Emon Food Center

Emon Food Center food

আজ চট্টগ্রাম ২নং গেইট এ এই মহিলার এক্সিডেন্ট হয়েছে, চকরিয়ার মেয়ে বলতেছে নাম রোজিনা, বয়স-২৫, ১নং ওয়ার্ড, বাজার পাড়া। কার...
21/07/2025

আজ চট্টগ্রাম ২নং গেইট এ এই মহিলার এক্সিডেন্ট হয়েছে, চকরিয়ার মেয়ে বলতেছে নাম রোজিনা, বয়স-২৫, ১নং ওয়ার্ড, বাজার পাড়া। কারো পরিচিত থাকলে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করুন।
চট্রগ্রাম মেডিকেল ইমার্জেন্সিতে আছে। প্লিজ সবাই শেয়ার করে দিন যাতে করে ওনার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়।
©

তাজমহল #পর্ব_২২প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরীগা গুলিয়ে ওঠা বীভৎস স্পর্শে শাইনার দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়। নিজেকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নেবে...
20/07/2025

তাজমহল
#পর্ব_২২
প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

গা গুলিয়ে ওঠা বীভৎস স্পর্শে শাইনার দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রায়। নিজেকে কোনোমতে ছাড়িয়ে নেবে তার আগেই তাজদার এক ঝটকায় তাকে আরও কাছে টেনে নিল। শক্ত বাহুতে আটকে রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,"শাইনা মমতাজ আমার কথা শোনো। নইলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেব। লুক এট মি।"

শাইনা থেমে গেল। গাল মুছে চোখ তুলে তাকাল তাজদারের মুখের দিকে। একটু শান্ত হলো। তাজদার গভীর স্বরে বলল,

"লিসেন কেয়ারফুলি শাইনা মমতাজ। আমি তোমাকে দুটো অপশন দিয়েছি। তোমাকে যেকোনো একটা বেছে নিতেই হবে। আমি তোমাকে লন্ডনে নিয়ে যাব নইলে এখানে বাচ্চাসহ রেখে যাব। এমনি এমনি রেখে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। বিয়েটা আমি রংতামাশা করার জন্য করিনি। আই নিড এ ফ্যামিলি। সাফ সাফ সব জানিয়ে দিলাম তোমাকে। দিজ ইজ ইয়োর লাস্ট চান্স। ডিসাইড নাউ। সারেন্ডার অর সাফার এলৌন। আ'এম নট লিভিং লুজ এন্ডস।"

শাইনা অস্ফুটস্বরে বলল,"বাচ্চার নাম দিয়ে নিজের স্বার্থ হাসিল।"

তাজদারের কপাল কুঁচকে গেল।

"কি বললে?"

শাইনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,"অপমানিত হতে চাইলে বলতে পারি।"

"ফালতু কথা ছাড়ো। আসল কথায় আসো।"

শাইনা সোজাসাপটা বলল,"আমি বাচ্চা নেওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নই।"

তাজদার কাঠকাঠ গলায় বলল,"Reality doesn’t negotiate with excuses. So get ready to face reality with or without your ‘preparedness’.

শাইনা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল। এবারও পারল না। প্রচন্ড ক্ষোভের সাথে বলল,"আপনি আমার কোনো মতামতকে সম্মান দেননি তাই আমিও দেব না। আমাকে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্যাঁড়াকলে ফেলেছেন আপনি। তারপর বলছেন যেকোনো একটা সিদ্ধান্ত নাও। আমার সিদ্ধান্তের প্রতি যেমন আপনি অসন্তুষ্ট তেমন আপনার সিদ্ধান্তের উপরও আমি অসন্তুষ্ট। এত বাহাদুরি দেখানোর পরও আপনি কি করে ভাবছেন আমি স্বেচ্ছায় আপনার বাচ্চা নেব? আপনি জানতেন আমি বিয়েটা করতে রাজী নই তাই নিশানের নাম করে আকদের আয়োজন করলেন।
সবটা আপনার পরিকল্পনায় হয়েছে। দুই পরিবারকে আপনি আপনার কথামতো নাচিয়েছেন। আপনার স্বভাব হয়ে গেছে সবাইকে নিজের মতো করে কন্ট্রোল করতে করতে। আপনি আপনার বিবাহিত স্ত্রী। একবারও কি আপনার মনে পড়ে যে আপনি স্ত্রী হিসেবে আমাকে কোন জায়গায় সম্মান দিয়েছেন?

আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর আজ না হোক কয়েকটা দিন গেলে আস্তেধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে হয়তো। কত জটিল সম্পর্ক দেখেছি বিয়ের পর স্বাভাবিক হয়ে যায়। বিয়ের পর ভেবেছি আপনি আমাকে এটা ফিল করাবেন যে পূর্বে যা হবার হয়েছে কিন্তু এখন থেকে সব ভালো হবে। আমার কথার একটা ভ্যালু থাকবে।

কিন্তু না আপনি সেটা হতে দেননি। আপনি ওয়ালিমার দিন আমাকে সবার সামনে অপমান করিয়েছেন। নিজের বোনকে একটা বকাও দেননি। নিজের আত্মীয় স্বজনকে কোনো কথা বলেননি। আপনি পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছেন আমাকে অপমানিত হতে দেখে।

আপনি শুরু থেকেই আমার উপর নিজের মর্জি খাটাচ্ছেন হাঁটতে বসতে। একবারও আমাকে এটা ফিল করাননি যে আপনি আমার জন্য আতঙ্ক নয়। স্বামী মানে জানতাম মেয়েমানুষের শান্তির জায়গা।
মেয়েমানুষ গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করে যদি তার স্বামী ঠিক থাকে। কিন্তু আপনি আমার জন্য আতঙ্কই রয়ে গেলেন। আপনার ব্যবহার, আচার আচরণ কোনোটাই পাল্টায়নি। আপনি আমার উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে ভালোবাসেন। আপনার কথামতো আমাকে চলতে হবে, আপনার সব অন্যায় আবদার আমাকে মানতে হবে। আমার ভালোমন্দ, ইচ্ছে অনিচ্ছের কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে। আমি বেশি কিছু তো চাইনি। সম্মান চেয়েছি। সেটা আপনি দেননি। আপনার পরিবারও সেটা দেয়নি। তাই আমার সম্মানের কথা আমাকেই চিন্তা করতে হবে। আমি আমার সিদ্ধান্ত পাল্টাব না। যা হবার হবে। যেখানে সম্মান নেয়, যেই সম্পর্কে পাল্টাপাল্টি শর্ত আরোপ করে আতঙ্কে রাখা হয় সেই সম্পর্কের প্রতি আমার কোনো টান নেই, কোনো সম্মান নেই, কোনো দায় নেই। আপনার তো সবকিছুতে ফোর্স করার স্বভাব আছে। মনে হয় না আমার মতামতের কোনো দরকার আছে। তাই আজ থেকে আমার সাথে শলাপরামর্শ করার বিষয়টা বাদ দিন। এত ভালো সাজার দরকার নেই।"

তাজদার সিদ্দিকী সরু চোখে তাকিয়ে রইলো। কপালে কঠিন ভাঁজ, মুখটা একদম পাথরের মতো শক্ত করে রেখেছে।

"তুমি আমাকে কি মনে করো?"

"আপনি আমাকে নিজের যে রূপটা দেখিয়েছেন সেটাই। বর্বর, উগ্র, ছোটলোক। ভালো রূপ দেখালে সেটাও বলতাম। ওহ হ্যাঁ বিয়ের সময় লাখ টাকার জিনিস দিয়েছেন এটা একটা ভালো ব্যাপার স্যাপার। সবাইকে একদম কিনে ফেলেছেন। আমাকে এভাবে ধরে রাখবেন না। গাড়ি ঘোরান। আমি বাড়ি যাব। আমার ঘুম পাচ্ছে।"

"গাড়ি ঘুরবে না। বাড়িও যাবে না।"

শাইনা বলল,"এভাবে আপনি আমার এডমিশন আটকাতে পারবেন না। সবকিছুর একটা লিমিট থাকে। ছাড়ুন। সবখানে স্বামীগিরি ফলানোটা খুব গর্বের বিষয় না। সামান্য রেসপেক্টটুকু অ্যাচিভ করতে পারেননি আমার কাছ থেকে। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত।"

কথাটা শুনে শাইনাকে একধাক্কায় দূরে সরিয়ে দিল তাজদার। তারপর শাইনা সামলে নেওয়ার আগেই গাড়ি ঘুরিয়ে নিল। দুর্দম গতিতে গাড়িটা ছুটছে রাস্তা ধরে। শাইনার দিকে আর একবারও তাকাল না তাজদার।

গাড়ি উঠোনে এসে থামলো। তাজদার শাইনাকে গাড়ি থেকে নেমে আসতে বললো। যেভাবে ছোটবেলায় বাড়ি থেকে বের করে দিত ঠিক একই ভঙ্গি। তুড়ি বাজিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল শাইনাদের বাড়িটা।

তারপর তৌসিফকে ফোন দিতে দিতে নিজের বাড়িতে চলে গেল সে গটগট পায়ে হেঁটে। শাইনা জানতো তার মেল ইগো হার্ট হলে সে আর তাদের বাড়িতে আসবে না। এই লোকটাকে পুরোটা না চিনলে কম চেনেনা সে। নিজের মনমতো না হলে উল্টো পথে হাঁটবে।

শাইনা তাদের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কলিং বেল বাজাতেই কিছুক্ষণ পর শাওন এসে দরজা খুলে দিল। শাইনাকে একা দেখে ঘুম জড়ানো চোখদুটো কিঞ্চিৎ বড় হয়ে গেল তার। শাইনার চোখমুখের অবস্থা এমন যে দেখে মনে হচ্ছে তার মাথায় কেউ হাত রাখলে সে ঝরঝর করে কাঁদবে।
কপালে কাছটায় চোখ পড়তেই শাওন বলল,

"কপালে কি হয়েছে? ফুলে গেছে কেন?"

শাইনা বলল,"গাড়িতে বাড়ি খেয়েছি।"

"তাজ ভাই।"

"নিজ বাড়িতে ফিরে গেছে। শ্বশুরবাড়িতে ঘুমানোর রুচি চলে গেছে।"

শাওনের কপাল আরও কুঁচকে গেল।

"ঝামেলা হয়েছে নাকি?"

"না।"

ওই বাড়িতে সম্ভবত কেউ জোরে জোরে কথাবার্তা বলছে। শাওন বাইরে এসে কান পাতলো। শাইনা নিজের ঘরে চলে গেল। শাহিদা বেগম উঠেছে মেয়ে আর জামাই এসেছে ভেবে। ওদের কিছু লাগবে কিনা জানার জন্য। কিন্তু শাইনাকে একা ফিরতে দেখে চক্ষু চড়কগাছ!

কৌতূহলে হেঁটে সামনে চলে এল। দরজা খোলা দেখে বাইরে বেরিয়ে এল। দেখলো শাওন আর তৌসিফ উঠোনের এককোণায় দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছে। শাহিদা বেগম বেরিয়ে এলেন,

"কি হয়েছে রে শাওন?"

শাওন বলল,"তেমন কিছু হয়নি।"

"তাহলে ও এল না কেন? দুজন তো ভালোই ভালোই বেরিয়েছিল।"

তৌসিফ বলল,"মনে হচ্ছে দুজনের মধ্যে তর্কতর্কি হয়েছে।"

ঘুমঘুম চোখে আফসার সাহেবও বেরিয়ে এল। ওই বাড়িতে বিস্তর তর্কতর্কি হচ্ছে। কার সাথে কে কথা কে বলছে বোঝা যাচ্ছে না।

শাহিদা বেগম বললেন,"আল্লাহ আবার কি ঝামেলা লেগে গেল কে জানে। আমার মেয়েটা সংসার করার আগেই সংসারটা ভাঙবে।"

তৌসিফ বলল,"চাচীমা আপনারা ঘরে চলে যান। কাল সকালে যা হবার হবে। টেনশন করিয়েন না।"

শাহিদা বেগম দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।

_____

তাজদার ঘরে এসে পাঞ্জাবি পাল্টে নিয়েছে। গায়ে একটা শার্ট ছড়িয়েছে। পকেটে একহাত রেখে অন্য হাতে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে জানালার বাইরে তাকালো। রাত অনেক হয়েছে। তার চওড়া কপালে অনেকগুলো ভাঁজ। একটু একটু সে অনুধাবন করতে পারছে বিয়েটা করা তার মস্তবড় ভুল হয়েছে। এখন সবটা তাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে। পরিবারও তার দিকেই আঙুল তুলবে। বিশেষ করে আব্বা। শুরুতেই বলবে, নিজের ত্যাড়ামির ফল। তোমাকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। ওই বাড়ির মেয়ে কেন আমাদের আনতে হবে? দেশে কি মেয়ে কম পড়েছে? বাপের বাড়ি কাছে হলে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ির মানুষকে ভয় পায় না। তাছাড়া সারাজীবন তার মা বাপ অন্যদের বাড়িতে খেটে এসেছে। ছোটলোকিপনা যায়নি।

তাজদার সিদ্দিকী ঘনঘন চুমুক দিল কফির মগে। অস্থিরতা কাটছেনা। তাকে অপছন্দ হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু হুট করে শাইনা মমতাজকে তার পছন্দ হয়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। আর এজন্যই শাইনা মমতাজ তাই এককাঠি উপরে থাকবেই। কিন্তু ভুল তো সে করে ফেলেছে। হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো ছবিগুলোতে তিতলির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে দেখে তার ডেটা সেন্টারে হাজার ইনস্ট্যান্স চালু হয়ে গেল। মনে হলো একটাই প্রাইমারি নোড, বাকি সব স্লেভ!

হার্টে অটো-স্কেলিং চালু হয়ে গিয়েছিল, সিপিইউ ইউসেজও হান্ড্রেড পার্সেন্ট যখন ও চাচার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে একবার তাকাল চোখ তুলে! আর এটাই কাল হয়ে দাঁড়াল! ভেবেছিল শাইনা মমতাজ ছোট একটা সিগন্যাল মাত্র। শেষে দেখা গেল একটা ডিডস অ্যাটাক! মারাত্মক ভুল হয়ে গিয়েছে। ইমোশনাল এসএলএতে সাইন করার আগে শর্তগুলো একটু ভালো করে পড়া উচিত ছিল! তাজদার সিদ্দিকীর দ্বারা এতবড় ভুল কি করে ঘটলো? যাকে ছোটবেলায় দূরছাই করতো, ঘৃণা হতো দেখলে তার প্রতি হুট করে এটেনশন যাবে এটা তাজদার সিদ্দিকীর ধারণারও বাইরে ছিল।

রওশনআরা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন।

"কি হয়েছে তাজদার? তুমি চলে এলে কেন? তোমার বাবা কেন চেঁচামেচি করছেন? বিয়ের এক সপ্তাহও যায়নি। তারমধ্যে এইসব কি শুরু করলে তোমরা?"

তাজদার মায়ের দিকে ফিরলো। পকেটে দুইহাত রেখে ঘরজুড়ে পায়চারি করতে করতে বলল,

"নুভার বিয়ের পাকাকথাটা সেরে ফেলো। আগামী মাসেই আমি ফ্লাইট ধরব।"

রওশনআরা হতভম্ব!

"কি বলছো! বিয়ে অব্দি তুমি থাকবেনা? শাইনার সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে?"

"সে আস্ত একটা ঝামেলা। নতুন করে ঝামেলা হবে কেন? জেনেশুনে যখন ঝামেলটিকে কাঁধে নিয়েছি তখন আমাকেই ঝেড়ে ফেলতে হবে।"

রওশনআরা বললেন,"তুমি রেগে আছ। শান্ত হও। আমাকে বলো কি হয়েছে। কারো কথা না শুনে বিয়ে করেছ। সেটা ভালো কথা। কিন্তু বিয়ে যখন হয়ে গিয়েছে তখন এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা তুমি। তোমার সাথে আরও একটা জীবন জড়িয়ে গেছে। ওর কথা তোমাকে ভাবতে হবে। ও যখন যেতে চাইছেনা তখন তোমারও উচিত তার কথাকে মূল্যায়ন করা। তাহলে সংসারের প্রতি তার মন বসবে। শুরু থেকেই এত তিক্ততা দেখলে সংসারের প্রতি ওর বিতৃষ্ণা তৈরি হবে।"

"ও এখানে থেকে করবেটা কি? পড়াশোনা মাইফুট! লাখো মানুষ ন্যাশনাল থেকে পাশ করে ঘরে বসে আছে। বিয়ে যখন করেছে তখন আমার সুবিধা অসুবিধার কথা তাকে চিন্তা করতে হবে। কিন্তু সে সেটা করছেনা। উল্টো আমি যেটা বলছি সে তার বিপরীতটাই করছে।"

রওশনআরা তার রাগের ধরণ দেখে বুঝতে পারে তাকে কিভাবে হার্ট করা হয়েছে। শাইনা নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছে যার কারণে তার মেজাজ তুঙ্গে উঠে গিয়েছে। আর এখন সে না শাইনামুখী হবে না পরিবারের সামনে নিজের ভুলটা স্বীকার করবে। তিনি মা। তাই যাকে পেটে ধরেছেন তাকে ভালোভাবেই চেনেন। রওশন আরা শুধু এটুকু বললেন,

"সম্পর্ক যদি ঠিক করতে চাও তাহলে বলব অসম্ভব শান্ত হয়ে যেতে হবে।"

"অলরেডি মাটির সাথে মিশে গিয়েছি। আর পসিবল না।"

"কি চাইছ?"

"যেটা বলেছি, আগামী মাসে আমার ফ্লাইট। ওই মেয়ে আমার কথা না শুনলে আমি তার সাথে কোনোপ্রকার সম্পর্ক রাখব না। ব্যস! কথাটা তার ফ্যামিলিকেও জানিয়ে দেব। এখনো চেনেনি আমাকে।"

রওশনআরা হতাশ হলেন। ছেলেটা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি শাইনা এখন পাশের বাড়ির মেয়ে নেই। তার স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। তার ভালোমন্দের কথা চিন্তা করতে শেখেনি সে। আর কোনোদিন শিখবে বলে মনে হয় না।

রওশনআরা তার ঘর থেকে বেরিয়ে এল।
তাজউদ্দীন সিদ্দিকী ঘরজুড়ে পায়চারি করছেন। রওশনআরা আসতেই বললেন,"বউকে রাজি করাতে না পেরে নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়েছে?"

"আপনি এভাবে চেঁচাচ্ছেন কেন?"

"চেঁচাব না? এত টাকাপয়সা খরচ করে বিয়ে করে এইসব তামাশা দেখাচ্ছে আমাদের। মানুষের কানে গেলে হাসাহাসি করবেনা?"

"শাইনা ভুল কিছু তো বলছেনা। আপনার ছেলে যে পরিমাণ গাদ্দার তাতে ওর সাথে একা অন্য একটা দেশে যাওয়ার সাহস কোনো মেয়েই করবেনা। বিপদে আপদে পড়লে সেখানে ও যাবে কার কাছে আপনার ছেলে তাকে সাপোর্ট না করলে?"

তাজউদ্দীন সিদ্দিকী বলল,"বউ নিয়ে যাক সেটা আমিও চাইনা, বউ নিয়ে চলে গেলে আর এমুখো হবেনা তোমার ছেলে। ওকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। কিন্তু ওই মেয়ে আজ ওকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিল কিভাবে? রাতবিরেতে কি হচ্ছে এইসব? তার স্বামী ঘাড়ত্যাড়া বলে তাকেও ঘাড়ত্যাড়া হতে হবে কেন?"

রওশনআরা বললেন,"আমি আর কিছু বলবো না। যা ইচ্ছে করুক। বিয়ে যখন নিজের ইচ্ছেতে করেছে তখন বউ নিয়ে যা ইচ্ছে করুক। মেয়েটা শান্তি পাবেনা এটা আমি বুঝে গিয়েছি। আপনার ছেলেকে ত্যাড়াব্যাড়া কিছু বলেছে তাই সোজা বাড়ি চলে এসেছে। এভাবে ঘর সংসার হয়? একজন আগুন হলে অপরজনকে পানি হতে হয়। নিজের ছেলেকে যখন কিছু বলতে পারছিনা তখন পরের মেয়েকেও কিছু বলতে পারব না আমি।"

_______________

শাওনকে নিয়ে ভর্তি হতে গিয়েছে শাইনা। রূপালী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে বের হতেই শাওন বলল,

"ফুচকা খাবি?"

শাইনা না করার মেয়ে না। ফুচকা, চটপটি তার অনেক প্রিয়। শাওন তাকে ফুচকার দোকানের সামনে নিয়ে গেল। শাওনের হাতে তার কাগজপত্র রেখে সে টকঝাল ফুচকা একে একে মুখে পুরতে লাগলো। নাকের মাথা লাল হয়ে এসেছে ঝালে। শাওন পানি এনে দিল। শাইনা পানি খেল। রাস্তার পাশে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ঝালে হা হু করছিল ঠিক তখুনি তার পাশ দিয়ে একটা বাইক ছুটে গেল। কাদা ছিটকে পড়লো তার বোরকায়। ছুটে চলা বাইকারের দিকে চেয়ে রইলো সে। তারপর শাওনের দিকে তাকিয়ে বলল,

"এদের কি বলা যায়?"

শাওন বলল,"ছাড়। মনে হয় মাল খেয়েছে। মেয়ে দেখলে শালাদের কুড়কুড়ানি বেড়ে যায়।"

বাড়ি ফিরতেই তাদের পাশ দিয়ে শাঁ করে একটা বাইক ছুটে গেল ওই বাড়ির উঠোনে। শাইনা আর শাওন একে অপরের দিকে তাকালো। কালো হেলমেটটি খুলে তাজদার সিদ্দিকী বাইক থেকে নামলো। শাওন বাইক পাগল। সে ছুটে গেল।

"তাজ ভাই এটা কখন কিনলে?"

শাইনার দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে তাজদার জবাব দিল,"তৌসিফের জন্য।"

"জানতাম না তো।"

"এতদিন তৌকিরের কাছে ছিল।"

তৌকির তার বড় ফুপুর ছেলে। শাওন বাইকটা দেখছিল ধরে ধরে। শাইনা তার বোরকার দিকে তাকালো। ইচ্ছে করে কাদা ছিটকে দিয়েছে।

তাজউদ্দীন সিদ্দিকীর গলা ভেসে এল,

"বাইকটা ভেতরে ঢুকিয়ে রাখো। সবাই এসে ধরবে।"

শাইনা হঠাৎ থমকে গেল। পা জোড়া থেমে গেল। ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো সে শাওনের দিকে। শাওন কথাটা শুনে আর দাঁড়াল না। সোজা চলে এল। শাইনার চোখজোড়া আচমকা ছলছল করে উঠলো। শাওন তাকে ডিঙিয়ে চলে গেল ঘরে। তার চেহারা দেখে শাইনার কেমন দমবন্ধ লাগলো।

-----

শাইনার যদিও দুইদিন থাকার ছিল বাপের বাড়িতে কিন্তু সেটা আর হলো না। তাজদার সিদ্দিকী ফোনে জানিয়েছে তাদের মেয়েকে যেন বিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিকেলে না পাঠালে আর পাঠানোর দরকার নেই।

আর মাসে একবার সে বাপের বাড়িতে আসতে পারবে। সবার এত মন পুড়লে তারা গিয়ে যেন দেখে আসে। শ্বশুরবাড়ি লন্ডন নয়। শাহিদা বেগম এখনো কথাগুলো ভুলতে পারছেনা। বাবাগো বাবা কি শক্ত শক্ত কথা ব্যাটার।

এডমিশন নিতে পেরে শাইনা দুপুরে শান্তির ঘুম দিয়েছে। ফুরফুরে মেজাজে নিজের ঘরদোর পরিষ্কার করলো সে ঘুম থেকে উঠে। শাহিদা বেগম বলল,"চলে যাবি এখন এসব করার কি দরকার? তোর আপারা করবে।"

শাইনা কথা শুনলো না। নিজের ঘর নিজে সাফ করে নিল। শাহিদা বেগম তার যাওয়ার সময় নাশতা, আর খাবার দাবারও দিয়েছে সবার জন্য। শাইনা মেজাজ শান্ত ছিল। শাহিদা বেগম তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বললেন,

"জামাই গরম হলে তখন তুই মুখের উপর কথা বলিস না। যে চুপ থাকে সেই জিতে যায়। তর্ক কোনো সমাধান নইরে মা।"

শাইনা বলল,"আমার যখন ইচ্ছা তখন আমি এই বাড়িতে আসব সেটা ওদের বলে দিও।"

"সমস্যা নেই আমি তোকে দেখতে চলে যাব।"

"আমি সবাইকে দেখার জন্য চলে আসব। তুমি ওই বাড়িতে যাবে না। শুধু তুমি না। কেউ যেন না যায় ওই বাড়িতে। আমার ইচ্ছে হলে আমি আসব।"

দাদীমা তাকে উঠোন অব্দি এগিয়ে দিল। ফিসফিস করে বলল,"ব্যাটা বউ ছাড়া থাকতে পারবেনা বলে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমন করতেছে। রাগ করিস না।"

"বউ ছাড়া এতবছর কিভাবে থেকেছে? তোমাদের মুখে যত ধরণের নাটকীয় কথাবার্তা!"

"যাওয়ার সময়ও এভাবে কথা বলবি নাকি?"

"লন্ডন তো যাচ্ছি না। আসি। ওই বাড়িতে যাবেনা ঘনঘন।"

দাদীমাকে জড়িয়ে ধরলো সে। তারপর গাড়িতে উঠে বসলো। আফসার সাহেব তাকে হেঁটে যেতে দিচ্ছে না। গাড়িটা পটিয়া থেকে ঘুরে আসবে এরূপ কথা ছিল কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর আদেশে ড্রাইভার পাঁচ মিনিটের মধ্যে অলিরহাঁট থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে তাদের উঠোনে এসে থামলো।

_____

শাইনা ফ্লোর মুছল। বিছানার চাদর, বালিশের কভার পাল্টাল। জানালার পর্দা পাল্টে নিল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা মুছে নিল। আসবাবপত্রের ধূলো ঝাড়লো। একটু ঝাড়ুও দেয়নি। কি আশ্চর্য! মনে হচ্ছে ইচ্ছে করে তার জন্য এত কাজ বাড়িয়ে রেখেছে।

তাজদার সিদ্দিকী দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। শাইনা নিজের কাজে ব্যস্ত। তবুও সে জানে ভদ্রলোকের অভদ্র, নির্লজ্জ চোখদুটো তার শরীরের বাঁকে বাঁকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। চেয়ারে বসে ঠোঁটের কাছে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে কপাল কুঁচকে। শাইনা বালতিতে রাখা বিছানার চাদর, বালিশের কভার সব নিয়ে যাচ্ছিল। তাজদার সিদ্দিকী তুড়ি বাজালো। শাইনা তার দিকে তাকালো। তাজদার আঙুলের ইশারায় ওয়াশিং মেশিনটা দেখিয়ে দিল।

তারপর নিজের কাবার্ড খুলে কিছু শার্ট, টিশার্ট আর প্যান্ট শাইনার হাতে ধরিয়ে দিল। শাইনা সেগুলো মাটিতে ফেলে দিল। নিজের কাদামাখা বোরকাটা এনে তাজদারের হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর একে একে সব শার্টগুলো তাজদারের হাতে তুলে দিয়ে বলল,

"আমি ওয়াশিং মেশিন ইউজ করতে জানিনা।"

বলেই চলে যাচ্ছিল তাজদার খপ করে তার বেণীটা ধরে ফেললো। শাইনা মাথার পেছনে হাত চাপলো। আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাজদার সিদ্দিকী শক্ত হাতে বিনুনিটা ধরে রেখেছে। শাইনা বলল,

"আমি বড়আম্মুকে ডাকছি।"

"এতে আমি ভয় পাচ্ছি।"

"আপনার বোধহয় আমার কটু কথা না শুনলে ভাত হজম হয় না। নইলে সারাক্ষণ নাটক করার তালে থাকেন কেন?"

"তোমার কথার ধরণ খুব রুক্ষ শাইনা মমতাজ।"

বলেই বেণীটা টেনে শাইনাকে নিজের কাছে নিয়ে এল। সামনে ঘুরিয়ে এনে বেণীটা শাইনার গলায় পেঁচিয়ে বলল,

"সবসময় এভাবে কথা বললে তোমার চুল দিয়ে তোমাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেব।"

শাইনার হাঁসফাঁস করছে। চুলে টান পড়ছে। তাজদার তার বেণী ছেড়ে দিল।

তারপর হাতের তালুর দিকে তাকিয়ে বলল,"হাত ধুতে হবে। তেল চিটচিটে চুল!"

শাইনা বেণীটা পেছনে ঠেলে শাড়ির আঁচলে কপাল মুছতে মুছতে বলল,"সারাক্ষণ জাপটে ধরার তালে থাকে আবার সে ধুচ্ছে হাত!"

তাজদার বলল,"লিসেন শাইনা মমতাজ, তোমাকে ছুঁলে আমাকে গোসল করতে হয়। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছ? তারমানে তোমাকে ছুঁলেই আমি অপবিত্র হয়ে যাই।"

শাইনা তার কথা কানে না তুলে বিছানায় শুয়ে পড়লো। তাজদার ও। শাইনা তার দিকে তাকিয়ে বলল,"আজব! আমি এমনি শুয়েছি। দরজা খোলা রেখে এসবের মানে কি? এখন কি ঘুমানোর সময়? মাগরিবের আজান দিবে কিছুক্ষণ পর।"

তাজদার মাথার নীচে হাত রেখে শুয়ে বলল,"আজানের অপেক্ষায়। উঠে যাব। প্যানপ্যান করলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেব।"

শাইনা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল তাজদার তাকে টেনে এনে মুখ চেপে ধরবে তখুনি তিতলি বলল,"শাইনা আম্মু তোমাকে..

সে ঘরের চৌকাঠে পা দিতে না দিতেই উল্টোদিকে ভোঁ দৌড়। তৌসিফের সাথে প্রবল ধাক্কা। তৌসিফ গর্জে উঠে বলল,

"বাড়িতে এইসব কানা ল্যাংড়া নিয়ে তো বহুত জ্বালায় আছি।"

তিতলি জিভে কামড় দিয়ে বলল,"ওইদিকে যেওনা।"

"কেন ওইদিকে কি?"

তিতলি তাকে ঠেলে দিল। তৌসিফ একসাথে অনেকদূর চলে গেল পিছু হেঁটে। বলল,

"মাথা গেছে নাকি?"

তিতলি তাকে বোঝাতে না পেরে পালিয়ে গেল। ধুর ধুর!

________

তাসনুভার বিয়ের কথাবার্তা পাকাপোক্ত করার কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তাজদারকে সবাই বোঝাচ্ছে তার বিয়ের পর ফেরার জন্য। এভাবে চলে গেলে নিজেরই লস। তাজদার হ্যাঁ না কিছু বলেনি।

শাইনা রান্নাঘরের দিকে যায়নি। একেবারে কাল সকালে যাবে। ঘর থেকেও বের হয়নি সে। তিতলি আর বাকিরা এসে তাকে দেখে গিয়েছে। রাতের খাবার খেতে ডেকেছে। শাইনা খাবেনা বলে দিয়েছে। পেট ব্যাথা করছিল সকাল থেকে। খাওয়াদাওয়া ভালো লাগছেনা। মাছ মাংসের ভাত তো একদম নয়।

রওশনআরা এসে বলল,"না খেয়ে থাকা ভালো নয়। দুটো করে খেয়ে যাও।"

শাইনা জানে সে হাজার বললেও শুনবে না। তাই খেতে গিয়েছে। তখন তাসনুভার বিয়ে বিষয়ক কথাবার্তা কানে এল। তার শ্বশুরবাড়ির মানুষ স্বপরিবার আমেরিকায় থাকে। পুরোনো বাড়ি ঢাকার গাজীপুরে। বেশ টাকাপয়সা আছে। ছেলেও দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। তার ভাই তার বিয়েতে থাকবে না শুনে সে মন খারাপ করেছে। তাজদার এখনো কোনো আশা দেয়নি কাউকে।

তিতলি শাইনার সামনে আসছেনা। শাইনারও কেমন অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু তাজদার সিদ্দিকীর বিন্দুমাত্র লজ্জাশরম নেই। তিতলি তিতলি ডেকে তাকে দিয়ে এই কাজ ওই কাজ করাচ্ছে।

রওশনআরা তাসনুভাকে বোঝাচ্ছে ও থাকতে না চাইলে কেউ ধরে রাখতে পারবে না ওকে। তাসনুভা রাগের একটা অংশ শাইনাকে ঘিরে। সে ইনিয়েবিনিয়ে বিষয়টাকে শাইনার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শাইনা চুপচাপ খাচ্ছে। তাসনুভা এবার তাকে সরাসরি বলল,

"শাইনা তুমি দায়ী এটার জন্য। ইউ'ল হ্যাভু টু বি দ্য ওয়ান টু কনভিন্স ভাইয়া।"

শাইনা রওশনআরার দিকে তাকালো। তারপর তাসনুভাকে বলল,"আমি বলে দেখব।"

"কথাটা দায়সারাভাবে বলেছ ঠিক আছে। কিন্তু কাজটা ভালোভাবে করবে। কারণ তোমার জন্যই ভাইয়া এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার ডিসিশনটা নিয়েছে। ভাইয়া যদি বিয়েতে না থাকে তাহলে তুমিও থাকতে পারবেনা। নো মোর ডিসকাশন। দ্যাটস ফাইনাল।"

শাইনা বলল,"আমি বলব। এবার রাজী না হলে সেখানে আমার কি করার আছে?"

তাসনুভা চলে যাচ্ছিল। তার কথায় থেমে গিয়ে বলল,"কিছু করার না থাকলে আমার বিয়ের দুই সপ্তাহ আগে তুমি তোমার বাপের বাড়িতে চলে যাবে।"

শাইনা তার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর রওশনআরার দিকে তাকালো। তৌসিফের মা, দাদীমা সবাই কথাটা শুনেছে কিন্তু টুঁ শব্দটা করলো না কেউ।

শাইনা ঘরে এসে তাজদারকে ফোন করলো।

"ঘরে আসুন।"

তাজদার কোনো জবাব দেয়নি। কিছুক্ষণ পর তাকে ঘরে দেখা গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,"কোনো সমস্যা?"

শাইনা বলল,

"সবসময় আমাকে বিপদে ফেলার পায়তারা করেন তাই না? এমন এমন কাজ করবেন যাতে সব দেষ আমার দিকে তেড়ে আসে।"

তাজদার বলল,"হোয়াট!"

"আপনি আপনার বোনের বিয়ের আগে কোথাও যাবেন না। আর যদি যান তার দুই সপ্তাহ আগে আমি আমার বাপের বাড়ি চলে যাব।"

তাজদার বলল,"তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তোমার সবকথা শুনতে আমি বাধ্য।"

"যে নিজের বোনের আবদার রাখতে পারেনা সে স্ত্রীর কথার মর্যাদা দিতেও জানবেনা সেটা আমি জানি। তারপরও বললাম। এবার সিদ্ধান্ত আপনার।"

বলেই শাইনা বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লো।

তাজদার সিদ্দিকী বলল,"আমি তোমাকে এত শান্তিতে রেখে দেশ ছাড়ব এমনটা ভেবো না।"

"আমার সারাজীবন অশান্তিতে কাটবে সেটা আমি জানি। প্রস্তুত আছি।"

তাজদার তার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে শাইনার পাশে শুয়ে পড়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,,

"তোমাকে অশান্তিতে থাকতে দেখলে আমার মজা লাগে শাইনা মমতাজ।"

শাইনা বলল,"আমার ফেসবুক আইডি ফেরত চাই। কথাটা বারবার বলবো না।"

"পায়ে ধরলেও দেব না।"

"আমার চাই মানে চাই।"

"চাইতে থাকো।"

শাইনা আচমকা তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিল। তাজদার হতভম্ব! শাইনা বিছানা থেকে নেমে কাঁপা হাতে তার আইডিতে লগইন করলো। তারপর ডিলিট করতে যাচ্ছিল। তাজদার ছুটে এল। শাইনা সরে গেল। তাজদার শাঁসিয়ে বলল,

"লাস্ট ওয়ার্নিং শাইনা মমতাজ। আমি কি করতে পারি তোমার ধারণাও নেই। ফোনটা দাও ননসেন্স!"

পরে মনে পড়লো পাসওয়ার্ড না দিলে ডিলিট করা যাবে না। তাই সে শান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। শাইনা ফোনটা নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পাসওয়ার্ড চাচ্ছে। তাজদার বালিশে মাথা এলিয়ে দিয়ে হাসছে। শাইনা এসে ফোনটা বালিশের উপর ছুঁড়ে ফেললো। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। তাজদার সিদ্দিকী হাসছে নিঃশব্দে! শাইনা চোখ লাল করে একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। তাজদারের ঠোঁটের কোণায় তীর্যক হাসি। শাইনা বলল,

"আপনাকে আমি কোনোদিন মাফ করবো না।"

তাজদার তাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল,"মাফ চাইলে তবেই তো মাফ করবে।"

শাইনা আবারও দূরে চলে গেল। তাজদার ডিমলাইটটাও নিভিয়ে দিল। ওটা নিভিয়ে দিলে শাইনা মমতাজ তাকে দেখে না। তাই কাছে যেতে বাঁধা আসে না।

চলমান.....

 #সংসার #শেষ_পর্বআপনি কে? হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে এখানে ঢুকলেন কেন? বাঘাটে গলায় প্রশ্ন করলেন রমেশ চ্যাটার্জি| প্রশ্নের স...
18/07/2025

#সংসার

#শেষ_পর্ব

আপনি কে? হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে এখানে ঢুকলেন কেন? বাঘাটে গলায় প্রশ্ন করলেন রমেশ চ্যাটার্জি| প্রশ্নের সুরে জেরার ছাপ সুস্পষ্ট| পরক্ষণেই আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে সামান্য থেমে গেলেন, দেখে তো আপনাকে বেশ চেনা চেনা লাগছে| আগে কোথায় দেখেছি বলুন দেখি! অবশ্য পুলিশের মেমোরি খুব একটা বিট্রে করে না, আপনি বলতে না চাইলেও একসময় আপনার নাম, ধাম, পরিচয় ঠিকই বের করে ফেলব|

দেখলে তো ফেলবেন, বিরক্ত মুখে উত্তর দিল সুজয়, কস্মিনকালেও আপনাকে আমি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না| দয়া করে বলুন দেখি আমার বোনটি কোথায়? তাকে এখানে সভার মাঝে দেখতে পাচ্ছি না কেন? আগরওয়াল পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই তো দেখছি ড্রয়িংরুমে উপস্থিত রয়েছেন|

আমি ঠিক আছি দাদা, তুই আবার সবকিছু ছেড়ে এখানে আসতে গেলি কেন?

পায়েলকে সশরীরে দেখে সুজয় খানিক নিশ্চিন্ত হল, তুই তাহলে একদম ঠিক আছিস| তাহলে এসব কি? তোর শ্বশুরবাড়িতে পুলিশ কেন?

পরে আমি তোকে সব বুঝিয়ে বলব| কিন্তু তুই এই সময় এখানে আসতে গেলি কেন? দেখছিস তো পরিস্থিতি আমাদের অনুকূলে নয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে আমিই ও বাড়ি যেতাম|

সুজয়ের আকস্মিক আগমনে সবার নজর মোহিনী দেবীর দিক থেকে খানিকক্ষণের জন্য সরে গেছিল| হঠাৎ কণিষ্কের চোখ সেদিকে পড়তেই আ র্ত না দের সুরে সে দাদি বলে চেঁচিয়ে উঠল| ইজিচেয়ারে বসা মোহিনী দেবীর মাথাটা কখন যেন একপাশে হেলে গেছে| হাতে পরা একটা উজ্জ্বল হীরের আংটি থেকে সমস্ত ঘরে মায়াবী দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে| এই হীরের আংটিটা নতুন, রমেশ চ্যাটার্জি এসেই লক্ষ্য করেছিলেন কিন্তু তাৎপর্য বুঝতে পারেন নি| তাড়াতাড়ি পালস পরীক্ষা করলেন, তারপর ধীরে ধীরে হাতটা ছেড়ে দিয়ে হতাশ ভঙ্গিতে সোফায় এসে বসলেন| মোহিনী দেবীর হাতটা এলিয়ে পড়ল ঠিক আগের মতো|

পুলিশের ডাক্তার এসে মৃ ত দে হ পরীক্ষা করলেন| কোন ফাঁকে যে মোহিনী দেবী বি ষ পা ন করেছেন এদিক পানে ব্যস্ত থাকায় কেউ ঠিক বুঝতেই পারে নি| রমেশ চ্যাটার্জি বুঝতে পারছিলেন বুদ্ধিমতী মহিলা সুজয় আসার সুযোগটাই নিয়েছিলেন| ওই দুষ্প্রাপ্য হীরের আংটিটি আজ তিনি পরেছিলেন একটাই কারণে, নিজেকে মে রে নিজেকে বাঁচাতে| বাইরে থেকে আংটিটা এক অপূর্ব সৌন্দর্যের প্রতীক হলেও আসলে ওটিই বি ষা ধার| কায়দা করে হীরেটা সামান্য সরালেই... পুরনো দিনের মানুষ জীবনের শেষ করে দেওয়ার মুহূর্তেও পুরনো পন্থাই বেছে নিলেন| একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ালেন রমেশ চ্যাটার্জি, আপনমনেই বিড়বিড় করলেন, এই বোধহয় ভাল হল| শেষপর্যন্ত সম্মান নিয়েই চ লে গেলেন মিসেস আগরওয়াল| কা রা বাস আর তাঁকে করতে হল‌ না| আদলাতের নয়, দিনশেষে এ বি চার ওপরওয়ালার|

কমিশনারের ফোন আসায় প্রাথমিকভাবে সব ঘটনা বিবৃত করে রমেশ চ্যাটার্জি বলে উঠলেন, এই কে সের সমাপ্তি এখানেই স্যার| সমাপ্তি বি য়ো গা ন্তক| পারিবারিক সম্মান রক্ষার নামে দু দুটো তাজা প্রা ণ অ কা লে এই পৃথিবীর বুক থেকে হা রি য়ে গেল, বলা ভাল হা রি য়ে যেতে বাধ্য করা হল, এই বোধহয় কে সের সব চাইতে বড় হতাশার জায়গা|

আপনি চিন্তা করবেন না স্যার, কোনকিছুই মিডিয়ার কাছে যাতে না পৌঁছায় সে খেয়াল আমরা রাখব| পোস্টমর্টেমের পর উপযুক্ত মর্যাদায় সৎকারের ব্যবস্থা অবশ্যই করা হবে| মোহিনী দেবী ব্যক্তিগত জীবনে যাই করুন না কেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, সেই নক্ষত্রের সম্মান অক্ষুণ্ণ থাকবে|

সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল কণিষ্ক, উপযুক্ত মর্যাদায় দাদির সৎ কা রের ব্যবস্থা আমি করব, আগরওয়াল পরিবারের ভাবী উত্তরাধিকারী হিসেবে| দাদি হয়ত পরিস্থিতির চাপে পড়ে অ ন্যায় করতে বাধ্য হয়েছিল তা বলে এই কঠোর শা স্তি কি তাঁর প্রাপ্য ছিল? বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া এই প্রশ্নের উত্তর কণিষ্ক পায় নি সেদিন| আদৌ কোনদিন পাবে কি?

সবার অজান্তে সেদিন গভীর রাতে দাদির ঘরে ঢুকেছিল পায়েল| ঢুকেছিল ক্ষমা চাইতে| এমন বি য়ো গা ন্তক পরিণতির কথা বোধকরি বুঝি সে কল্পনা করে নি| সামনেই রাখা ছিল চন্দন কাঠের বাক্সে তার নামের লেবেল সাঁটা| ভেতরের চিঠিটিতেও তারই নাম, তোমার আবির্ভাবে উঠেছিল ঝড়, মনে মনে বুঝেছিলাম আমার দিন ফুরালো| তবু বাঁধন দিয়েছি, আটকে রাখার চেষ্টা করেছি একবার, বারবার| কিন্তু স্রোতের গতি কি স্তব্ধ করা যায়! সে বহমান, সামনে যে পড়ে তাকেই খড়কুটোর মতো উড়ে যেতে হয়| আগরওয়ালদের উত্তরাধিকার তোমার হাতেই দিয়ে গেলাম| পারলে তুমিই পারবে| আগলে রেখো সবাইকে| নতুন শুরু জন্য শেষের পথে অগ্ৰসর হতে হয়| সেই পথেই চললুম আমি| আমার হার আর তোমার জিতের মধ্যে দিয়ে আগামীর পথ চলা শুরু হল| ভাল থেকো|

গোপনে সেই চিঠি দেরাজে রেখে দিয়েছে পায়েল| যখনই দুর্বল মনে হয় তার, তখনই সেই চিঠি খুলে পড়ে| নতুন শক্তি নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজে| আগরওয়ালদের ব্যবসার খানিক দায়িত্ব আজ তার শক্তপোক্ত কাঁধে নিয়েছে সে| পরিবার ছেড়ে যাওয়া হয় নি পায়েলের সময়ের দাবীতে সে হয়ে উঠেছে আগরওয়াল পরিবারেরই একজন|

অনেক বদলে গেছে কণিষ্ক| সে বুঝেছে হালবিহীন নৌকায় হাল ধরতে পায়েলকে তার‌ প্রয়োজন| আচার ব্যবহারেও এসেছে পরিবর্তন| পায়েল সহ আগরওয়াল বাড়ির বধূরা এখন অনেকটাই স্বাধীনতা ভোগ করে| রান্নাঘরের চার দেওয়ালে তাদের জীবন আটকে নেই| এই সাফল্য ব্যর্থতার মাঝেই কখনো কখনো তার মনে পড়ে যায় ছোটির কথা| কত য ন্ত্রণা, কত ক ষ্ট, কত হা হা কার বুকে নিয়ে সে শয্যা পেতেছিল মাটির নীচে!

বহুদিন পর আজ পায়েল এসেছে বাড়িতে| কণিষ্কও| ধীরে ধীরে নিজেদের সামলে নিচ্ছে আগরওয়াল পরিবার| কণিষ্কের কথায় ফিরছে পুরনো‌ আত্মবিশ্বাসের ছাপ|

পরমাও যেন ধীরে ধীরে বুঝতে পারছেন সমরেশকে| হয়ত পুরোপুরি ক্ষমা করতে এখনো খানিক সময় লাগবে তবু তিনি আর আলাদা থাকার কথা ভাবছেন না| নানা ঘা ত প্র তি ঘা তের মধ্যে দিয়ে তিনি বুঝেছেন তাঁকে ছাড়া সমরেশ বড় অ স হা য়| অ সহা য়তা জীবনের অভিশাপ| একদিন হলেও তো ভালোবেসেছিলেন সমরেশকে, এই বৃদ্ধ বয়সে পৌঁছে তাঁকে অ ভি শ প্ত জীবন উপহার দিতে তিনি চান না|

নরম গলায় অপু বলল, মা আমাদের জীবনের গতিপথে নানা বাঁক, নানা বাঁধা... তবু তো আমরা ল ড়া ই ছাড়ি না| তবে তুমিই বা মনখারাপের বিষণ্ণতায় দিনাতিপাত করবে কেন? আড়ালে আমি দেখেছি তোমায় নতুন হারমোনিয়ামে হাত বুলিয়ে চোখের জল ফেলতে| আজ তবে একটা সুরবাহারের জাদু ছড়িয়েই দাও| তোমার নাতি কিংবা নাতনি আসতে চলেছে যে, ঠাম্মির এমন অসাধারণ গলা থাকতে সে অন্য কোন গুরুর কাছে নাড়া বেঁধে সুর সাধনা করবে কেন?

এক গাল হেসে অর্ক বাবু বলে উঠলেন, বেয়ান আজ কিন্তু সবার মৌন সম্মতি রয়েছে| আজ আর না বললে শুনছি না| ঘরের বাতাস বেয়ে আকাশে ছড়িয়ে পড়ুক সুরের ঐন্দ্রজালিকা| আপনার কন্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হোক চরাচর|

এতদিন বাদে অ ভি শা প মুক্ত গান্ধর্বীর মতো হারমোনিয়াম টেনে বসলেন পরমা| সুর দেবীর বন্দনা করে তার গলায় উচ্চারিত হল, " এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়.... "

মুক্তি.... মুক্তির খোঁজেই তো মানুষ থেকে মানবের পথে, উত্তরণের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হয়... এ যাত্রা চিরকালীন| নশ্বর দেহ থেকে অনন্তের পথ ধরে এগিয়ে চলা....

( সমাপ্ত )

©️ Monkemoner dakbakso - Anindita

তাজমহল #পর্ব_২১প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরীশাইনা বোতামগুলো টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে। তাজদার ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বোতামগুলো দেখ...
17/07/2025

তাজমহল
#পর্ব_২১
প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

শাইনা বোতামগুলো টেবিলের উপর রেখে দিয়েছে। তাজদার ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বোতামগুলো দেখলো। শাইনা পিঠের নিচে বালিশ রেখে শুয়ে প্রিমা ফারনাজ চৌধুরীর লেখা একটা উপন্যাস পড়ছে। উপন্যাসের নাম ”প্রিয় বেগম”। এটি তার পছন্দের উপন্যাস। তাজদার বোতামগুলো তুলে নিতে নিতে বলল,

"রেখে দিলাম। বোতামগুলো তুমিই একদিন সেলাই করে দেবে। আমি সেলাই করিয়ে ছাড়ব।"

শাইনা তার দিকে তাকালো। আবারও বইয়ের পাতায় চোখ রেখে বলল,"আমাদের বাড়িতে যেতে বলা হয়েছে।"

"যাব না।"

শাইনা বলল,"আমি ঠিক সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার দরকার নেই।"

তাজদার তার দিকে খেপাটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,"ডিজগাস্টিং!"

"ডিজগাস্টিংটাকেই কেন বিয়ে করতে হলো? আর মেয়ে ছিল না এই দেশে?"

"এরকম বজ্জাত হবে জানলে করতাম না। দেখতে তো ভালো মেয়ে মনে হয়।

"আপনাকেও দেখতে জেন্টলম্যান মনে হয়।"

তাজদার সিদ্দিকী বেশ ভাব নিয়ে বলল,"আমি তো সেটাই।"

"জি না। আস্ত একটা হনুমান।"

তাজদার চোখ সরু করে তাকালো তার দিকে। সে দেখতে হনুমানের মতো? শাইনা বেশ মজা পাচ্ছে। মনে হচ্ছে তার বহুদিনের আক্রোশ মিটছে একটু একটু করে। তাজদার সিদ্দিকী যে দেখতে হনুমানের মতোই সেটা সে বহুবছর পর মুখফুটে বলতে পেরেছে। তাজদার বলল,

"তুমি দেখতে কিরকম ছিলে সেটা এক্সপ্লেইন করব?"

শাইনা তৎক্ষণাৎ তার দিকে ঘুরে তাকাল। তাজদারের ঠোঁটের কোণে সেই চিরচেনা, তীর্যক হাসিটা যেন দাঁত কিঁচিয়ে জ্বলছে।

শাইনা তাকে অবাক করে দিয়ে বাঁকা হেসে বলল,

"আপনি কেমন ছিলেন সেটা আমি এক্সপ্লেইন করব? আপনি এখানে দাঁড়াতে পারবেন?"

তাজদার গলায় টানটান আত্মবিশ্বাস,
"তাজদার সিদ্দিকীর শিরদাঁড়া এত নরম ভেবেছ?"

শাইনা একটুখানি অবাক হয়ে তাকাল। তারপর ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,"আপনার শিরদাঁড়াও আছে? জানতাম না তো। বেশ, দাঁড়িয়ে থাকুন এভাবে শিরদাঁড়া সোজা করে। এটাও মাথায় রাখুন আপনার পায়ের কাছে এসে বসার মতো মেয়েও আমি নই।"

তাজদার ঠান্ডা গলায় বলল,
"তুমি আমাকে এখনো ঠিকমতো চিনতে পারোনি শাইনা মমতাজ।"

শাইনা তার সামনে এসে দাঁড়ালো। বলল,

"আপনাকে আমও চিনতেও চাইনা। যতটুকু চিনেছি ততটুকু ভুলতে পারলেই এনাফ।"

বলেই সে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ থেমে গেল। তাজদার তাকাতেই সে জিজ্ঞেস করলো,

"আপনাকে চেনা এখনো বাকি আছে বলছেন? মানে আপনি হুট করে আমার চোখে ভালো হয়ে যাবেন? আর আমি সেটা বিশ্বাস করবো? সত্যি? তাহলে তো বেশ ভালো। তবে একটা অনুরোধ দয়া করে নিজেকে হাসির পাত্র বানাবেন না। মানে আপনি যদি এখন আপনার সামনে বসে আমাকে প্রেম নিবেদন করেন বিষয়টা খুব হাস্যকর দেখাবে। তাজদার সিদ্দিকীর সাথে এটা যায় না। আপনাকে আমি অন্যভাবে চিনে এসেছি তাতেই আমার প্রাণ যায় অবস্থা। দয়া করে আর এমন কিছু দেখাতে যাবেন না যাতে হাসতে গিয়ে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে। আপনি চিরকাল শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুন। সামনের জনকে দেখার জন্য চোখ নিচে নামানোর দরকার নেই। কারণ আপনার সাথে ওটা যাবে না।"

তাজদার ভেজা শার্টটা তার মুখের ঝাড়া মারলো। শাইনা পিছিয়ে গেল। মুখের উপর পড়া পানিগুলো মুছে নিতে নিতো তাকাল। তাজদার তার গালে দুই আঙুল চেপে চিমটি কেটে বলল,"তোমার দিকে তাকানোর চোখ নিচে নামাতে হচ্ছে। কারণ তুমি আমার চেয়ে খাটো।"

বলেই সে বেরিয়ে গেল। শাইনা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কথায় কথায় গায়ে হাত দেয়। এত বড় বেয়াদব।

__________

বিকেলের দিকে শাইনা তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল। এক উঠোনে দাঁড়ালে আরেক উঠোন দেখা যায়। তাই রওশনআরা বললেন গাড়িটা পটিয়া থেকে ঘুরিয়ে আনতে। সবাই হাসছিল ব্যাপারটা দেখে।

শাইনা গাড়িতে বসতে বসতে তাজদার সিদ্দিকীর দিকে তাকালো। তাজদার পেছনে হাত ভাঁজ করে রওশনআরার পেছনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা চিবোচ্ছিল।

গাড়ির ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে গাড়ির দরজার পাশে এসে থামল। মাথা নামিয়ে শাইনার দিকে তাকিয়ে আদেশের সুরে বলল,

"শাইনা মমতাজ কথাটা দ্বিতীয় বার যেন মনে করিয়ে দিতে না হয়। বারবার আমি এককথা বলতে পারব না।"

ড্রাইভার আছে তাই শাইনা মৃদুস্বরে স্বরে বলল,"আমি এডমিশন নেব। এটা আমার শেষ কথা।"

তাজদারের কপাল কুঁচকে উঠল। রাগ জমে থাকল চোখের ভাঁজে। সেটা শাইনার নজর এড়ায়নি। ঠাণ্ডা গলায় বলল,

"এই বাড়িতে ফিরব কি না, তা নির্ভর করবে দুই পরিবারের সম্মতির উপর। আমি তখনই ফিরব যখন নিশ্চিত হব আমার পড়াশোনায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।"

তাজদারের মুখের পেশি শক্ত হয়ে উঠল। চোখের কোণে জমে উঠল চাপা হিংস্রতা। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,"পড়াশোনার গুলি মার। কথা না শুনলে এই বাড়িতে ফেরার দরকার নেই। পড়াশোনা করে তুমি করবেটা কি?"

শাইনা শক্ত হয়ে বসে রইলো। কথা বলার রুচি চলে গেছে তার। রওশনআরা এসে তাজদারের পেছনে দাঁড়াল। আস্তে করে বলল,

"এখন ওর যাওয়ার সময়। কথাবার্তা পরে বলা যাবে।"

তাজদার একবারও পেছনে না তাকিয়ে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল সেখান থেকে। শাইনা তার যাওয়ার পথে চেয়ে রইলো। তারপর রওশনআরার দিকে তাকাল। রওশনআরা এসে মাথায় হাত রেখে বলল,

"ওর কথা কানে নেওয়ার দরকার নেই। সব কথা কানে নিলে পাগল হয়ে যেতে হবে।"

________

গাড়িটা পটিয়া থেকে ঘুরে এসে শাইনাদের উঠোনের সামনে থামলো। দাদীমা উঠোনে নেমে এলেন। শাইনা গাড়ি থেকে নামলো। কালো বোরকা আর সোনালী রঙের একটা হিজাব পরেছে সে। নাকের মাথায় জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণের নাকফুল। বাচ্চা, বুড়ো সবাই এসে তাকে ঘিরে ধরলো। শাইনা সোজা ঘরে চলে গেল। সবাই বলাবলি করলো,"কাউকে সালামটুকু করলো না মেয়েটা।"

শাহিদা বেগম সবাইকে চুপ করিয়ে দিল,

"আহা দোষ ধরো না তো আর।"

ঘরে ঢুকতেই ভাবি, আপা সবাই এগিয়ে এল তাকে দেখে। হাসিমুখে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিল কেমন টেমন আছে। শাইনা কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা ঘরে চলে গেল। সবাই হকচকিয়ে গেছে। ওই বাড়িতে কিছু হলো নাকি?

শাইনা নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে শাড়িটাড়ি ছুঁড়ে ফেলে সালোয়ার কামিজ পরে নিয়ে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিল।

তারপর নিজের বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো। কি শান্তি নিজের ঘরটায়! কতক্ষণ ঘুমিয়েছে নিজেরও খেয়াল নেই। মনে হচ্ছিল সে কতদিন পর শান্তির ঘুম দিয়েছে।

তাকে কেউ বিরক্তও করেনি।

ঘুম থেকে উঠে রান্নাঘরে যাওয়ামাত্রই পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখলো। রান্নাঘরে খাবারের আয়োজন নতুন জামাইয়ের জন্য। শাহিদা বেগম, সাবিনা, শারমিলা ভারী ব্যস্ত। ওই বাড়ি থেকে ভাত, মাংস পাঠানো হয়েছে। সেগুলো প্রতিবেশীদের বিলি করে এসেছে শাওন।

সবাই তাকে দেখে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা থামিয়ে দিল। শাহিদা বেগম তাকে দেখে বলল,"মুখটা শুকিয়ে গেছে। কিছু খাবি?"

"ছোট ভাইয়া কই?"

"কোথায় গেছে কে জানে। ও সারাদিন বাড়িতে থাকে?"

সাবিনা বলল,"শাইনা এইমাত্র নুডলস করলাম। দেব একটু?"

শাইনা বলল,"গরুর গোস্ত দিলে খাব না। এলার্জি বেড়ে গেছে আমার।"

"মুরগীর। খেতে পারবে।"

"তাহলে অল্প করে দাও।"

শাহিদা বেগম বলল,"এলার্জির ঔষধ আছে? না থাকলে তোর আব্বাকে স্লিপটা দিয়ে দিস। নিয়ে আসবে।"

শাইনা জবাবে কিছু বললো না। সাবিনা তাকে বাটিতে করে নুডলস দিল। শাইনা টেবিলে গিয়ে বসলো। মাথায় কাপড় টেনে চামচে করে অল্প করে নুডলস মুখে তুলে রান্নাঘরের চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো রান্নার আয়োজন দেখলো। প্রশ্ন করলো,

"কবুতর কার জন্য আনিয়েছে?"

শাহিদা বেগম অবাক হয়ে বললেন,"কেন তাজদারের জন্য। নতুন জামাই না?"

"মাছ কি কি এনেছ?"

"রুই, চিংড়ি, তেলাপিয়া।"

"দুই রকম দিলে মানসম্মান যাবে? কবুতর না দিলে তোমাদের বদনাম হবে? এত ঢং করার কি আছে? এতগুলো খাবার একসাথে খাওয়া যায়? সবকিছুতে তোমাদের বাড়াবাড়ি। না খেলে তখন আমার কানের কাছে প্যাঁচাল পাড়বেনা কেউ। "

শাহিদা বেগমের মুখ চুপসে গেছে। ঠিকই তো। এত খাবার না খেলে তখন?

শারমিলা বলল,"আম্মা ওর কথা কানে নিওনা তো। না খেলে না খাক। দেখার জন্য হলেও তো দিতে হয় এসব। ও কি জানে এসবের? বন্ধু বান্ধব নিয়ে আসবে। সব না দিলে কেমন দেখায়?"

_________

রাত তখন দশটা পেরিয়ে গেছে।
তাজদার আসবে কি আসবে না এই অনিশ্চয়তায় সবাই অস্থির হয়ে উঠেছে। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে সবার ধৈর্যও ক্ষয়ে যাচ্ছে। কে যেন পাশ থেকে বলল, "আসবেনা বোধহয়। এলে এতক্ষণে চলে আসতো।"

শাহিদা বেগম কপাল চাপড়ে বললেন,
"তাহলে এত আয়োজন কেন করলাম ?"

শারমিলা বিরক্ত গলায় বলল,
"নিয়মকানুন মানতে হবে না? এ কেমন লোক!"

দাদীমা বললেন,
"ব্যাটার ইচ্ছে হলে তবেই আসবে।"

শাবরিন মুখ কুঁচকে বলল,
"আসবে না সেটা আগে বলে দেবেনা ওরা? এত আয়োজন করিয়ে এখন না আসার মানেটা কি?"

সবাই কথা বলছে, শুধু শাইনা চুপচাপ।
তার নীরবতা চোখে পড়তেই শাহিদা বেগম তাকে উদ্দেশ করে বললেন,
"তুই একবার ফোন করে দেখ না। হয়তো ভুলে গেছে বা ব্যস্ত…"

শাইনা শান্ত কণ্ঠে বলল,
"যার ইচ্ছে নেই তাকে ফোন দিয়েও কিছু হবে না। তোমরা আগে নিশ্চিত হওনি কেন?"

শাহিদা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন।
শারমিলা নিচু গলায় মুখের ভেতর কী যেন বিড়বিড় করে বলছে। স্পষ্ট নয়, কিন্তু বিরক্তি টের পাওয়া যাচ্ছে।

ওই বাড়িতে লোক পাঠানো হয়েছে।
সেখান থেকে খবর এসেছে তাজদার বাড়িতে নেই, ফিরতে দেরি হবে।

শাইনা অবাক।
সে জানে আজকের আয়োজন তার জন্যই।
সবাই তাকে ঘিরেই এত প্রস্তুতি নিচ্ছে, সব জেনেও এত নির্বিকার কি করে? একটা ফোন পর্যন্ত করল না। জানালও না আসবে কি আসবে না।

মা আর বোনদের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভেতরে এক ধরনের পৈশাচিক আনন্দও হচ্ছে। এবার বুঝুক ওরা।

_____________

"শ্বশুরবাড়িতে যাচ্ছ?"

তাজদার হাতের কব্জিতে ঘড়িটা পরতে পরতে দাদীমার দিকে তাকাল। বাড়ি ফিরে দ্রুত গোসল নিয়েছে সে। একটা মেরুন রঙের নতুন পাঞ্জাবি গায়ে দিয়েছে। তাড়াহুড়ো করছে। রাত এগারোটা বাজে এখন। দাদীমার প্রশ্ন শুনে সে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল। বলল,"হ্যাঁ।"

"এত দেরীতে কেন? ওরা কি মনে করবে?"

"মনে করবে কেন? এগারোটা অত গভীর রাত নয়। মানুষের সমস্যা থাকতে পারে।"

"ফোন দিয়ে জানাতে পারতে। ওরা ভাবছিল তুমি যাবেনা।"

"মহিলারা দুটো কথা বেশি বুঝে ফেলে। সমস্যা সেখানে।"

"আর তুমি দেরী করেছ সেটা দোষ নয়?"

"ইচ্ছে করে কেউ দেরী করেনা।"

"তাও সেটা তোমার উদাসীনতা। আজ যেহেতু জামাই আদর। তোমার উচিত ছিল বন্ধু বান্ধব নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া। ওরা ভাতের পাশাপাশি নাশতারও আয়োজন করেছে। ওগুলো বরবাদ হবেনা?"

"কাল সকালে খাব।"

দাদীমা জানে এই ছেলের সাথে কথায় পারা যাবেনা। তাজদার টিস্যু দিয়ে ফোনের স্ক্রীনটা আলতো করে মুছতে মুছতে তৌসিফকে ডাক দিল।

"তৌসিফ বের হ।"

তৌসিফ বলল,"পায়জামাটা পরতে দাও। ওটা না পরে যাব নাকি? নিজে দেরী করে ফেলেছে। এতক্ষণ পর এসে আমাকে তাড়া দিচ্ছে।"

তিতলি আর তাসনুভা হাসছে তার কথা শুনে। তিতলি চিল্লিয়ে বলল,

"ভাইয়ে আমার জন্য একটা লেগপিস নিয়ে আসবে।"

তৌসিফ তার ঘর থেকে জবাব দিল,"মুরগীর লাস্ট পিস নিয়ে আসব তোর জন্য।"

সবাই একসাথে হাসছে। তিতলি রেগে বলল,"যা ব্যাটা না আনলে ঘরে ঢুকতে দেব না। তোমরা খাবে নাকি সব? আমাদেরও হক আছে।"

তাজদার হেঁটে এল সেখানে। বলল,"এখানে দাঁড়িয়ে কথা না বলো কাজটা তো করতে পারো। মিষ্টি, নিমকি আর সন্দেশের কার্টনগুলো বারান্দায় রেখে আসো। পানসুপারি আর ইত্যাদি ইত্যাদি সব দিয়েছে কিনা চেক করো।"

তিতলি আর তাসনুভা চলে গেল মাথা দুলিয়ে।

রওশনআরা এসে থামলেন তাজদারের সামনে। বললেন,"তুমি সকালে চলে এসো। শাইনা দুইদিন থাকবে ওখানে। চুলটা বোধহয় আঁচড়ানো হয়নি। আরেকটু মোছা দরকার।"

তাজদার চুলে হাত দিল। দাদীমা পেছন থেকে বলল,"শ্বশুরবাড়ির তোয়ালে দিয়ে মুছিও। যাও যাও। এত রাত করে শ্বশুরবাড়িতে যেতে আর দেখিনি। তাড়াতাড়ি বের হও। ওরা সারাদিন খাটছে নতুন জামাইয়ের খাবার দাবার নিয়ে।"

রওশনআরা বললেন,"চুল আঁচড়ে নিলে ভালো হতো।"

তাজদার ঘরে চলে গেল। চুলটা পরিপাটি করে বেরিয়ে পড়লো।

রওশনআরা তৌসিফের ঘরের সামনে এসে বলল,

"তৌসিফ বের হ বাবা। আর কতক্ষণ?"

তৌসিফের মা বলল,"মেয়েদের মতো সময় লাগে ওর।"

তৌসিফ চেঁচিয়ে বলল,"আশ্চর্য যে দেরী করেছে তাকে কিছু বলছো না। আমার পেছনে পড়েছ কেন সবাই?"

____

তৌসিফ আর ফুপাতো, খালাতো ভাইসহ মোট ছয়জন গিয়েছে শাইনাদের বাড়িতে। শাইনার দাদীমা মাজেদা বেগম ঘুরঘুর করছিলেন। মিষ্টি নিয়ে তৌসিফ ঘরে ঢুকে এল সবার আগে। বড় করে দাদীমাকে সালাম দিয়ে বলল,

"সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?"

দাদীমা বললেন,"আমরা না ঘুমাইলেও বউ ঘুম গেছেগা।"

তৌসিফ ঠোঁট উল্টে বলল,"নাতিন জামাইয়ের দোষ। দেরী করে বাড়ি ফিরেছে।"

তাজদার আশরাফের সাথে ভেতরে ঢুকতেই দাদীমাকে সালাম দিল। দাদীমা সালাম নিয়ে বলল,"ওমাগো আমার নাতিন জামাই রাস্তায় গাড়ি পায়নি।"

তাজদার বলল,"হু, ট্র্যাফিক জ্যাম।"

"এখন সব খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে।"

"ঠান্ডাই ভালো।"

"কিন্তু একজন গরম হয়ে আছে।"

তাজদার আশ্বস্ত করে বলল,"ঠান্ডা করার দায়িত্ব আমার।"

দাদীমা হাসলেন।

_____

সাবিনা শাইনাকে ঘুম থেকে ডেকে তুললো।

"শাইনা ওঠো। উনারা এসেছেন। শাইনা?"

শাইনা ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে বলল,"ক'টা?"

"সাড়ে এগারোটা পেরিয়ে গেছে।"

"এতরাতে কীসের জন্য আসছে?"

সাবিনা চুপ করে সরে গেল। শাহিদা বেগম ছোটাছুটি করছেন। আনিস বলল,"ভাত দিয়ে দাও। ওরা নাশতা খাবেনা।"

শাহিদা বেগমের মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। সারাদিন সবাই মিলে কতগুলো নাশতার আইটেম বানিয়েছে । আনিস রাগারাগি করছে। বলছে আজকাল মানুষ এত নাশতা খায়? কেক, কলা, মিষ্টি আর সন্দেশ দিলে হতো না? এতকিছু কি দরকার ছিল? সবকিছুতে তোমাদের বাড়াবাড়ি না করলে চলেনা?

শাইনার দুলাভাইরা তাকে সরিয়ে নিয়েছে। অফিস থেকে এসে এত ঝামেলা দেখে তার মেজাজ বিগড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।

শাইনা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিল একবার। সালাম আদানপ্রদান হতেই শাইনা তৌসিফের উদ্দেশ্য করে বলল,"আমি ভেবেছি আপনারা সেহরির সময় আসবেন। একটু তাড়াতাড়ি চলে এসেছেন।"

সবাই হেসে ফেললো তাজদার সিদ্দিকী ছাড়া। সে ঠোঁটের কাছে হাত রেখে শাইনার দিকে তাকিয়ে আছে।

তৌসিফ বলল,"আমি তো সেই এশার পর থেকে রেডি আছি।"

তাজদার তাকে ধমকে উঠল,"মিথ্যেবাদী, এত রেডি থাকলে আসার আগে তাড়াহুড়ো করে পায়জামা পরছিলি কেন?"

তৌসিফের মুখটা দেখার মতো হয়েছে। সবাই এবার শব্দ করে হাসলো। শাইনা চলে গেল ভেতরে। ভাতের থালাবাসন সাজানো হচ্ছে। প্লেটে মাছ, মাংস বাড়ছে সাবিনা।

শাওন মিষ্টি আর সন্দেশ নিয়ে এসে বলল,

"তাজ ভাই নাশতা দিচ্ছি না। কিন্তু মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে।"

"আমি মিষ্টি খাব না, সরি।"

তৌসিফ বলল,"আরেহ জামাই না খাক আমরা তো আছি।"

শাওন বলল,"দাঁড়া।"

কাঁটাচামচ দিয়ে একটা মিষ্টি তৌসিফের দিকে বাড়িয়ে দিল সে। বলল,

"বেয়াই মিষ্টি পুরোটা খেতে হয় কিন্তু।"

শাওন হেসে কাঁটাচামচ নাড়াচ্ছে, তৌসিফ মিষ্টিটা মুখে নিতে পারছেনা। শাওন তৌসিফের মুখের সামনে নিয়ে গিয়ে পরে মিষ্টিটা নিজে খেয়ে নিল। তৌসিফ বলল,"ধুর শালা।"

শাওন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আনিস ঘরে উঁকি দিয়ে ডাকল,"শাওন?"

শাওন সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে ভেতরে গেল। আনিস বলল,"টেবিল সাজানোর সময় ওখানে গিয়ে রংতামাশা করছিস কেন?"

শাওন বলল,"রংতামাশা কেন করব? আশ্চর্য!"

শাহিদা বেগম বলল,"তুই অফিস থেকে এসেছিস একটু রেস্ট নে আনিস। আমরা সামলে নেব। রান্নাঘরের ঝামেলা কমে আসবে কিছুক্ষণ পর। তোকে এত মাথা গরম করতে হবেনা।"

আনিস বলল,"ঘরে মেহমান রেখে আমি ঘরে শুয়ে থাকব? আজব কথা বলো।"

____

টেবিল ভর্তি খাবার দাবার। শাইনার দুলাভাইদেরও বসিয়ে দিয়েছে আনিস। বাড়ির সব জামাই একসাথে। খাওয়াদাওয়া শুরু হলো। ঘরের দরজার সামনে পর্দার ওপাশে সব মহিলারা দাঁড়িয়ে। শাইনার ছোট মামি হঠাৎ করে বলল,

"আপা বড় জামাই দুটো একদম মানিক পেয়েছে। হাসিখুশি সহজসরল। শাইনার জামাইয়ের মুখে হাসি কম। গরম মাথার মানুষ সেটা চেহারায় বোঝা যায়। ওটা বড় জামাইগুলোর সাথে মিলেনি।"

সবাই একে একে বলল,"ঠিক বলেছ।"
শাইনার বোনেরা বরদের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ করছে। শাহিদা বেগম পেছনে শাইনাকে দেখে বলে উঠল,"থাক থাক এসব আর বলো না। সব মানুষ তো আর এক না।"

শাহিদা বেগমের কথাটা এমন শোনালো যে সবাই একলহমায় বুঝে গেল যে শাইনা শুনে ফেলেছে কথাটা। মামি তাকে দেখামাত্রই সুর পাল্টে বলল,

"বউকে দেখতে পারলেই হয়েছে। এরকম লোকরা মনের দিক দিয়ে সরল হয়।"

শাইনা কাউকে কিছু বললো না। কত সরল সেটা সে ভালো করেই জানে। এরাও জানবে কিছুদিন পর। দাদীমা বলল,"ব্যাটা হাসবেনা কেমনে? দাঁড়া কাতুকুতু দিয়ে আসি।"

শাইনা দাদীমার দিকে তাকালো। শান্ত দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে চলে গেল সেখান থেকে।

খাওয়াদাওয়ার পর সবাই আর ঘন্টাখানেক বসে গল্পসল্প করলো। সেখানে শাইনার লন্ডন যাওয়া নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছিল। আশরাফ বলল,

"ওকে তো মাস্টার্সের পর বিয়ে দেব ভেবেছিলাম যেহেতু ও পড়তে চেয়েছে। এখন মাঝপথে পড়াশোনা থেমে গেলে ও কষ্ট পাবে। বিষয়টা ভালো দেখাবে না। দুটো বছরই তো। তারপর না হয় যাবে।"

শাইনা পাশের ঘর থেকে উঁকি দিয়ে দেখছিল তাজদার সিদ্দিকীর চেহারার হাল। আগের মতো পরিস্থিতি থাকলে এত শান্ত হয়ে বড় ভাইয়ার কথা শুনতো না সে।

আনিস বলে উঠলো,"পড়াশোনা থামাবে কেন? পড়াশোনা যেভাবে চলছে চলুক। দরকার পড়লে মাস্টার্সটা ওখানে কমপ্লিট করবে। এত সহজ একটা ব্যাপারকে এত টানাহেঁচড়ার কোনো দরকার নেই। তাছাড়া বিয়ের সময় কথাটা ভালো করে তোলা না গেলেও পড়াশোনা বন্ধ করতে হবে এমনকিছুও বলা ছিল না। মাত্র দুই বছরের জন্য হুট করে পড়াশোনা কেন বন্ধ করবে?"

আনিসের কথা তাজদারের পছন্দ হয়নি সেটা তার চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে। আশরাফ তাজদারের বড়। আনিস সমবয়সী। তুই তুকারির সম্পর্ক। সে আনিসকে বলল,

"তোর কথাটা ঠিক। কিন্তু দুই বছর সময় দেওয়া পসিবল না আমার। ফেলে দেয়ার মতো কথা আমি বলব কেন?"

কথাটা এমনভাবে বলা হলো যেন তার কথাটায় ফাইনাল এবং পারলে আনিস এর বিকল্প খুঁজে বের করে। যেখানে বিকল্প কোনো পথই নেই।

আফসার সাহেব বললেন,"চাকরিতে সমস্যা হবে?"

তাজদার বলল,"চাকরিসহ আরও নানান জটিলতা বাড়তে পারে। আমি কথাটা এমনি এমনি বলিনি। এখন কারো যদি আমার সিদ্ধান্ত পছন্দ না হয় তাহলে আর কি করার আছে?"

সবাই একটু চুপ গেল এবার।

শাহিদা বেগম সবটা শুনে শাইনাকে এসে বলল,"তোর খালাম্মার জায়ের মেয়েটাকে বিয়ের পর জামাই বিদেশ নিয়ে চলে গেছে। ও আর পড়াশোনা করেনাই। কত মেধাবী ছিল। ও কি এখন ভালো নাই?"

শাইনা মায়ের দিকে তাকালো অবাক চোখে।

"মানুষের কথায় যখন ওঠবস করতে হবে তখন পনের ষোল বছরে বিয়ে ফেলোনাই কেন? এত পড়াশোনা করালে কেন? যেখানে বড়আম্মু বলছে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সেখানে তুমি এসব কথা কিভাবে বলো?"

শাহিদা বেগম বলল,"যদি ওর চাকরিতে সমস্যা হয় তখন কি হবে?"

"হাস্যকর কথাবার্তা। ওই লোকটাকে তোমাদের ইমোশন নিয়ে খেলছে। বেশ ভালো করে জানে চাকরির কথা বললে তোমরা ভয় পেয়ে যাবে। আমি যাব না মাস্টার্স কমপ্লিট করার আগে।"

শাহিদা বেগম বললেন,"মানুষ জামাইয়ের সাথে যাওয়ার জন্য পাগলামি করে আর তুই?"

"পাগল বানাওনি কেন? মানুষ বানিয়ে বলতেছ পাগলের মতো আচার-আচরণ করতে। পারব না পাগলামি করতে। আমার কথাই শেষ।"

"জামাই না থাকলে ওই বাড়ির মানুষের কথায় ওঠবস করতে হবে। জামাইর সাথে যেতে ভালো লাগেনা। কিন্তু ওই বাড়ির গোলাম হতে ভালো লাগবে।"

"আমি বাচ্চা নই যে মানুষ আমাকে যা বলবে আমি তাই করব।"

শাহিদা বেগম বড় দুই মেয়ের উদ্দেশ্য বলল,
"কি বেয়াদব মেয়ে দেখলি? ওর বড়আম্মু নাকি কি বলছে সেজন্য রাজী হচ্ছে। রায়হানের মাকে আমি চিনিনা? কাজবাজ করে দিতাম বলে আমাকে দেখতে পারতো। নইলে ও আমাদের ভালো চায় কখনো? ছেলের কারণে তোকে বউ করে নিয়ে গিয়েছে। গিয়ে দেখ কলিজা ফেটে যাচ্ছে ছেলের বউয়ের জায়গায় তোকে দেখে। টাকাপয়সা লাগলে ধারটার চাইতাম, দিত তাই কথা শুনে কাজবাজ করে দিতাম। নইলে তোমার বড়আম্মু তোমাকে দেখতে পেরে উল্টায় দিচ্ছে এমন না। জামাইয়ের কথা শোন শানু। বাড়াবাড়ি করিস না।"

শাইনা পিড়িতে বসে আছে। বড় বোনদুটোর দিকে একবার তাকাল। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

"আমার না মেঝ আপার মতো হওয়া উচিত ছিল। নিজের পছন্দ অপছন্দের কথা একদম আব্বা আর ভাইয়াদের মুখের সামনে গিয়ে বলা উচিত ছিল। তোমার আর আব্বার মার না হয় খেতাম।
আব্বা আপার সাথে ছমাস কথা বলেনি। আমার সাথেও না হয় বলতো না। ভাইয়াদের সামনে আপা একবছর যেতে পারেনি। আমি না হয় একদমই যেতাম না। বেয়াদব, ঘাড়ত্যাড়া, নির্লজ্জ, বেহায়া, এইসব কথা না শুনতাম পাড়াপড়শির কাছ থেকে।
কিন্তু আমার জীবনের এই ছোটখাটো সিদ্ধান্তগুলো আজকে অন্যজনকে নিতে হতো না। তোমাদের মানসম্মানের কথা ভেবে আমি আমাকে কোরবানি দিয়ে ফেলেছি। তোমাদের মেঝ মেয়ে এখন ভালো নেই? কিন্তু তার বদনাম হয়েছিল বলে আমার উপর জোর খাটাতে শুরু করলে। এদিকে যাওয়া যাবেনা, ওইদিকে যাওয়া যাবেনা, এর সাথে কথা বলা যাবেনা, ওর সাথে কথা বলা যাবেনা। মেঝ আপা কি কি করলো তার সব শোধ তোমরা আমার উপর তুললে।"

শাবরিন বলল,"আশ্চর্য তুই আমাকে নিয়ে কেন পড়েছিস?"

শাহিদা বেগম ফিসফিসিয়ে বললেন,"তোর ওইরকম কেউ ছিল নাকি রে? কি বলছিস তুই? মাথা খারাপ হয়ে গেছে?"

"ওইরকম কাউকে আমার জীবনে থাকতে দিয়েছ তোমরা? মেঝ আপার মতো যাতে না হই সারাক্ষণ পাহারা দিয়ে দিয়ে রেখেছ। এত ভালো মেয়ে হয়ে তোমরা আমাকে কি দিয়েছ? ভালো মেয়ে হয়ে আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছ আরও। নিজের সব ইচ্ছে আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছ। নিশানের কথা বলে আকদ পরিয়ে দিয়েছ।"

"এসব কথা বলে এখন কি লাভ? তুই সংসার করবিনা ওই ছেলের সাথে?"

"সংসার তো এখনো অনেক দূরে। বিয়ের চারদিনও পার হয়নি তারমধ্যে যে যার ইচ্ছে চাপিয়ে দিচ্ছে আমার উপর। আমার ভবিষ্যতটা আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। জুতোপেটা করার পর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেই সেটা সংসার? আমি বলেছি সংসার করব না? নাকি বলেছি ওই লোকটার সাথে আমি বিদেশে যাব না? আমি শুধু বলেছি আমি মাস্টার্স কমপ্লিট করতে চাই। এটা অসম্ভব কিছু? এটা মেনে নিলে সব সলভ হয়ে যায় না? এটা না মানার কি আছে? তার বোনরা একেকটা ভার্সিটিতে পড়ছেনা? তাদের বোনকে তো ফাইনাল পরীক্ষার পর বিয়ে দিচ্ছে। তাহলে আমার বেলায় উল্টো কেন? আমাকে বলছে আমার চৌদ্দ গুষ্টির কারো লন্ডনে যাওয়ার সামর্থ্য আছে কিনা। কিছুদিন পর আমি গ্র্যাজুয়েটেড নয়? বলবেনা? এখন থেকে বড় বড় কথা শোনাচ্ছে। ভবিষ্যতে তো আরও শোনাবে।"

শাইনা কাঁদছে। চোখ মুছে বলল,

"তোমরা বললে না জামাইয়ের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখ। অন্যরা নইলে কথা শোনাবে। সুযোগ খুঁজবে। যেখানে ওই লোকটা নিজেই আমাকে কথা শোনায় সেখানে বাইরের লোকজন তো অনেক ভালো। আমি ওরকম একটা মানুষের সাথে কি করে ঘর করব আম্মা? সারাক্ষণ আমাকে ভয়ে থাকতে হয় এই বুঝি কোনোকিছুর জন্য আমাকে কথা শুনিয়ে দিল। এই বুঝি আমার চৌদ্দ গুষ্টি নিয়ে কথা তুললো। কিছুদিন পর মা বাপ তুলেও দেবে। আমাকে বিয়ে না দিয়ে বিষ খাইয়ে দিলেও তোমাদের উপর এত অসন্তুষ্ট হতাম না আমি।"

শাইনা অনেকক্ষণ রান্নাঘরে বসা ছিল। ভাত খেতে বললে খেল না। শাহিদা বেগম খাইয়ে দিতে চাইলে মানা করে দিল। দাদী, মামী, চাচী, খালা সবাই তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো। দাদীমা ইনিয়েবিনিয়ে বলল,

"কেউ তোকে নিয়ে যেতে বলছেন না এখন। তোকে রেখে যাবে শেষমেশ। তুই যেতে না চাইলে তোকে জোর করবে না। কথা হচ্ছে ব্যাটা আর কখন আসবে তার ঠিক নেই। বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ফেলিস। ওটা নিয়ে তোর সময় কেটে যাবে।"

শাহিদা বেগম সেখানে ছিলেন না। ফুপু বলল,

"হ্যাঁ এখন অনেক মেয়েই বাচ্চা নিয়ে পরীক্ষার হলে যায়। এখন ঘরে যা।"

দাদীমা বলল,"ব্যাটা আজ এখানে থাকবে।"

শাইনা বলল,"সেই খুশিতে নাচতে বলছো? যাব না আমি।"

দাদীমা ফিসফিস করে বললেন,"জামাইকে পছন্দ করছিস না এসব কথা মানুষের কানে গেলে মানুষ ছিঃ ছিঃ করবে। মানুষ এককথাকে দশকথা করে। এমনিতেই সবাই জেনে গেছে বিয়েতে তুই খুশি না। মানুষ কতরকম কথা বলছে। বাচ্চাটাচ্চার কথা তুলিস। বাচ্চা কাচ্চা চলে এলে মানুষের কথাও বন্ধ হয়ে যাবে।"

শাইনার চোখজোড়ায় যেন রক্ত নেমেছে। দাদীমা তার চোখ দেখে ভড়কে গেল। বলল,

"ওই ব্যাটা বিদেশ চলে গেলে তখন তুই একা একা কি করবি? বাচ্চা টাচ্চা নিয়ে নিজের জায়গা শক্ত কর শ্বশুরবাড়িতে। তখন তোকে কেউ সহজে কিছু বলতে পারবেনা। আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। মেয়েদের সংসার শক্ত করতে প্রথমে কষ্ট করতে হয়।"

শাইনা উঠে চলে গেল সেখান থেকে। ঘরে এসে মুখে পানির ঝাপটা দিল। তাজদার সিদ্দিকী ঘরজুড়ে পায়চারি করছে। শাইনার ঘরটা আগাগোড়া দেখছে।

শাইনা ওয়াশরুম থেকে বের হওয়া মাত্রই বলে উঠলো,

"ঘুরতে বেরোবো। একটা শাড়ি পরে নেয়া হোক।"

শাইনা তার দিকে না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

"মাথা খারাপ? কোথায় যাব এতরাতে্?"

"বলা যাবেনা।"

"আমার মুড নেই এখন। ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।"

"গাড়িতে ঘুমানো যাবে।"

শাইনা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। তাজদার সিদ্দিকী তাড়া দিয়ে বলল,

"একটু দ্রুত রেডি হয়ে নিলে ভালো হয়।"

"বসার ঘরে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে?"

তাজদার দায়সারাভাবে বলল,

"বাচ্চা হয়ে গেলে আমি একাই লন্ডনে ফিরে যাব।"

শাইনা কপাল কুঁচকে তাকালো। মোটেও এই ধরণের কথাবার্তা হয়নি। কিন্তু দাদীমার কথার সাথে মিলে গেল কিভাবে? দাদীমা বলেছে? নাকি এই লোকটাই দাদীমাকে সেটা শিখিয়ে দিয়েছে বলার জন্য?

তাজদারও তার চোখের দিকে তাকালো তখুনি। বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে বলল,

"শাইনা মমতাজ তোমার সামনে এখন দুটো রাস্তা।"

শাইনা তার দিকে চোখ তুলে তাকাল। চোখ সরিয়ে নেবে তক্ষুণি তাজদার বলল,

"যাইহোক আমি চাই এখন তুমি আমার সাথে চলো।"

শাইনা ক্লান্ত হয়ে বলল,"আমি খুব টায়ার্ড। শরীর খারাপ লাগছে। দয়া করে ঘুমান। আমাকেও ঘুমাতে দিন। এত কথা বলতে ভালো লাগছেনা। এটা আপনার বাড়ি নয় যে বড় বড় কথা বললেও কেউ শুনতে পাবেনা।"

তাজদার গলার আওয়াজ বড় করে বলল,"আমি তোমাকে বলেছি বেরোতে। তোমার হাতে সময় জাস্ট পাঁচ মিনিট। সাজগোছ দরকার নেই। শুধু শাড়িটা পরবে।"

শাইনাকে নিজের পছন্দমতো একটা শাড়ি বের করে দিল সে। শাইনা শাড়িটা হাতে নিয়ে বলল,

"একটু বের হোন।"

"এটা শ্বশুরবাড়ি। বের হওয়া যাবেনা। আমার সামনে পাল্টাও। আমি পরপুরুষ নই।"

শাইনা শক্তকণ্ঠে বলল,"দেখতে চান সেটা বললেই হয়ে যেত।"

তাজদার তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। শাইনা ব্লাউজ, পেটিকোট বের করে বলল,

"আপনি ঘর থেকে বেরোবেন না?"

"না।"

শাইনা ঘরের আলো নিভিয়ে দিল। ওড়না রেখে দিল। তারপর অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা ছায়াটার দিকে একবার তাকালো।

অপ্রস্তুত অবস্থায় আবারও ফিরে তাকালো। এই লোকটার নজর এত বাজে যে বিবাহিত সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েও সেই চাহনি তাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। চাইলেও সে স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছেনা। এই যে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে। শাইনা যদি ভুল না হয় তাহলে এদিকেই তাকিয়ে আছে।

"হয়েছে?"

তৎক্ষনাৎ ঘরের আলো জ্বলে উঠলো। শাইনা আঁচল কাঁধে টেনে এনে বলল,

"হিজাব বাঁধব। আরও সময় লাগবে।"

তাজদার সিদ্দিকী লম্বা পা ফেলে এগিয়ে এসে তার চুলের ক্লিপ খুলে দিতেই চুলগুলো ঝাঁপিয়ে পড়লো পড়লো পিঠে। শাইনা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

"আমি খোলা চুলে বেরোইনা।"

"আমার সাথে বেরোনো যাবে। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই এখন। যাওয়া যাক।"

শাইনা চুলগুলো খোঁপা করে নিল ঢিলে করে। তাজদার তাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পড়তে দাদীমাকে বলল,

"ফাইনালি।"

দাদীমা, শাইনা খালা, ফুপুরা আড়াল থেকে দেখল শাইনা সোজা গাড়িতে গিয়ে বসেছে। তারা সবাই ফিসফিস করছে। বউ নিয়ে ব্যাটা যাচ্ছে কই?
তাজদার গাড়ির দরজা খুলে গাড়ির ভেতর মাথা ঢুকিয়ে বলল,

"সামনে এসে বসা হোক।"

শাইনা বলল,"পেছনে বসলে কি সমস্যা?"

"পেছন থেকে কেউ বউ নিয়ে পালালে টের পাব না এটাই সমস্যা।"

শাইনা সামনে এসে বসলো। তাজদার ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ি ছেড়ে দিল। বাজার পার হতেই নির্জন রাস্তা ধরে গাড়ি এগোতে লাগলো। তাজদার খুব গুরুতর ভঙ্গিতে বলল,

"ধরো সাদা পোশাক পরা, লম্বাচুলো, বড় বড় নখ আছে এমন একটা পেত্নী হুট করে আমাদের গাড়ির সামনে এসে থেমে গেল!"

বলতে বলতে না বলতেই হুট করে ব্রেক কষলো গাড়িটা। শাইনা ভয়ানক একটা চিৎকার দিয়ে তাজদার সিদ্দিকীর বুকের উপর এসে পড়লো।

তাজদার সিদ্দিকী তাকে টেনে এনে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তার মুখের উপর শ্বাস ছেড়ে কাঠকাঠ গলায় বলল,"তুমি নিজ থেকে আমার কাছে এসেছ তাই আমি তোমাকে আজ ইচ্ছেমতো ছুঁবো। নো হাংকিপাংকি মিসেস শাইনা মমতাজ। আমার সাথে লন্ডনে যাবে নইলে......

বাকিটা বলার আগেই শাইনা ছটফটিয়ে উঠলো।

চলমান..........

Address

Dhaka

Telephone

+8801641574622

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Emon Food Center posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to Emon Food Center:

Share