28/07/2025
যদি আপনি খামার করেন তাহলে এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন আপনাকে হতেই হবে.!!
বর্তমানে এই সেক্টরে চাটুকার ইউটিউবার এবং হাইব্রিড খামারিদের উচ্চ বংশীয় গরুর কারণে আমরা প্রান্তিক খামারীরা ধ্বংসের মুখে,তাই এই বিষয়গুলো নতুন এবং পুরাতন খামারিদের জানা জরুরী:-
(১) আমরা অধিকাংশ সবাই শুরুতেই শেট নির্মাণ করতে সবচেয়ে বড় ভুল করি।
➡️যেমন প্রচুর পরিমাণ অর্থ সেট নির্মাণের কাজে ব্যয় করি। যেটা মোটেও ঠিক না আপনি গরু পালনে সফল না হলে সেট দিয়ে কি করবেন?এবং ডাইনিং টেবিলের মতো খাবার পাত্র তৈরি করি যেটা কখনো বিজ্ঞানসম্মত হয় না!
➡️আমাদের মেঝের ঢালু যেভাবে থাকার কথা সেভাবে করতে পারিনা যার কারণে গরুর ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না এবং মেঝে একবার ভিজলে সারাদিন সুখায় না।
➡️এরপরে গরু যে জায়গায় দাঁড়ানো থাকে সেখান থেকে পিছনের দিকে এত অল্প পরিমাণ জায়গা থাকে যাতায়াত এবং অন্যান্য কাজকর্ম করতে অনেক কষ্ট হয়।
➡️ ঘরের উচ্চতা বাইরের বাইরের ড্রেন এগুলো যদি সঠিকভাবে না হয় তাহলে কিন্তু পরবর্তীতে সময় আমরা প্রবলেমটা বুঝতে পারি।
২.➡️. সবচেয়ে বড় ভুলটা আমরা তখন করি যখন আমরা অন্যের জমি ৫/৭ বছরের লিজ সেখানে অনেক টাকা খরচ করি পরবর্তীতে জমির মালিকের কথা এবং কাজের কোন মিল থাকে না।অবশ্যই নিজের জমিতে ঘাস লাগাতে হবে অথবা পাঁচ থেকে দশ বছরের লিজ নিতে হবে চুক্তি পত্রের মাধ্যমে।
৩.➡️তারপরে আমরা যখন বাজারে গরু কিনতে যাই তখন আমরা সঠিক জাত, মান, কোয়ালিটি কিন্তু বুঝতে পারিনা। যার কারণে আমরা এখান থেকে ভালো একটা প্রফিট অর্জন করতে পারিনা।
৪.➡️যখন আপনার ফার্মে ২০/৩০ টি গরু হবে তখন বিভিন্ন সময় ভাইরাস জনিত (FMD).(LSD)রোগে বা অন্যান্য রোগ আক্রান্ত হবে.
এই রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো একটিতে আক্রান্ত হলে সবগুলা আক্রান্ত হবে।
এই সমস্ত গরু যদি সুস্থ করে পুনরায় পর্যায়ে ফিরে নিতে পারেন তবে Success হওয়ার জন্য এটা আপনার একটি ধাপ।
৫.➡️বড় বড় খামারীদের গরু কেন রোগবালাই কম হয়। কারণ তারা আমাদেরকে থেকে অনেক সচেতন। গরুকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে এবং কৃমির ডোজ সম্পন্ন রাখতে হবে।
সময়মতো ভ্যাকসিন এবং কৃমির ডোজ না করলে গরু বিক্রি করে ওষুধ কিনতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নেন কি করবেন।
৬.➡️ যখন আপনি গাভীর ফার্ম করবেন তখন একটি গাভীর l*d. Fmd এবং ম্যাচটাইটিস সহ কিন্তু বিভিন্ন রোগ আক্রান্ত হতে পারে বিশেষ করে এই তিনটি রোগে আক্রান্ত হলে আপনার গাভি কখনোই স্বাভাবিক পর্যায়ে যাবে না যতদিন বেঁচে আছে।
৭.➡️ যদি আপনি ফার্মে সময় দিতে না পারেন তাহলে আমি বলতে পারি আপনি কোনদিনও সফল হতে পারবেন না লিখে রাখুন আপনি।
রাখাল আর পল্লী চিকিৎসক এরা চায় না যে আপনি কখনোই বড় খামারি হন এটা এখনই বুঝবেন না পরবর্তীতে সময় বুঝবেন যখন ফার্মে ৪০/৫০ টি গরু হবে।
৮.➡️ আপনি নিজস্ব কোন জমি নাই, ঘাস লাগাতে পারবেন না, শুধু খর আর দানাদার এর উপরে এবং বাইরের ক্রয় করা সাইলেজের উপরে যদি খামার টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে আপনার ম্যাক্সিমাম প্রতিবছর ৫/১০ লক্ষ টাকা লস হবে। এটা আপনি শুরুতেই বুঝতে পারবেন না।
৯.➡️ গরু পালতে হলে, গরুর সাথে নিজেকে গরু হতে হবে!! অবাক হচ্ছেন.? হ্যাঁ সঠিক কথাই বলছি। গরু হাট থেকে ক্রয় করা, খাবার ম্যানেজমেন্ট করা, প্রাথমিক চিকিৎসা নিজে ব্যবস্থা করা, গরুর দিকে তাকানোর পরে ওর ভালো-মন্দ অসুখ-বিসুখ বিচার করা। সঠিক সময়ে বাজারজাত করা এইসব বিষয়ে অবশ্যই জ্ঞান থাকতে হবে।
১০.➡️ আপনি কাজ করেন বা না করেন সেটা কোন বড় কথা না কিন্তু আপনাকে ভোর ছয়টা থেকে নয়টা মধ্যে এবং বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটার মধ্যে এই সময়ে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। কারণ আপনার শত্রুর থেকেও বড় শত্রু হলো রাখাল। এই শা*লাদের মুখে মধু অন্তরে বিষ তবে কিছু ব্যতিক্রম ভালো মানুষ আছে।
১১.➡️ আপনার স্থানীয় হাটবাজারে যে সমস্ত গরুর চাহিদা বেশি সব সময় চিন্তা করবেন ওই রেঞ্জের গরু তৈরি করার জন্য। অতিরিক্ত বড় বড় করে লালন পালন করে অনেকের-ই চোখের জল ফেলতে দেখছি।
বিশেষ করে কোরবানির সময় ৭/৮ লক্ষ টাকার গরু তিন থেকে চার লক্ষ রাখায় বিক্রি হয়েছে। তাই অতিরিক্ত লাভের আশায় এই কাজ করা যাবে না।
১২➡️ খামার কিন্তু হাতের মোয়া না '' চাইলেই আপনার নাগালের মধ্যে চলে আসবে। এই সেক্টরে আপনার অনেক পুজি ইনভেস্ট করতে হবে,অনেক ঝামেলা, টেনশন, ধৈর্য থাকতে হবে। সেই তুলনামূলকভাবে প্রফিট অনেক কম।
একটি খামার পরিচালনা এবং খামার টিকিয়ে রাখা আর ৪ টা বউ নিয়ে সংসার করা সমান কথা🤔‼️
এই সম্পূর্ণ ধারণাগুলো পৃথিবীর কোন বইয়ের মধ্যে এই সমস্ত লেখা পাবেন না। শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করলে খামারি হওয়া যায় না।
এখানে অভিজ্ঞতা এবং ধৈর্যের দাম হাজার গুণ বেশি।
সকল খামারি ভাই এবং প্রবাসী ভাইদের জন্য দোয়া এবং ভালোবাসা রইলো, আমি চাইনা কোন কারণে আপনার একটি টাকা লস হোক। শুরুতে ধৈর্য ধরে ছোট করে শুরু করেন সেখান থেকে আপনার অনেক অভিজ্ঞতা হবে।
লেখাগুলো আমার নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লেখা ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করে টাইমলাইনে রেখে দেন কাজে লাগতে পারে।