেই বন্য মুরগি ধরে পালন করত। জঙ্গলের ঝোপে তারা শিকার করত বুনো শূকর। কিন্তু সেই সময় মানুষ কোনোদিনই পুরোপুরি শান্তিতে ছিল না। কারণ গুহার গভীরে আর ছায়াময় ঘন জঙ্গলে বাস করত এবু গোগো। এবু গোগোকে বাংলায় বলা যায় “যে বৃদ্ধা দাদী সবকিছু খেয়ে নেয়।”

এবু গোগোরা ছিল অদ্ভুত এক ধরনের ছোট মানুষ। এদের উচ্চতা একটা সাত বা আট বছরের শিশুর থেকে বেশি হবে না। এদের শরীর ভর্তি থাকত খসখসে লোম, এদের হাতগুলোও বেঢপ লম্বা, আর পেটটা তো ফুলে থাকত কুমড়োর মতো। ওদের পা ছিল চওড়া, হাঁটার ভঙ্গি ছিল অদ্ভুত, আর দৌড়ালে তারা দুলতে দুলতে চলত।

এই ক্ষুদ্র মানুষগুলো ভাষা ছিল অস্পষ্ট। মনে হতো যেন বিড়বিড় করে কি যেন বলছে। কিন্তু কি বলছে সেসবের মাথা-মুণ্ডু কিছু বোঝা সম্ভব নয়। তবে আশ্চর্য ব্যাপার হলো—মানুষ কোনো শব্দ উচ্চারণ করলে তারা সেটা প্রায় হুবহু নকল করতে পারত। কথাগুলো শুনতে মানুষের মতো না হলেও মানুষের যথেষ্ট কাছাকাছি। ওদের এই অদ্ভুত গলার আওয়াজ শুনে গ্রামবাসীদের গা শিউরে উঠত। অনেক সময় শিশুরা প্রচণ্ড ভয় পেত, ওদের কাছে মনে হতো যেন বনের অদৃশ্য ভূতেরা তাদেরই কণ্ঠস্বর নকল করছে।

তবে এবু গোগোরা ততটা ভয়ংকর ছিল না। ওরা মূলত বিভিন্ন গাছের মূল, ফল, গিরগিটি আর ইঁদুর খেয়ে বেঁচে থাকত। কিন্তু পুচকে এই মানুষগুলো ছিল প্রচণ্ড লোভী। এই কারণেই ওদের নাম রাখা হয়েছিল “সবকিছু খেয়ে ফেলা দাদী।” গ্রামের মানুষ বলত, যখনই কোনো শূকর জবাই করা হতো, তখনই আগুনের ধোঁয়ার পাশে এসে হাজির হতো এবু গোগোর দল। খাবারের গন্ধে ওরা যেন পাগল হয়ে যেত। সুযোগ পেলেই ছিনিয়ে নিত হাড় বা মাংসের টুকরো। বাগানে ফল পাকলে অনেক সময় সকালে উঠে দেখা যেত পুরো গাছ খালি। কাদার মধ্যে ছোট ছোট পায়ের চিহ্ন দেখে সবাই বুঝতে পারতো যে এগুলো কার কাজ।

কিন্তু এবু গোগোদের জ্বালাতন এখানেই থেমে ছিল না। গ্রামের অনেকেই বলত যে এবু গোগোরা নাকি বাড়ির বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে যেত পাতায় মুড়িয়ে। তারপর সেই মানব শিশুকে ওরা বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করত। কিন্তু ওদের কাছে থাকা মানব শিশুরা বেঁচে থাকত না, ধীরে ধীরে মারা যেত। আবার কেউ কেউ বলত, তারা মানুষদের কাছ থেকে নাকি বিভিন্ন কিছু শিখতে চাইত। কথা বলা, আগুন জ্বালানো, ঘরে বসবাস করা ইত্যাদি শেখার জন্যই নাকি ওরা মানুষের আশেপাশে এভাবে ঘুরঘুর করতো। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তারা মানুষের মতো করে কোনো কিছুই করতে পারত না।

প্রথম দিকে অবশ্য গ্রামবাসীরা গোগোদের এইসব জ্বালাতন সহ্য করত। কারণ গ্রামবাসীদের অনেকেই মনে করত এরা বনের জন্তুদের মতোই অসহায়, তাই এদের একটু সাহায্যও আমাদের করা উচিত। কিন্তু ধীরে ধীরে গোগোদের লোভ অসহ্য হয়ে উঠছিল। মাঝে মাঝেই কারো না কারো মুরগি হারিয়ে যেত, আবার কারো ঘরের খাবারও চুরি হয়ে যেত। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো অনেক দিন পরপর কারো কারো শিশু নিখোঁজ হতে শুরু করল। অনেকেই এই শিশু চুরির জন্য গোগোদের দায়ী করতে শুরু করে। ফলে গ্রামবাসীদের পক্ষে আর এগুলো সহ্য করা সম্ভব ছিল না।

একদিন গ্রামের বিশাল বটগাছটার নিচে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে একটা বৈঠক আয়োজন করা হয়। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক শেষে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল: এবু গোগোদের চিরতরে তাড়াতেই হবে। কিন্তু ওরা আকারে ছোট হলেও দেখতে প্রায় হুবহু মানুষের মতো। ফলে সরাসরি হত্যা করাটাও কঠিন। আবার এরা বেশ চতুর; গুহার মধ্যে লুকিয়ে থাকে, ঘন বনের সবকিছুই তাদের চেনা। ফলে বনও তাদের রক্ষা করে। তাই গ্রামপ্রধানেরা এক চতুর পরিকল্পনা করল—লোভী এই ক্ষুদ্র মানুষদের ফাঁদে ফেলার জন্য লোভকেই করা হবে অস্ত্র।

একদিন প্রস্তুত করা হলো বেশ কয়েকটি খাবারের পুঁটুলি। এগুলো ভর্তি ছিল কলা, ক্যাসাভা, শুকনো মাছ ইত্যাদি নানা রকম লোভনীয় সব খাবার। সব খাবার বাঁধা হলো শুকনো তালপাতার আঁশে। সন্ধ্যার সময় গ্রামবাসীরা এগুলো গুহার সামনে রেখে এল। এবু গোগোরা পুঁটুলি দেখে আনন্দে চেঁচাতে চেঁচাতে সবকিছু টেনে নিল ভেতরে। সেই রাতে গুহা ভরে গেল তাদের ভোজ উৎসবের শব্দে। গুহার ভেতরে সবাই যেন উল্লাসে ফেটে পড়ছে।

কিন্তু খাওয়া শেষ হওয়ার আগেই তালপাতার আঁশগুলো হঠাৎ জ্বলে উঠল। এই শুকনো পাতার ভেতরে লুকানো ছিল রজন আর আগুনের অঙ্গার। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়ল গুহার মুখের কাছে তাদের তৈরি খড়ের কুটিরে। কেউ কেউ বলেন, সেই আগুনেই পুরো এবু গোগো জাতি ভস্মীভূত হয়ে গেল। চিরতরে স্তব্ধ হলো তাদের গুঞ্জন। আবার অনেকেই বলেন যে, ওদের মধ্যে কয়েকজন গভীর জঙ্গল আর বহুদূরের পাহাড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, একদম মানুষের নাগালের বাইরে।

তারপরও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই অঞ্চলের শিকারিরা দাবি করেছে—সন্ধ্যার আলো-অন্ধকারে তারা দেখেছে অদ্ভুত ছোট্ট ছোট্ট বহু ছায়ামূর্তি। তাদের লোমশ দেহ, ফুলে থাকা পেট, এক ঝলক দেখা দিয়েই তারা মিলিয়ে গেছে গভীর জঙ্গলের ভেতর থাকা পাহাড়ি গুহায়। এই অঞ্চলের অনেক মা এখনো তাদের সন্তানদের সাবধান করে বলে: “বনের ভেতর বেশি দূর যেও না। এবু গোগো তোমার কণ্ঠস্বর শুনবে, আর তোমার কণ্ঠস্বর নকল করে ডাকতে ডাকতে তোমাকে জঙ্গলের গহীনে টেনে নেবে।”

এই গল্পটাকে এতকাল মানুষ নিছক লোকগল্প বলেই জেনে এসেছে। কিন্তু ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ একটা অবাক করা আবিষ্কার করে বসেন। ফ্লোরেস দ্বীপের পশ্চিম দিকের তারা একটা চুনাপাথরের গুহাতে ভাঙা মাটির হাঁড়ি, পশুর হাড়, আর পাথরের সরঞ্জাম খুঁজে পান। একদিন এক সহকারী গবেষক আলতো করে মাটি সরিয়ে দেখতে পেলেন ছোট্ট একটা খুলি।

প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন এটা কোনো শিশুর খুলি। কিন্তু পরবর্তীতে বিস্তারিত গবেষণা থেকে জানা যায় যে, এটা ছিল সম্পূর্ণ পূর্ণবয়স্ক একজন মানুষ, অথচ তার উচ্চতা মাত্র এক মিটার।

গ্রামবাসীরা যখন শুনল যে গুহা থেকে ছোট্ট আকারের প্রাচীন মানুষের হাড় বেরিয়েছে, তারা কেবল হেসে মাথা নেড়ে বলল: “আমরা তো আগেই বলেছিলাম। এরা হলো এবু গোগো। আমাদের দাদারা ওদের গল্প শোনাতেন।” স্থানীয়দের কাছে এটা নতুন কিছু নয়, বরং পুরোনো কাহিনির সত্য প্রমাণ।

বিজ্ঞানীরা এখানে যেসব হাড় ও কঙ্কাল আবিষ্কার করেছেন সেগুলোর বয়স অন্তত ৫০ হাজার বছর। অর্থাৎ তারা কমপক্ষে ৫০,০০০ বছর আগে পর্যন্ত টিকে ছিল। কিন্তু কোনো কোনো বিজ্ঞানী মনে করেন, এখানে আরও অনেকদিন পর্যন্ত হয়ত এই ক্ষুদ্র মানুষরা সাধারণ মানুষদের পাশাপাশি বসবাস করেছে। পরবর্তীকালে হয়ত তারা এমন কিছু দুর্গম অঞ্চলে বসবাস করেছে যেসব জায়গা থেকে আমরা তাদের কোনো কঙ্কাল এখনো খুঁজে পাইনি। আবার এমনও হতে পারে যে, তাদের পরবর্তীকালের হাড়গুলো ডিকমপোজ হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে।

তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে এটা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্তত ৫০ হাজার বছর আগে এই দ্বীপে কিছু ক্ষুদে মানুষ বাস করত। আর বিজ্ঞানীদের গবেষণার সাথে গ্রামবাসীদের সেই গল্পের বর্ণনা প্রায় হুবহু মিলে যায়। ফ্লোরেস দ্বীপের এই ক্ষুদে মানুষগুলোর বৈজ্ঞানিক নামও দেওয়া হয়েছে এই দ্বীপের নামের সাথে মিল রেখে Homo floresiensis।

এই বইটা আজ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। মানুষ কিভাবে লিখতে শিখেছিল তা নিয়ে চিত্রসহ বর্ণনা। রেয়ার এক...
28/09/2025

এই বইটা আজ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। মানুষ কিভাবে লিখতে শিখেছিল তা নিয়ে চিত্রসহ বর্ণনা। রেয়ার একটা বই, এখন আর প্রিন্ট হয় না। বাংলাতে এমন একটা বই থাকা দরকার। আপনারা কে কে আগ্রহী?

আরব উপদ্বীপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নাজদ অঞ্চল। ১৭৪০ সালের দিকে এই অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন মুহাম্মদ ইবনে সৌদ নাম...
27/09/2025

আরব উপদ্বীপের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নাজদ অঞ্চল। ১৭৪০ সালের দিকে এই অঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন মুহাম্মদ ইবনে সৌদ নামে এক স্থানীয় আমির। তাঁরই এক সরাসরি বংশধর ১৯৩০ সালে এসে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের সীমানা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করেন। ইবনে সৌদের পরিবারের নামে দখলকৃত এই অঞ্চলটির নতুন নাম দেওয়া হয় সৌদি আরব। কিন্তু, কোনো পরিবার যদি নিজেদের নামে একটি রাষ্ট্রের নাম রাখে, তাহলে যেসব মানুষ সেই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাদের কী হবে? যেমন, ব্রাজিলের প্রতিটি নাগরিকই ব্রাজিলীয় পরিচয়ের অংশ এবং আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান। কিন্তু সৌদি আরবের প্রতিটি নাগরিক সৌদ পরিবারের সদস্য নয়, আর তাই সবার মর্যাদাও এক নয়। আজকে যদি আমি যুক্তরাজ্যের ক্ষমতা দখল করি, আর তারপর যুক্তরাজ্য নাম বদলে মার্শল্যান্ড রেখে দিই, কিছু মানুষ হয়তো সেটা মেনেও নেবে। আবার অনেকেই হয়তো বলবে, নামটা দেশের জলবায়ুর সঙ্গে বেশ মানানসই। কিন্তু নতুন সেই দেশের প্রতি তাদের আসলে ঠিক কতটা আনুগত্য থাকবে? দেশ তো আসলে তখন আমি নিজেই। আমার প্রতিই নাগরিকদের আনুগত্য চাইছি আমি।

আসলে রাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের পারিবারিক পরিচয় যুক্ত করার ফলে সৌদি রাজপরিবারের জন্য বেশ বড় একটি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বিচার করলে সৌদ বংশ এটা দাবী করতে পারে যে, নাজদের কিছু অংশ তাদের নামে পরিচিত হোক। কিন্তু, তাই বলে গোটা আরব উপদ্বীপ? এটা অনেক বড় দাবি। এমনকি আজকের সৌদি আরব রাষ্ট্রের বিশাল একটি অংশ মাত্র এক শতাব্দী আগেও সৌদ পরিবারের শাসনের অধীনে ছিল না। ১২০ বছর আগেও যদি কেউ শাম্মার গোত্রের কাছে গিয়ে বলত যে, তাদের স্বাধীন আমিরাত একদিন সৌদ সাম্রাজ্যের অধীনে একটি সাধারণ প্রদেশে পরিণত হবে—তার পরের মুহুর্তেই হয়তো সবার হাতে তলোয়ার উঠে আসত। তাছাড়া, পারস্য উপসাগরের কাছাকাছি অঞ্চলে বসবাসকারী শিয়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সুন্নি ওয়াহাবিদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। শিয়ারা কখনো কল্পনাই করেনি যে, তারা একদিন সুন্নি ওয়াহাবি মৌলবাদী সৌদি শাসকের অধীনে চলে যাবে।

তবে তার মানে আবার এটা নয় যে আধুনিক সৌদি রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারবে না। দেশটিতে যে আজও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা রয়ে গেছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা রয়ে গেছে, এটি তার একটা ব্যাখ্যা মাত্র। সৌদি রাজপরিবার যদি ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, তাহলে একদিকে যেমন তাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হবে, অন্যদিকে প্রান্তিক অঞ্চলগুলোর আনুগত্যও নিশ্চিত করতে হবে।

এক শতাব্দী আগেও এই অঞ্চলে বাস করত মাত্র ২ মিলিয়ন মানুষ। এদের বেশিরভাগই ছিল যাযাবর। সেই অঞ্চলটিই এখন ৩৪ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি রাষ্ট্র। আরব উপদ্বীপের বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত এই রাষ্ট্র মূলত একটা বিশাল মরুভূমি। তেল আর বালি ছাড়া এখনো দেশটিতে তেমন কিছুই নেই। তবে, এই জ্বালানি সম্পদই সৌদি আরবকে বিশ শতকের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। পরিণত করেছে বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তিতে। সৌদি আরব দেশটির প্রধান মিত্র ও রক্ষক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কের ভিত্তিই হলো এই তেল। এই সম্পদ সৌদি আরবকে বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক করেছে। আর সেই ঐশ্বর্যের জোরেই তেলের প্রবল তৃষ্ণায় কাতর এই পৃথিবীতে টিকে আছে দেশটি। অবশ্য, সৌদি ক্ষমতা কাঠামোর একটি অংশ ইসলামি মৌলবাদের চরম সহিংস রূপ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে পরিচিত সৌদি নাগরিক কোনো বাদশাহ বা তেল ব্যবসায়ী বিলিয়নিয়ার নন। তিনি একজন সন্ত্রাসী, যার নাম ওসামা বিন লাদেন।

কিন্তু সৌদি আরবের সামনে এখন বেশ বড় একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সমগ্র বিশ্ব তেলের ওপর থেকে নির্ভরতা কমিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে। তাহলে এই রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কী? দেশটির জনসংখ্যার একটা অংশ অস্থির, চারপাশে রয়েছে শত্রুর উপস্থিতি, আর অন্যদিকে শাসকের শাসনের বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ। এমন পরিস্থিতিতে শাসকদের করণীয় কী? একমাত্র পথ হলো আধুনিকায়ন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং নবায়নযোগ্য শক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতায় টিকে থাকতে হবে। তবে, এই যাত্রা খুব একটা সহজ হবে না। সৌদি আরবের এই প্রচেষ্টা সফল হবে নাকি ব্যর্থ হবে, তার ফলাফল শুধু এই দেশটিকেই নয়—বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং বাকি বিশ্বকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করবে।

সৌদি আরব দেশটি গড়ে উঠেছে বিংশ শতকে—আধুনিক পরিবহন ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে। তবে ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এখনো দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে নানারকম বৈচিত্র্য রয়ে গেছে। কয়েক দশক আগেও দেশটির বিশাল একটা অংশ বসবাসের অনুপযুক্ত ছিল। সৌদি আরব হলো পৃথিবীর বৃহত্তম নদীবিহীন দেশ। দেশটির অভ্যন্তরভাগ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে দুইটি বিশাল মরুভূমি। উত্তর দিকে রয়েছে ‘আন-নাফুদ’ মরুভূমি, যা আবার একটা সরু বালুময় করিডোর দিয়ে সংযুক্ত হয়েছে ‘রুব আল-খালি’ মরুভূমির সঙ্গে। রুব আল খালি অর্থ ‘শূন্য প্রান্তর’। এটি হলো পৃথিবীর সবথেকে বড় অবিচ্ছিন্ন বালিময় অঞ্চল। এই ভয়ংকর নির্জন মরুভূমিতে টিকে থাকতে পারে শুধু অল্প কিছু যাযাবর বেদুইন। তবে বেদুইনদের কাছে মরুভূমিটির নাম ‘আল-রামলাহ’, অর্থাৎ ‘বালু’। এই বিরানভূমি আয়তনে ফ্রান্সের চেয়েও বড়। এখানে বালিয়াড়িগুলো ২৫০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শুরু হয়ে সৌদি আরব ও ওমান পার হয়ে ইয়েমেন পর্যন্ত এই মরুভূমির বিস্তার। গ্রীষ্মকালে এই মরুভূমির তাপমাত্রা এমনকি ছায়াতেও ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়। যদিও ছায়া বলতে আসলে এই মরুতে তেমন কিছুই নেই। আবার শীতকালে রাতের বেলায় এই মরুভূমিতে অনুভূত হয় তীব্র কনকনে ঠান্ডা। আজকের এই আধুনিক যুগে এসেও খুব কম মানুষই এই মরুভূমির গভীরে প্রবেশ করে। ফলে, এর বড় অংশই এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। জানা যায়, এই অঞ্চলের বালির নিচে নাকি বিপুল পরিমাণ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী। ফলে এই সম্পদকে কাজে লাগানো লাভজনক মনে করা হচ্ছে না।

আটটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবের স্থলসীমান্ত রয়েছে। দেশটির উত্তরে রয়েছে জর্ডান, ইরাক ও কুয়েত। দেশটির পূর্ব উপকূল দক্ষিণ দিকে বিস্তৃত হয়ে বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিকে গেছে। এই ছয়টি দেশ পারস্য উপসাগরের তীরে অবস্থিত। দক্ষিণে রয়েছে ওমান ও ইয়েমেন। এর মধ্যে ইয়েমেনের সীমান্তই সবচেয়ে দীর্ঘ এবং সবচেয়ে অস্থির। সৌদি আরবের দক্ষিণাঞ্চলকে স্থলভিত্তিক হুমকি থেকে রক্ষা করার জন্য রুব আল খালি মরুভূমি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে। কিন্তু একইসঙ্গে দক্ষিণের দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য করাও কঠিন করে তোলে এই বিশাল মরুভূমি। এই বিশাল বালির সমুদ্র পাড়ি দেওয়া একসময় দক্ষিণ মেরু অতিক্রম করার মতোই কঠিন বলে মনে করা হতো। এই মরুভূমিতে প্রথম নথিবদ্ধ অভিযানটি মাত্র এক শতাব্দীরও কম সময় আগের ঘটনা। ১৯৩১ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্রিটিশ অভিযাত্রী বারট্রাম থমাস বেদুইন ট্রাইবালদের সঙ্গে নিয়ে ওমান উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করেন। ১,৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে কয়েক সপ্তাহ পরে তিনি কাতারে পৌঁছান। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মরুভূমির বুকে যাতায়াত কিছুটা সহজ হয়েছে। এমনকি ২০১৮ সালে ওমান থেকে মরুভূমি পেরিয়ে সৌদি রাজধানী রিয়াদ পর্যন্ত একটি মহাসড়কও চালু করা হয়েছে। আপনি যদি এই পথ ধরে গাড়ি চালানোর কথা ভাবেন, তাহলে থমাস বা তার সঙ্গীদের মতো দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী হতে হবে না। তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা জরুরি—এই পথে কোথাও কোনো সার্ভিস স্টেশন নেই! না আছে তেল নেওয়ার সুযোগ, না আছে গাড়ি খারাপ হলে মেরামতের সুযোগ।

সৌদি আরবের বর্তমান জনবসতির কাঠামো বোঝার জন্য প্রাচীন বাণিজ্যপথ ও জলবায়ুর প্রভাব জানা গুরুত্বপূর্ণ। ভূগোলের প্রভাবেই এই অঞ্চলের প্রাচীন বাণিজ্য পথগুলো গঠিত হয়েছে। সৌদি আরবের সমস্ত উঁচু অঞ্চল মূলত দেশটির পশ্চিমাংশে অবস্থিত। লোহিত সাগরের সৌদি উপকূলজুড়ে প্রায় সমান্তরালভাবে সারি সারি পাহাড় ও পর্বতমালা দেখা যায়। এই অঞ্চলের উপকূলবর্তী সমভূমি তুলনামূলক সরু। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উপকূলীয় শহর জেদ্দা সমতল ভূমিতে অবস্থিত। কিন্তু মাত্র ৬০ কিলোমিটার ভেতরে গেলেই পবিত্র মক্কা নগরী। আর মক্কার অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৭৭ মিটার উঁচুতে। মক্কার আশেপাশের পাহাড়গুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির উচ্চতা ১,৮৭৯ মিটার পর্যন্ত। এই উঁচু অঞ্চলগুলোর মধ্য দিয়ে একটি গিরিপথ চলে গেছে মদিনার দিকে। প্রাচীনকালের কাফেলাগুলোর জন্য এটি একটি প্রধান বাণিজ্যপথ হয়ে উঠেছিল। ওই সময় রুব আল খালি মরুভূমির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। ফলে, আফ্রিকা ও লোহিত সাগরের সাথে পারস্য ও ভারতের বাণিজ্য মূলত এই তিনটি শহর—জেদ্দা, মক্কা ও মদিনার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হতো। দেশটির প্রধান জনবসতিগুলোও মূলত ভূ-প্রাকৃতিক কারণে এই অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠেছিল।

সৌদি আরবের সর্বোচ্চ পর্বতমালা অবস্থিত দক্ষিণের ইয়েমেন-সংলগ্ন সীমান্তের কাছাকাছি। এই অঞ্চলের আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা। আর এই কারণে প্রাচীনকাল থেকেই এখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে। সৌদি আরবের অধিকাংশ মানুষ দেশের পশ্চিম অংশে, বিশেষ করে মক্কা, মদিনা ও জেদ্দার আশপাশে বসবাস করে। তবে ইয়েমেন সীমান্তসংলগ্ন পার্বত্য অঞ্চল হলো দেশটির সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

উত্তর-পশ্চিমের হিজাজ বা অন্যান্য পার্বত্য অঞ্চল পার হয়ে পূর্ব দিকে এগিয়ে গেলে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত পুরোটাই সমতল অঞ্চল। সৌদি আরব মূলত সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় শিয়া সংখ্যালঘুও রয়েছে। শিয়াদের বেশিরভাগই বসবাস করে পারস্য উপসাগর উপকূলের ইস্টার্ন প্রভিন্সে। এই শিয়ারা মূলত বাহারনা গোত্রের সদস্য। বাহারনা শব্দটি এসেছে বাহরাইন শব্দ থেকে। বাহরাইন শব্দটির মূল আরবি হচ্ছে ‘বাহর’ বা সমুদ্র। শব্দটির বহুবচন ‘বাহরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই সমুদ্র’। ঐতিহাসিকভাবে বাহরাইন অঞ্চলে একদিকে যেমন ছিল মিঠা পানির উৎস, আর আরেকদিকে ছিল লবণাক্ত সমুদ্র। তাই এই অঞ্চলের নাম হয়েছিল বাহরাইন। আর এই অঞ্চলের মানুষ হিসেবে তাদের নাম হয়েছে বাহারনা। এরা আরব উপকূলের প্রাচীন আরব অধিবাসী। কথা বলার জন্য এই মানুষগুলো বাহারনি আরবি উপভাষা ব্যবহার করে, যা সাধারণ খাড়ি আরবি থেকে কিছুটা ভিন্ন।

সৌদি আরবের এই শিয়াপ্রধান অঞ্চলটি বিদেশি শক্তির অনুপ্রবেশ বা নাশকতার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই অঞ্চলে তেল ও গ্যাসের শত শত পাইপলাইন থাকায় ধ্বংসাত্মক নাশকতা ঘটানোও খুব সহজ। ইস্টার্ন প্রভিন্সকে ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুর মাধ্যমে শিয়া-অধ্যুষিত বাহরাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। বাহরাইনের শাসক সুন্নি হলেও, বাহারনা শিয়ারাই দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৮৬ সালে সৌদি সরকার সেতুটি নির্মাণ করেছিল। সৌদি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী এটি নির্মাণ করা হয়েছে মূলত যাতায়াত, পর্যটন ও বাণিজ্যের জন্য। কিন্তু অপ্রকাশ্য বাস্তবতা হলো, বাহরাইনে সুন্নি শাসকদের বিরুদ্ধে যদি ওই দেশের শিয়াদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে এই সেতু ব্যবহার করে সৌদি ট্যাংক দ্রুত সেখানে পৌঁছাতে পারবে। শিয়া জনগোষ্ঠীর আরেকটি বড় অংশ রয়েছে ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী এলাকায়। এছাড়া মক্কা ও মদিনাতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিয়া বসবাস করে।

সৌদি আরবের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে রাজধানী রিয়াদ এবং নাজদ অঞ্চল। রিয়াদ দেশের বৃহত্তম শহর এবং রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হলেও অন্যান্য প্রধান জনবসতি থেকে এটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। এই ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা রিয়াদের ইসলাম চর্চাকে তুলনামূলকভাবে আরও কট্টর করে তুলেছে, যা এমনকি বেশিরভাগ সৌদি জনগণের কাছেও অতিরিক্ত কঠোর মনে হয়। অতি প্রাচীনকালে ‘মরুভূমির জাহাজ’ খ্যাত উটের আবির্ভাব মরুভূমির বুকে মানুষের চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছিল। ফলে ব্যবসায়ীরা মক্কা ও মদিনার মতো ছোট ছোট মরূদ্যান ভিত্তিক শহরে সহজেই আসা-যাওয়া করতে পারত। তবে সৌদ পরিবার যেখানে বাস করত, অর্থাৎ সেই নাজদ অঞ্চলকে পশ্চিম দিক থেকে আলাদা করে রেখেছিল হিজাজ পর্বতমালা। আর বাকি তিনদিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল তিনটি বিশাল মরুভূমি। নাজদ কার্যত ছিল একটি অনুন্নত মরু অঞ্চল। এখানে পানির তেমন কোনো উৎস ছিল না। আসলে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউই যেত না নাজদের আশেপাশে। তবে এর মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল আরব উপদ্বীপের পূর্ব প্রান্ত থেকে মক্কায় যাওয়া হজ্বযাত্রীরা। হজ্বযাত্রীরা ছাড়া অধিকাংশ মানুষ নাজদের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বিকল্প সহজ পথ বেছে নিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহির্বিশ্ব নাজদকে একরকম উপেক্ষাই করে এসেছে।

নাজদ অঞ্চলের ইতিহাসে একটা পরিবর্তন আসে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে এসে। সে সময় আল সৌদ বংশের কয়েকশো উচ্চাভিলাষী সদস্য আদ-দিরিয়াহ নামক এক মরূদ্যানের কাছে কয়েকটি খেজুর বাগানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর এই মরূদ্যানকে ঘিরেই তারা বসতি স্থাপন করে এবং সৌদদের নেতা মুহাম্মদ ইবনে আল সৌদ নিজেকে আমির ঘোষণা করেন। মরুদ্যান থেকে একটু দূরেই ছিল হাজর নামে একটা প্রাচীন শহর। ইবনে সৌদ শহরটির নাম বদলে রাখেন রিয়াদ। এরপর সেখানে তিনি গড়ে তোলেন একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যকেন্দ্র। শহরটি ধীরে ধীরে নাজদ অঞ্চলের রাজনৈতিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। যদি কখনো আপনার রিয়াদে যাওয়ার সুযোগ হয়, তাহলে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এই স্থানটি দেখে আসা আপনার জন্য একটা মূল্যবান অভিজ্ঞতা হতে পারে। শহরটি বেশ উপভোগ্য। তাছাড়া সৌদি রাষ্ট্রের জন্মস্থান হওয়ায় শহরটির রোমাঞ্চকর একটি দিকও আছে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃত আদ-দিরিয়াহ এখনো সেই অতীতের স্মৃতি ধরে রেখেছে। এখানে গেলে আপনি দেখতে পাবেন কাদামাটি দিয়ে তৈরি শহরের প্রাচীরের মধ্যে আধভাঙা ভবন, নতুন করে বানানো মাটির ঘর এবং কাদামাটির ইঁটে তৈরি চারতলা রাজপ্রাসাদ। সব মিলিয়ে জটিল গোলকধাঁধার মতো সরু গলিপথে ঘেরা ঐতিহাসিক এক শহর এটি।

সৌদ পরিবারের শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ওয়াহাবি বংশের সঙ্গে একটি কৌশলগত জোট গড়ে তোলে তারা। এই জোট আজও বহাল রয়েছে। ধর্মীয় পণ্ডিত মুহাম্মদ ইবনে আবদ আল-ওয়াহাব ১৭৪৪ সালে মুহাম্মদ ইবনে সৌদের কাছে আনুগত্যের শপথ নেন। ইবনে আল-ওয়াহাব বিশ্বাস করতেন, সাধারণ মুসলিমদের অবশ্যই নিরঙ্কুশ আনুগত্যসহ একজন মুসলিম শাসকের অধীনে থাকতে হবে। আর এর বিনিময়ে সেই শাসককে দেশ পরিচালনা করতে হবে কঠোর ইসলামি নীতির ভিত্তিতে। খ্রিস্টানদের মতো ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করে রাখার কোনো ঐতিহ্যগত কলাকৌশল ইসলামে নেই। এই সমঝোতার ভিত্তিও ছিল মূলত ধর্ম ও রাজনীতির একাত্মকরণ। এখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকবে সৌদ পরিবারের হাতে, আর ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করবে ওয়াহাবিরা। এখনও পর্যন্ত মূলত এই কাঠামোই বজায় আছে। তবে মাঝেমধ্যেই সৌদি আরবের এই দুই স্তম্ভ একে অপরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চালায়।

সৌদির বেশিরভাগ নাগরিক সুন্নি মুসলিম হলেও সবাই ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, নাজদের উত্তরাঞ্চলে একসময় সৌদ পরিবারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শাম্মার গোত্রের শাসন ছিল, সেখানে সুন্নি মতবাদেরই তুলনামূলকভাবে কম কট্টর একটি সংস্করণ প্রচলিত আছে। একইভাবে, লোহিত সাগরের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মানুষ নিজেদেরকে তুলনামূলকভাবে উদার মনে করে। বহির্বিশ্বের প্রতিও তাদের মনোভাব বেশ খোলামেলা। তাদের মনস্তত্ত্ব ওয়াহাবি মতবাদের মূল নীতিগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। অর্থাৎ, আধুনিক বিশ্বের অন্যতম নিয়ন্ত্রিত সমাজ হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে সৌদি আরবের সব মানুষের পূর্ণ সম্মতি ছিল না। পরবর্তী সময়েও অনেকেই এই কঠোর ধর্মীয় কাঠামো ভেঙে আরও স্বাধীন সমাজ চেয়েছে।

আজকের যে সৌদি সমাজ আমরা দেখি সেটা তৈরি করা হয়েছে রীতিমত পরিকল্পনা করে। সৌদ–ওয়াহাবি জোটকে আরও দৃঢ় করতে ইবনে সৌদের জ্যেষ্ঠ পুত্রের সঙ্গে ইবনে আবদ আল-ওয়াহাবের কন্যার বিয়ে দেওয়া হয়। আল সৌদ প্রকাশ্যে ওয়াহাবি মতবাদকে বুকে জড়িয়ে ধরেন, ওয়াহাবিরা সৌদদের সমর্থন জানায় এবং এরপর তারা একসঙ্গে আরব উপদ্বীপ জয়ের অভিযানে নামে। ১৭৬৫ সালের মধ্যে তারা পুরো নাজদ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং চারদিকে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ করতে থাকে। খুব শিগগিরই পবিত্র মক্কা ও মদিনা শহর তাদের দখলে চলে আসে। এই দুই শহরে প্রবেশ করেই তারা বিভিন্ন ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস করে দেয়। বিশেষভাবে আঘাত হানে শিয়া সংখ্যালঘুদের মাজার ও কবরস্থানের ওপর। ওয়াহাবিরা শিয়াদের ‘রাফিদা’ বলে উল্লেখ করত। রাফিদা শব্দের অর্থ ‘প্রত্যাখ্যানকারী’। আরবি ভাষায় এটি একটি অবমাননামূলক শব্দ, যা একবিংশ শতকেও ওয়াহাবিরা ব্যবহার করে।

নাজদ অঞ্চল থেকে শুরু করে এই ক্ষমতা বিস্তারের সময়কালকে ‘প্রথম সৌদি রাষ্ট্র’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আদি এই রাষ্ট্র একসময় বর্তমান সৌদি আরবের বেশিরভাগ অংশসহ ওমানের উত্তরাঞ্চল, কাতার, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু অংশও দখল করে নিয়েছিল। তবে ১৮১৮ সালে অটোম্যান সাম্রাজ্যের সুলতান মিশর থেকে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে হিজাজ অঞ্চল দখলমুক্ত করেন। সেই সেনাবাহিনী এরপর নাজদের দিকে অগ্রসর হয়ে আদ-দিরিয়াহ দখল করে নেয় এবং শহরটির বড় অংশ ধ্বংস করে দেয়। এরপর স্বঘোষিত সুলতান আবদুল্লাহ আল সৌদকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় ইস্তাম্বুলে। সেখানে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয় তাকে। ফলে আদি সৌদি রাষ্ট্রের পতন ঘটে।

অনেকেই পাওয়ার অব জিওগ্রাফি বইটির কিছু অংশ পড়ে দেখতে চেয়েছিলেন, তাদের জন্য সৌদি আরব অধ্যায়ের কিছু অংশ এখানে দেওয়া হলো।

Address

Dhaka
1000

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when পুঁথি posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share

Category