22/07/2025
সেইফ এক্সিট নিয়ে পাইলটটা বের হয়ে গেছে!
সেইফ এক্সিট হইত তখন যখন কমপক্ষে ২০০০ মিটার উপর থেকে ইজেক্ট করে, বিমান ঠিক কোথায় পরবে সেই তোয়াক্কা না করে প্যারাসুট নিয়ে নিজের জান বাঁচাতে পারত। স্কুল কম্পাউন্ডের ভিতরেই একটা বিল্ডিং এ তৌকিরকে পাওয়া গেছিল। বুঝতে পারছেন কতটা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ও চেষ্টা করছে? কম উচ্চতা থেকে ইজেক্ট করছে দেখেই হয়ত প্রেশারে ব্রেইন হেমোরেজ হইসে, প্যারাসুট ঠিকভাবে কাজ করে নাই হয়ত কম উচ্চতার জন্য হাত পা ভাঙছে, বিমানে আগুন আগেই লাগছে, ফুয়েল ইনহেল করার কারনে ইন্টারনার বার্ণের কথাও শুনলাম।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো এত কষ্ট পেয়ে যে ছেলেটা মরে গেল, এটা আসলে নাকি যথেষ্ট না, ওর শরীরটা তো পুড়ে যায় নাই, বিমানের ভিতরের থেকে পুরে গেল না কেন? এইটা থেকেই নাকি খুব সহজে বলা যায় যে পাইলট আসলে চেষ্টাই করে নাই! বাহ! উত্তম বুদ্ধি!
স্কুল বিল্ডিং টা দেখে আর এক ভাইয়ের কাছে শুনলাম নিচতলাতেই নাকি বাচ্চাগুলার প্রাণহানি বেশি হইসে, দোতালাতেও নাকি ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলক কম। এটা থেকে কি বোঝা যায় না মাঠে বিমান টা পরে স্লাইড করতে করতে বিল্ডিং এ লাগলো?
মরে গিয়ে ভালই হইছে তৌকিরের। ও যেরকম মানুষ, নিজে চেষ্টা করার পরও যদি এতগুলা বাচ্চার মৃত্যুর খবর জানতো, বেঁচে থাকতে পারত না।
তৌকির আমার বান্ধবী আকসার হাজবেন্ড। তখনো আকসাকে আমরা ওর মারা যাওয়ার খবর জানানোর সাহস পাই নাই, আকসা জানতো তৌকির লাইফ সাপোর্টে আছে। তখন আমাদেরকে বলছিল, " অনেকগুলা বাচ্চা কি মারা গেছে? আমাকে একটু খবর বল না, ও (তৌকির) যদি পরে এই ভিডিও গুলা দেখে ও তো নিজেকে মাফ করতে পারবে না।" শোকে বিহবল হয়েও আকসা এটাই বলছিল। কারণ তৌকির মানুষটাই এমন ছিল, He was topper of his batch, one of the most kind hearted person. ওর অনেস্টি, সিন্সিয়ারিটির সাক্ষ্য আমার একলা দিতে হবে না। অন্তত একবারও যে ওর সাথে কথা বলছে সেই তৌকিরকে মনে রাখবে ওর হাসিমাখা, শান্ত স্বভাবের জন্য। ও যে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছে বাচ্চাগুলাকে বাঁচানোর, এই কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। অনেকে এটা বিশ্বাস নাই করতে পারেন। কিন্তু একটা মানুষ সম্পর্কে না জেনে দয়া করে গেস করে আন্দাজে আজেবাজে কথা বাতাসের গতিতে ছাড়ায়েন না।
দয়া করে প্রশ্ন করেন, সিস্টেমকে প্রশ্ন করেন, রাষ্ট্রব্যবস্থাকে প্রশ্ন করে। কিন্তু সবার আগে নিজেকে প্রশ্ন করেন, যারা ভুল্ভাল তথয ছড়ায়ে ভিউ বাণিজ্য করে, এই ভয়াবহ ঘটনাকে পুজি করে রাজনীতি করে বেড়ায় তাদেরকে কি অজান্তেই সাপোর্ট করতেছেন নাকি?
একটু সহানুভুতিশীল হয়ে বাচ্চাগুলার জন্য, তাদের পরিবারের জন্য দোয়া করে্ন। আর হাতজোড় করে বলি, আমার বান্ধবীটা আর ওর পরিবারের জন্যও দোয়া কইরেন... গেসিং গেম খেলতে খেলতে আজেবাজে কথা ছড়ানো বা বলার আগে একটু ভাইবেন এই কথা গুলা কাছের মানুষের জন্য শোনাটা কতটা অসহনীয় হতে পারে!
@সানজিদা আফরিন