18/09/2023
কলরব পরিচালকের সূক্ষ্ম নিন্দাসংবলিত লেখার জবাব (১ম পর্ব)
মাওলানা সাঈদ আহমদ। একজন চুক্তিবাদী চমৎকার আলোচক। এমন চুক্তিবাদী আলোচকেরও প্রয়োজন আছে। টাকার বিনিময়ে কণ্ঠ বিক্রি করে হলেও সমাজে কিছু পরিবর্তন তো আসে। তার দাবি অনুসারে, ১৫-১৭ সালে তিনি আলোচনা করতেন সমকালীন প্রেক্ষাপট নিয়ে। এখন হয়তো করেন আসমানের উপরের আর মাটির নিচের বিষয়াবলি নিয়ে। সঙ্গে চোখে অশ্রু আসে এমন ইমোশনাল টপিক থাকলে থাকতেও পারে। তবে ওয়াজ-মাহফিলে আলোচনা যা-ই করুক, সংগীতে সমকালীন বিভিন্ন প্রেক্ষাপট অবশ্য টানে। এটা ভালো। প্রত্যেকের রুচি আলাদা। শরিয়াহর সীমা লঙ্ঘন না করলে কারও রুচি নিয়ে নেগেটিভ কমেন্ট করা সমীচীন নয়।
মাজহারি, আশরাফি, আফসারিসহ আপনারা যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ, স্পষ্ট ও সূক্ষ্ম বিভিন্ন উপায়ে চুক্তি করে ওয়াজ-মাহফিল করেন, আল্লামা ওলিপুরি বা মুশতাকুন্নবি হাফি.-দের বক্তব্য অনুসারে কাজটা নাজায়েয হলেও, আবার অনেকের মতে অশোভনীয় মুবাহ হলেও আপনাদের দ্বারা অনেক বেনামাজি তো নামাজি হচ্ছে, দীনের কমবেশি ফায়দা তো হচ্ছে। খাজা আবু তালিব নিজে শিরকে জড়িয়ে থেকেও দীনের অনেক খেদমত করেছেন, এ যুগেও কেউ নাজায়েয বা অশোভনীয় কাজে জড়িয়ে থেকেও দীনের যদি কিছু উপকার করে, এতে মন্দ কী! উল্লেখ্য, আপনি আমাকে আবরার আসিফের সঙ্গে তুলনা দিতে পারলে আমিও নিশ্চয়ই আপনাকে মাজহারিদের সঙ্গে তুলনা দিতে পারি। জানেনই তো, সাদৃশ্য ও উপমা আপেক্ষিক বিবেচনায় হয়, সামগ্রিক বিবেচনায় নয়। সুতরাং যে অধিকার আপনি প্রতিষ্ঠা করেছেন, সেটা অন্যরাও ভোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে এতটুকু ইনসাফ করা যায়, আপনাকে বড়লোকের মাজহারি বলা যায়। এতে জিনিসটা আরও শিষ্টাচারসম্মত হয়।
আপনি আমার সিনিয়র, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আপনি যে সময়ে ফরিদ মাসউদ সাহেবের সঙ্গে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে না*স্তি*কদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, সে সময় আমি গণজাগরণ মঞ্চ চিনিই না। আপনার বক্তব্য অনুসারে আপনি ফারেগ হয়েছেন দশ বছর আগে, সে হিসেবেও আমার আকাবির। কারণ, আমি অদ্যাবধি ফারেগ হইনি। নিজেকে আজীবন তালিবুল ইলমের কাতারে রাখার প্রত্যয় নিয়েছি বহু আগেই। দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষার কথা যদি আসে, তবে তা দিয়েছি ৯ বছর হয়েছে। ৯ আর ১০ এর দূরত্ব যেহেতু কম না, সে হিসেবে আপনাকে মহান আকাবির মানতেও আমার দ্বিধা থাকার কথা না। আপনার সহকারী মাহফিল নিতেও যে পোস্টারে আপনার নাম আমার নামের ওপরে লেখার শর্তারোপ করে এবং এর কারণ হিসেবেও আপনি আকাবির হওয়ার কথা যে উল্লেখ করে, সে বিষয়ক ডকুমেন্টও আমার কাছে মওজুদ আছে। তবে এ নিয়ে আমি কখনো উষ্মা দেখাইনি। দেখানোর কথাও নয়। কারণ, আমি আমার নাম পোস্টারে নিচে দেখতে ভালোবাসি। এ নিয়ে ইতিপূর্বেও অনলাইনে বহুবার সতর্ক করেছি। বাস্তবেই আমি অধম, নিতান্ত অযোগ্য। মানুষ ভালোবেসে দাওয়াত দেয়, সেটা তাদের বিষয়। তবে নিজের নাম উপরে দেখলে আমার আলাদা ভালোলাগা কাজ করে না, বরং বিব্রত ও লজ্জা লাগে। নিজের নাম ফুটানোর যদি লক্ষ্যই থাকত, অন্তত নিজের বইগুলোতে নামের আগে কয়েকটা ডিগ্রি লাগাতে পারতাম খুব সহজেই। কিন্তু প্রকাশকের বহু চাপাচাপির পরও আজও পর্যন্ত আমার নাম সর্বপ্রকার ডিগ্রিমুক্তই আছে আলহামদুলিল্লাহ। সুতরাং আপনি যে অনেক বড় আর আমি যে নিতান্ত ক্ষুদ্র, এটা কষ্ট করে স্মরণ না করিয়ে দিলেও চলবে। কারণ, বাস্তবতার অনুভূতি সর্বদাই আমার মধ্যে জাগ্রত আছে আলহামদুলিল্লাহ।
কোনো এক মঞ্চে আপনি আমার ওপর বিশাল অনুগ্রহ করেছিলেন। চাইলে আমাকে বসিয়ে রেখে সংগীত গাইতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেননি। করলেও সমস্যার কিছু ছিল না। আমাকে ৫/১০ মিনিট কেন, আধঘন্টা বসিয়ে রাখলেও আমি মাইন্ড করি না। সুতরাং কবে এই এক মহা অনুগ্রহ করেছেন, এতকাল পর এসে তা স্মরণও করেছেন, আবার স্মরণ করতে গিয়ে আমার তুচ্ছতা আর আপনার বড়ত্ব ও মহানভুবতাও সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। যে অনুগ্রহ চায় না, তাকে অনুগ্রহ করে খোটা দিয়ে কী লাভ বলেন! তবে একটা বিষয় বুঝে আসছে না, দীর্ঘ বয়ান শেষে জাস্ট একটা ফরমায়েশি গজল গাননি বলেই তারা আর আপনাকে সম্মানীর টাকা দেয়নি? আর গজল না গাওয়ার একমাত্র কারণও কিন্তু এটা নয় যে, কর্তৃপক্ষ আমাকে স্টেইজে নিয়ে গেছে। আপনার লেখা পড়লে সকলের ধারণা এমনই হবে। কিন্তু সেদিন আপনি স্পষ্টই বলেছিলেন, গজল শুনতে চাইলে ভালো সাউন্ড আনবেন। এরকম নিম্নমানের সাউন্ড আনলে শুধু বয়ানই পাবেন; গজল না। আর গজলের জন্য আলাদা করে কলরবকে দাওয়াত দেবেন। মাহফিলের মঞ্চে এসব বাজে সাউন্ডে গজল গাইতে বলবেন না। আপনার লেখা থেকে মনে হচ্ছে, আমাকে সেক্রিফাইজ করতে গিয়ে আপনি হাদিয়া হারিয়েছেন। কিন্তু আসলেই বিষয়টি কি এমন? সেই কর্তৃপক্ষও কিন্তু মরেনি। তাদের বক্তব্য মিডিয়ায় আপলোড হলে কি আপনার ভালো লাগবে? মূল কারণ যাই হোক, স্রেফ আমাকে জড়িয়ে পোস্টে যেভাবে রসালো বয়ান হাজির করেছেন, সেটা কি প্রতারণা ছিল না, হে মহান আকাবির?
আপনি অনেক বছর ধরে ওয়াজ করেন, এটা সত্য। যদিও মোট ওয়াজের সংখ্যা কত, তা আমার জানা নেই। আমার যেহেতু হাজারের কোঠায়, আপনারটা লাখের কোঠায় হলেও হতে পারে। তবে আপনার কোনো বয়ান শোনার সৌভাগ্যই আমার হয়নি। তাই এ নিয়ে মূল্যায়ন করার সুযোগও আমার নেই। তবে আপনার লেখা থেকে বুঝলাম, আপনি আমার বয়ান শোনেন। পূর্ণ বয়ান শোনেন নাকি কাটপিছ, তা অবশ্য ক্লিয়ার করেননি। তবে আমার কাছে দ্বিতীয় সম্ভাবনাই প্রবল মনে হয়েছে। ইস্যু নিয়েই যেহেতু আপনাদের সংগীতাঙ্গনের অনেক কাজ, তাই সেদিকে আপনার নজর থাকা অস্বাভাবিকও না। তবে কার বয়ান বিষয়ভিত্তিক আর কার বয়ান ইস্যুভিত্তিক, তা ফায়সালা করতে চাইলে পূর্ণাঙ্গ বয়ান নিয়মিত শোনা জরুরি। আমাকে নিয়ে এত সময় আপনি দেন! তবে একটা বিষয় অনুগ্রহ করে ক্লিয়ার করবেন, ইস্যুভিত্তিক বয়ান মানে কী? অর্থাৎ, যে বয়ানের সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচ্য বিষয় থাকে না। শুরু থেকে শেষ বক্তা একের পর এক ইস্যু বলতে থাকে। এমন কিছু? সংজ্ঞা ক্লিয়ার করলে না উদাহরণ বোঝা যায়। সংজ্ঞাই অস্পষ্ট হলে প্রয়োগক্ষেত্র বোঝাও তো দুষ্কর হয়ে যায়। যদি দাবিই করেন, আমার পূর্ণাঙ্গ আলোচনাগুলো অগোছালো ও সুনির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক নয়, তবে আসুন, দুটো পদক্ষেপের যেকোনো একটা গ্রহণ করি : (ক) আমার হাজারের কোঠায় থাকা বয়ান সমগ্র আর আপনার লাখের কোঠায় পৌঁছা বয়ান সমগ্রের অডিটের ব্যবস্থা করি। সবগুলো এনালাইসিস করে একটা স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হই। এতে করে ক্যাটাগরির ভিন্নতা বোঝাও সহজ হবে। আর আপনি যেহেতু একজন শাহবাগ আলোকিত করা আকাবির, আপনার জ্ঞান থেকেও উপকৃত হওয়া যাবে। (খ) দুজনেই পরীক্ষা দিই। নতুন ধাঁচে নয়, পূর্বের ধাঁচের আলোকেই। যে ধাঁচ সাধারণত অনুসরণ করা হয় বয়ানে, তার আঙ্গিকেই পরীক্ষা দিলে মন্দ হবে না আশা করি। এতে করেও আমাদের গ্যাপগুলো আমরা জানতে পারব। আপনারা যারা আকাবির আছেন, তাদের রঙে নিজেদের রাঙাতে পারব।
আবু রায়হানকে নিয়ে আমার বলা কথাগুলো নাকি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে! ভেরি স্যাড। আসলে আবু রায়হানকে নিয়ে আমি কী বলেছিলাম? সুনির্দিষ্ট কিছু বলেছি বলে মনে পড়ে না। একদিকে আপনি স্পেসিফিক কথার কারণে কষ্ট পেয়ে আছেন, আরেকদিকে আমি কিছু বলেছি বলেই আমার স্মরণ আসছে না। হাউ ফানি! নাকি ব্যাপক কথাগুলোর প্রয়োগক্ষেত্র নিজের থেকেই নির্ধারণ করে নিয়েছেন? এটা কি অনেকটা 'ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না' এর মতো হয়ে গেল? আর এটাও কিন্তু আপনি স্পষ্ট করেননি, কষ্ট কি শুধু আমার কথায় পেয়েছেন, নাকি আবু রায়হানের কাজেও পেয়েছেন? আমাকে নিয়ে আপনাদের লোকেরা যতটা সরব, তাকে নিয়ে ঠিক ততটাই নীরব। অবশ্য আপনাদের কেউ কেউ হাদিস শুনিয়েছে, যে চুপ থাকে, সে মুক্তি পায়। এটাও সম্ভবত শুধু তার ক্ষেত্রে, না হলে আমাদের ক্ষেত্রে সরব না হয়ে কীইবা উপায়! রুটিরুজি বা সুদৃষ্টির বিষয়ও থাকতে পারে। উপরন্তু আপনাদের সংগঠনের কেউ কেউ যে আমাকে চরম বাজে ভাষায় গালাগাল দিয়েছে, এতে আপনাদের প্রতিক্রিয়া কী, তাও জানাননি। আমি অতীত ইতিহাস টানছি না। পুরোনো কাসুন্দিও ঘাটছি না। কয়েক বছর আগের অফলাইনের মন্তব্যসমূহের সাক্ষ্যপ্রমাণও আনছি না। যা অতীত, তা তো অতীতই। বলতে পারেন, নিজেদের বিষয়গুলো ঘরোয়াভাবে সমাধান করেছেন। ভালো কথা। চোখে ধুলো দেওয়া তদন্ত কমিটিও তৈরি করেছেন। কৌশলী বিবেচনা। কিছু বিষয় সময়ের উপরই ছেড়ে দেওয়া ভালো। এই যুগে মানুষের চোখ ফাঁকি দেওয়া আর সবাইকে বোকা বানানো এত সহজ না। এমনই যদি হতো, পাবলিক টয়লেট টুয়েন্টি ফোরের গুজব সে*লের এক্টিভিস্টরা অনেক আগেই সফলতা পেয়ে যেত। কিন্তু এসব হলুদ হাইওয়ানে নাতেক নিজেদের ধ্বংসকেই কেবল ত্বরান্বিত করছে।
আপাতত এতটুকুই। না হলে মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়ে যাবে। কলমের জবাব কলম দিয়ে দেওয়াই বাঞ্ছনীয়। এগুলো আপনাদের মুরিদ ভাগানোর জন্য নয়। কেবল নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার রাখার জন্য। না হলে কেবলই ফেবুর লেখা পড়ে কেউ মাসলাক পাল্টায় না, এটাই বাস্তবতা। পরিশেষে আবারও মার্জনা কামনা করছি। আপনার মতো আকাবিরের শান রক্ষা করা আমার সাধ্যের কথা না। আবার কোনো প্রকার আর্থিক চুক্তি ছাড়া অধমের লেখা পড়বেন এবং ফরীদ মাসউদ সাহেবের এজেন্ডায় সময় না দিয়ে আমার আলোচনা থেকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা কোনো সমকালীন প্রেক্ষাপটনির্ভর কাটপিছ ভিডিও দেখে নিজের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করবেন, এটাও তো কম কথা না। সতত শুভকামনা হাতপাখার মর্দে আকাবিরের প্রতি।