
08/08/2025
“সবার আগে স্ত্রী, তারপর মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন” এই ধারণাটি কোরআন ও হাদীসের আলোকে কতটা ন্যায়সঙ্গত বা বিচারপূর্ণ (justified) তা বিশ্লেষণ করা যাক।
🔍 প্রশ্নের ব্যাখ্যা:
উক্তিটি একটি প্রচলিত সামাজিক মত অনেকে বিশ্বাস করেন যে বিবাহের পরে স্ত্রীকেই সবচেয়ে আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তারপরে মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন।
প্রশ্ন হচ্ছে: ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটা কি ন্যায্য? কাকে কতটুকু অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত?
📖 কোরআন ও হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ:
১। মা-বাবার মর্যাদা ও অধিকার:
কোরআনে আল্লাহ বলেন:
"তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া আর কাউকে উপাসনা করো না এবং মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহার করো..."
[সূরা বনী ইসরাঈল: 23]
এখানেই বোঝা যায়, ইবাদতের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব।
রাসূল (সা.) বলেছেন:
"তোমার মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করো।" লোকটি জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে? তিনি বললেন: "তোমার মা।"
আবার জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে?
তিনি বললেন: "তোমার মা।"
তৃতীয়বার জিজ্ঞাসা করল: তারপর কে?
তিনি বললেন: "তোমার পিতা।"
[সহিহ বুখারী ও মুসলিম]
এখান থেকে বোঝা যায়, মা-বাবার অধিকার স্ত্রী বা অন্য কারো চেয়ে আগে।
২। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব ও মর্যাদা:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
"তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।"
[তিরমিযি]
স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ববান ও দয়ালু হতে বলা হয়েছে। তবে স্ত্রী কখনোই মা-বাবার চেয়ে "উচ্চতর" নয় অধিকার ও মর্যাদার দিক থেকে।
ইসলামী ভারসাম্য:
ইসলাম একপক্ষকে সম্পূর্ণভাবে প্রাধান্য দিয়ে অন্য পক্ষকে ত্যাগ করার শিক্ষা দেয় না। বরং:
স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব: সংসার, নিরাপত্তা, ভালোবাসার অধিকার।
মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব: ভরণপোষণ, সেবা, দোয়া, ভক্তি, ও সম্মান।
উভয়ের অধিকার আলাদা, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। যখন দ্বন্দ্ব আসে, তখন মা-বাবার অধিকারের প্রাধান্য অনেক বেশি, বিশেষত যদি তারা বয়স্ক হন বা সেবার প্রয়োজন হয়।
স্ত্রী চায় আলাদা থাকতে, মা-বাবা চায় ছেলেকে পাশে:
ইসলাম বলে: স্ত্রীকে আলাদা বাসার চাহিদা দিলে ভুল নয়, কিন্তু মা-বাবা অসুস্থ বা একাকী থাকলে, তাদের দায়িত্ব আগে।
উপসংহার:
সবার আগে স্ত্রী এই ধারণাটি ইসলামী ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক নয়।
ইসলামে সবার প্রাপ্য অধিকার আলাদা আলাদা। মা-বাবার অধিকার স্ত্রী বা অন্য আত্মীয়দের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আগে। স্ত্রীকে ভালবাসা ও সম্মান দেওয়া ফরজ, কিন্তু সেটা মা-বাবার অবহেলার বিনিময়ে নয়।
শেষ কথা:
ইসলামে ন্যায়বিচার মানে সবার হক ঠিকমতো আদায় করা, একপক্ষকে অন্য পক্ষের চেয়ে “অগ্রাধিকার” দিয়ে সব কিছু উপেক্ষা করা নয়।