25/10/2025
প্রেমিকের শুন্য পকেটে হাত ধরা নারী কী কখনো সামির পূর্ণ পকেটে পূর্ণ ভালোবাসা পায়?
ও কাবিনের টাকা পায়নি বলে এখনও সংসারের মাটি কামরে পড়ে আছে!
আমার এখনও মনে আছে, আমার যখন প্রেম হয় তখন বয়স ছিল কেবল ১৬, আকাল পক্কো যাকে বলে, আমাদের কলেজে অ্যাকাউন্টিংয়ের রুনা ম্যাম তখন ক্লাস নিতো, রোজ বলতো "এই বয়সে তো রঙিন চশমা পরে ঘুরো, সবেই ভালো লাগে, চশমা ছাড়া জীবন অনেক কঠিন, বাস্তবতা ভিন্ন।" ম্যাম বুঝতে পারতো হয়তো প্রেমিক ছাত্রীর অবস্থা, প্রায় ঠকে যাওয়া প্রেমের গল্প শুনাতো, খুব বিরক্ত লাগতো তখন, "ভালোবাসায় জীবন, ভালোবাসায় মৃত্যু", এমন একটা ভাব কাজ করতো নিজের মধ্যে।
বিয়ের সময় বাবা বললো, "অভাব দরজা দিয়ে ঢুকলে ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালায়", কিন্তু আমার তো মাইন্ড ফিক্স ছিল, প্রেমিকের শুন্য পকেটে যদি পাশে থাকতে না পারি, তাহলে আর কী ভালোবাসলাম?
ঘরে বাজার না থাকলে সমস্যা নেই, ও আমাকে ভালোবাসলে, ডাল ভাত খেয়ে রাত পার করে জান্নাতে থাকবো। তখন আর বুঝিনি, ডাল ভাত খেতেও পয়সা লাগে, ধরলাম সেই শুন্য পকেটের বেকার ছেলের হাত।
বিয়ে হলো ১৮ তে, ১৯ এ মা হলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ফি দিতে বাবার কাছে টাকা চাইতে হতো, বাজার খরচ শশুরের, বাচ্চার ডাইপার কিনতে কত চিন্তা, ততদিনে আমার সেই বেকার প্রেমিক ১৪ হাজার টাকার চাকরি পেল, ১৪ থেকে হলো ১৬ তারপর ১৮, কিন্তু অভাব আর গেল না, কিছু চাইতে পারতাম না, চাইলে সে যদি দিতে না পারতো নিজেকে ছোট মনে করত?
এদিকে সংসারের খরচ নিয়ে রোজ রোজ অশান্তি, বাবা ঠিকই বোঝে ছিল, "অভাব আসলে ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালায়", একটা ছোট ঝগড়া থেকে বাবার বাড়ি চলে গেলাম, ২ মাস পর জানতে পারলাম, আমার সেই শুন্য পকেটের প্রেমিক যে এখন আমার বাচ্চার বাবা, সংসারের অশান্তি থেকে বাঁচতে অন্য কোথাও নিজেকে বিলিয়ে দিল, অন্য কারো সাথে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছে।
এক মুহূর্তে পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না, চোখের সামনে শুধু নিজের বোকামি, রুনা মিসের কথা, আর বাবার সেই ডায়ালগ ঘুরছে।
একসময় সাফার করতে করতে যখন ম*রতে চেয়েছিলাম, মনে হলো, ভেঙে পড়লে তারা আমাকে আরো পেয়ে বসবে, আমার সন্তানের জন্য বাঁচতে হবে, শক্ত হতে হবে।
এবার আরেকটা সিদ্ধান্ত নিলাম, যত কিছুই হোক, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, কীভাবে যেনো চাকরি পেয়ে গেলাম, বাসায় বললাম, বাবা বললো, আবার ভুল করছো, নিহা, বাবাকে বললাম, একবার ভুল করে জীবনটা নষ্ট করলাম, এই ভুলটা নয়, আমার জীবনটা আগের ভুল কাটাতে পারবে নাকি দেখি?
একা একা ঢাকা আসলাম, কাজ করছি, পড়ালেখা করছি, মনকে শক্ত করে, একপ্রকার জোর করে বাবুকে মা'র কাছে রেখে আসলাম, এখনও খুব কম বেতন পাই, কিন্তু নিজের অধিকার আদায় শিখে গেছি, তাকে শাস্তি দিলাম আবার ফিরিয়ে নিলাম, ভালোবেসেছি এভাবে ছেড়ে দেবো কীভাবে? আলহামদুলিল্লাহ, এই অল্প কয় টাকায় ঢাকা শহরে প্রায় এক বছর ধরে নিজের টাকায় আছি, ৩ মাস হলো নতুন করে সংসার করছি, তাও ৭০% খরচ আমি চালাই, বাকি ৩০% সে।(যদিও ২ পক্ষের বাবারা ও পাশে আছে )
এরপর যখন সেই মেয়ে বা কিছু মানুষ বলে নিহা কাবিনের টাকার জন্য পরে আছে, অনেক হাসি পাই, কাবিনের টাকা চাইতামই যদি, নিয়ে নিতে পারতাম, না, নিয়ে সুধরানোর সুযোগ দিলাম কেনো??
সবশেষে একটা কথা, প্রেমিকের শুন্য পকেটে পাশে না থেকে, নিজের পাশে থাকতে শিখুন, নিজেকে ভালোবাসতে শিখুন, সময় হলে যোগ্য মানুষ একাই আপনার কাছে চলে আসবে...