Meru's Vlog

Meru's Vlog আমি ছিন্নমস্তা চণ্ডী, আমি রণদা সর্বনাশী,
আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি! Travelling, cocking, pigeon lover.

17/09/2022

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাঁস। ম্যান্ডারিন 🙀🙀

13/09/2022

Duronto Islam Srabon

11/09/2022

মায়ের ভালবাসা। আহরিত খাবার বাচ্চাদের খাইয়ে মায়ের খাদ্য যখন বাচ্চার মল 😥❤❤

11/09/2022

সৃষ্টির সৌন্দর্য 💖

10/09/2022

How amazing video 😮😮

Paradise of Earth 😮😮
09/09/2022

Paradise of Earth 😮😮

08/09/2022

Window view of Hatirjheel.

06/09/2022

রবিবার। সাপ্তাহিক হাটবার। ডিম পাড়ার জন্য ক্ব ক্ব করতে থাকা কালো মুরগীটা খপ করে ধরেই তার পায়ে দড়ি বেন্ধে দিয়ে মা আমাকে বললেন -'মুরগিডা বেচে সদাই করে আন। ভারি জ্বালায়। ঘর ভরে আতাবাতা ভাঙ্গে। বালিশ-খেতা সব শেষ।'

মায়ের এই কথাগুলো যে একদমই কপট তা বুঝতে আমাকে মহাজ্ঞানী হতে হয় না। মুরগীটাকে যে তিনি খুবই পছন্দ করতেন তা তো তার কর্মকাণ্ডেই বুঝতাম। বেশি বেশি ডিম দিত মুরগীটা। ডিমের সাইজ অবিশ্বাস্য। ডিম দেবার জন্য সে ছুটোছুটি করতেই মা এর আলাদা কেয়ার নিতেন। মাচার তলে বড় তাওয়ার মধ্যে ছাই দিয়ে বাসা করে দিতেন। ঘরে চালের সংকট থাকতেও একে মুঠি ভরে চাল খেতে দিতেন। প্রতিদিন ডিমগুলো যত্ন করে দেখতেন। ডিম পাড়া শেষ হলে সেখানেই ওমে বসিয়ে দিতেন। বাচ্চা ফোটার সময় হলে মা উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন। বারবার তাওয়ার কাছে যেতেন। আমরাও মায়ের পিছুপিছু ভয়ে ভয়ে যেতাম। যখন ডিম ফুটে লাল হলুদ ঘিয়া রঙ্গের বাচ্চা বের হত তখন আমাদের আনন্দের সীমা রইত না! কি সুন্দর যে দেখা যেত তুলতুলে বাচ্চাগুলো!

এই মুরগীটাকেই যখন বেচার জন্য মা আমার হাতে তুলে দিলেন তখন আমার বুঝতে বাকি রইল না যে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েই এই কাজ করছেন। ঘরে বাজার নাই। চাল ডাল ফুরিয়েছে। বাবা টাকা পাঠাচ্ছেন না। আগের হাটেও মা বাজার করাতে পারেননি। শাক-কচু দিয়ে এক হাট জোড়াতালি দিয়েছেন। এখন তার নিজের সন্তানরাই না খেয়ে থাকার যোগাড়। একটা মামুলি মুরগির মায়া তো নিজের সন্তানের চেয়ে বড় হতে পারে না!

আমি কাঁদো-কাঁদো হয়ে মাকে বললাম -'কালামুরগী আমি বেচপ না।'
মা তার স্বভাবসুলভ রাগ এই অবস্থানে দেখালেন না। নরম গলায় আমাকে বললেন- 'যাও আব্বা। না বেচলি সদাই করব কেমনে? টাকা নাই। তুমার আব্বা টাকা পাঠালি এরম আরেকটা কালামুরগী আবার কেনব।'

আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম। ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বাজারের থলি হাতে হাটের দিকে এগুলাম। মুরগীটার চোখের দিকে চেয়ে আমার মন হুহু করে উঠল। তার চোখভরা যেন পানি। সে যেন আমাকে বলছে- 'তোরা কেমন নেমকহারাম রে! এত বছর তোদের কত সেবা দিলাম, আর এখন কি নির্দ্বিধায় আমাকে কুরবানি করছিস!' আমার চোখ পানিতে ভরে গেল। ডান কব্জির পিঠ দিয়ে আমি পানি মুছলাম। আমি আর তার দিকে তাকাতে পারলাম না।

মুরগিহাটায় নেমে আমি মুরগিটা একটা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ফেললাম। এখন আমার এমন লজ্জা করতে লাগল! আমি মুরগী বেচতে এসেছি এটা না জানি স্কুলের কেউ দেখে ফেলে!
বাংলাতে একটা কথা আছে- "যেখানে সর্প ভয়, সেখানে রাত পোহায়।" এই কথাটা যে অতি সত্য তা আমি তখনই বুঝলাম। আমার স্কুলের দুই ছেলে কবুতর কিনতে এসে আমাকে দেখে গেল। আমি শরমে তাদেরকে না চেনার ভান করলাম। তারাও চলে গেল।
এই বিপদ না কাটতেই মহাবিপদ এসে সামনে হাজির হল। দেখি, ধবধবে পাঞ্জাবী-পাজামা পরা লম্বা বাটের ছাতা হাতে আমাদের ধর্ম স্যার এদিকে আসছেন। তাকে দেখে আমি দূরত্বে সরে দাঁড়ালাম। স্যার হনহন করে পুরো মুরগিহাটা ঘুরে ফেললেন। এবার দেখি আমার মুরগীর দিকেই তার অগ্রসর।
লজ্জা আর ভয়ে আমার বুক দুরুদুরু করতে লাগল। এসেই হাক দিলেন- 'এই মুরগী কার?'
আমি আল্লাহর নাম স্বরণ করলাম -আল্লাহ আমাকে যেন না চেনে! সরে এসে বললাম- 'আমার মুরগী স্যার।'
স্যার ভ্রূ কুঁচকে আমাকে দেখলেন। বললেন- 'তুই আমার ইসকুলের পুলা না? মুরগী বেচতে আইছস?'
আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না। আমার গলা যেন কিসে আটকে গেছে। এই ঘটনার পর আমি লজ্জায় তিনদিন স্কুলে গেলাম না।

কালামুরগী বেচে ব্যাগ ভর্তি আলু মুলা ডাল লবন নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এরপর বহু বছর কেটে গেছে। এখন আর সেই মুরগিবেচা অনটন মানুষের নাই। আমাদেরও নাই। দিনশেষে দুইটা লবন ভাত একভাবে জুটেই যায়।
অনেক কিছু ভুলে গেছি। মুরগিবেচা সে শরমের কথাও মনে নাই। কিন্তু সেই কালামুরগীর চাহনি কি আমি ভুলতে পেরেছি? গভীর এক কুচকুচে দাঁগ কেটে আছে আজো হৃদয়ে।

03/09/2022

কম্পিত এক শীতের সকালে হাসান ভাই ( চাচাতো ভাই, বড়চাচার ছেলে) আমাদের বারান্দায় এসে মা'কে বললেন- "কাকিম্মা, তুহিন আর সোনিয়াকে আমার সাথে দেন। মা ওদেরকে ডাকে।"
আমাদের সর্বকনিষ্ঠের তখনো জন্ম হয়নি।
মা হাফপ্যান্ট পরিহিত আমাকে আর আমার সহোদরাকে তুলার জামা আর পায়জামা পরালেন। নিজের হাতে বোনা উলের কানটুপি আমাদের মাথায় টাইট করে বেন্ধে দিয়ে বললেন- "যা, তোর ভাইয়ের সাথে যা।"

কোন এক অজানা কারনে আমাদের চেয়ে তুলনামূলক সচ্ছল পরিপাটি ছিমছাম সাজানো গোছানো বড়চাচার ঘরটাকে আমার কাছে কেমন রহস্যজগৎ মনে হত। নানান শহুরে জিনিসপত্রে ঠাসা। ঘরের বেড়ায় টাঙ্গানো বড় আয়তনের পৃথিবীর মানচিত্র, মক্কা শরীফের ছবি। আরো অনেক ছবি।

আমাদের আসমা আপা সেটা আমাদের ছুঁতে দিতেন না, পাছে ছিঁড়ে যায়!
নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখতে হত। বড়চাচার এমন ঘরে ঢোকা আমাদের জন্য খুব বেশি সহজ ছিল না। সেই ঘরে যখন যেচে যাবার জন্য আমন্ত্রণ করা হল, আমাদের উৎসাহ আর উত্তেজনার সীমা রইল না।
আমরা প্রায় দৌড়ে হাসান ভাইয়ের পিছুপিছু হাজির হলাম। ঘরের দরজায় যেতেই লোভনীয় একটা খাবারের গন্ধ পেলাম। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠল। তাহলে আম্মা কি আমাদের ভালমন্দ খেতে ডেকেছেন?

বারন্দায় ক্যাসেটে গজল বাজছে। আমার বড়চাচা, যাঁকে যমের মত ভয় পাই, তিনি চেয়ারে বসে হাদিসের বই পড়ছেন। বড়চাচাকে দেখে ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকলাম। দেখি আমার অত্যন্ত পরহেজগার ও উন্নত চেহারার আম্মা খাবারের বন্দোবস্ত নিয়ে বসে আছেন। তাঁর সামনে পিতলের চামচ ডুবানো হাড়িভর্তি খাদ্য।
আম্মা আমাদের বললেন- "সপ বিছিয়ে আমার সামনে বয়। ভিজানো পিঠা বানাইছি। পিঠা খেতে দেব।"

আমারা সুবোধ বালকের মত সপ বিছিয়ে তাঁর সামনে বসলাম। তিনি বড় দুইটা কাঁচের প্লেটে দুইটা করে পিঠা তুলে আমার আর বোনের সামনে দিলেন। দুই পিঠাতেই পুরো প্লেট ভরে গেল। আমি বিস্মিত অভিভূত হয়ে গেলাম! এ আবার কি খাদ্য? আগে তো দেখিনি! মা তো কখনো এমন পিঠা তৈরি করেনি!
মা পিঠা বানিয়েছে, কিন্তু আম্মারটা যেন ভিন্ন। দুইটা পিঠা খেতে পারলাম না। একটার অর্ধেক খেয়ে উঠে পড়লাম। অধিক সুস্বাদ বস্তু খাওয়া যায় না বেশি।

মা সেমাই পিঠা বানাতে বসলেই আম্মার ডাক পড়ত। তাঁর মত নিপুণ সেমাই পিঠা কাটতে বাড়ির কোন মহিলা পারত না। মা বলতেন -" বুজি, আপনে খালি বসে কাটেন। আপনার ছড়াও বানানো লাগবে না।"
আম্মা শোভা জর্দা দিয়ে পান চিবুতেন আর পিঠা কাটতেন। জর্দার ঘ্রাণে পুরো ঘর ম ম করতো।
সুপারি জর্দা শেষ হলে উন্মাদের মতো হয়ে যেতেন। ছুটে আসতেন মায়ের কাছে। মাকে কিছু বলতে হত না। মা বুঝেই ফেলতেন। মা বলতেন- "বুজি, জর্দা দেব?"
" না। সুপরি থাকলি দেও।"
কখনো বলতেন জর্দা থাকলে দেও। মাকে এখন আর কেউ এমনটা বলবে না।

একটু আগে খবর পেলাম তাঁকে পেঁচানো হয়েছে কাফনের কাপড়ে। কিছুক্ষণ পরেই শোয়ানো হবে অনন্তের কোলে। আমি এখন অবস্থান করছি যোজন যোজন দূর।
আম্মাকে শেষ দেখা দেখা হবে না। অন্যের গোলামী করি। গোলামী করতে তো আবেগ অনুভূতি বিসর্জন দিতে হয়। তাই বিসর্জন দিয়েছি!

মহামহিম! তোমার কাছে তো সহজে কিছু চাই না। আমার আম্মারে তুমি অন্তিম সুখের ব্যবস্থা করে দিও। এটা আমার তোমার প্রতি আবদার!
২০.০৬.১৭

03/09/2022

ফড়িংয়ের পাখা ঝলকানোর মত ঝলকময়, বিহঙ্গের পুচ্ছ দোলানোর মত দোলকময়, ভোমরার গুনগুনের মত গুঞ্জনময় যে দুরন্তবেলা , পড়ালেখার অজুহাতে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে এনে বাবা আমাকে আবদ্ধ করলেন খুলনা শহরের এক চিপা গলিতে।
যেখানে কোন ঝোপ-জঙ্গল নাই, পাখিরবাসা নাই, ভাঁটফুল আর ঘাসের গন্ধ নাই। গোল্লাছুটের মাঠ নাই, কেরসিনের বাতি নাই।
আছে শুধু বিজলির ঝলকানি, পাকা ড্রেন আর আবর্জনার স্তূপ। আট বছরের একটা রঙিন শৈশব তার সব রং ঝেড়ে ফেলে নিমিষে হয়ে গেল পাংশু।

আমি যাতে মন খারাপ না করি, মায়ের জন্য না কাঁদি, ভাইবোনেদের কথা না ভাবি, বাবা আমাকে সাইকেলের পেছনে করে ঘুরাতে লাগলেন সারা শহর। আমি মুগ্ধ চোখে অবাক শহর দেখে সবকিছু ভুলে গেলাম।
কিন্তু এভাবে কতদিন! আমাকে নিয়ে শুধু ঘুরলে তো বাবার চলে না। তার অনেক কাজ। সামান্য বেতনের চাকরি। বাড়তি কিছু ইনকামের জন্য তাকে শহর ভরে ঘুরতে হয়। বাবা আমাকে অতঃপর আর সঙ্গে নেন না। ক্লাস ছুটির পর আমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন তার কাজে।

আমি ঘরের জানালা খুলে একাকি বাসায় বসে থাকি। বারবার হিটারের দিকে তাকাই। বাবা কাজ সেরে কখন ফিরবেন, রান্না করবেন হিটারে। খুব তো খিদে লেগেছে!
বাবা সহজে ফেরেন না। অনেক দেরি করেন। আমি খিদের কথা ভুলে রংপেন্সিল নিয়ে ছবি আঁকতে বসি।
ঘরবাড়ি, নদী, নৌকা, খড়ের পালা, খেঁজুর গাছ, বাংলাদেশের পতাকা।
'কিশোর কণ্ঠ' খুলে গল্প পড়ি- লাড্ডু এবং তার আজব আংটি, যাদুর বাঁশি, আলোর ফোয়ারা, পরীর অভিমান, আরো কত কি!
এভাবেই কিশোর কণ্ঠ আমার অন্তরে এক গভীর ছাপ ফেলে। অজান্তে মনের মধ্যে কখন বপন করে দেয় সাহিত্যের বীজ।

কাজ সেরে এসে বাবা কখন রান্না-বান্না সেরে ফেলেছেন আমি তা টেরই পাই না, গল্পের নেশায় বুদ হয়ে থাকি। বাবা ডাকেন- 'ভাত খাও।'
'আরেক পাতা পড়ি বাবা।'
'আগে খাও। তারপর পড়। বইয়ের পড়াও পোড়ো।'

গল্পের পাতা ভাঁজ করে বই বন্ধ করে খেতে বসি। গরম ভাত আর ডিমের ফিনফিনে ঝোল। গুঁড়া মশলার সঙ্গে আলু আর পানি জ্বাল দিয়ে বলক ওঠার পর তাতে ডিম ভেঙে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। আমি গপাগপ খাই, মন আমার পড়ে রয়েছে গল্পের মধ্যে।
আমার একাকীত্ব আমাকে নিরেট এক পড়ুয়া বানিয়ে ছাড়ে।
আফিমের মত ক্ষুরধার হয়ে ওঠে গল্পের বই আর কিশোর কণ্ঠের নেশা। গল্পের বই তেমন কেনা হয় না পয়সার অভাবে। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে পড়ি। হুমায়ূনের প্যাকেজ গল্পের বই 'একব্যাগ হুমায়ূন' পড়েছিলাম একজনের কাছ থেকে ধার করে এনে। সেই পড়ার মুগ্ধতা মনে হলে এখনো সেই ঘোরে চলে যাই!

বাবাকে অনেক বলে-কয়ে মাসে দশটাকা বাজেট পাশ করি। প্রতিমাসে তখন আমার ঘরে আসতে থাকে কিশোর কণ্ঠ। গোল্লাছুটের দুরন্তপনা আামি খুঁজে পেতে থাকি গল্পের বইয়ের পাতায়।
হঠাৎ কখনো মন উদাস হয়ে ওঠে। মাসের পর মাস বাবা ছুটি পান না। আমারও তাই বাড়ি যাওয়া হয় না। মায়ের জন্য মন কেমন কেমন করে। ভাইবোনের চেহারা চোখে ভাসে। মাকে কতদিন দেখি না!

চক্ষু আদ্র হয়ে ওঠে। বাবা বিষয়টা ধরে ফেলেন। আবার তাই আমাকে সাইকেলের পেছনে নিয়ে ঘুরতে বের হন। বাবা মাকে চিঠি লেখেন। আমি একটা দীর্ঘ চিঠি লিখে বাবার চিঠির মধ্যে গুঁজে দেই। মা এই চিঠির উত্তর দেন না কখনো। খুব মন খারাপ হয়। আমি বুঝি না কেন মা উত্তর দেন না।
এখন বুঝি- বাবার অপারগতার প্রতি প্রতিশোধ নিতেই মা এই চিঠির উত্তর দেন না। বাবা ঠিকমত টাকা পাঠাতে পারেন না। সংসারের চিন্তায় মাকে উদভ্রান্ত হয়ে থাকতে হয়। জোড়াতালি দিয়ে মাস চালানোর দুর্বোধ্য যন্ত্রণা তাকে দিনের পর দিন পোহাতে হয়। তাই এই প্রতিশোধ!

এভাবে বছর শেষে ঈদ এসে গেল। বাবা তিনদিনের ছুটি পেলেন। বহুদিন পর বাবা আর আমি সাইকেলে চেপে বাড়ির পানে ছুটলাম। ব্যাগভরে সেমাই-চিনি, চাল-ডাল নেওয়া হল। ঈদের জামাও নেওয়া হল। মা ঈদের কাপড় কোনদিনও পরেন না। তাই আর তার জন্য ঈদের কাপড় নেওয়া হল না।
বাবার পাঞ্জাবী আছে অনেকগুলো, তিনিও আর নতুন করে নিলেন না। বড় আপার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। তার দায়িত্ব থেকে বাবা মুক্তি পেয়েছেন। তার জন্য তাই আর কিছু নেওয়া লাগেনি। ছোটবোনের জন্য একটা লাল স্কার্ট স্বল্প মূল্যে পাওয়া গেছে।
আমার জন্য একটা কাবলি সেট। আর পিচ্চি ভাইটার জন্য কোর্ট প্যান্ট। নতুন কোর্ট প্যান্ট পেয়ে পাঁচ বছরের ভাইটা বেতাল খুশি। নেচে নেচে সবাইকে দেখিয়ে বেড়াচ্ছে। তার খুশি দেখে আমরা সবাই উৎফুল্ল। বাবার মুখে কেবল হাসি দেখি না। ছোটভায়ের এই আনন্দ দেখে বাবার মুখ হয়ে গেছে পাথরের মত স্তব্ধ।
কারন তার ছোটছেলের এই কোর্ট প্যান্ট তিনি নতুন কিনতে পারেননি। অনেক হিসেব কষার পর তাকে পুরনো কিনে আয়রন করে আনতে হয়েছে। এই কাপড় ঝুলানো ছিল রাস্তার পাশের এক পুরান কাপড়ের দোকানে!
১৬.০৬.১৭

03/09/2022

আমার দাদা নুরদ্দি মোল্লা ছিলেন সাচ্চা কৃষক। সেক্ষেত্রে আমি চাষার বাচ্চা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি নিজ জমিতে দানবের মত কৃষিকর্ম করতেন। কোন ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করতে পারত না। এজন্য তার ভাঙ্গা ঘর পরিপূর্ণ থাকত গোলা ভরা ধানে। তিনি বেঁচে থাকতে আর যা হোক তার সন্তানদের ভাতের কষ্ট করতে হয়নি কখনো। তিনি গত হবার পর তার অলক্ষী সন্তানেরা তার কষ্টে গড়া সম্পত্তি লুটেপুটে খেয়েছে।

জন্মের পর চোখ মেলে দেখি আমাদের ভাঙাচোরা চারচালা টিনের ঘর। পিছনে হোগলার বেড়া। নড়বড়ে সেই বেড়ার ফাঁক দিয়ে রাতের জুনিপোকা জ্বলজ্বল করে জ্বলে। বেড়ার ফাঁক দিয়ে আরেকটা জিনিস দেখা যায়। বটবৃক্ষের ন্যায় যুদ্ধাংদেহি এক আমগাছ। টিনের চালের ফুটা দিয়ে জোছনার আলো প্লাবিত হয়। বৃষ্টি এলে সেই ফুটা দিয়ে ঝরঝরিয়ে পানি ঝরে। মাটির মেঝে যাতে ভিজে না যায় মা এই প্রস্রবণে হাড়ি পেতে দেন। সেই হাড়ি থেকে হিম শীতল পানি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিয়ে আমরা ঠাণ্ডাপানি পান করি।

কালবৈশাখী শুরু হলে আমাদের ঘর লড়বড় করে। মা উচ্চস্বরে ইউনুছ নবীর দোয়া পড়তে থাকেন। আমরা ভয়ে ঘরের খুঁটি জাপটে ধরি।
আমাদের ঘরের পেছনেই আমার দুই দাদীর কবর। কবরের মধ্যিখানে সেই বিরাট বড় আমগাছ। এই গাছটায় এত পরিমান আমের ফলন হয় যে একে আমরা দুই দাদীর পরম্পরাদের প্রতি তাদের আশির্বাদ হিসেবে ধরে নেই। আম কিনে খাওয়ার কথা তখন কেউ কল্পনাও করতে পারতাম না।

এই এক গাছের আমে আমাদের পুরো বাড়ির মানুষের আম খাওয়ার খেদ মিটে যেত। আম পাকার পর সব আম একসাথে পেড়ে ভাগ করা হত। আমরা যে এক ধামা আম পেতাম সেটা মা উঁচুতে তুলে রাখতেন। একটা একটা করে পেড়ে আমাদের দিতেন। আমরা মহা আনন্দে সেই আমের পেছন ছিদ্র করে জুস করে খেতাম।

এক সকালে আমার মেজচাচা এসে বললেন- আমগাছটা তো আমি লাগিয়েছি। আমার এখন এটা কেটে ফেলতে হবে। আমার কাজে লাগবে।
সবাই সংশয় প্রকাশ করল, তিনি আবার এটা কবে লাগালেন! বিস্ময়!

আমার বড়চাচা সর্বঅগ্রজ। পা সমান ধবল জুব্বা পরা মৌলভী। তিনি সাক্ষী দিলেন- হ্যাঁ সাঈদই এই গাছ লাগিয়েছে। আমি দেখেছি।
সবাই শ্রদ্ধেয় মুরব্বী বড়চাচার কথা বিনাবাক্যে মেনে নিল।
আমার মেজচাচা একটা ফলন্ত, বটবৃক্ষস্বরূপ, গোষ্ঠীসহর আম ভক্ষণের একমাত্র উৎস, বহু আকাঙ্ক্ষার সেই ফলবৃক্ষটাকে কেটে ফেললেন। আমার মনে হল একটা জীবন্ত মানুষ তিনি করাত দিয়ে কাটলেন!
একঝাক মানুষের আম ভক্ষনের স্বাদ তিনি ঘুঁচিয়ে দিলেন।

মৌলবি বড়চাচার সেই সাক্ষীকে আজো আমার মিথ্যাসাক্ষী বলে মনে হয়। হাশরের ময়দানে আমি আমার দুই চাচার পাঞ্জাবী অবশ্যই টেনে ধরব।
ফলন্ত আমগাছ কেটে নিয়ে আমার মেজচাচা বড়লোক হতে পারেননি। তার করুণ মৃত্যু হয়েছে ছাপড়া ঘরে। আমাদের জায়গায় আশ্রিত থেকে।

আমগাছটা কেটে নেবার পর আমাদের আম খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। বাবা আম কিনে খাওয়ানোর সক্ষমতা রাখেন না। আমাদের তখন আমগাছ ছিল না। বড়চাচার আমভর্তি গাছের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি। সেই আম কখনো আমাদের জিহ্বা অব্ধি আসে না। চুপিচুপি পায়ে ঘরের পেছনে যাই। গালে হাত দিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি দুই দাদীর কবরে!
০২.০৬.১৭

03/09/2022

রঙিন চকমিলান এই এলইডি যুগ তখন ছিল না। অত বড় আমাদের পাড়ায় ছিল তখন একটা মাত্র টিভি। সাদাকালো নিপ্পন টিভি। দক্ষিণকান্দির জাহেদ মামার ঘরে ছিল এই একুশ ইঞ্চি শয়তানের বাক্স।

আমার বড়চাচা মৌলভী সিরাজুল হককে গ্রামের সবাই 'ছিরু মৌলবি' ডাকে। তাঁর মতে টেলিভিশন হচ্ছে শয়তনের বাক্স আর ফুটবল শয়তানের ডিম।
প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেও তাঁর জন্য একটা টিভি কিনতে পারি না। তিনি ঠাহর পেলে এক বাড়িতে চুরমার করে ফেলবেন শয়তানের বাক্স।

আমাদের বাড়িটা আজো ধর্মীয় রক্ষণশীল হয়ে রয়েছে তাঁর জন্য। কিছু গান-বাদ্য বাজাবার ক্ষেত্রেও প্রবল এক আতঙ্কের নাম ছিরু মৌলবি। এই আতঙ্কের অবসান হওয়া দরকার।
গ্রামে বিদ্যুৎ নাই। সোলার প্যানেল তো আবিষ্কারই হয় নাই। টিভি চালনা করার জন্য বার ভোল্টের আজদাহা ব্যাটারিই ভরসা। সপ্তায় একবার এই ব্যাটারি বহুকষ্টে বাজার থেকে চার্জ করে আনা হয় বই দেখার জন্য।

বিষ্যুদ আর শুক্কুরবারে বিটিভিতে বই হবে। পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি। রাজ্জাক শাবানার বই। এই মৌসুমটা চলছে শাবানার। প্রতি সপ্তাহেই শাবানার দুঃসহবাসের চিত্রণ। শাবানার দুঃখ- যাতনা দেখে কত যে নাকের-চক্ষের জল এক করেছি তা হলফ করে কে বলবে!
ঘরের কোনায় মসজিদ। জুম্মার নামাজ পড়ে টুপিটা বেড়ায় ঝুলিয়েই ধান্দায় থাকতাম মায়ের চক্ষু ফাকি দেওয়ার। ফাঁক পেলেই গিয়ে হাজির হব জাহেদ মামার উঠোনে। শাবানার বই মিস্টেক করার কোন মানে হয় না।

ধুন্দুমার বই শুরু হয়েছে। জাহেদ মামার উঠোন কানায় কানায় পূর্ণ। ঘরে দর্শক সামাল দেওয়া যায় নাই। টিভি উঠানে বের করে খেজুর পাতার পাটি পেতে দেওয়া হয়েছে।
সবাই তন্ময় হয়ে বই দেখছে। কি এক উত্তেজনা! কোন সাড়া-শব্দ নাই। পিনপতন নিরবতা। শাবানার কষ্ট দেখে সবাই মুষড়ে পড়ছে। যেন এই কষ্ট তাকে বাস্তবিকই দেওয়া হচ্ছে। এটা যে অভিনয় মাত্র একথা কারো ধারনায়ই নাই।
রওশন জামিল শাবানাকে খুন্তির ছেঁকা দিয়েছে। খুন্তি চুলায় পুড়িয়ে শাবানার গায়ে চেপে ধরেছে। সবাই আহা-উহু করছে। আমি চোখের জল দুই হাতে মোছার চেষ্টা করছি।

সিনেমা শেষ হতে সন্ধ্যা ঘিরে গেল। এই সিনেমা শেষ না করে ওঠা যায় না। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরা যে আমার বারন একথা আমার মনেই থাকল না।
বাড়ি ফেরার পর আমার ভাগ্যে মায়ের উত্তম মাধ্যম পড়বে। এবং তবু আমি পরদিন আবার শাবানা রাজ্জাক দেখতে যাব।
১৯.০৫.১৭

Address

Banani Model Town
Dhaka

Telephone

+8801814798917

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Meru's Vlog posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Meru's Vlog:

Share