16/07/2025
একজন শিশুর জন্য সংগীত শিক্ষা
কেন জরুরি বিষয় !!!
হাতে সময় থাকলে পড়ুন !!
মানুষ তার জীবনের মূল ভিত গঠন করে ছোটবেলা থেকেই। একজন শিশুর শৈশব কেমন কাটছে এবং তার শিক্ষা ও শিক্ষার পরিবেশ কেমন, আসলে এটাই ঠিক করে দেয় যে, একজন শিশুর ভাবিভবিষ্যত কী? আর একারণেই বলা হয় "আজকের শিশু আগামীদিনের ভবিষ্যৎ।" শিশুর সঠিক বিকাশ ও সফল ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য যেমন একাডেমিক ও পারিবারিক সুশিক্ষা স্বরুপ নৈতিকতা, শিষ্টাচার, মানবিকতা শেখা জরুরি, তেমনি সাংগীতিক শিক্ষাও শিশুর জীবনে অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সাংগীতিক শিক্ষা বলতে শুধু গান শেখাকে বোঝায় না। এর মধ্যে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, তাল-লয়, সুর, রাগ, রিয়াজ, শ্রবণশক্তি, অনুভূতি এবং সাংস্কৃতিক বোধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি শিশুর হৃদয় ও মস্তিষ্ককে একযোগে জাগ্রত করে। সংগীত শেখার মাধ্যমে শিশুরা শুধুমাত্র গান গাওয়া শিখে না, বরং জীবনের সৌন্দর্য, রুচি, সংবেদনশীলতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের পাঠও শিখে যায়। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ছোটবেলা থেকে সংগীত শিক্ষা পায়, তাদের স্মরণশক্তি, মনোযোগ এবং শেখার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সংগীত শিক্ষা শিশুর মস্তিষ্কের ডান ও বাম অংশের সক্রিয়তাকে বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে শিশুদের স্মরণশক্তি, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ে। সংগীত শেখার সময় তাল, লয় ও সুরের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়, যা শিশুদের একাগ্রতা বাড়ায়।
সঙ্গীত শিশুদের মনকে প্রশান্ত করে এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। একজন শিশু যখন সংগীতের সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন তার মনে এক ধরনের স্থিরতা ও আনন্দ অনুভব হয়। এটি তার দুঃখ অবসাদ দূর করে এবং মনোবলকে দৃঢ় করে।
সাংগীতিক বিষয়াদি মুখস্থ করা, সুর ও লয় মেনে চলা শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা সংগীত চর্চা করে, তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্সও অনেক ভালো হয়।
সংগীত শিশুদের সৃজনশীল করে তোলে। তারা নতুন নতুন সুর ভাবতে শেখে, নিজের মত করে গান গাইতে শেখে, যা তাদের কল্পনা শক্তিকে আরও প্রসারিত করে। এর ফলে ভবিষ্যতে তারা উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করতে সক্ষম হয়।
সংগীত শিশুদের সঠিক উচ্চারণ ও বাক্য গঠনের দক্ষতা বাড়ায়। বিশেষ করে যারা ছোটবেলা থেকেই কবিতা আবৃত্তি ও গান গায়। তারা দ্রুত নিজ ভাষাসহ অন্য ভাষা রপ্ত করতে পারে।
সংগীত শিক্ষা একটি ধৈর্যের কাজ। প্রতিদিন রিয়াজ করতে হয়, নিয়ম মেনে চলতে হয়। এটি শিশুর মধ্যে শৃঙ্খলা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও স্থায়িত্ব গড়ে তোলে। শিশুরা এই অভ্যাস থেকে জীবনের অন্যান্য দিকেও নিয়ম মেনে চলতে শেখে।
সংগীত চর্চার মাধ্যমে যখন একজন শিশু স্টেজে গান গায় বা অন্যদের সামনে পারফর্ম করে, তখন তার সাহস, আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। সে নিজের প্রতিভাকে প্রকাশ করতে শেখে। এটা ভবিষ্যতে কথা বলা, উপস্থাপনা করা, কিংবা কোনো জনসম্মুখে নেতৃত্ব দেওয়ার সময় কাজে আসে।
যখন কোনো শিশু সংগীত দলের সঙ্গে অনুশীলন করে, তখন সে অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে চলতে শেখে। এতে তার সামাজিকতা, সহযোগিতা এবং সহমর্মিতা তৈরি হয়।
সংগীত একটি জাতির সংস্কৃতির পরিচায়ক। শিশু যখন সংগীত শেখে বা করে, তখন সে তার মাতৃভাষা, ঐতিহ্য, দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন হয়। সে গানের মাধ্যমে সমাজের সমস্যা, প্রকৃতির সৌন্দর্য সম্পর্কেও শিক্ষা পায়।
মানসিক চাপ দূর করতে সংগীত অত্যন্ত কার্যকরি ভূমিকা রাখে। তাছাড়া শিশুরা ভবিষ্যতে সংগীতের মতো সৃষ্টিশীলতায় দক্ষ হয়ে জীবন গড়তে পারে। তাই সংগীতকে পেশা হিসেবেও নেওয়া যায়। যেমন: গায়ক, সুরকার, সংগীত শিক্ষক, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি।
তাই শিশুদের মধ্যে সুস্থ মন, সুন্দর চিন্তা, সৃজনশীলতা ও মানবিক গুণাবলি গড়ে তোলার জন্য সাংগীতিক শিক্ষা অপরিহার্য বিষয়। তাই আমরা যদি সত্যিকার অর্থেই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগোপযোগী মানুষ, ভালো নাগরিক ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তাহলে একাডেমিক ও পারিবারিক সুশিক্ষার পাশাপাশি সাংগীতিক শিক্ষাকেও গুরুত্ব দিতে পারি। শিশুদের সংগীত চর্চার জন্য অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে পারি। কারণ, আজকের এই শিশু-ই একদিন হবে আমাদের সমাজের নেতা, শিক্ষক, শিল্পী কিংবা সেবক। আর তাদের হাত ধরেই নির্মিত হবে এক সুন্দর ভবিষ্যৎ।
মানুষের মস্তিষ্কে কিছু বিশেষ রাসায়নিক (chemical) তৈরি হয়, যেগুলো আমাদের মনের উপর প্রভাব ফেলে। ডোপামিন (Dopamine) আর সেরোটোনিন (Serotonin) হলো সেই রকম দুটি রাসায়নিক, যাদের বলা হয় "হ্যাপি হরমোন"। মানে এগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। যখন আমরা প্রিয় গান শুনি, তখন আমাদের মস্তিষ্কে একটা সুখের অনুভূতি তৈরি হয়। ঠিক তখনই ডোপামিন বের হয় এবং এটি আমাদের উত্তেজনা, আনন্দ ও তৃপ্তি দেয়। যেমন: নতুন কিছু শিখে খুশি হওয়া, ভালো লাগা, অথবা পছন্দের গান শুনে হাসি আসা।
সেরোটোনিন বের হওয়া মানে আমাদের মাথা ঠান্ডা করে, দুশ্চিন্তা কমায় আর মুড ভালো করে। যেমন: মন খারাপ থাকলে গান শুনে ধীরে ধীরে মন ভালো হয়ে যাওয়া। যে কারণে গান বাজনা করা মানুষ অন্য শ্রেণি পেশার মানুষ থেকে প্রাণচঞ্চল, হাসিখুশি, সদালাপী, মিষ্টিভাষী ও সহজসরল প্রকৃতির হয়।
লেখকঃ মোল্লা মাসুদ রহমান