Emon Food Center

Emon Food Center food

এই যে,  আপনি তো  ঝর্না আক্তারের স্বামী...তাই না?আপনাদের একটা মেয়ে হয়েছে। মা এবং বাচ্চা সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। একটু ...
01/11/2025

এই যে, আপনি তো ঝর্না আক্তারের স্বামী...তাই না?আপনাদের একটা মেয়ে হয়েছে। মা এবং বাচ্চা সুস্থ আছে আলহামদুলিল্লাহ। একটু পরে দেখা করতে পারবেন।

ডাক্তারের পিছনে পিছনে একজন নার্স‌ও বেরিয়ে এলো। বিল্লালের দিকে তাকিয়ে বললো,
" খুউব সুন্দর মেয়ে হয়েছে, মাশাআল্লাহ।"

বিল্লাল হাসপাতালের বেঞ্চিতে বসে পড়লো।
ঝর্নার পাশের বেডের রোগীর ছেলে হয়েছে। পরিবারের সবাই খুব খুশি। মামা বা চাচা কেউ একজন মিষ্টি বিলাচ্ছে। একটু আগেও ভালো লাগছিলো দৃশ্যটা দেখতে, কিন্তু এখন আর বিল্লালের ভালো লাগছেনা। বুকটা খচখচ করছে।

পকেটে কয়েকটা চকচকে নোট রাখা।ছেলে হবার খবর পেলে বখশিশ দেয়ার জন্য রেখেছিল। টাকাগুলোকে পকেটের ভিতরে মুচড়ে দিলো বিল্লাল।

আগে দুই মেয়ে আছে বিল্লালের। মনে খুব আশা ছিল ,এবার একটা ছেলে হবে।

যদিও মুখে সেটা কখনো প্রকাশ করেনি। ঝর্না খুব চিন্তায় ছিল ।ডাক্তারকে কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছে, আল্ট্রাসাউন্ড করার সময়। কিন্তু ডাক্তার বললো , এইসব তথ্য প্রকাশ করা নিষেধ।

বিল্লালকে ভয়ে ভয়ে বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করেছিল ঝর্না ,মেয়ে হলে মন খারাপ করবে কিনা। সে অভয় দিয়েছে বারবার । অথচ মনে মনে চেয়েছে, এইবার একটা পুত্র সন্তান আসুক তাদের ঘরে।

একজন বয়স্ক মহিলা এসে বললো ,
:ভাই ,ডাক্তার সাহেব কোন দিকে গেছেন?

:আপনার কি মনে হয়, ডাক্তারের খবরাখবর দেয়ার জন্য আমারে রাখসে? নাকি ডাক্তার আমার কাছে বইলা গেছে, কোথায় যাইতেছে?
বিল্লাল খেঁকিয়ে উঠলো মহিলার সাথে।

সে সদালাপী ,হাস্যজ্জল মানুষ। সচরাচর কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেনা। কিন্তু এই মুহূর্তে খুব অসহ্য লাগছে, এই হাসপাতালের বারান্দায় বসে থেকে।

অফিস থেকে আজকে ছুটি নেয়া ছিল।
ভেবেছিল, ছেলে হবার সুখবর নিয়ে অফিসে যাবে আগামীকাল ।সবাইকে ছোট ছোট প্যাকেটে নাস্তা খাওয়াবে ,সাথে গরম গরম রসগোল্লা।

সাড়ে এগারোটার মত বাজে।অফিসে চলে গেলে ছুটিটা বেঁচে যায়। সেটা করা যাবে না, সবাই মন খারাপ হবার বিষয়টা বুঝে যাবে।

এই মুহূর্তে ঝর্নার সামনে যাওয়াও ঠিক হবে না । ঝর্না ভীষণ বুদ্ধিমতী মেয়ে, বিল্লালের মন খারাপটা দেখেই ধরে ফেলবে।

সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে, দ্রুত পায়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এলো বিল্লাল।
অনেকক্ষণ কিছুই খাওয়া হয়নি। খুব ক্লান্ত লাগছে, খিদেয় পেটটাও চোঁ চোঁ করছে।

রিকশা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো বিল্লাল। একটু ফ্রেশ হয়ে ,তারপর আবার আসবে হাসপাতালে।চোখমুখ ততক্ষণে একটু স্বাভাবিক হবে।

বাসার কাছাকাছি গলির মোড়ে আসতেই, একটা ছোট্ট বাচ্চা রিক্সার সামনে চলে এলো। রিক্সাওয়ালা লোকটা খুব পাকা চালক ।এমনভাবে রিক্সাটা ঘুরিয়ে দিলো, মেয়েটা পড়লো কিন্তু ব্যথা পেলো না। উল্টো রিক্সাওয়ালাই ব্যথা পেলো জোরে। বিল্লাল‌ও সামান্য ব্যথা পেলো।

এই রাস্তার পাশেই বড় বস্তি। অবহেলায় বড় হচ্ছে কতো শিশু।

রিকশাওয়ালাটা উঠে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়েই বাচ্চা মেয়েটার কাছে গেলো। মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো, একদম বুকের সাথে মিশিয়ে।
পাশের টং দোকানে, বালতিতে পানি রাখা ছিল। মেয়েটার হাতমুখ সুন্দর করে ধূঁয়ে দিলো।

:আম্মা,আপনে ব্যথা পাইসেন গো? আম্মা, কুন দিকে লাগসে আপনের।দ্যাখান, আমারে দ্যাখান।

বাচ্চা মেয়েটা আদর পেয়ে, একদম যেন গলে পড়ছে।হাসি ছাড়া ছোট্ট মুখে কিচ্ছু নেই।
টং দোকান থেকে, মেয়েটাকে চিপস আর ললিপপ কিনে দিলো লোকটা।
বেঞ্চিতে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে, ললিপপ খাচ্ছে বাচ্চা মেয়েটা।

ভীষণ মায়াবী সেই দৃশ্য।

বিল্লাল কাছে যেতেই বললো,
:লাগে নাই, ভাইজান। ব্যথা পায় নাই শরীলে। আল্লায় বাচাইছে।আহরে...একটা বাচ্চার জ‌ইন্য কত্ত মানুষ হাহাকার করে, ভাইজান। আট বছর যাবৎ,আমি আর আমার বউ একটা সন্তানের আশায় আছি। আল্লায় কবে মুখ তুইলা চায়, জানি না।
লোকটার চোখেমুখে একটা সন্তানের জন্য কি আকুতি!

পায়ে বেশ খানিকটা কেটে গেছে লোকটার। রিকশা চালানো ঠিক হবে না। বাকি পথটা হেঁটেই বাড়ি চলে এলো বিল্লাল।

দরজা ধাক্কা দিতেই,ছোট মেয়ে ঝুমুর দরজা খুলে দিলো। বড় মেয়ে ঝিলিক, রান্নাঘরে।
বিল্লাল সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলো।
ইচ্ছামতো ঠান্ডা পানি ঢেলে, গোসল করে বের হয়ে এলো।

বিল্লাল দেখলো, এরমধ্যেই টেবিলে খাবার দেয়া হয়ে গেছে। একগ্লাস শরবত‌ও বানানো।পিরিচ দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে রাখা সেটা।

পেটে ভয়ংকর খিদে। দেরি না করে খেতে বসে গেলো বিল্লাল।প্লেটে খাবার নিতে গিয়ে খেয়াল করলো, আলু কুচিয়ে ডিম দিয়ে রান্না হয়েছে। সাথে পাতলা মসুরের ডাল।
একটু ভাত মুখে দিয়েই ,চোখটা বন্ধ করে ফেললো সে।বড্ড চেনা এই স্বাদ।

ছোটবেলায় সে যখন কিচ্ছু খেতে চাইতো না,মাছ মাংসের বায়না করতো... তখন, মা ঠিক এইভাবে ডিম আর আলু রান্না করে দিতো।

আলু এইভাবে কুঁচি করে দিলে, পেঁয়াজটা একটু কম লাগে। সাশ্রয় আর স্বাদের ব্যালেন্স করার চেষ্টা করতো মা।

আহা!কতো কষ্ট করেছে সেই মা। একটু সেবা করার সুযোগ দেয়নি। তার আগেই চলে গেছে, পৃথিবী থেকে।

:আব্বা, খাইতে ভালো হয় নাই?

ঝিলিকের কথায়, চোখ মেলে তাকালো বিল্লাল। কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে একেবারে পাকা গিন্নি।কে বলবে, মাত্র সিক্সে পড়ে ঝিলিক?

বাড়িতে সবসময় ঝর্নাই রান্নাবান্না করে। সে হাসপাতালে, তাই মেয়েটা কোমরে ওড়না পেঁচিয়ে, কি সুন্দর রান্নাবান্না করে টেবিলে এনে দিয়েছে।কবে শিখলো মেয়েটা,এই রান্না?

মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বিল্লালের মনে হলো,
চোখের সামনে শাড়ির আঁচল পেঁচানো, নিজের মা'কে যেন অবিকল দেখতে পাচ্ছে সে।

খালি ঘরে নিজের দুই মেয়েকে, এইভাবে দেখার সুযোগ হয়নি আগে। সারাদিন মায়ের সাথে সাথে থাকে। লেখাপড়া, স্কুল, খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাবার কাছে খুব একটা ঘেঁষে না ওরা। বিল্লালের অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়।

কখন যে মেয়েগুলো এরকম মা হয়ে উঠলো, বুঝতে পারেনি বিল্লাল।

বাবার চিন্তিত মুখ দেখে,ঝুমুর এসে ছোট্ট শরীরে জড়িয়ে ধরে বললো,
আব্বা, আপনার মন খারাপ? আম্মা কখন আসবো?

সামনের চেয়ারে বসে,গালে হাত দিয়ে, বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ঝিলিক।

বিল্লালের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চেষ্টা করেও আটকাতে পারছে না সে।ভয় পেয়ে, ঝিলিক‌ও চেয়ার ছেড়ে বাবার কাছে উঠে এলো। বাবার চোখের পানি ছোট্ট হাতে, ওড়না দিয়ে মুছে দিলো।

ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফিরে এলে,রান্নাঘর থেকে ছুট্টে বেরিয়ে বিল্লালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো মা,
আঁচল দিয়ে মুখ মুছে দিতো। মায়ের শরীর থেকে রান্নাঘরের মসলার খুব চমৎকার একটা ঘ্রাণ পেতো।

ঝিলিকের হাত আর শরীর থেকে, ঠিক মায়ের ঘ্রাণ পেলো বিল্লাল। আহ্! কতকাল পর মায়ের ঘ্রাণ!

মায়ের শরীরের এই ঘ্রানের কাছে, পুরো পৃথিবীটাইতো তুচ্ছ।
দুই মেয়ের বুকে জড়িয়ে ধরলো বিল্লাল।

:তোদের এই অবুঝ, অধম,পাপী ছেলেকে ক্ষমা করে দে মা। আমি যে আমার মা'কে অসম্মান করলাম। ক্ষমা করে দে, মা। ক্ষমা করে দে। আল্লাহ, বাকি জীবনটা তুমি এই মায়ের পরশে রাইখো আল্লাহ।আর কিচ্ছু চাই না। কিচ্ছু না...

শেষটা সুখের।
ডিম আলুর তরকারি আর মসূরের ডাল দিয়ে পেট পুরে ভাত খেয়ে, মেয়েদের নিয়ে হাসপাতালে এলো বিল্লাল।

ঝর্না বললো,
:এতোক্ষণ ক‌ই ছিলেন। আমি তো ভাবলাম, মেয়ে হ‌ইসে শুনে আপনি মন খারাপ করসেন। দেখতে আসবেন না আপনি।

বিল্লাল বললো,
:এইটা তুমি কি বলো ,ঝর্না? আমার মা আমার কাছে আসবো, আর আমি মন খারাপ করবো? আমার মতো ভাগ্যবান আর কয়জন আছে বলো তো?বড় দুই মায়েরে আনতে গেছিলাম। মায়ের মুখ দেখবো, তারে কিছু দিতে হ‌ইবো না? এইটার জন্য গেছিলাম।

পকেট থেকে ছোট্ট সোনার হার বের করে,মেয়েকে পরিয়ে দিলো বিল্লাল।

তিন মেয়েকে বুকে নিয়ে, মুগ্ধ চোখে দেখছে ঝর্না...
পুরো হাসপাতালে মিষ্টি বিলি করছে, মেয়েদের বাবা।

সবাইকে জোরে জোরে বলছে, মিষ্টি খান ... মিষ্টি খান...আমার আরো একটা মা আসছে ।

সেই দৃশ্য বড় সুন্দর। দেখতে গেলে চোখ ভিজে ওঠে।

সমাপ্ত
ভাগ্যবান বাবা
রুচিরা সুলতানা

মন মানসিকতা কতটা নিচু হলে কিভাবে একটা মানুষ এই জেনারেশনেও এমন একটা কথা বলতে পারে।এরা কি মানুষ 🥲🥲
01/11/2025

মন মানসিকতা কতটা নিচু হলে কিভাবে একটা মানুষ এই জেনারেশনেও এমন একটা কথা বলতে পারে।এরা কি মানুষ 🥲🥲

**সিগারেট আর বউ কোনোটাই নিজে থেকে ক্ষতি করে না…যতক্ষণ না আপনি তাদের মাথায় আ*গুন ধরিয়ে দেন! 😜🔥
29/10/2025

**সিগারেট আর বউ কোনোটাই নিজে থেকে ক্ষতি করে না…
যতক্ষণ না আপনি তাদের মাথায় আ*গুন ধরিয়ে দেন! 😜🔥

 #বুকের_ভেতর_বৃষ্টি(৪) #শারমিন_প্রিয়া রহমা আপুর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিছুই খেতে পারেন না তিনি। ডাক্তাররা স্যালাইন দিয়ে শর...
28/10/2025

#বুকের_ভেতর_বৃষ্টি(৪)
#শারমিন_প্রিয়া

রহমা আপুর খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিছুই খেতে পারেন না তিনি। ডাক্তাররা স্যালাইন দিয়ে শরীরে পুষ্টি দেন। হাসপাতালের বেডে শুতে শুতে হয়তো হাড় পর্যন্ত ক্ষয় হয়ে গেছে। দুঃখ লাগে উনার অবস্থা দেখলে। চেহারা শুকিয়ে কঙ্কাল হয়ে গেছে। নামাজ পড়ে আমি রহমা আপুর জন্য দোয়া করি।
রাহাত সবসময় রহমা আপুর সাথেই থাকেন। আমার আগের ধারণা পাল্টে গেল — সব মানুষ একরকম নয়। রহমা আপুর কোনো সৌন্দর্য এখন নেই, তবু সৌন্দর্যহীন মানুষটার শেষ সময়ে রাহাত তাঁর পাশে আছেন, তাঁকে সাপোর্ট করছেন। এই জিনিসটার জন্যই হয়তো রহমা আপু মরে গেলেও শান্তি পাবেন।
রহমা আপুর মেয়ের বয়স এক বছর হয়। তার নাম মৌ। মৌ আজকাল আমার কাছেই থাকে। প্রথম প্রথম মায়ের জন্য কাঁদত, এখন চিনে ফেলেছে আমায়। আমার সাথেই তার সব কিছু। মৌকে নিয়ে বাড়িতে থাকি আমি। দুদিন পরপর দেখতে যাই রহমা আপুকে।
এক ভোরে, ফজর নামাজ শেষে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম। ঠিক তখনই মোবাইলে কল আসে। এত ভোরে কল দেখে বুকটা টনটন করে ওঠে। কাঁপা হাতে কল রিসিভ করি, ওপাশ থেকে রহমা আপুর মায়ের কান্নার শব্দ শুনি।
রহমা আপু আর নেই।
খবরটা শুনে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয় আমার। স্থির থাকতে পারি না, চেয়ারের হাতল ধরে দাঁড়াই। জানতাম আপু বাঁচবে না, তবুও মৃত্যুর খবর শুনে এতটা শক লাগবে ভাবিনি। রাহাতের কী অবস্থা হবে, এই ভেবে প্রচণ্ড খারাপ লাগল আমার।
রহমা আপুকে এম্বুলেন্স করে বাড়ি আনা হলো। আত্মীয়স্বজন সবাই দেখতে এলেন। মৌকে নিয়ে শেষবারের মতো দেখাই মাকে।তার হাত তাট মায়ের মাথায় বুলিয়ে দেই।চুমু খাওয়াই। ছোট বাচ্চা, মা যে মারা গেছে, সে কিছুই বোঝে না। ঘুমিয়ে পড়ে নির্ভাবনায়।
রহমা আপুকে যখন কবর দিতে নিয়ে যাওয়া হলো, কেন জানি না, কলিজা ফেটে যাচ্ছিল আমার। উনি সম্পর্কে আমার সতীন, তবুও কষ্ট লাগছিল, ভীষণ কষ্ট।
পুরো বাড়ি থমথমে হয়ে যায়। রাতে শুনি রাহাত জোরে জোরে কান্না করছেন৷ সকাল হলে রহমা আপুর কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এভাবে প্রায় সময় রাহাত রহমা আপুর কবর পাড়ে চলে যান। রাতে ফুপানো কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে উনার ঘর থেকে।
একদিন সাহস করে উনার ঘরে গেলাম। আমাকে দেখে চোখ মুছে ফেললেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন এসেছো?”
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“রহমা আপু নিশ্চয়ই ভালো আছেন। আপনি এভাবে কাঁদবেন না।”
“মৌ কি ঘুমিয়েছে?”
“জ্বি।”
“আমার মেয়ের ঠিকঠাক যত্ন নিও। মেয়ে ভালো থাকলে তুমিও ভালো থাকবে।”
সহজে রাহাতের সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়নি। তার খারাপ সময়ে একটু একটু করে কাছে থেকে, অনেক অনেক পরে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়। এখন সে আমাকে বউয়ের সম্মান দেয়, যত্ন করে। তবুও রহমা আপুর জায়গা আমার উপরে রাখে। আগে উনাকে প্রাধান্য দেয়। আমি তাতে অখুশি নই। রাহাত আর রহমা আপুর ভালোবাসা ছিল খুব খাঁটি। আমি শুধু চাই, ধীরে ধীরে রাহাত আমাকেও ততটা ভালোবাসুক। আমি মারা গেলে সেও যেন এমন কেঁদে আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করে। স্বামীর ভালোবাসা কে না চায়?
মৌ বড় হতে থাকে, এখন তার বয়স চার বছর। আমারও একটি বাবু হয়েছে, ছেলে বাবু। মৌ এখনও আমাকে “মা” জানে। সে জানে না, তার আসল মা মারা গেছেন। রাহাত সবাইকে নিষেধ করেছে এসব না বলতে। বড় হলে এমনিতেই জেনে যাবে।
আমার ছেলের এক বছর বয়স। মৌয়ের কী আহ্লাদ ভাইকে নিয়ে! মৌ আর আমার ছেলেকে একসাথে খেলতে দেখলে তায়েফ আর আমাকে দেখতে পাই ওদের মধ্যে।
বলতে ভুলে গেছি, তায়েফ এখন স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডনে চলে গেছে। রোজ কথা হয় আমাদের। সে আমাদের জন্য ভিসা বের করছে। বলেছে,
“আপু, তোমরা সবাই এসো। একা ভালো লাগে না আমার।”
একদিন খুব মন চাইল আম্মুকে দেখতে। আম্মুর প্রতি যত রাগ-ক্ষোভ ছিল সব মরে গেছে। বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের কষ্টের মূল্য বুঝেছি। আম্মুও নিশ্চয় ততটাই কষ্ট পেয়েছিলেন। ভুল করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তবুও তো উনি আমার আম্মু। মানুষ মাত্রই ভুল। উনার ভুলটা হয়তো একটু বেশিই।
আমি আম্মুর ঠিকানা জোগাড় করে একদিন ওনার বাড়িতে গেলাম। আমাকে দেখে আম্মু হতবাক। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়লেন। আমিও কাঁদলাম।
আম্মু জানালেন, অনেকবার দেখা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি—বাবা সুযোগ দেননি। তারপর তায়েফের কথা জানতে চাইলেন। আমি বললাম, তায়েফ এখন লন্ডনে। তাঁর ছবি দেখে ছবিতে বারবার চুমু খেলেন আম্মু। আমার হাত ধরে বললেন,
“আমি ভুল করেছি, মারিয়া। মানুষ মাত্রই ভুল করে। তোমরা কেন আরও আগে আসোনি আমার কাছে? এমন কোনো দিন নাই, কোনো রাত নাই, যেদিন তোমাদের কথা মনে পড়েনি আমার। কষ্ট হতো, তারপর সংসার আর বাচ্চাকাচ্চার নিচে চাপা পড়ে যেত কষ্টটা।”
আম্মুর সাথে গল্প করতে করতে জানলাম আশ্চর্যজনক এক বিষয়— আমি নাকি আম্মু-আব্বুর পালিত মেয়ে! শুনে থ বনে গেলাম। তার মানে, আম্মু, আব্বু, ভাই—কেউই আমার রক্তের নয়! অথচ আব্বু এত ভালোবাসেন, এত খেয়াল রাখেন, পড়াশোনায় এত খরচ করেছেন, কী মহান মানুষ উনি!
তায়েফকে ফোনে বললাম,
“জানিস ভাই, আমি তোর আপন বোন নই।”
“ফাজলামি করো না আপি।”
“সত্যি ভাই, আম্মু বলেছেন।”
“আম্মু! আম্মু কোথায় পেলে?”
“আমি আম্মুর কাছে গিয়েছিলাম।”
তায়েফ রেগে গেল,
“কেন গিয়েছিলে আপু? উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কীভাবে ছোট দুটো বাচ্চা বড় হবে, সেটা একবারও ভাবেননি।”
আমি বললাম,
“বাদ দে ভাই, উনি আমাদের মা।”
“আমি কখনও যাব না মায়ের কাছে। আমার মা মারা গেছেন। আর একটা কথা—পালিত হোক বা না হোক, তুমি আমার আপি। আর আপিই থাকবে, ঠিক আছে?”
একদিন বাড়ি গিয়ে আব্বুর পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বু, আমি তোমার পালিত মেয়ে? অথচ কখনো তা টের পেতে দাওনি।”
আব্বু মুচকি হেসে বললেন,
“পালিত হলেও তো মেয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছি। মেয়ের চোখেই দেখেছি তোমায়। কোনো কমতি পেয়েছো?”
তারপর একটু থেমে বললেন,
“খবরদার, আর কোনোদিন এ কথা তোমার মুখে যেন না শুনি। কিন্তু এটা তোমায় কে বলেছে?”
আব্বুর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“আম্মু।”
আব্বু একটু-ও বিচলিত হলেন না। ভাবছিলাম হয়তো বকবেন, কিন্তু কিছুই বললেন না। গম্ভীর মুখে বাহিরে তাকিয়ে রইলেন। আব্বুর দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, এত ভালো মানুষ কেন উনি? কোন রক্তের টান না থাকা স্বত্বেও কত যত্ন করে বড় করেছেন আমায়।

সত্যি বলতে, দুনিয়ায় এখনও ভালো মানুষের অভাব নেই। শুধু খারাপ মানুষের ভিড়ে ভালো মানুষদের বিশ্বাস করতে ভয় পায় সবাই।

সমাপ্ত|

সবাই প্রতারক নয়, সবাই ছেড়ে যায় না।কখনো কখনো ভাগ্যই দু’জনকে আলাদা করে দেয়।কারণ পৃথিবীতে সত্যিই নিয়তি বলে কিছু আছে।যে মানু...
28/10/2025

সবাই প্রতারক নয়, সবাই ছেড়ে যায় না।
কখনো কখনো ভাগ্যই দু’জনকে আলাদা করে দেয়।
কারণ পৃথিবীতে সত্যিই নিয়তি বলে কিছু আছে।

যে মানুষটা তোমার জীবনের জন্য লেখা নেই—
তাকে ধরে রাখার জন্য যতই চেষ্টা করো না কেন,
কোনো না কোনো অদৃশ্য কারণে
সে একসময় তোমার হাত থেকে ছুটে যাবেই।

দেখা যায়—
দীর্ঘ আট-দশ বছর ভালোবাসার সম্পর্কও
কোনো অভিযোগ ছাড়াই ভেঙে যায়।
দু’জনই একে অপরকে সমানভাবে ভালোবাসে,
বোঝে, মূল্যায়ন করে—
তারপরও এক হতে পারে না…
শেষে হয় মিউচুয়াল বিচ্ছেদ।

ভালোবাসায় হার মানলে কষ্ট হবেই—
এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু তাই বলে তাকে
অভিশাপ দেওয়া, খারাপ বলা,
প্রতারক বলে দোষারোপ করার কী দরকার?

ভালোবাসা মানেই যে
অবশ্যই তাকে পেতে হবে—
এমন কোনো নিয়ম নেই।

কিছু ভালোবাসা থাকুক অপূর্ণতার গভীরে,
নিঃশব্দে, শ্রদ্ধা আর স্মৃতির আলোয় বেঁচে থাকুক।
কারণ—
সব সম্পর্কের শেষ গন্তব্য একসাথে থাকা নয়,
কিছু সম্পর্কের সৌন্দর্য
অপূর্ণতাতেই লুকিয়ে থাকে। 💛✨

লেখা- রুমানা রুমা

বুকের_ভেতর_বৃষ্টি_পর্ব ৩ #শারমিন__প্রিয়া  ভাই, আব্বু আর আমার ছোট্ট সংসার সুন্দরভাবে চলতে লাগল। রান্নাবান্না তেমন একটা পা...
27/10/2025

বুকের_ভেতর_বৃষ্টি_
পর্ব ৩
#শারমিন__প্রিয়া

ভাই, আব্বু আর আমার ছোট্ট সংসার সুন্দরভাবে চলতে লাগল। রান্নাবান্না তেমন একটা পারি না আমি। আব্বু অফিস যাওয়ার সময় রান্না করবেন, আবার ফিরে এসেও রান্না করবেন। এটা খারাপ দেখায়। আমি জোর করে টুকটাক রান্না করি, অনেক সময় হাত-পা পুড়িয়ে ফেলি। যখন যা পারি না, ইউটিউবের সাহায্য নেই। এসব করতে করতে মোটামুটি হাতের মুঠোয় চলে আসে রান্না।
তায়েফ নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। আমিও একই কলেজে। আজকাল কলেজে যেতে লজ্জা করে আমার, শুধু এই পোড়া মুখটার জন্য। যখন না গেলে উপায় থাকে না, তখন যাই, তাও মুখ ঢেকে। মাঝেমধ্যে ভাবি, অনেকে সস্তা ডায়লগ দেয়, “চেহারা দিয়ে কিছু হয় না, মনের মিল’ই আসল।” আসলে এটা শুধু সান্ত্বনামূলক কথা। চেহারা ভালো না থাকলে সবাই ইগনোর করে। ভালোবাসার মানুষটাও ফেলে যেতে দুবার ভাবে না। আমি তারই জ্বলন্ত উদাহরণ।
বয়স বাড়ছে আমার। এখন আর ভুলেও বিয়ের প্রস্তাব আসে না। এসব নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগি আমি। তায়েফ ছাড়া সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কেউ নেই। বাবা কম কথা বলেন। আম্মু থাকলে হয়তো ভরসার হাত পেতাম। জানি না আম্মু কেমন আছেন, উনার কি আমাদের কথা মনে পড়ে? কে জানে, হয়তো পড়ে, নয়তো না। শুনেছি, চাকরি সূত্রে আম্মু অন্য বিভাগে গিয়েছেন। কোথায় গেছেন, কে জানে?
আম্মুর মুখটা দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করে আমার। হাত বুলাতে ইচ্ছে করে। ছোটবেলায় আম্মু তায়েফ আর আমাকে দুপাশে রেখে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়াতেন। আমরা চুপটি করে আম্মুর বুকে শুয়ে থাকতাম। ইদানীং মন খারাপের রাতগুলোতে ছোটবেলার মতো আম্মুর বুকে চুপটি করে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
আশপাশের মানুষ এখন নানা কথা বলে। “এই মেয়ের আর বিয়ে হবে না! এই মুখ দেখে কেইবা বিয়ে করবে!” তাদের কথা শুনতে শুনতে আমার মাইগ্রেন হয়েছে, তাও তারা মুখ বন্ধ করে না। দেখলেই এসব বলে। কান্না চলে আসে আমার। ফিরে কিছু বলার সাহস হয় না। তায়েফ এসব শুনলে মারামারি লাগবে একশো পার্সেন্ট।
একদিন আব্বু আমাদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি গেলেন। রাতে দেখি কয়েকজন মহিলা আর একজন পুরুষ এসেছেন। নতুন মা বললেন, আমাকে নাকি তারা দেখতে এসেছে। আমি অবাক হলাম, আমাকেও কেউ দেখতে এসেছে? আমারও সত্যি বিয়ে হবে?
নতুন মা জানালেন, যারা দেখতে এসেছে তারা উনার আত্মীয়। যে ছেলেটা এসেছে, তার আগের পক্ষের স্ত্রী আছেন— সেই স্ত্রী সাথেই এসেছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “স্ত্রী থাকা স্বত্ত্বেও বিয়ে কেন করবেন?”
বললেন, “দশ বছর হয়ে গেছে বিয়ের, বাচ্চা-কাচ্চা নাই। পুরনো জমিদার বংশধর। বংশের হাল কে ধরবে?” যতটা খুশি হয়েছিলাম, ততটাই নিভে গেলাম। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্যই তাহলে বিয়ে করবে। আমার কপালে এ ছাড়া আর কিইবা থাকতে পারে!
আমাকে শাড়ি পরিয়ে তাদের সামনে নেওয়া হলো। নিচের দিকে তাকিয়ে আছি। পোড়া মুখ নিয়ে তাকাতে অস্বস্তি হচ্ছিল। কেউ একজন বলল, “তাকাও আমাদের দিকে।” আমি তাকালাম।
একজন হাসিমুখে বলল, “পছন্দ হয়েছে, এই মেয়েই ফাইনাল।”
পাশ থেকে আরেকজন আমাকে বলে দিল, “এই হচ্ছে তোমার বরের আগের পক্ষের স্ত্রী, নাম রহমা।”

রহমা! উনিই নাকি আমাকে পছন্দ করেছেন, আর সবাইকে বলেও দিয়েছেন। উনি নিশ্চয়ই বেশ চালাক আর জেলাসি টাইপের হবেন। বরের জন্য খুঁজে খুঁজে এসিডে পোড়া মেয়েটাকেই চয়েস করেছেন। তার কারণ, আমার প্রতি তার স্বামীর আকর্ষণের কোনো কারণ নেই। কোনো পুরুষই আমাকে দেখে ক্রাশ খাবে না।
আমি রহমাকে আড়চোখে দেখলাম, উনি হাসছেন ঠিকই, কিন্তু চাপা কষ্ট উনার চোখেমুখে লুকিয়ে আছে। পাশে উনার স্বামী গম্ভীর মুখে বসে আছেন। উনি আমার দিকে একবারও তাকাননি। রহমা যা বলবে, সেটাই হয়তো ফাইনাল।
আমার বিয়ে ফাইনাল হলো। পরের সপ্তাহেই বিয়ে। তায়েফকে বললাম, “যাবি না আমার সাথে।”
সে একগাল হেসে বলল, “তখন ছোট ছিলাম, বুঝিনি। বোনের শ্বশুরবাড়িতে থাকাটা কেমন যেন দেখায়। মন চাইলে তোমাকে দেখে আসব। সাবধানে থাকবে তুমি, নিজের যত্ন নিও। আর আমি তো আছিই।” তায়েফ এমনভাবে কথা বলে যে মন ভালো হয়ে যায়।
বিয়ে হয়ে শ্বশুরবাড়িতে পা দিলাম। আমার স্বামী রাহাত। উনি পুরো রাস্তায় বা বাড়িতে এসেও একবারও কথা বলেননি আমার সাথে। আমাকে আমার ঘরে রাখা হলো। দীর্ঘসময় পর রাহাত ঘরে এলেন। গুমড়ো মুখে হাঁটাহাঁটি করছিলেন ঘরে। আমিও চুপচাপ বসে আছি। আধঘণ্টা পর উনি খাটে বসে বললেন,
“তুমি নিশ্চয়ই জানো এই বিয়ের কারণ। আসলে আমি বিয়ে করতে চাইনি। মা জোর করে বিয়ে দিয়েছেন, বাচ্চার জন্য। নিরুপায় হয়ে করেছি।”
আমাদের মধ্যে মিলন হলো। মাস দুই পার হয়ে গেল, কনসিভ করিনি আমি। শাশুড়ি বকাবকি শুরু করলেন। নানা রকম কথা শুনতে হয়। তখন রহমা খুব সাপোর্ট করতেন আমাকে, শাশুড়িকে বুঝাতেন যেন বকাবকি না করেন।
আমি গর্ভবতী না হলেও রহমা হঠাৎ গর্ভবতী হয়ে গেলেন। তারা যে কী পরিমাণ খুশি হল, তাদের খুশি দেখে আমারও ভালো লাগল। নতুন মেহমান আসার আনন্দে গরু জবাই করে রাহাত আর তার পরিবার পুরো এলাকায় খাওয়ালো।
পরে রাহাত আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইলেন। কারণ, আমি বাচ্চা দিতে পারিনি। “শুধু শুধু বউ হয়ে কেন থাকব” -তাদের মাথায় বোধহয় এটাই চলছিল। শাশুড়িও ভালো চোখে দেখেন না আমায়।

এই খবর শুনে আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। এমনিতেই আমি কলঙ্কিনী, তার উপর বাচ্চা জন্ম দিতেও ব্যর্থ। এখন ডিভোর্স হলে কোথায় মুখ লুকাব আমি? এত পোড়া কপালী হয়ে কি বাঁচা যায়?
রহমার ব্যবহার সবসময় আমার প্রতি স্নেহপূর্ণ ছিল। উনি কখনো কিছু বলেননি। আমি উনার পায়ে পড়ে বললাম, “আমাকে তাড়িয়ে দিয়ো না দয়া করে। আমি স্বামীর সঙ্গ না পেলেও এই পরিচয়ে থাকতে চাই।”

রহমা আমাকে ধরে তুললেন, “ছিঃ, ছিঃ! তুমি আমার পায়ে পড়ছ কেন, মারিয়া? কে বলেছে তোমায় ডিভোর্স দেবে? আমি রাহাতকে বুঝাব, সে তোমায় ছাড়বে না। তুমি আজন্ম রাহাতের বউ হয়ে থাকবে এখানে। কান্নাকাটি বন্ধ করো।”
রহমার কথা রাহাত শুনলেন। তিনি আমাকে ডিভোর্স দিলেন না। তবে সম্পর্কও গড়ে উঠল না। তিনি থাকেন রহমার ঘরে, আমি আমার ঘরে।
শাশুড়ির চোখে আমি বিষ। কোনো ঝগড়া না করেও উনি আমাকে সহ্য করতে পারতেন না।
এভাবেই দিন যেতে লাগল। তায়েফরা সবাই ভাবে আমি খুব ভালো আছি। শুধু আমি জানি—স্বামী থাকা সত্ত্বেও স্বামীর সঙ্গ না পেয়ে ভেতরে ভেতরে কতটা মরে যাচ্ছি।
রহমা আপুর বাচ্চা হলো। সবার মতো আমিও খুশি। ছোট ছোট হাত-পা, নাড়লে ভীষণ কিউট লাগে। আমি বারবার তাকে কোলে নিই, রহমা আপু বারণ করেন না। কি আদুরে বাচ্চা! আলাদা একটা টান তৈরি হলো তার প্রতি।
বাবুর ছয় মাস যেতে না যেতেই রহমা আপু অসুস্থ হয়ে পড়লেন। গলায় প্রচণ্ড ব্যথা। ডাক্তার দেখিয়ে কোনো লাভ হলো না। অবশেষে ঢাকায় গিয়ে জানা গেল, রহমা আপুর গলায় ক্যান্সার।
এই খবর শুনে সবাই ভেঙে পড়ল। রাহাত তো আরও বেশি, পুরুষ হয়েও উনি শিশুর মতো কান্না করলেন।
এক রাতে আপু আমাকে একা ঘরে ডেকে নিয়ে হাত ধরে বললেন,
“আমি আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি। বাচ্চা না হওয়ায় শাশুড়ির যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছিল না। তারা বলেছিল, বাচ্চা লাগবে, না হলে রাহাতকে বিয়ে দিবে। আমি রাজি হইনি। তোমার নতুন মা আমার দূর সম্পর্কের খালা। একদিন উনার কাছে তোমার কথা শুনি। আমি নিজে তোমাকে দেখতে যেতে চাই। আমি কোনো সুন্দরী মেয়ে আনতে চাইনি, কারণ ভয় ছিল রাহাত পাল্টে যাবে। তোমাকে আমার ভালো লেগেছিল কারণ তোমার মধ্যে সেই সৌন্দর্য নেই যা দেখে রাহাত গলবে। কিছু মনে করো না, মারিয়া, তবে এসব মন খুলে বলছি।”
মারিয়া এক সেকেন্ড থেমে আবার বলা শুরু করলেন, “তুমি এতদিন ধরে আমাদের সাথে আছো, খুব ভালো মেয়ে তুমি। তোমাকে আমি বোনের মতো দেখি। আমার ক্যান্সার হয়েছে, আমি বাঁচব না বেশিদিন। আমি শিওর, রাহাত ছাড়া একমাত্র তুমিই একজন, যে বাবুকে আদরে ভালোবাসায় রাখবে। আমার ছেলেকে তোমার হাতে দিলাম, নিজের ছেলের মতো রেখো।”
রহমা আপু কান্না করলেন, আমিও কান্না করলাম।
ধীরে ধীরে আপুর অবস্থা খারাপ হলো। হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এক রাতে রাহাত আমি রহমা আপুর পাশে বসা। রহমা আপু রাহাতের হাত ধরে বিনয়ী কন্ঠে বললেন,
“শেষ একটা ইচ্ছে পূরণ করবে আমার?”
রাহাত বললেন, “কি?”
“টাকা-পয়সার তো অভাব নেই তোমার। আমি চাই, যত টাকা লাগে মারিয়ার মুখটা সার্জারি করাও, স্বাভাবিক করে দিও। আমি মারা যাওয়ার পর আর বিয়ে করো না, মারিয়ার সাথে সংসার করো। মারিয়া তোমাকে আর আমার মেয়েকে খুব ভালো রাখবে।”
রহমা আপু আরও শক্ত করে ধরলেন রাহাতের হাত, “প্লিজ, রাহাত, ফিরিয়ে দিয়ো না আমায়। আজই কথা বলো ডাক্তারের সাথে।”
রাহাত অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকলেন। চোখ টলটল করছিল। তারপর বললেন, “ঠিক আছে।”
রহমা আপু হাসপাতালে থাকা অবস্থায় আমার সার্জারি হলো। আমার আগের ছবি দেখে ডাক্তাররা যতটা সম্ভব আগের মতোই বানিয়েছেন। আয়নায় মুখ দেখে বহু বছর পর আমার মুখে স্বস্তির হাসি ফুটল। আমার সুন্দর চেহারা ফিরে পেয়েছি।
আমি রহমা আপুর হাত ধরে কৃতজ্ঞতার চুমু খেলাম, “তুমি না থাকলে এসব হতো না, আপু।”
রহমা আপু হাসার চেষ্টা করলেন। চিবুক ধরে বললেন, “তুই তো ভীষণ সুন্দর মেয়ে, মারিয়া। রাহাত আর দূরে থাকবে না। দেখিস, ঠিক তোকে পছন্দ করবে।”
আমি বললাম, “রাহাতকে আমার হাতে ছেড়ে দিচ্ছ, খারাপ লাগছে না আপু?”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন রহমা আপু, “পরিস্থিতি এমন, কি আর করব! আমি মারা যাওয়ার পর তো এমনিতেই সে বিয়ে করত। একা মরা যায়, বাঁচা যায় না। অন্য কেউ আসার চেয়ে তুই থাকবি বউ হয়ে, আমার আত্মা শান্তি পাবে, আমার মেয়ে ভালো থাকবে।”

চলমান….! (পরের পর্বেই শেষ)

"স্ত্রী স্বাবলম্বী হলে স্বামীকে স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে হবে না।" এই হেড লাইনটুকু ফেসবুকে পড়েই আমার স্বামী রাতুল আনন্দে প্...
26/10/2025

"স্ত্রী স্বাবলম্বী হলে স্বামীকে স্ত্রীর ভরণ পোষণ দিতে হবে না।" এই হেড লাইনটুকু ফেসবুকে পড়েই আমার স্বামী রাতুল আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠলো।

আমি ছুটে এসে বললাম,

- কি হয়েছে? এত জোরে চিৎকার করছ কেন?

-শোন রুবা এখন থেকে তোমার খরচ তুমি নিজে চালাবে আমি তোমার কোন ভরণপোষণ দিতে পারবো না।

আমি তার হাতে থাকা মোবাইলটা দেখে বিষয়টা আঁচ করলাম, গতকাল থেকেই এই নিউজটা খুব ভাইরাল হয়েছে।

-এমনিতেই কি তুমি আমার হাত খরচ দাও নাকি?

-কেন দেবো? তুমি নিজেই চাকরি করো। আমি বলেছিলাম চাকরি করার দরকার নেই, তুমি তো আমার কথা শোনোনি।

-আমার বাবা-মা বহু কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন শিক্ষিত বানিয়েছেন। তাদের প্রতি আমার কর্তব্য আছে দায়িত্ব আছে। তার ওপর তুমি ভালো করেই জানো আমার বাবা-মায়ের কোন ছেলে নেই অতএব তাদেরকে অর্থনৈতিক সাপোর্ট দেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

-সে ঠিক আছে বুঝলাম। এখন থেকে তোমার থাকা খাওয়ার খরচ আমি বহন করতে পারবো না।এই দেখো নিউজ বের হয়েছে। রাতুল ফাজিলের মত হাসতে লাগলো।

আমি হাই তুলে বললাম,

- আচ্ছা ঠিক আছে, বাড়ি ভাড়া তো দিতে হবে আর সাথে ওই গ্যাস বিল কারেন্ট বিল যা কিছু আছে সব কিছুই আমরা এখন থেকে অর্ধেক অর্ধেক দিব, ঠিক আছে, তুমি খুশি?

রাতুল "হুররে" বলে একটা চিৎকার দিয়ে বাইরে চলে গেল বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে।

প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে ভাবলাম এরকম একটা গাধা ছেলে কি করে আমার হাজব্যান্ড হলো! যে শুধুমাত্র হেডলাইনটুকু দেখে এত মাতামাতি করছে। সে ফিরে এলো রাত সাড়ে দশটার দিকে।

-বুঝলে রুবা আজকে সন্ধ্যাটা খুব ভালো কেটেছে, বহুদিন পর এত ভালো সন্ধ্যা কাটালাম ,খেতে দাও দেখি।

-আমি তো রান্না করিনি।

-কেন! অবাক হয়ে রাতুল জানতে চাইলো।

-আমার খাবারের খরচ যদি আমার দিতে হয় তাহলে আমি কষ্ট করে হাত পুড়িয়ে তোমার জন্য রান্না করবো কেন? আর এমনিতেও আমার খাবারের পুরো খরচ কিন্তু তুমি বহন করো না বেশিরভাগ সময় অফিস থেকে ফেরার পথে কাঁচা বাজার কিন্তু আমিই করে নিয়ে আসি।

-সে যাই হোক, আমি এখন কি খাবো?

-সেটা তো আমার জানার কথা না।

-তুমি কি খেয়েছো?

-আমি তো বাইরে থেকে অর্ডার করে নিয়ে এসেছি আর এমনিতেও তো মাস শেষ। নিজের জন্য বাজার করবো, তোমার নিজের বাজার তুমি করে নেবে। আমার রান্না আমি করবো, তোমার রান্না তুমি। আমি শুতে চললাম।

রাতুল আবার বের হয়ে গেল। তার বোধহয় একটু বেশি ক্ষুধা লেগেছিল । বাইরে থেকেই খেয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে তখন প্রায় রাত পৌনে বারোটা।

আমাকে অন্য ঘরে শুতে দেখে রাতুল বলে উঠলো,

-কি ব্যাপার তুমি অন্য ঘরে কেন?

-কারন আমি স্বাবলম্বী, আমি হাই তুলে বললাম। কোন পুরুষের সাথে আপাতত আমার শুতে ইচ্ছা করছে না।

-মানে... মানে কি?

-মানে আমি স্বাধীন স্বাবলম্বী স্বনির্ভর তাই আমার ইচ্ছে হলে আমি কারো সাথে বিছানা শেয়ার করবো, ইচ্ছা না হলে করবো না। আর তুমি আমার মত কোন এলিট ক্লাস, সুন্দরী, শিক্ষিত মেয়ের সাথে বিছানার শেয়ার যদি করতে চাও, কি বলতে চাচ্ছি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো তবে সেই মেয়ের পিছনে তোমার প্রতি রাতে মিনিমাম খরচ হবে ৫০ হাজার টাকা। আমি ওই টাইপ মেয়ে নই। তুমি যদি অন্য জায়গায় যেতে চাও যেতে পারো, আমার কোন অসুবিধা নেই।

-তুমি আমার বিয়ে করা বউ, এসব ফালতু কথা কেন বলছো?

-আমাদের বিয়ের সময়ও আমার ভরণপোষণের পুরো দায়িত্ব তুমি নিয়েছিলে যদিও বাস্তবিক অর্থে তুমি সেটা নাওনি । আমার ছোটখাটো সমস্ত প্রয়োজন আমি নিজে মেটাই। এমনকি সংসারের বিভিন্ন কাজেও মাসে আমার বেতনের প্রায় অর্ধেক টাকা খরচ হয়ে যায়।

রাতুলের হা করা মুখ দেখে অন্য রুমে চলে গেলাম।

পরদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় রাতুল আমাকে পেছন থেকে বললো,

- শোনো আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এসো, আমিও তাড়াতাড়ি ফেরার চেষ্টা করবো, বাবা-মা আসবে।

-তোমার বাবা-মা আসবে তাতে আমি কি করবো? পারবো না আমি, আমার রাত হবে।

-মানে তোমার শ্বশুর-শাশুড়ি আসবে তোমার কোন দায়িত্ব-কর্তব্য নেই? তুমি তো সব সময় তাদের প্রতি তাদেরকে তোমার নিজের বাবা-মা মনে করেছো।

-করেছি, এখন থেকে আর করবো না ।

-কেন? রাতুল প্রায় মারমুখি হয়ে আমার দিকে এলো।

-তাদের অপরাধ হচ্ছে তারা একটা মূর্খ ছেলে জন্ম দিয়েছেন।

আমি গটগট করে বের হয়ে গেলাম।

বাসায় ফিরলাম রাত ৮ টায়। রাতুল ঝিম মেরে বসে আছে। বাবা-মা কেউ আসেনি। বুঝলাম, রাতুল নিজেই হয়তো ফোন করে না করে দিয়েছে সিনক্রিয়েটের ভয়ে।

-তুমি আসলে কি চাচ্ছো রুবা?

-আমি আবার কি চাইবো? বলতে বলতে রুমে গিয়ে কাপড় ছাড়লাম, বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলাম। রাতুল সবসময়ই দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল, যেন আমার সাথে কথা বলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। রান্নাঘরে গিয়ে নিজের জন্য এক কাপ চা তৈরি করলাম। ডাইনিং টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছিলাম। রাতুল আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি জানি এই সময় ওর পর পর দুই কাপ চা লাগে। তাও আবার একবারে বানালে হবে না। এক কাপ খেতে খেতে আরেক কাপ ঠান্ডা হয়ে যায় আর দ্বিতীয় বার গরম করা চা ও মুখে তোলে না।

- আমার ভুল হয়ে গেছে রুবা। ওই খবরটা দেখে এরকম করা উচিত হয়নি,সবকিছু আগের মতো হয়ে যাক।

চায়ের কাপটা আরেকবার চুমুক দিয়ে সোজা হয়ে বসলাম।

-তুমি যে একটা গণ্ডমূর্খ ,অপদার্থ এই কথা কি তুমি জানো রাতুল ?

-আমি মূর্খ! তুমি জানো আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে...

আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

- শুধুমাত্র সার্টিফিকেট মানুষকে শিক্ষিত করতে পারে না। নিউজটা যদি ঠিকমতো পড়তে তাহলে সবকিছু বুঝতে পারতে। তোমার মত মানুষদের জন্যই এরকম চটকদার হেডলাইন তৈরি হয়। ওই নিউজটা দিল্লির হাইকোর্টের একটা মামলার জন্য শুধুমাত্র। আর হ্যাঁ সেটা বিবাহিত অবস্থায় নয় ডিভোর্সড অবস্থায়। মামলার স্থান দিল্লির হাইকোর্ট। যেখানে স্ত্রী সরকারি চাকরিতে গ্রুপ এ অফিসার হিসেবে কর্মরত আর স্বামী একজন আইনজ্ঞ। তারা শুধুমাত্র এক বছর সংসার করেছিল এবং তারপর তাদের বিচ্ছেদ হয়। স্ত্রী যখন আইনের কাছে স্বামীর কাছ থেকে এলিমনি দাবি করে তখন আদালত দেখেছে স্ত্রী নিজেই ভালো সরকারি পদের অধিকারী। স্বামীর তুলনায় তিনি নিজেই প্রচুর উপার্জন করেন আর স্ত্রীর উল্লেখযোগ্য ভরণপোষণের প্রয়োজন একেবারেই নেই বলে বিচারক মনে করেছেন। এই মামলার প্রেক্ষিতেই তোমার পছন্দের লাইনটি এসেছে তবে সেটা সবার ক্ষেত্রে কিন্তু প্রযোজ্য নয়। তুমি হেডলাইন দেখে ভেতরের কিছু না পড়ে অথবা সত্যতা যাচাই না করে যা তা বলা শুরু করলে।

রাতুল মাথা নিচু করে বললো,

- আমার ভুল হয়ে গেছে।

-না তোমার ভুল হয়নি, আসলে তোমার অপরাধ হয়েছে। এখন আমি বুঝতে পেরে গেছি যে তুমি আমার চাকরি করা একেবারেই পছন্দ করো না। আমি চাকরির পাশাপাশি তোমার পুরো সংসার দেখাশোনা করি, তোমার বাবা-মাকে প্রাপ্য সম্মান দেই, তোমার জন্য রান্না করি, ঘর পরিষ্কার করি, তোমার কাপড় ধুয়ে দেই, সবকিছু করি তবুও তোমার এত সমস্যা! একটা অর্ধ সংবাদ থেকেই আমি তোমার কথাটা রূপটা দেখতে পেলাম।

-প্লিজ রুবা,আমাকে মাফ করো।

-হ্যাঁ করে দিলাম। কিন্তু এখন থেকে সবকিছুই সমান সমান হবে। তোমার বাবা মাকে যদি আমাকে শ্রদ্ধা করতে বলো তাহলে আমার বাবা-মায়ের দিকটাও তোমাকে দেখতে হবে। আমার বাবা মাকে যদি টাকা পাঠাতে নিষেধ করো তাহলে তোমার বাবা-মাকেও তুমি টাকা পাঠাতে পারবে না। ঘরের কাজ করার জন্য আলাদা মানুষ রাখো যার বেতন অর্ধেক তুমি দেবে, অর্ধেক আমি দেব। আমি রান্না ঘরের পথ মারাবো না। যদি সেটা করেও থাকি একান্ত নিজের জন্য করবো এই যেমন এখন নিজের চা করে খাচ্ছি। সামনে তুমি বসে আছো কিন্তু তোমাকে দেয়ার মত প্রয়োজন আমি বোধ করছি না।

কথাগুলো উগ্রে দিয়ে আমি শুতে চলে গেলাম গতকালের মতোই অন্য ঘরে।

পরদিন ছিল শুক্রবার। ঘুম থেকে উঠে দেখি রাতুল এক কাপ চা হাতে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

-গুড মর্নিং,ঘুম কেমন হলো?

-ভালো হয়েছে। চা টা খেয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখি সে অলরেডি নাস্তা সাজিয়ে রেখেছে। তেমন কিছু না কলা, পাউরুটি, জেলি আর ডিম।

-আমি সরি রুবা, এখন থেকে আর এরকম হবে না।

-হ্যাঁ বলতে থাকো আমি শুনছি।

-তোমার চাকরি নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই।

-আর

-কাজের বুয়াও রাখবো তোমাকে বেতন শেয়ার করতে হবে না।

-আর

-ঘরের অন্যান্য কাজে যতটা পারি তোমাকে সাহায্য করবো।

-আর

-তোমার বাবা মাকে নিজের বাবা মায়ের মত দেখবো ঠিক যেমন তুমি দেখো আমার বাবা-মাকে।

আর

-আর.. আর তো কিছু মনে পড়ছে না আর.. আর..

আমি মাথা নিচু করে হাসলাম রাতুল কে বুঝতে দিলাম না। একেই বোধহয় বলে "ঠেলার নাম বাবাজি"

-ঠিক আছে তোমার সবকিছু আমি মঞ্জুর করলাম।

-সবকিছু আবার আগের মত চলবে তো রুবা?

-চেষ্টা করবো। তুমি যেহেতু নাস্তা তৈরি করেছ তাই আমি এই বেলার মত চা করছি।

আমি নাস্তা শেষ করে উঠে গিয়ে দুই কাপ চা নিয়ে ফিরে এলাম।

-থ্যাংকস গত রাত থেকে চা না খেয়ে আমার মাথা পুরো ধরে আছে। এই চায়ের যে কি প্রয়োজন ছিল আমার,বিশ্বাস করো, থ্যাঙ্ক ইউ রুবা ।

আমি মনে মনে ভাবলাম, তিনটা বছর ওর জন্য সবকিছু আমি করেছি। এমনকি জুতো পরিষ্কার থেকে শুরু করে সব মানে সব আর আজকে এক কাপ চায়ের জন্য ও আমাকে এত সুন্দর করে থ্যাঙ্কস বলছে। আসলে কারো জন্যই টেকেন ফর গ্রান্টেড হতে হয় না, হলেই বিপদ, হোক সে যতই কাছের মানুষ।

#সমতা
কলমে:সুবর্না শারমিন নিশী

বুকের_ভেতর_বৃষ্টি #পর্ব ০২শারমিন_প্রিয়া দাদী ভালো যত্ন করেন আমাদের। উনার যত্ন আর ভালোবাসা দেখে কেউ টেরই পাবেনা, উনি আমাদ...
25/10/2025

বুকের_ভেতর_বৃষ্টি
#পর্ব ০২
শারমিন_প্রিয়া

দাদী ভালো যত্ন করেন আমাদের। উনার যত্ন আর ভালোবাসা দেখে কেউ টেরই পাবেনা, উনি আমাদের সৎ দাদী। উনার জন্যই কেউ আগুন চোখে তাকানোর সাহস পায় না আমাদের দিকে।
বছর পেরিয়ে যায়। আমরা এক বছর এগিয়ে আসি। তায়েফ আর আমি দুজনেই ভালো নাম্বার পেয়ে পাস করি।
একদিন শুনি আব্বুর বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কনে দেখা-দেখিও শুরু হয়ে গেছে। আমরা ছোট মানুষ, তাই কেউ আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি। সবার কথাবার্তা শুনে বুঝেছি।
দাদীকে জিজ্ঞেস করলাম, “আব্বুকে বিয়ে দিচ্ছো দাদী?”
দাদী এক গাল হেসে বলেন,
“জোয়ান ছেলে, বিয়ে তো দিতেই হবে দিদিভাই। খুব ভালো একটা মেয়ে পেয়েছি। খুব নম্র, ভদ্র। তোদের দু'ভাইবোনকে যত্নে রাখবে নিশ্চয়।”
আমি মুখ ভার করে তাকালাম, কিছু বললাম না।
“তোদের কি আপত্তি আছে?”
“জানিনা।”
বলে উঠে আসলাম।

স্কুলে যাওয়ার পথে তায়েফ জিজ্ঞেস করে,
“আব্বুকে আবার বিয়ে দিচ্ছে আপু?”
“হু।”
“আব্বুর বউকে কি আম্মু ডাকতে হবে?”
“হবে হয়তো।”
“আমি কিন্তু ডাকব না।”
“উনি যদি ভালো হন, আদর করেন তোকে, তাও ডাকবি না?”
তায়েফ মুখ বাকিয়ে বলে,
“আমাদের আম্মুই তো ভালো না। ভালো হলে আমাদের রেখে যেতেন না। আম্মু যখন ভালো না, তাহলে আর কে ভালো হবে?”

ছোট তায়েফের মুখে এ কথা শুনে থমকে যাই আমি। এই বয়সে মায়েদের নিয়ে এমন নেগেটিভ চিন্তা ঢুকে গেছে তার ভেতরে— শুধুমাত্র মায়ের জন্য।

তায়েফ লাফিয়ে লাফিয়ে চলতে লাগল। আমার মাথায় চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। আব্বুকে তো সবাই বিয়ে দিয়ে ছাড়বেই। কেমন হবে নতুন মানুষটা? আব্বু আমাদের আদর করবেন তো?

দূর সম্পর্কের কোনো এক আত্মীয়ের মেয়েকে পছন্দ হয় সবার। গরীব বাবার মেয়ে, সুন্দরী অবিবাহিত। বাবা চাকরিজীবী শুনে, বিবাহিত আর বাচ্চা থাকা শুনেও রাজি হয়ে যান।
এক শুক্রবারে বিয়ে হয় আব্বুর। আমরা সবাই বিয়েতে যাই। মজলিসের সবাই খুঁজে খুঁজে আমাকে আর তায়েফকে দেখে। নানা কথা বলে, মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হা-হুতাশ করে।
আমি সব কিছুর ফাঁকে ফাঁকে শুধু নতুন বউয়ের দিকে তাকাই। বেশ সুন্দর তিনি, তবে চেহারায় মায়া কম।

অনুষ্ঠান শেষ। বাড়ি নিয়ে আসা হয় নতুন বউকে। আমাকে আর তায়েফকে নিয়ে উনার সাথে পরিচয় করানো হয়। রাতে একসাথে খাবার দেওয়া হয়, যাতে বন্ডিং ভালো হয়। সবাই আপ্রাণ চেষ্টা করলেও আমি আর ভাই নিভু নিভু, একদম চুপচাপ। জানি না কেন, কোনো আগ্রহ নেই আমাদের উনার সাথে কথাবার্তা বলার।
ভদ্রমহিলা যথেষ্ট আদর নিয়ে কথা বলছেন আমাদের সাথে। ভাইকে কোলে নিচ্ছেন। ভাই যেতে চাচ্ছে না, আমি চোখ ইশারায় বলছি, “যাও।”

এভাবে দিন যেতে থাকে আমাদের। নতুন মায়ের সাথে মাখামাখি সম্পর্ক না হলেও মোটামুটি ভালো। মাস গিয়ে বছর যেতে থাকে। আমরা বড় হই আরও।
মায়ের কথা মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ে। মা আমাদের খোঁজ নেন না। নিতে চাইলেও হয়তো নিতে পারেন না। আমার মনে হয়, মা আমাদের মিস করেন, কিন্তু খোঁজ নেওয়ার সব রাস্তা বন্ধ বলে হয়তো নিতে পারেন না।

‘মা’ নামক মানুষটার নেগেটিভ দিক মেনে নিতে পারি না আমি। শুনেছি, আম্মু একদিন বিশেষ কাজে অফিসে ছিলেন। তখন প্রেগন্যান্ট ছিলেন। ডেলিভারির পেইন ওঠে। আব্বু আর সহকর্মীরা মিলে আম্মুকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। পরে সেই রাজমিস্ত্রীর লোকটা আসে— এটা আব্বুর মুখে শুনেছি।

সৎ দাদী হলেও তিনি ভীষণ ভালোবাসতেন, আগলে রাখতেন আমাদের। সেই দাদী হুট করে মারা গেলেন। আমাদের ভালোবাসার দুজন মানুষ ইতিমধ্যে চলে গেছেন।

নতুন মায়ের বাচ্চা হয়। নতুন মা আমাকে দিয়ে টুকটাক কাজ করাতেন। দিন দিন কাজ করানোর মাত্রা বাড়তে লাগল। পড়তে বসলেই উনি ডাক দেন, “মারিয়া, এটা করে দাও, ওটা করে দাও।”
না পেরে উঠি আমি। সেইবার ক্লাসে রেজাল্টও খারাপ হয়।
আব্বু খুব করে বকলেন।

তায়েফ সাবধান করে দিলো আমায়,
“আপি, তুমি আর ওই মহিলার কাজ করবে না। পড়াশোনায় ফোকাস করবে বেশি। দেখেছো, উনি কেমন কথাবার্তা বলে! আমি প্রথমে বলেছিলাম না, ভালো মানুষ না উনি।”

তায়েফের কথা ঠিক। নতুন মায়ের ব্যবহারও পাল্টে গেছে। দাদী মারা যাওয়ায় উনি যেন বেশি লাই পেয়ে গেছেন। আব্বু বাড়ি থাকেন না, অফিসে ব্যস্ত। আমাদের সাথে যা মন চায় তাই করেন।
আমি কিছু বলি না, তায়েফ মাঝেমধ্যে ঝগড়া বাধিয়ে ফেলে। নতুন মা তখন আগুন হয়ে ওঠেন। আব্বুর সাথে কত কিছু লাগিয়ে নালিশ করেন। আব্বু তেমন কিছু বলেন না আমাদের।

এসএসসি পরীক্ষা শেষে আব্বু আমাকে শহরের কলেজে ভর্তি হতে বলেন। তায়েফকে রেখে মোটেও বাইরে যেতে ইচ্ছুক নই আমি। দুনিয়াতে এই একটা মাত্র ভাই-ই আমার আপন। সেও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।
তাছাড়া নতুন মায়ের সাথে তার সম্পর্ক ভালো নয়। রাতদিন ঝগড়া বাধবে, না খেয়ে থাকবে।

আব্বুকে আবদার করলাম,
“আব্বু, আমি শহরের কলেজে যাব না। আমাদের বাজারের কলেজে ভর্তি করিয়ে দাও। আর না দিলে শহরে ভাইকে সঙ্গে দাও।”
আব্বু বাজারের কলেজেই ভর্তি করলেন।

তায়েফ যে কি খুশি! রাতে পড়তে বসে কলম কামড়াতে কামড়াতে আমাকে বলল,
“তোমাকে চলে যেতে দিতাম না আমি। ভালো হলো, আব্বু রাজি হয়ে গেলেন।”
“আব্বু শহরে নিয়ে গেলে কি করতে?”
“আমিও যেতাম।”
“আব্বু কি নিতো তোকে?”
তায়েফ এক গাল হেসে বলল,
“আব্বু না নিলে তুমি অবশ্যই নিতে। এটা আমি জানি।”
“আমার পেছন পেছন থাকবি নাকি?”
“থাকব। তোমার বিয়ে দিলে তোমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থাকব।”

হাসি পেলো আমার। তার মাথায় গাট্টি মেরে বললাম, “এখন এসব থাক, পড়ায় মন দে।”

বাড়ি থেকে কলেজ কন্টিনিউ হতে লাগল আমার। দেখতে মাশাআল্লাহ আমি। ধবধবে ফর্সা না, হলুদ গায়ের রঙ, সবাই বলে মুখে নাকি অসম্ভব মায়া।
সেই সুবাদে হয়তো প্রেমের অফার পেতে থাকি অবিরত।

কলেজের এক বাজে ছেলের নজরে পড়ি একদিন, নাকোচ করে দেই।
একটা ভালো, সুদর্শন ছেলের সাথে রিলেশন হয় আমার। লুকোচুরি সম্পর্ক। কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, নাম শাহেদ। তায়েফ জানত এটা। যখন কথা বলতাম ফোনে, তায়েফ পাহারা দিতো। সে সবসময় একটা শর্ত দিতো,
“আমি তোমাকে কথা বলতে হেল্প করব, যদি বিয়ের পর তোমার সাথে আমাকে নিয়ে যাও।”
তাকে কথা দিতাম। সে সবসময় পাহারা দিতো আমাকে, ফলে কেউ টেরও পেত না।

কদিন যেতেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে শাহেদ। সবকিছু দেখা-দেখি শেষে আব্বু রাজি হয়ে যান। আমাকে জিজ্ঞেস করলে পজিটিভ উত্তর পান।
বিধায় বিয়ে ঠিক হয় দ্রুত।

বিয়ের সবকিছু কেনাকাটা করছেন আব্বু। দু-একটা জিনিস বাকি ছিল, তাই বিকেলে একাই বের হই কিনতে। ফেরার পথে রিকশায় উঠি। দেখি কলেজের সেই বাজে ছেলেটা বাইক নিয়ে পেছন পেছন আসছে। আমি তেমন পাত্তা দেইনি তাকে।
সে চলতি রিকশায় বাইক নিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এসিড ছুড়ে ফেলে আমার মুখে।

গগন-বিভাগী চিৎকার করে উঠি আমি। আগুনের স্রোতে মুখ জ্বলতে থাকে দাউদাউ করে। মানুষজন জড়ো হয়। আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। আর কিছু বুঝতে পারি না।

পরে হাসপাতালের বেডে নিজেকে দেখি, পাশে তায়েফ, আব্বু, চাচ্চু।
আমি কান্না করে বলি,
“ওই ছেলেটা এটা করেছে।”
ছেলেটাকে বাবা ধরে পুলিশে পাঠান। আমার চিকিৎসা করান।

পুরোমতো মুখ ঠিক হয় না। আয়নায় নিজেকে দেখে চিৎকার করি আমি। আমার এত সুন্দর মুখ কালো কয়লার পেছনে চাপা পড়ে গেছে।

শাহেদ বিয়ে ভেঙে দেয়। বলে, আমাকে সে বিয়ে করতে পারবে না। আমি অবাক হইনি একবিন্দুও। এসিডে পুড়ে গেছে মুখ, যে মুখ দেখে আমি নিজেই ভয় পাই, সেই মুখের মানুষকে কে বিয়ে করবে!

সার্জারি করলে হয়তো মুখ কিছুটা ঠিক করা যাবে, কিন্তু তাতে আব্বুর কোনো আগ্রহ দেখলাম না। সার্জারি করলে আব্বুকে পথে বসতে হবে। আমিও আর তাড়া দিলাম না। কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে গেলাম। সারাক্ষণ মনমরা থাকতাম।

তায়েফ আশ্বাস দিলো আমাকে, নরম গলায় বলল, “আমি বড় হয়ে অনেক টাকা ইনকাম করব আপি। তারপর তোমার মুখটা ভালো করব।”
তায়েফের কথা শুনে আমার মন ভালো হয়ে যায়।

নতুন মা জানিয়ে দিলেন, আমার মুখ যেন আমি আড়ালে রাখি। উনার ছোট ছেলে আমাকে দেখে ভয় পায়। যথেষ্ট বড় হয়েছি আমি।
নতুন মায়ের অবস্থা আব্বু টের পান। তিনি বুঝেশুনে আবার আমাকে আর ভাইকে সেই আগের বাসায় ফেরত নিয়ে আসেন। আব্বুও এখানে থাকেন।

চলমান….!

Address

Dhaka
1236

Telephone

+8801641574622

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Emon Food Center posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Emon Food Center:

Share