14/10/2023
মহালয়া কি? কেন এই মহালয়া ? মহালয়া কি গুরুত্ব ধারন বা পালন করে? আসুন জেনে নেই।
শুভ মহালয়া শব্দটির সাথেই আমরা সকলেই কমবেশী পরিচিত। কিন্তু কেন এই শুভ মহালয়া! আর এই শুভ মহালয়া আসার সাথে সাথেই সবাই দূর্গাপূজার দিনক্ষন গোনা শুরু করে দেন। আমরা অনেকেই এই সুন্দর শুভ মহালয়ার মাহাত্ম্য জানি না। যা আমাদের সকলের জানা উচিত। আসুন সকলে আজ জেনে নেই,
ত্রেতা যুগে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র অকালে দেবীকে অর্থাৎ মা দূর্গার আরাধনা করেছিলেন। লঙ্কা জয় করে মাতা সীতাকে উদ্ধারের জন্য দূর্গা পূজা করে ছিলেন। আর তখন সেই সময়টা ছিলো বসন্ত! তাই সেটাকে বাসন্তি পূজা বলা হয়। শ্রীরাম চন্দ্র অকালে-অসময়ে সেই পূজা করেছিলেন বলে, এই শরৎ এর পূজাকে এক অর্থে দেবীর অকাল-বোধন বলা হয় থাকে।
সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজসমুহ করতে গেলে তর্পন করতে হয়। বিবাহ করতে গেলে, প্রয়াত পূর্বরা যাদের পিতা-মাতা তাদের পিতা-মাতার জন্য, সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়। এছাড়াও নানা ধরনের কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানে খুশি করা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের আগে এদিনে এমনই করেছিলেন বলে জানা যায়।
সেই অনুসারে এই মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরন করে এবং পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। আর সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আর প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয়, তাহাকে মহালয় বলা হয়। আর মহালয় থেকে মহালয়া।
সনাতন ধর্ম অনুসারে বছরে একবার পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করতে হয়, সেই তিথিতে করতে হয় যে তিথিতে উনারা প্রয়াত হয়েছেন। আর সনাতন ধর্মের কার্যাদি কোন তারিখ অনুসারে করা হয় না। সমস্ত কিছু তিথি অনুসারেই গঠিত হয়ে থাকে। মহালয়াতে যারা গঙ্গায় অঞ্জলি প্রদান করেন পূর্বদের আত্নার শান্তির জন্য, তাহারা শুধু পূর্বদের নয়, পৃথিবীর সমগ্র জীব ও জগৎ এর জন্য প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করেন।
যে-অবান্ধবা বান্ধবা বা যেন্যজন্মনি বান্ধবা - অর্থাৎ যারা বন্ধু নন, অথবা আমার বন্ধু ও, যারা জন্ম জন্মাত্নরে আমার আত্নীয় বন্ধু ছিলেন, তারা সকলেই আজ আমার অঞ্জলি গ্রহন করুন
যাদের পুত্র নেই, যাদের কেউ নেই আজ স্মরন করার তাদের জন্য ও অঞ্জলী প্রদান করতে হয়।
যেযাং, ন মাতা, ন পিতা, ন বন্ধু - অর্থাৎ যাদের মাতা-পিতা-বন্ধুকেউ নেই আজ স্মরন করার তাদেরকে ও স্মরন করছি ও প্রার্থনা করছি তাদের আত্না তৃপ্তিলাভ করুক।
এ দিন তর্পন করলে পিতৃপুরুষেরা আমাদের আশীর্বাদ করেন। এ ছাড়াও এদিনে দেবী দুর্গার বোধন করা হয়, বোধন অর্থ জাগরণ। তাই মহালয়ার পর দেবীপক্ষের (শুক্লপক্ষের) প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয়া দুর্গা পুজার সূচনা করা হয়। প্রসঙ্গতঃ যে শ্রাবণ থেকে পৌষ ছয় মাস দক্ষিণায়ন, দক্ষিণায়ন দেবতাদের ঘুমের কাল।
তাই বোধন অবশ্যই প্রয়োজন, আরও বলা দরকার যে মহালয়ার পর প্রতিপদে যে বোধন হয় সে সময়ও সংকল্প করে দুর্গা পূজা করা যায়। একে বলে প্রতিপদ কল্পরম্ভা, তবে সাধারণত আমরা ষষ্ঠি থেকে পূজার প্রধান কার্যক্রম শুরু হতে দেখি! যাকে আমরা সবাই ষষ্ঠাদিকল্পরম্ভা হিসেবে জানি।
কিছু প্রাচীন বনেদী বাড়ি এবং কিছু মঠ মন্দিরে প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে পুজো হয়। যদিও প্রতিপদ কল্পরম্ভা থেকে শুরু পুজোতেও মূল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয় ষষ্ঠি থেকেই এবং সপ্তমী থেকে বিগ্রহতে। প্রতিপদ থেকে শুধু ঘটে পূজো ও চণ্ডী পাঠ চলে। এভাবেই মায়ের আগমন ও প্রতিষ্ঠা হয়ে থাকে।
#মহালয়া2023
© copy post