19/03/2020
স্পেন থেকে লিখেছেন ডা. তাহসিনা ম্যাম
"করোনা না গরম মানে, না সুস্থ শরির মানে, না নারী শিশু মানে!! করোনা কোন করুনা করছে না, বিদ্যুৎ বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে বাগে পাচ্ছে আইসিইউ অবদি টেনে নিয়ে মেরে ফেলছে!"
" ... আমাদের হাতে তিন মাসের লম্বা সময় ছিল। যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি, এবং সে সময়ে তাসের ঘরের মত থুবড়ে পড়বে স্বাভাবিক প্রতিরোধ টুকুও। বিপদের আন্দাজাও করতে পারছি না, এত ভয়াবহ হবে সেটা!!
স্পেইন হল ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। রোদে খটখট সারা বছর। মরুভূমির মত ভূপ্রকৃতি। লোকজনের আয়ুস্কাল দীর্ঘ। জ্যাপানিদের পরেই স্পেইনের গড় আয়ু। ৯০% দেশবাসি সুস্থ খায়, সুস্থ চলে। সুস্থ থাকে।
সামনেই সামার। পর্যটন নির্ভর সুন্দর দেশটির রুটি রুজির অন্যতম সময়। এ সময়ে করোনা নিয়ে মাতামাতি করতে কারোই ভালো লাগছিল না।
করোনা যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছাড়ছে তখনো স্পেইন ছিল নির্বিকার!! অথচ করোনা হাটিহাটি পা পা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হানা দিলো রাজধানি মাদ্রিদে!!
কর্তারা তখনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন!! সেরে যাবে! চলে যাবে! ছুহ ছুহ করছেন!
এখন মরার পর কেউ ছুতে পারছে না।।দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছরে পরে কাঁদতে পারছে না।।জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। সরাসরি ক্রিমেশনে পুড়িয়ে ফেলছে!!
সেই স্পেইন থেকে বলছি।
আজ পাঁচদিন হয় জরুরি অবস্থা ঘোষনা করা হয়েছে। রাস্তায় সেনা ও পুলিশ ঘুরছে। আপনি কেবল তিন কাজের জন্য বের হতে পারবেন!!
খাদ্য কেনা বা
ওষধ কেনা বা
গ্রেফতার হবার শখ হওয়া!
জরিমানা গুনবেন ২০০ ইউরো, যদি কোয়ারাইন্টাইনের নিয়ম না মানেন। খোলা আছে শুধু ব্যাংক, মুদি দোকান আর ফার্মেসি। বাকিরা সিল গালা তালা।
সকল সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক নেয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। সব নিয়ন্ত্রন সরকারের। সকল ইন্টার্ন এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যে কোন ডিসিপ্লিনের চিকিতসক হলেই প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা সৈনিক হিসেবে!! শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রিদের যুক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসক কাতারে! এরপর যুদ্ধ চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে। তবুও কমছে না মৃত্যু মিছিল।
হাত কামড়াচ্ছে সরকার, দূয়ো দিচ্ছে একে অন্যকে!! আহা! আর একটা সপ্তাহ! আর দিন দশেক আগেও যদি সবাইকে খেদিয়ে ঘরে ঢুকাতাম, তো এই দাবানল রুখে দেয়া যেত!!
যেমন, চায়না রুখেছে, সাউথ কোরিয়া, সিংগাপুর রুখেছে।
বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সেটা কে না চায়! আমার সর্বস্ব সেখানেই। মরার পরের ঠিকানা সেটা। দেশ থেকে আমার কথা ভেবে ফোন আসলে অসহায় লাগে! আমি ভাবছি তাদের নিয়ে, তারা ভাবে আমাকে নিয়ে!!"
লেখাঃ
Dr. Tahsina Afrin
CMC 46, 2003/2004
Second Secretary
Embassy of Bangladesh
Madrid, Spain