18/06/2025
বিয়ের পর আমার বড় ননাসের বাসায় প্রথম যেদিন যাই,আমি শুধু তাকিয়ে তাদের ফার্নিচার দেখছিলাম। ঘরটা কত সুন্দর গোছানো।প্রত্যেক টা সদস্যদের জন্য আলাদা আলাদা আলমারি।অথচ আমার ঘরে একটা আলমারি নেই, এটা ভাবতেই বুকের মধ্যে যেন কেমন করে উঠলো।
ঘরের সৌন্দর্য বাড়ে ফার্নিচারে আর নারীর সৌন্দর্য বাড়ে অলংকারে।এই দুটোর কোনটারই কমতি নেই আমার ননাসের।নিজের গলার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, খুবই পাতলা একটা চেইন।লজ্জায় সেটা ঢেকে রাখলাম।
হঠাৎ আপার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে আসলাম।উনি বলছিলো,
-মহুয়া শুধু এদিক সেদিক তাকালেই হবে! খাবার সামনে রয়েছে জলদি এগুলো শেষ করো।
আপাকে কি ভাবে বলবো,খাবার যে আমার গলা দিয়ে নামছে না।তবুও ভদ্রতার খাতিরে খাচ্ছি কিন্তু মনের মধ্যে কেমন যেন একটা, না পাওয়ার আফসোস হচ্ছে।খাওয়া শেষ হওয়ার পর আপা তার বাড়ির চারিদিক ঘুরিয়ে দেখাচ্ছে, আমিও মুগ্ধ হয়ে দেখছি।এরমধ্যে তিনি দেখতে পেলেন তার একটা টব ভেঙে গেছে।মুহুর্তেই তার মন খারাপ হয়ে গেলো।টব টার জন্য কেমন করতে রইলো।আমি অবাক হয়ে মনে মনে ভাবছি,এতো বড়লোক হয়েও সামান্য একটা ফুলের টবের জন্য এমন করছে!
তিনি বোধহয় আমার অবাক হওয়া টা বুঝতে পেরেছিলেন।কিন্তু তখন কিছু বলেননি।
রাতে যখন আমি বিছানায় শুয়ে ছিলাম তখন আপা ডেকে ছাদে নিয়ে গেলো।বললো,
-জানো মহুয়া, এই যে এত সুন্দর বাড়ি,বাড়ির প্রত্যেক টা শৌখিন জিনিস দেখতে পাচ্ছো সবগুলো আমার ধৈর্যের ফল।তোমাদের ভাইয়ার বেতন কিন্তু শুরুতে তেমন একটা বেশি ছিল না।তার বেতনে প্রয়োজনীয় জিনিস হলেও,শখের কিছু কিনতে পারতাম না।আমি রোজ তার থেকে টাকা চেয়ে রাখতাম।তবে তোমার ভাইয়াও সাহায্য করেছে, আমাকে টাকা জমাতে দিতে কখনো কার্পন্য করেনি।যখন যা পেরেছে তাই দিয়েছে,কখনো বেশি কখনো একবারে স্বল্প।আমার শখের জিনিস কিনে দেয়ার জন্য তার মনেও ছিল অনেক আগ্রহ।অবশ্য আমার টাকা জমানোর অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই ছিল।আস্তে আস্তে জমানো টাকার পরিমাণ বাড়লো,তোমাদের ভাইয়ারও বেতন বাড়তে শুরু করলো।এখানকার কোনো ফার্নিচার একসাথে বানানো নয়।আমার সংসার জীবনের শুরু থেকে একটা একটা করে করেছি।শূন্য থেকে আজ আমার ঘর পরিপূর্ণ।প্রত্যেক টা জিনিসের প্রতি আমার মায়া জড়ানো, দীর্ঘ অপেক্ষার পর সব সবকিছু গোছাতে পেরেছি।তাই আমার সামান্য টব ভেঙে গেলেও প্রচুর কষ্ট হয়, মহুয়া!
আমি একনাগাড়ে আপার কথা গুলো শুনছিলাম। কিন্তু আপার লাস্ট কথা টায় লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললাম।
রাতে ঘুমানোর সময় ভাবছি,আপার বিয়ে হয়েছে ত্রিশ বছর।আমার তো তিন মাসও হয়নি। আমার তিন মাসের সংসারের সাথে ,কারো ত্রিশ বছরের সংসারের তুলনা করা মোটেও ঠিক হয়নি।অনুতপ্ত হলাম এবং আজকে বুঝতে পারলাম নিজের অবস্থান থেকে সন্তুষ্ট থেকে ধীরে ধীরে চেষ্টা করতে হয়,আল্লাহর কাছে চাইতে হয়।অন্য কারো চাকচিক্য দেখে তার মতই পাওয়ার জন্য আফসোস করতে হয়না।একদিন আমারও একটা ঘর হবে,হবে পুরো ঘরটা মনের মত সাজানো,অপেক্ষা শুধু ধৈর্যের এবং আল্লাহর ওপর ভরসার।
[কখনো কারো সংসারে দামি কিছু দেখে কিংবা কারো গায়ে দামি পোশাক দেখে হীনমন্যতায় ভুগতে হয়না।শখ থাকা ভালো তবে নিজের ইনকাম ৫ টাকা হলে ৫শ তে চোখ গেলেও মানানসই,কিন্তু ৫০ হাজার টাকার জিনিসের দিকে চোখ দেয়া টা কেমন যেন উচ্চ বিলাসিতার মধ্যে পরে যায়!]
গল্গ:শখের ফার্নিচার
লেখা: সাদিয়া আফরিন মার্জান