11/09/2025
প্রথমেই অভিনন্দন জানাই সকল বিজয়ী ও অংশগ্রহণকারী প্রার্থী এবং ভোটার শিক্ষার্থী বন্ধুদের।
ডাকসু যদিও একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচন, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব রয়েছে। আমরা তরুন প্রজন্ম দীর্ঘ ১৭ বছর পর ভোটের অধিকার ফিরে পেয়ে ২০২৫-এর ডাকসু নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের একটা আমেজ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে একটি উৎসবমুখোর নির্বাচন উপহার দিয়েছে ঢাবিয়ানরা।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকতে পারেনি, অনেক কারচুপি, অনিয়ম হয়েছে, পরিকল্পিতভাবে পক্ষপাতদুষ্ট করেছে। একই প্যানেলের একই হলে ভিপি এবং জিএস পার্থীর ভোট ০ ও ১০০+ হয় কিভাবে জানা নেই, ফলাফলের যে ব্যবধান দেখিয়েছে তাতেই সব স্পষ্ট বুঝা যায়। পরিকল্পিত Engineering করতে গিয়ে Over Engineering করে ফেলছে সিন্ডিকেট কমিশন। যেটার পরিনাম পরবর্তী নির্বাচন গুলোতে দেখা যাবে। দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অরাজকতা সৃষ্টি হতে পারে।
তবে সবচেয়ে খুশির বিষয় হলো, জাতীয় রাজনীতিতে শাহবাগ, বামপন্থা, নব্য স্বৈরাচারদের মাজা ভেঙে দিয়েছে ২৫-এর ডাকসু। ডানপন্থা ও ইসলাম পন্থা এগিয়ে এসেছে।
✪ ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ:
আজকের ঢাবিতে ইসলামপন্থী দের উত্থানে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর ভূমিকা সর্বাঙ্গে। ২০১৮ সালে ডাকসুতে ঢাবির বুকে “নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার” শ্লোগান দিয়ে ঢাবিকে পবিত্র করার সূচনা করে ইশা ছাত্র আন্দোলন। ২০/৩০ জন কর্মী যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে স্বৈরাচারের অভয়ারণ্যে, সেটা যেকোনো দলকেই স্বীকার করতে হবে।
মাঝেমধ্যে টুকটাক মিছিল/মানববন্ধন ছাড়া কোনো কার্যক্রম ইশা ছাত্র আন্দোলন কে করতে দেয়নি ছাত্রলীগ, থাকতে পারেনি হলে, সংগঠনের সদস্যও করতে পারেনি তারা। হিজাব ও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আন্দোলন করে নির্যাতিতও হয়েছিলো অনেক কর্মী। তবুও ছাত্রলীগের কোনো সুবিধা গ্রহণ করেনি, বুক চিতিয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম করেছে সামর্থ্যানুযায়ী।
২০২৫ এর ডাকসুতে তাদের ফলাফল গত ডাকসুর চেয়ে অনেক ভালো, শিক্ষার্থীদের আস্থার জায়গায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে তারা। বিশেষ করে নারী হল গুলোর ভোট চোখে পরার মতো ছিলো।
যেহেতু তারা রাজনীতিকে ইবাদত হিসেবে করে থাকে,
সেহেতু তারা রাজনৈতিক এর পাশাপাশি একটি দাঈ সংগঠন, তাদের হার নেই। দাঈরা সবসময়ই জিতে যায়। তারা শরিয়ত বিসর্জন দিয়ে রাজনীতি করেনি। পর্দার মতো ফরজ বিধানকে তারা ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা সফল। ঢাবির প্রতি ইঞ্চি মাটিতে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিয়েছে তারা। ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশে একদিন ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা হবে, সেটাই বার্তা দিচ্ছে ডাকসু।
➤ তাদের ব্যার্থতা হলো:
(১) তারা বিভিন্ন ইস্যুতে সরব থাকলেও মিডিয়ার সামনে ফোকাস হতে পারেনি (যদিও এটা মিডিয়ার স্বেচ্ছাচারিতা)।
(২) অভ্যুত্থানের পরে ক্যাম্পাসে ১ বছর পর্যাপ্ত দাওয়াতি কাজ করেনি শিক্ষার্থীদের মাঝে।
(৩) ডাকসু নিয়ে আন্দোলন করলেও পরিকল্পিত রোডম্যাপ তৈরি করতে পারেনি।
(৪) আর্থিক ফান্ড দুর্বলতা।
★ ইসলামী ছাত্রশিবির:
ছাত্রশিবির ২৫ এর ডাকসুতে ভালো ব্যবধানে জয়ী হয়েছে। তবে ভোটারদের অধিকাংশ ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা এতবছর গেস্টরুম, গণরুম, জোরদখলে অতিষ্ঠ হয়ে, নব্য স্বৈরাচার ছাত্রদলের বিতর্কিত কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট হয়ে ভোট দিয়েছে শিবিরকে। এটা শিবিরের একটা বড় পাওয়া।
অভ্যুত্থানের পরে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে এসেছে, ব্যাপক আর্থিক খরচে বেশ কয়েকটি ইভেন্টের মাধ্যমে প্রচারণা করে শিক্ষার্থীদের কাছে টানতে চেষ্টা করেছে। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে।
➤ ছাত্রশিবিরের ব্যার্থতা:
(১) মহল্লায় নির্যাতিত হলেও অভ্যুত্থানের আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির নিজেদেরকে অপ্রকাশ্যে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম করেছে, হলে থাকতে পেরেছে, ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সুবিধা গ্রহন করেছে। অনেকে পোস্টেড, এক্টিভ ছাত্রলীগ নেতাও ছিলেন। যেটা তাদের উচিৎ হয়নি।
(২) নারী বান্ধব বুঝাতে গিয়ে পর্দার ফরজ বিধানকে চরমভাবে লঙ্ঘন করেছে ছাত্রশিবির। অতি লিবারেল হতে গিয়ে ফ্রিমিক্সিয়ে জড়িয়ে পরেছে তারা। ইসলামী সংগঠন পরিচয় দিয়েও শরিয়ত বিসর্জন দিয়েছে, যেটা কখনোই কাম্য নয়।
(৩) অশালীন মুখের অধিকারীনি, ২৪ পরবর্তী রাজনীতিতে গালাগালির প্রবক্তা একটি অসভ্য মেয়েকে প্যানেলে যুক্ত করেছে। যেটা ইসলামী সংগঠন এর শান-মানের সাথে কখনোই যায়না।
( তবে আমি খুশি ছাত্রশিবিরের জয়ে। অন্তত ঢাবিতে নারায়ে তাকবীর এর শ্লোগানের দল গুলোর সফলতা জারি থাকুক।)
★বাম জোট:
নীতি, নৈতিকতা, ধর্ম বিদ্বেষ, লীগের পরম বন্ধুত্ব, মাদকাসক্তি, চারিত্রিক অধঃপতন এর জন্য বামদের ভরাডুবি হয়েছে। ( তাদের হেদায়েত কামনা করি।)
✪ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল:
ডাকসুতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভূমিধ্বস হয়েছে। আবিদ-হামীম মেধাবী ছাত্রনেতা হওয়া সত্বেও দলীয় কার্যক্রমের জন্য শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। লীগের নির্যাতনের জন্য তাদের প্রতি দেশের মানুষের একটি সফটকর্ণার তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু অঘোষিতভাবে বিএনপির ক্ষমতা দেখিয়ে সারাদেশে চাঁদাবাজি, খু°ন, নৈরাজ্য, দখলদারির জন্য সচেতন শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট। যার প্রতিফলন ঘটেছে ডাকসু নির্বাচনে।
ঢাবি ভিসির সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বেয়াদবি করায় জনপ্রিয়তা আরও তলানিতে নেমেছে, যদিও ছাত্রদল সভাপতি বিষয়টা সামাল দিয়েছে অভিভাবক হয়ে। এটা একটা ভালো দিক।
(আমার চাওয়া, পরিবর্তিত বাংলাদেশে ছাত্রদল কখনো ছাত্রলীগ না হোক। নাহয় জাতীয় রাজনীতিতেও এভাবে গণেশ উল্টে যাবে)
সবার জন্য শুভকামনা জানিয়ে আহবান রাখতে চাই, আসুন একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলাম, দেশ ও মানবতার স্বার্থে কাজ করি।
মহাপবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির ততক্ষন পর্যন্ত ভাগ্য পরিবর্তন করেন না ; যতক্ষন পর্যন্ত না তারা নিজেদের পরিবর্তন ঘটায় ।"
✍ এম মাইদুল হাসান সিয়াম
তরুন সংগঠক, ছাত্রনেতা • ১১০৯২০২৫