31/05/2024
Give yourself permission to dream..
Our Pride Ashik Chowdhury Brother.💪💪🫡🫡🇧🇩
Ashik Chowdhury
প্রথম ছবিটা টেক অফ করার ২০ মিনিট আগে তোলা। তখন খুব কনফিডেন্ট আমি। বুঝতেই পারিনি সামনে কি অপেক্ষা করছে। পরের ছবিটা রাফলি ২ মিনিট ফ্রিফল এর মাথায় তোলা। ততক্ষণে আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। আমাদের সাউন্ড রেকর্ড হয়নাই। নাহলে অক্সিজেন মাস্কের পেছনে আমার ব্যথা আর ভয়ে গোঙানোর আওয়াজ পাওয়া যেতো। মনে মনে ভাবছি, আল্লাহ পতাকাটা যেন আর কিছুক্ষণ ধরে রাখার এনার্জি থাকে!
আমি গত কয়েকদিন নিচের কয়টা প্রশ্ন সবচেয়ে বেশি ফেস করেছি। যদি সবগুলা পড়ার ধৈর্য না থাকে, স্কাইডাইভ করে আপনার পছন্দের প্রশ্নে চলে যান।
১. আমিতো দুবাইতে গত মাসে স্কাইডাইভ করলাম! কি পার্থক্য? আপনি কেনো আমেরিকার মেম্ফীস গেলেন? কেনো ৪১,০০০ ফিট উচ্চতা?
২. জাম্প এর দিন ঠিক কি কি হলো?
৩. রেকর্ড এটেম্পট জাম্পে কি কি চ্যালেঞ্জ ফেস করেছিলেন?
৪.আপনার কোনো ইনজুরি হয়েছে?
৫. ফেলিক্স নামে এক ভদ্রলোক না ১০০ হাজার ফিট থেকে ঝাঁপ দিয়ে রেকর্ড করলেন? তাহলে আপনারটা কেনো স্পেশাল? রেকর্ড হলো কিনা কবে জানা যাবে?
৬. কেনো?! দেশের কি লাভ? এই টাকাটা দিয়ে কয়েকজন মানুষকে সাহায্য করলেই পারতেন।
১. আমিতো দুবাইতে গত মাসে স্কাইডাইভ করলাম! কি পার্থক্য? আপনি কেনো আমেরিকার মেম্ফীস গেলেন? কেনো ৪১,০০০ ফিট উচ্চতা?
ট্র্যাডিশনাল ট্যুরিস্ট হিসেবে আপনারা যেই জাম্প করেন তার নাম হচ্ছে ট্যান্ডেম। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় একা বা সোলো জাম্প করার জন্য এক্সেলারেটেড ফ্রি ফল কোর্স করে লাইসেন্স নিতে হয়। এই সব ক্ষেত্রেই জাম্পগুলা হয় ১৫,০০০ এর নিচে থেকে কারণ তার উপরে গেলেই অক্সিজেন ব্যবস্থা লেগে যাবে। নেগেটিভ টেম্পারেচার আর থিন এয়ার এর কারণেও নানান জটিলতা তৈরি হবে।
টার্গেট ছিলো যত উপর থেকে লাফ দেয়া যায়। এই মুহূর্তে পৃথিবীতে একটাই মাত্র বিমান আছে যা প্যাসেঞ্জার নিয়ে সর্বোচ্চ ৪১,০০০ ফিট পর্যন্তই যায়। আর সেরকম বিমান 'ইন সার্ভিস' আছে শুধু একটাই। মেম্ফীস এ।
২. জাম্পের আগে ঠিক কি কি হলো?
পাইলট এন্ড চিফ কোঅর্ডিনেটর মাইক মুলিনস ওয়েদার নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলেন। শুক্রবার (২৪ মে) অক্সিজেন ইনটেক এক্সারসাইজ, গ্রাউন্ড ক্লাস আর প্র্যাকটিস জাম্প এর পর দিনশেষে বললেন, রাত ১:৩০ এ ফোন দিও। সব ঠিকঠাক থাকলে ৩ টায় এখানে থাকবে। আমরা ৬ টায় টেক অফ করবো। সেই রাতে আমাদের সারপ্রাইজ দিয়ে নয় ঘন্টা ড্রাইভ করে বব নামে আমাদের এক বন্ধু এসে হাজির। আড্ডা আর ডিনার শেষে রুম এ গিয়ে উত্তেজনায় আর ঘুম আসেনা। ১:৩০ এ মাইক জানালো ৩ টায় ডিসিশন হবে। ৩ টায় বললো একটা ছোট্ট উইন্ডো আছে সকাল ৮ টার দিকে; চলে আসো।
আমার ভাই প্রমি হচ্ছে ডেসিগনেটেড ড্রাইভার। ঘুটঘুটে অন্ধকার কেটে নন্দিনী, প্রমি আর আমি পৌঁছুলাম উইংস ফিল্ড এয়ারফিল্ড এ। গিয়ে দেখি আমার ক্যামেরাম্যান স্কাইডাইভার জেফ স্প্রাগিনস অলরেডী হাজির। আর আমাদের সিনিয়র স্পেশালিস্ট এ্যালেক্স কোকার (এক্স সি আই এ এন্ড ইউ এস স্পেশাল ফোর্স) আমার প্যারাসুট চেক করছে। প্রাইমারী হেলথ চেক করা হলো। প্রায় পৌনে সাতটায় আমরা ফুল গিয়ার পড়ে প্লেন এ উঠে গেলাম। আমাদের প্লেন এর মেইন অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের সাথে কানেক্ট করে দেয়া হলো। আইডিয়াটা হচ্ছে এক ঘন্টা টানা অক্সিজেন দিয়ে শরীর থেকে সব নাইট্রোজেন বের করে ফেলা যাতে লো প্রেশারে হাইপোক্সিয়া না হয়ে যায়। খুব ক্লিয়ারলি বলা ছিলো যে এই সময় কেউ একবার মাস্ক খুললে তাকে মিশন থেকে বাদ পড়তে হবে।
তখন উত্তেজনার শেষ নাই। কখন জাম্প করবো খালি তাই ভাবছি। বাকি বন্ধুরা (মুকতাদির, মারিয়াম, ওদের বাচ্চারা, ফাইজা) এসে হাজির। আমার মনিটর বলছে শরীরে SPO2 ৯৯.৯%। ঝিমাচ্ছি। হঠাৎ ৭:৫৫ এর দিকে মাইক রেডিওতে বললো উই আর রোলিং! এয়ারক্রাফট উপরে উঠতে লাগবে ৩০ মিনিট। আমার পড়তে লাগবে ৬-৭ মিনিট। সো সকাল ৮:৪৫ এর দিকে রিল্যাক্সড হয়ে এক কাপ চা খাবার স্বপ্ন দেখাই যায়। আগের দিন ১৬ হাজার ফুট থেকে প্র্যাক্টিস জাম্প খুব ভালো হয়েছিলো। তাই জেফ আর আমি তখন বেশ জলি মুড এ।
৩. রেকর্ড এটেম্পট জাম্প এ কি কি চ্যালেঞ্জ ফেস করেছিলেন?
ঝামেলা শুরু হলো টেক অফ করার সাথে সাথে। ২৫,০০০ ফিট এ আমাদের দুজন ফ্লাইট ক্রু এর অক্সিজেন লেভেল হঠাৎ পড়ে গেলো। একেক জনের শরীর লো প্রেশার এনভায়রনমেন্ট এ এক ভাবে রিএক্ট করে। এজন্য ফিজিক্যাল ফিটনেস খুব জরুরি। গত বছর এরকম একটা ট্রায়াল জাম্প এ এক স্কাইডাইভার ৩৫,০০০ এ গিয়ে হার্ট ফেল করলেন। প্লেন নেমে আসতে আসতে মারা গেলেন। তাই আমরা একটু টেনশনে ছিলাম। আমার নিজের মনিটর অবশ্য বেশ ভালো নম্বার্স দেখাচ্ছিলো।
প্ল্যান ছিলো মাইক প্লেন যত সম্ভম উপরে নিবে। আমি হিটেড গ্লাভস পড়ে শক্ত করে দেশের পতাকা ধরে বসে আছি। এক্সাইটমেন্ট এর চোটে খেয়ালই করিনি কখন ৪১,০০০ পার হয়ে গেছি। জাম্প মাস্টার পল সংকেত দিলো থার্টি সেকেন্ডস টু এক্সিট। ক্যামেরা অন। সবার সাথে ফাইনাল হ্যান্ডশেক (স্কাইডাইভিং কমিউনিটিতে আমরা সবসময় এটা করি। রিস্ক ফ্যাক্টর তো আছেই। আমাদের মধ্যে কারো সাথে কারো এটাই শেষ দেখা হতে পারে)।
দরজা খোলার সাথে সাথে এক পশলা মেঘ ঢুকে প্লেনের ভিতরটা ধোঁয়াটে করে ফেললো।
ঝাঁপ দিয়েই বুঝলাম, এটা আর দশটা ঝাঁপের মত হবে না। মনে হচ্ছে স্বচ্ছ গ্লাস বেয়ে পিছলিয়ে পড়ে যাচ্ছি। কোনো কন্ট্রোল নাই। যেই বাংলাদেশের পতাকা পুরা প্ল্যান এর সেন্টারপিস, সেটাকে মেলে ধরতেই সে ৩০০ মাইল বেগে ছোটা একটা বুনো ঘোড়ায় পরিণত হলো। যারা ভিডিওটা দেখেছেন, ভালো করে আরেকবার দেখলে বুঝবেন, সারাটাক্ষণ আমি ফ্ল্যাগটাকে ধরে রাখার জন্য যুদ্ধ করছি। সত্যি কথা বলতে, জাম্প এর কোনো মুহূর্তই আমি এনজয় করতে পারি নাই। সারভাইভাল ইনস্টিংক্ট কিক ইন করলো। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ফ্ল্যাগটা ছেড়ে দেই। বেঁচে যাবো। আবার মনে হচ্ছে এটাতো ওয়ান শট। দেশের অনেকের আশা আর এক্সপেক্টেশন। আরেকটু চেষ্টা করি। শেষের দিকে শরীরে কোনো এনার্জি ছিলো না। প্রায় জ্ঞ্যান হারিয়ে ফেলছিলাম। স্কাইডাইভিং এ সবচেয়ে ডেঞ্জারাস হচ্ছে আনকনট্রোলড স্পিন। শেষের দিকে আমি এরকম একটা স্পিন এ চলে গেলাম। ফ্যানের পাখার মত ঘুরছি। পতাকাটা ছেড়ে ৪৫০০ ফিট এ প্যারাসুট খুলার প্ল্যান ছিল কি। পতাকা ছাড়লাম। কিন্তু স্পিন এর কারণে প্যারাসুট এর হ্যান্ডল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অনেক যুদ্ধ করে প্যারাসুট ওপেন করার পর দেখি প্যারাসুট এর সব রোপ টুইস্ট হয়ে আছে। এই অবস্থায় প্যারাসুট কন্ট্রোল করা যায় না। একটার পর একটা ইমার্জেন্সী। সেই টুইস্ট কোনোভাবে ছাড়িয়ে যখন একটু সামনে তাকালাম তখন দেখি ল্যান্ডিং জোন বহুদূর! ইলেকট্রিক তার নাই এমন একটা জমি খুঁজে বের করলাম। শরীরে একবিন্দু শক্তি নাই। শেষ পর্যন্ত যখন ল্যান্ড করেছি তখন স্টিয়ার করারও এনার্জি ছিলো না। রীতিমতো আছড়ে পড়েছি মাটিতে।
এক কথায়, পতাকাটা না থাকলে এই স্কাইডাইভ একেবারেই নর্মাল একটা জাম্প হতো। আমরা জানতাম ডিফিকাল্ট হবে। তাই ঘণ্টার পর ঘন্টা আলোচনা আর মেন্টাল প্র্যাকটিস চলেছে এর আগে - হোয়াট এলস ক্যান গো রং। আর সেকারণেই শেষ রক্ষা হয়েছে।
৪. আপনার কোনো ইনজুরি হয়েছে?
র্যাপিড এয়ার প্রেশার বাড়ার কারণে আমার কান বেশ অ্যাফেক্টেড হয়েছে। প্রথমদিন কিছুই শুনতে পারিনাই। এখনো কম শুনছি। ডাক্তার বলেছে ঠিক হয়ে যাবে।
হার্ড ল্যান্ডিং এর কারণে মাইনর কিছু ইনজুরি হয়েছে সারা শরীরে।
বাট সব মিলিয়ে আল্লাহর রহমতে পার্মানেন্ট কোনো ড্যামেজ হয়নি।
৫. ফেলিক্স নামে এক ভদ্রলোক না ১০০ হাজার ফিট থেকে ঝাঁপ দিয়ে রেকর্ড করলেন? তাহলে আপনারটা কেনো স্পেশাল? রেকর্ড হলো কিনা কবে জানা যাবে?
২০১২ সালে ফেলিক্স বামগার্টনার প্রায় ১২৮,০০০ ফিট থেকে ঝাঁপ দিয়ে রেকর্ড করে হৈচৈ ফেলে দেন। তার তিন বছর পর অ্যালান ইউস্টাস ১৩৫,০০০ ফিট এ নতুন রেকর্ড সেট করেন। আমি আসলে সেই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টাই করিনি। আমার রেকর্ডটা হচ্ছে পতাকা নিয়ে। ইন ফ্যাক্ট, রেকর্ডটা আমার না। বাংলাদেশের পতাকার। পতাকা ছাড়া আমার চেয়ে বেশি উচ্চতায় আরো পাঁচজন এর নাম আমি জানি যারা জাম্প করেছেন।
রেকর্ড হলো কিনা এটা ডিসাইড করেন ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্ট ফেডারেশন এর একজন জাজ। উনি আমার হেলমেট এ আটকানো জি পি এস নিয়ে গেছেন। ডেটা এনালাইস করে শীগ্রই জানাবেন। তারপর গিনেস এ এপ্লাই করতে হবে। সব মিলিয়ে সপ্তাহ দুই লেগে যাবে।
৬. কেনো করলাম? দেশের কি লাভ? এতগুলো টাকা জলে ফেলার কি দরকার? এটা দিয়ে সাহায্য করলেই পারতেন।
কেনো এটা নিয়ে দ্রাবিড় ভাই Drabir Alam খুব সুন্দর একটা পোস্ট দিয়েছেন। লিংকটা নিচে দিলাম।
আমার লজিক খুব সিম্পল। দেশটা আমাদের। বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের গ্লোবাল প্লাটফর্ম এ প্রুভ করতে হবে আমরাও কারো চাইতে কোনো অংশে কম না। ইন ফ্যাক্ট, আমরা যা করেছি, আর কেউ সেটা করে দেখাক! আশা করছি, এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশীদের এই বিশ্বাসটুকু দিবে যে নাথিং ইস বিয়ন্ড আওয়ার রিচ। আমাদের দেশের ছোট্ট কোনো এক শহরের ক্লাস ফাইভ এ পড়া যেই বাচ্চাটা এস্ট্রোনোট হতে চায়, সে যেন জানে যে ব্যাপারটা একদমই অসম্ভব না।
আর কেনো এত দৌড় ঝাঁপ করে এটা করা হলো এটা নিয়ে জেফ্রি জাসলো আর র্যান্ডি পশ এর দা লাস্ট লেকচার থেকে একটা অংশ বলি:
মানুষকে চাঁদে না পাঠিয়ে সেই টাকা দিয়ে কয়েকজনের উপকার হতো সত্যি, কিন্তু সেই প্রাপ্তিটা হতো মার্জিনাল। আর চন্দ্র বিজয় গোটা জাতিকে বিশ্বাস দিয়েছে অসম্ভবকে সম্ভব করার। কি জানি, হয়তো এভাবেই আমরা একদিন দারিদ্র্য সম্পূর্ণ বিমোচন করবো।
[I understand the arguments about how the billions of dollars spent to put men on the moon could have been used to fight poverty and hunger on Earth. But, look, I'm a scientist who sees inspiration as the ultimate tool for doing good. When you use money to fight poverty, it can be of great value, but too often, you're working at the margins. When you're putting people on the moon, you're inspiring all of us to achieve the maximum of human potential, which is how our greatest problems will eventually be solved. Give yourself permission to dream.]
https://www.facebook.com/ashikarus