17/05/2024
ভেবেছিলাম রেজাউল যে সিচুয়েশনে আছে তাতে যে কোনো শর্ত সে নির্দিধায় মেনে নেবে। কিন্তু না! সে খুব সন্দেহ নিয়েই জিজ্ঞেস করল
- কি শর্ত?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
- আমি তোমাকে ওখানে এসে হাতের বাঁধন খুলে দেবো কিন্তু হাত থেকে দড়ি খুলবো না। তুমি আমার সাথে হেঁটে হেঁটে বাসার ভিতরে আসবে।
রেজাউল একটু ভাবল। খুব বেশি ভাবার উপায় তার নাই। একদিকে মানসিক চাপ, অন্যদিকে পেটের চাপ। আর বেশি চাপ না নিয়ে সে বলে ফেলল,
- ঠিক আছে স্যার। একটু তাড়াতাড়ি আসেন।
আমিও আর দেড়ি না করে চলে গেলাম। খুব ভোর বেলা বলে রাস্তায় লোকজনের দেখা পেলাম না। চুপেচুপে রেজাউল কে নিয়ে বাসায় ঢুকেই দরজা লক করে দিলাম। রেজাউল বলল - স্যার ভাতরুম কোনডা?
আমি আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে না করতেই সে দৌড় দিলো। বোঝাই যাচ্ছে এখন প্রতিটা সেকেন্ড তার জন্য এক ঘণ্টার সমান। তাছাড়া আপনি ঘণ্টা খানেক চেপে রাখতে পারলেও ঠিক যখন বাথরুমের কাছে যাবেন তখন চেপে রাখা খুবই মুশকিল। আমি মনে মনে তাও খুশি যে ব্যাটা এতক্ষণ চেপে রেখেছে। কিন্তু রেজাউল বাথরুমের দরজা লাগিয়ে আবার মুহুর্তের মধ্যেই খুলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম- কি হয়েছে?
সে ভিতরের হাই কমোড দেখিয়ে বলল- স্যার এইখানে বসুম কেমনে?
আমিও চিন্তায় পরে গেলাম। বললাম- উপড়ে উঠে বস। সাবধানে উঠো পরে গিয়ে কোমর ফাটিও না।
পরে অবশ্য ভাবলাম যে চুরি করতে গিয়ে দেয়াল টপকাতে পারে সে আবার পরবে কমোড থেকে!
রেজাউলের কমোড কাণ্ড দেখে আমার আবার খালুজানের কথা মনে পরে গেল। খালুর নাম আফসার উদ্দিন। এখন নিজের ব্যাবসা আছে। গার্মেন্টস এ এক্সেসরিস সাপ্লাই দেন। চাকরি করাকালীন এইসব কেনাকাটা, ভেন্ডর এর সাথে যোগাযোগ করাই ছিল তার কাজ। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেই ব্যাবসা দাড় করিয়েছেন। এখন বলা যায় এই সেক্টরে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। খালু গ্রাম থেকে এসে গার্মেন্টস এ চাকরি নিয়েছিলেন। নানান ঘাটের পানি খেয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। নানান জায়গায় মানিয়ে নিলেও খালু কখনোই হাই কমোডের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় আগে জিজ্ঞেস করতে হত লো কমোড আছে কি না! তার কথা- বাবা, বসতে আমার সমস্যা হয় না। কিন্তু তৃপ্তি পাই না। সারাজীবনের যে অভ্যাস সেটা সহজে মানিয়ে নেওয়া যায় না। অবশ্য অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। খালুজানের স্ট্যাটাস ও পরিবর্তন হয়েছে। এখনও কি সে লো কমোড ব্যবহার করেন কি না জানিনা। খালাকে একদিন জিজ্ঞেস করতে হবে।
রেজাউল কে বলে দিলাম একবারে ভালো করে গোসল করে বের হতে, বাইরে আমার পুরনো একটা লুঙ্গি রেখে দিয়েছি। সে করলও তাই।
ফ্রেশ হয়ে রেজাউল কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমি চা বানাতে ব্যাস্ত দেখে সে ঘরটা একটু উঁকি দিয়ে দিয়ে দেখছে। একা থাকলেও ঘরটা বড়। এক রুমে আমি ঘুমাই। অন্য দুইটা বেডরুম ফাঁকা পরে থাকে। একটাতে অবশ্য আমার আঁকাআঁকি, লেখালেখির জিনিসপত্র দিয়ে ভরা। অন্যটা একদম খালি। রেজাউল বসেছে ড্রইংরুমে, সোফায়। আমি আর রেজাউল চা খাচ্ছি। কেউ কোনো কথা বলছি না। একটু পর পর চা খাওয়ার সুড়ুত সুড়ুত শব্দ হচ্ছে বাকিটা সময় নিরবতা। রেজাউল অর্ধেক চা খেয়ে রেখে দিলো। আমি এখন একা চা খাচ্ছি। রেজাউল নিচে তাকিয়ে আছে। আড়ে আড়ে আমার দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু চোখে চোখ রাখছে না। আমি নিজেই বললাম,
- রেজাউল, কিছু বলবা?
রেজাউল আমতা আমতা করে বলল,
- স্যার, আমি চুরি কইরা ধরাও খাইছি। মাইরও খাইছি। কিন্তু এইরকম বিপদে পরি নাই।
- বিপদ! বিপদ বলতেছ কেন? আমি তোমার এত খাতির যত্ন করতেছি আর তুমি বলতেছ বিপদ! আশ্চর্য!
- না স্যার, আমি ঠিক ওইভাবে কই নাই। কিন্তু আমার অনেক ডর করতাছে স্যার।
- আরে মিয়া তুমি তো দেখতেছি প্রফেশনাল না।
- যে স্যার?
- মানে তুমি কি এই লাইনে নতুন?
- না স্যার। অনেক বছর হইছে।
- তাইলে? তুমি মিয়া চোর, তোমার তো ভঁয় পাইলে চলবে না! সাহস নিয়া আগায়ে যাবা। ধরা পরলে কান্নাকাটি শুরু করবা। ছোট্ট একটা কিল দিলে এমন ভাবে চিল্লাবা যেন মনে হয় মাজার সব হাড্ডি গুড়া হয়ে গেছে।
- না স্যার। পাবলিক এখন বোঝে এইগুলা।
- তাই নাকি?
- যে স্যার। এখন অভিনয় করলে আরও বেশি মাইর দেয়।
- কও কি! তাইলে তো বিপদ।
- তয় স্যার অন্য একটা উপায় আছে।
- কি সেটা?
- সেডারে কয় স্যার “ইমূশুনাল বেলাকমেল”
- ইমোশনাল ব্যাকমেইল! বাহ! তুমি তো ইংরেজিও জানো দেখছি।
- না স্যার, এডা আমার এক ওস্তাদ এ কইছে।
- ও, ইন্টারেস্টিং তো! তোমার ওস্তাদ ও কি চোর।
- হেয় নিজে চুরি করে না। অন্যগো দিয়া করায়। কেউ ধরা পরলে ছাড়াইয়া নিয়া আহে। এই যে আপনে যদি আমারে পুলিশের কাছে দেন, পুলিশ আমারে চালান দিলে এক সপ্তার মধ্যে আমারে জেল থাইকা জামিনে নিয়া আইবো। তবে চালান দেওয়ার আগে পুলিশ একদফা পিডাইবো।
- আচ্ছা শোনো, তুমি এই ব্যাপারে অন্তত নিশ্চিন্ত থাকতে পারো যে তোমাকে আমি পুলিশে দেবো না।
এর মধ্যে খালার ফোন আসে। ভালোই হল খালুর কমোড ব্যবহারের খবরটাও নিয়ে নেওয়া যাবে,
- খালা আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছো।
- আর বুড়ো বয়সে যেমন থাকি তেমনই ভালো। তুই কেমন আছোস?
- আমি খালা অনেক ভালো আছি। সকালে একটা চোর ধরেছি। ওকে নিয়ে গল্প করছিলাম।
- কিহ!! চোর ধরেছিস মানে?
- চোর ধরেছি মানে চোর ধরেছি। তুমি কি চোর ধরার কথা শোনোনি জীবনে।
- তো তুই না বললি গল্প করছিস?
- হ্যাঁ গো বাবা, ওই চোরটার সাথেই তো গল্প করছি। ওর নাম রেজাউল।
- ধুর কি সব বলিস ছাতার মাথা। সব সময় ফাজলামি করিস।
- আহা খালা ফাজলামি না। সত্যি বলছি।
- আচ্ছা তুই থাক তোর চোরকে নিয়ে। আমি রাখি। আর শোন।
- হ্যাঁ বল।
- আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রামে আসিস। কিছু জিনিস আছে তোর জন্য ওগুলো নিয়ে যাস।
- আচ্ছা খালা। আসবো।
খালাকে আমার কথা বিশ্বাস করানো মুশকিল। আমাকে তারা কখনোই সিরিয়াসলি নেননা। সুতরাং তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেও তেমন লাভ নেই। এই যাহ! খালুর কমোড ব্যবহারের কথাটা জিজ্ঞেস করা হল না। থাক অন্য সময়ে জেনে নেওয়া যাবে।
রেজাউল হা করে আমার কথা শুনছে। ও আরও অস্বস্তি বোধ করছে মনে হচ্ছে আমার কথাবার্তা শুনে। ওকে বললাম
- রেজাউল চল।
- কোথায় স্যার?
- আরে আসো আমার সাথে ...
চলবে...