05/06/2025
ইসলাম ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের প্রতিটি দায়িত্ব নির্দিষ্টভাবে বণ্টন করে দিয়েছে।
ইসলামে স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব
প্রথমেই বুঝতে হবে—যদি একজন নারী বৈধভাবে বিবাহিত থাকেন এবং স্বামী জীবিত ও সামর্থ্যবান হন, তাহলে তাঁর ভরণপোষণের পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর স্বামীর উপর ফরজ।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ وَبِمَآ أَنفَقُوا۟ مِنْ أَمْوَٰلِهِمْ
উচ্চারণ:
Ar-rijālu qawwāmūna ‘ala an-nisā’i bimā faḍḍalallāhu ba‘ḍahum ‘alā ba‘ḍin wa bimā anfaqū min amwālihim.
বাংলা অনুবাদ:
পুরুষগণ নারীদের অভিভাবক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী, কারণ আল্লাহ তাদের একদলকে অপর দলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে।
সূরা আন-নিসা, আয়াত ৩৪
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—স্বামী তার স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বশীল। এর মধ্যে ভরণপোষণ, নিরাপত্তা, পোশাক ও বাসস্থানের দায়িত্ব অন্তর্ভুক্ত।
আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলেন:
وَعَلَى ٱلْمَوْلُودِ لَهُۥ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ
উচ্চারণ:
Wa ‘alal-mawlūdi lahu rizquhunna wa kiswatuhunna bil-ma‘rūf.
বাংলা অনুবাদ:
সন্তানের পিতার জন্য আবশ্যক—মায়েদের খাদ্য ও পোশাক যথাযথভাবে প্রদান করা।
সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৩৩
এখানে “মায়েদের জন্য রিযিক ও পোশাকের দায়িত্ব যার উপর সন্তান জন্মায়” অর্থাৎ পিতার (স্বামীর) উপর তা ফরজ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর বাণী
রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন:
وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ
উচ্চারণ:
Wa lahunna ‘alaykum rizquhunna wa kiswatuhunna bil-ma‘rūf.
বাংলা অনুবাদ:
তাদের (স্ত্রীদের) খাদ্য ও পরিধানের দায়িত্ব তোমাদের (স্বামীদের) উপর রয়েছে, পরিচিত রীতিমাফিক।
সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১২১৮
অন্য হাদীসে, এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
“হে আল্লাহর রাসূল, আমার স্ত্রীর উপর আমার হক কী?”
তিনি ﷺ বললেন:
"তুমি যা খাও, তাকেও তা খাওয়াও; তুমি যা পরো, তাকেও তা পরাও; মুখোমুখি অপমান করো না, গালিও দিও না, ঘর ছেড়ে থেকো না।"
(আবু দাউদ, হাদীস: ২১৪২)
এই হাদীস ও আয়াতগুলো থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রতীয়মান হয়—স্ত্রী যতদিন বৈধভাবে বৈবাহিক সম্পর্কে আছেন, তার যাবতীয় ভরণপোষণ স্বামীর উপর ফরজ। সন্তানের উপর নয়।
সন্তান কবে দায়িত্ববান হবে?
তবে যদি মা তালাকপ্রাপ্ত হন, অথবা স্বামী মারা যান, অথবা স্বামী সম্পূর্ণ দায়িত্বহীন হন—তখন সন্তান, বিশেষ করে পুত্র সন্তানের উপর মায়ের ভরণপোষণ ফরজ হয়।
ইমাম কুদামা (রহ.) বলেন:
“যদি কোনো নারীর স্বামী মারা যান বা তিনি তার ভরণপোষণ দিতে অপারগ হন, তাহলে তার নিকটতম উপার্জনক্ষম আত্মীয়দের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে আগে আসে, তার উপর ভরণপোষণের দায়িত্ব বর্তায়।”
(আল-মুগনী, ইবন কুদামা)
ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম শাফি’ (রহ.) এবং অন্যান্য ইমামদের মতে—মায়ের জন্য ভরণপোষণ ফরজ হয়, যদি তিনি গরিব হন এবং উপার্জনে অক্ষম হন।
সুতরাং, ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে যতদিন আপনার মা বৈধভাবে বিবাহিত আছেন এবং আপনার বাবা জীবিত ও সামর্থ্যবান, ততদিন আপনার মায়ের ভরণপোষণের পূর্ণ দায়িত্ব আপনার বাবার। সন্তান হিসেবে আপনি তখনই এই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, যখন আপনার মা তালাকপ্রাপ্ত, বিধবা, অথবা আপনার বাবা দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হবেন।
এই বিধান শুধুমাত্র শরিয়তের নয়, মানবিকতারও চূড়ান্ত শিক্ষা। ইসলাম প্রত্যেককে তার অবস্থান ও সামর্থ্য অনুযায়ী দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছে—যাতে কেউ অবহেলিত না হয়, আবার কেউ অযথা চাপেও না পড়ে।