06/08/2025
একটি বন্ধ দরজা… আর ৪২ বছরের নিঃশব্দ মৃত্যু!
সময়টা ১৯৬৬ সাল, অক্টোবর মাস। জায়গাটা ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগরেবের এক পুরনো ফ্ল্যাট। চারপাশ নিস্তব্ধ। বৃষ্টি পড়ছে টুপটাপ, জানালার কাঁচে ধাক্কা খাচ্ছে হাওয়া।
এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা রাখা একটি ছোট টেবিলে। কাঠের চেয়ারে বসা একজন নারী—Hedviga Golik।তার চোখ স্থির টেলিভিশনের দিকে—সাদা-কালো পর্দায় চলছে সেই যুগের কোনো অনুষ্ঠান।এই নারী একাই থাকতেন। কারো সঙ্গে মেলামেশা করতেন না, বন্ধু ছিল না বললেই চলে। এক সময় সরকারি অফিসে চাকরি করতেন। পছন্দ ছিল বই আর চা। প্রতিবেশীরা জানতেন, Hedviga ভীষণ একা থাকতেন, তবে ছিলেন যথেষ্ট আত্মনির্ভরশীল।তাঁর দরজা সচরাচর কেউ দেখত না খোলা। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ খোঁজ নিতেন, কিন্তু Hedviga ঠিক কবে নিখোঁজ হলেন, কেউ জানেই না।তারপর হঠাৎ... নিঃশব্দে সেই দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।চিরতরের জন্য।দিন যায়, মাস যায়, বছর গড়ায়…ধীরে ধীরে প্রতিবেশীরা তাকে ভুলে যেতে থাকে। কেউ ভাবত হয়তো কোথাও চলে গেছেন, কেউ বলত হয়তো মারা গেছেন কোনো হাসপাতালে। Hedviga আর ফিরলেন না। তাঁর নামটাও হারিয়ে গেল সময়ের পাতায়…
…এবং ঠিক ৪২ বছর পর,
২০০৮ সালের এক শরতের বিকেল। সরকারি ফ্ল্যাট অফিসের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি অ্যাপার্টমেন্টের তালা ভাঙলেন। উদ্দেশ্য—ফ্ল্যাটটি সংস্কার করে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া।কিন্তু তালা খুলতেই যা দেখলেন, তা যেন কোনো হরর সিনেমার দৃশ্য...ঘরের ভেতরে চেয়ারে বসা এক কঙ্কাল, হাতে এক কাপ মগ, চোখ টিভির দিকে।ঘরের ভেতরে এতটাই ধুলো—প্রমাণ করে দেয়, কেউ সেই ঘরে দশক ধরে পা রাখেনি।তবে ঘরের সবকিছু সাজানো-গোছানো, ঠিক যেন কেউ কালকেই ব্যবহার করে গেছে!তদন্তে জানা গেল—এই কঙ্কাল ছিল সেই হারিয়ে যাওয়া নারী, Hedviga Golik-এর!প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে, সে ঘরে বসেই নিঃশব্দে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর… আর কেউ বুঝতেই পারেনি!কিন্তু প্রশ্ন হলো— কীভাবে একটা মানুষের মৃত্যু এভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে?৪২ বছর ধরে কেউ টেরই পেল না?এই শহরের হাজার মানুষের মাঝে কীভাবে হারিয়ে গেল এক নারীর অস্তিত্ব?এই গল্প শুধু এক নারীর নিঃসঙ্গ মৃত্যুর নয়, এটি সমাজের নিস্তরঙ্গ অন্ধকারেরও প্রতিচ্ছবি।আমরা কি সত্যিই জানি, পাশের ফ্ল্যাটে কে বেঁচে আছে… আর কে নেই?
#সংগৃহীত