11/02/2024
আমারই মামাতো বড় ভাইয়ের হাতে আমার ধ*র্ষন হলো।
সে রাতের পর থেকে মোরশেদ ভাই আমার সাথে যোগাযোগের অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমার ঘে*ন্না লাগছিল। এতোদিন যাকে বড়ভাই বলে জেনে এসেছি, যার ছায়া তলে বাবার মতো নিরাপত্তা পেয়েছি, সে-ই কিনা রক্ষক হয়ে ভক্ষকের কাজ করলো?
বাবা মা মা*রা যাওয়ার পর আমাদের চার ভাই বোনের ঠাঁই হয় বড় মামার বাড়িতে। মামা মামী নিতান্ত সাধারণ মনের মানুষ এবং মধ্যবিত্ত। তাদের নিজেদের তিন সন্তানের মাঝেও কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও আমাদের আশ্রয় দিলেন। আমাদের কোন আদিখ্যেতা ছিল না। মামীও কখনো বৈষম্য করেননি। নিজেরা যা খেতেন পরতেন, আমাদের জন্যও তা বরাদ্দ হতো।
হ্যাঁ,আমাদের বাড়তি যোগ হওয়ার কারণে মামাতো ভাই বোনেরা বিলাসিতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। কিন্তু এতে তাদের মনে কখনো ক্ষোভ দেখিনি। মনে হতো এটাই স্বাভাবিক। মাঝে মধ্যে মামীর আক্ষেপ শোনা যেত,আমাদের জন্য খরচ বেড়ে গেছে অথবা তার সন্তানদের সাধ আহ্লাদ পূরণ হচ্ছে না। ঘরের কাজ আমরা সব ভাই বোনেরা ভাগ করে করতাম।
তিনটে শোবার ঘর, ড্রয়িং -ডাইনিং আর রান্নাঘর মিলে পাঁচ কামরার সরকারি কোয়ার্টার। মামার চা*করির সুবাদে পাওয়া পুরোনো ধাঁচের এই কোয়ার্টার গুলোয় আধুনিক সুবিধা না থাকলেও পর্যাপ্ত জায়গা ছিল। বাড়ির সামনে খোলা জায়গায় মামী মৌসুমি সবজি ফলাতেন। আবার এককোনে ছোট ঘর তুলে হাঁস মুরগী পালতেন। সে সুবাদে বাজার খরচ কিছুটা কমতো।
একটা শোবার ঘরে মামা মামী আর দুটো তে আমরা বোনেরা থাকতাম। সামনের ড্রয়িং রুমে একটা খাট পাতা ছিল। সেখানে মোরশেদ ভাই আর বেনু ঘুমাতো। বেনু আমার ছোট ভাই। বড় আপা, রুনু আপা আর আমি একটা রুমে গা*দাগাদি করে শুইতাম। অন্যরুমটা একটু ছোট, সেখানে মনু আপা আর মেজ আপা শুতেন।
আমি দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বড় আপার জন্য দুটো প্রস্তাব আসে। প্রথম দেখাতেই বড় আপাকে একপক্ষ পছন্দ করে ফেললো। দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল মামার এক কলিগের ভাগ্নের জন্য। ওরা আপাকে আগে থেকেই দেখে পছন্দ করেছিল। প্রথম পক্ষ নাছোড়বান্দা হয়ে অল্প দিনের মধ্যে আপা জন্য পাকা কথা নিয়ে নিলেন। দ্বিতীয় পক্ষ একটু মন খা*রাপ করলেও পরে তারা মেঝ আপাকে তাদের পাত্রের জন্য চেয়ে বসলেন। এভাবে আমার দুই বোনের বিয়ে প্রায় একই সময়ে অনাড়ম্বর ভাবে হয়ে গেল। অবশ্য আড়ম্বরপূর্ণ বিয়ে দেয়ার সামর্থ্য মামার ছিলও না।
আমি এইচএসসি দেয়ার আগেই রুনু আপার আর মনু আপারও বিয়ে হয়ে গেল খুব সাদামাটা ভাবে। বোনেরা শ্বশুরবাড়িতে মোটামুটি সুখেই আছে। বাড়িতে এখন মামা মামী, আমি আর মোরশেদ ভাই। বেনুকে বড় দুলাভাই নিয়ে গেছেন। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি দুলাভাইয়ের ব্যবসায় সাহায্য করে। ঘরের কাজে আমি যতক্ষণ পারি মামীকে সাহায্য করি।
মোরশেদ ভাই একটা বেসরকারি ব্যাংকে আছেন। আমাদের ভাইবোন সবার বড় মোরশেদ ভাই। গতমাসে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ভাবী খুব সুন্দরী। ভাবীর অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বিয়েটা এখনো হয়নি। পরীক্ষার পর বিয়ে হবে। মোটামুটি দুই পরিবারের আসা যাওয়া চালু আছে।
গত পরশু মামা মামী, রুনু আপার বাসায় দাওয়াতে গেছিলেন। আমার পরীক্ষা তাই সাথে যাইনি। মোরশেদ ভাইয়ের অফিসে পার্টি। ওনি ওখানে খেয়ে আসবেন তাই আমি খেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লাম। মামা মামী দশটার দিকে ফিরেছিলেন। ওরা ক্লান্ত ছিলেন বলে একটু তাড়াতাড়ি শুতে গেলেন।
রাত সাড়ে বারোটার দিকে মোরশেদ ভাই এলেন। ওনাকে দরজা খুলে দিতে হবে তাই আমি ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়েছিলাম। আমার খুব বাজে অভ্যাস দরজায় বেল দিলেই জিজ্ঞেস করার আগেই দরজা খুলে দিই। সেদিনও তাই হলো। ঘুম চোখে দরজা খুলে দিলাম। মোরশেদ ভাই কেমন চোখে যেন তাকিয়ে ছিলেন।
গা থেকে কেমন উদ্ভট একটা গ*ন্ধ পেলাম। কথা না বাড়িয়ে দরজার বন্ধ করে নিজের ঘরের দিকে যেতেই মোরশেদ ভাই ডাক দিলেন পানি দিয়ে যেতে। মোরশেদ ভাই এখন মনু আপাদের ঘরটায় থাকেন।
আমি পানি নিয়ে ঘরে টেবিলে রাখতেই দেখি মোরশেদ ভাই দরজা ব*ন্ধ করছেন। আমি জিজ্ঞেস করতেই আমাকে ইশারা দিলেন চুপ থাকতে। ভাবলাম কোন সারপ্রাইজ দিবেন হয়তো। কাছে এসে হঠাৎ আমাকে জ*ড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁ*ট দুটো জোরে তার ঠোঁ*ট দিয়ে চেপে ধরলেন। আমি আতংকে চিৎকার দিলেও গো*ঙানি ছাড়া কিছু বের হলো না।
মোরশেদ ভাই আমার মু*খে তার গামছা ঢুকিয়ে দিলেন। ধ*স্তাধ*স্তি এক পর্যায়ে আমাকে বি*ছানায় টেনে নিলেন। তার শক্ত জোরালো শরীরের সাথে আমার দূর্বল শরীর পেরে ওঠল না। সে রাতে আমারই মামাতো বড় ভাইয়ের হাতে আমার ধ*র্ষন হলো।
মাতাল মোরশেদ ভাই তার শা*রীরিক তৃ*প্তি নিয়ে ম*রার মতো পড়ে ঘুমালেন। আর আমি ফজরের আজান পর্যন্ত হতবিহ্বল জেগে রইলাম। দুচোখ বেয়ে শুধু পানি ঝরেছিল। কি বলবো,কাকে বলবো? যে মামা মামীর নিমক খেয়েছি তার ছেলের কথা কিভাবে বলি। নিজের ঘরে এসে বালিশে মুখ চেপে কেঁদেছি। তারপর গোসল করে দু' রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহকে বলেছি। এ বিচার আমি আল্লাহর কাছে ছাড়া আর কারো কাছে চাইতে পারি না। বিচার চাইতে গেলে সন্দেহের তীর ছুটে আসবে। কথা উঠবে আমি নিশ্চয়ই মোরশেদ ভাইকে বিয়ে করতে চাই। আমি তাদের আশ্রিতা।
গত দুইদিন ধরে মোরশেদ ভাই অনেক চেষ্টা করছেন আমার সাথে কথা বলতে। আমি ঘরে কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না যতোটা সম্ভব। তবুও মামী মামা জিজ্ঞেস করেছেন কি হয়েছে। ন্যূনতম খেতাম, সারাদিন ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে থাকতাম। আমার ইনকোর্স পরীক্ষাগুলো কোনমতে দিচ্ছি। পড়া আমার কিছুই হয় না, শুধু বারবার সেই রাত, সেই ক্ষণ আমাকে তাড়া করে ফিরছে।
রাতে মোরশেদ ভাই আসার আগেই আমি খেয়ে রুমে চলে গেলাম। পিছন থেকে মামীর ভৎসনা শুনতে পাচ্ছি, ‘কি এমন পড়া,সারাদিন দরজা বন্ধ করে রাখিস। আগে তো ঘরের টুকিটাকি করে দিতি। আমারও বয়স হয়েছে সেটা কি দেখিস না?’ আমি চুপচাপ চলে গেলাম।
আধাঘন্টা পরে মোরশেদ ভাই এসেই বো*মা ফেললো ঘরে। তিনি বিয়ে ভে*ঙে দিয়েছেন এবং তিনি আমাকে বিয়ে করবেন। ভাবীর বাড়ি থেকেও ফোন আসা শুরু হয়ে যাবে একটু পর হয়তো। মামা মামী হতবাক, সাথে আমিও। এতোটা আশা করিনি। কিছুটা হাসিও পেল। তিনি তার অনুশোচনার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আমায় স্বীকৃতি দেবেন। তাতে কি আমার ভেতরের ঘৃ*ণা মিটবে?
মামা হুঙ্কার দিলেন। মামী আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই ছিল তাহলে তোর মনে? এতোই যদি এইঘরের বউ হওয়ার শখ ছিল তবে আগে বললি না কেন? এতো লোক হাসিয়ে আমাদের অপমান করার জন্য?’
মামী আরও বিভিন্ন ভাবে আমায় কথা শোনাচ্ছিলেন। একসময় আমি মুখ খুললাম। মামা মামীর সামনে সেদিনের ঘটনা বলে দিলাম। মামী চিৎকার করতে করতে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে বললেন,
- ‘হতচ্ছাড়ি! আমার ছেলেকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়ে করার জন্য ফাঁদে ফেলে আবার আমার ছেলের চরিত্রে ক*লঙ্ক দিচ্ছিস? সারাজীবন খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করলাম,তার এই মূল্য দিলি? কোনদিন আমি,আমার বাচ্চারা শখ আহ্লাদও করতে পারিনি তোদের জন্য। আজ এই মূল্য দিলি? এখুনি বের হয়ে যা,কা*ল সাপের বাচ্চা।’
মোরশেদ ভাই একবারও তার বাবা মাকে সত্যিটা বললেন না, স্বীকার করলেন না। মামী আমার বড় দুই বোনকে ফোন করে সব জানালেন, গালি গালাজ করতে লাগলেন আমার মৃ*ত বাবা মাকে,শা*পশাপা*ন্ত করতে লাগলেন আমাকে। মামীর সাথে মামাও।
সইতে না পেরে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম কিছুক্ষণ। খুব কান্না পেল। ধীরে ধীরে নিজের ব্যাগটা গুছিয়ে নিলাম। সারারাত মামী একে তাকে ফোন করে আমার কৃতকর্মের কথা সবাইকে মোটামুটি জানিয়ে ফেলেছেন। ভোর হওয়ার আগে মোরশেদ ভাইকে একটা চিঠি লিখলাম।
❝❝❝
'মোরশেদ ভাই।'
‘আপনার সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই। সারাজীবন আপনাদের আশ্রিত ছিলাম। মামা মামী ছায়ায় ছিলাম। কখনো নিজেকে এতিম মনে হয়নি। আজ নিজেকে এতিম মনে হচ্ছে। এতোদিন আমাদের ভাইবোনের জন্য আপনাদের স্যা*ক্রিফাইসগুলো শো*ধ দিতে না পারার কষ্টও কুঁড়ে কুঁড়ে খে*ত। প্রতিদান কিভাবে দেব সেটা খুঁজে পেতাম না। আপনাদের ত্যাগের প্রতিদান আমার স*তী*ত্বের দামে নিবেন জানা ছিলো না।’
ইতি
'আশ্রিতা।'
❝❝❝
ভোর হতেই আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম। বড় আপা বারবার ফোন দিয়েছে রাতভর, ওর ওখানে চলে যেতে। আমি ফোনটা বন্ধ করে সিমটা ফেলে দিলাম। দ্বিতীয়বার কারও আশ্রিতা হতে চাই না।
(চলবে)...
#গল্পঃ_আশ্রিতা
#পর্বঃ_০১
#বায়জিদ
(সবাই শেয়ার করবেন গল্পটা, আপনাদের সাড়া পেলে পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়ি পোস্ট করবো, ধন্যবাদ)