20/06/2025
একটি ছোট গ্রাম—নাম খাগড়াছড়ি। চারদিকে সবুজ পাহাড়, সরু রাস্তা আর টিনের ঘর। এখানেই জন্ম অয়ন-এর। বাবা ছিলেন একজন কৃষক, মা গৃহিণী। সংসারে অভাব ছিল প্রতিনিয়ত, কিন্তু অয়নের চোখে ছিল স্বপ্ন—একদিন বড় কিছু করার।
অয়ন ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভালো ছিল। কাঁচা ঘরে কেরোসিনের আলোতে বই পড়ে রাত কাটাতো। বন্ধুরা খেলায় মেতে থাকলে, সে স্বপ্ন আঁকতো—ঢাকায় গিয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, একদিন মায়ের মুখে হাসি ফোটাবে।
কিন্তু জীবনের পথ তো সহজ হয় না। এসএসসি পাস করার পর বাবার পক্ষে কলেজের খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক কষ্টে, স্থানীয় এক চাচার সহযোগিতায় শহরের কলেজে ভর্তি হয় অয়ন। থাকত একটি মেসে, যেখানে খাবারের চেয়েও বেশি প্রয়োজন ছিল স্বপ্নের।
কলেজে পড়ার সময় সে টিউশনি করত। সকালে কাগজ বিলি করতো, রাতে হোস্টেলে ফিরে নিজের পড়াশোনায় মন দিতো। অনেকে বলতো, "এই জীবনে কিছু হবে না, গ্রামে ফিরে চাষ করাই ভালো।" কিন্তু অয়ন নিজের মনকে বুঝিয়ে রাখতো—"আমি হারতে আসিনি, জিততেই এসেছি।"
বছর পেরোল, পরীক্ষা এলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। অয়ন রোজ ১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। অবশেষে, স্বপ্ন সত্যি হলো—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো অয়ন, অর্থনীতি বিভাগে।
সেই জায়গা থেকে শুরু হয় তার নতুন লড়াই। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ, বই, বাসা ভাড়া—সবকিছু সামলে সে চালিয়ে গেল। অনেক কষ্টের পর, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করল প্রথম শ্রেণিতে। তারপর সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি। আবারও টানা এক বছর কষ্ট, সংগ্রাম, অনিদ্রা।
শেষ পর্যন্ত, বিসিএস ক্যাডারে জায়গা করে নেয় অয়ন। আজ সে একজন সম্মানিত সরকারি কর্মকর্তা। বাবা-মায়ের চোখে এখন গর্বের অশ্রু, আর গ্রামের লোকজনের মুখে মুখে আজ অয়নের গল্প।
অয়ন এখন শুধু নিজের জন্য নয়, গ্রামের গরীব ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি ফ্রি কোচিং সেন্টার চালায়। তার ভাষায়,
> “স্বপ্ন যদি সত্যি করতে চাও, তাহলে প্রতিদিন সেই স্বপ্নকে সময় দাও। হাজারো কষ্ট সয়েও যদি থেমে না যাও—তবে জয়ের গল্প একদিন তোমার হবেই।”