13/09/2025
মানুষের স্বপ্ন এঅববেই নষ্ট হয়ে যায়
গরুটার বর্তমান বাজার মূল্য অনায়াসেই ১৪০/১৫০ হাজারে যেত।
গরুটা ছিল একেবারে শান্ত, খাবারে রুচিও ভালো, কোনদিন পাগলামি করতে দেখিনি।
কিন্তু হঠাৎ করেই তিন-চার দিন আগে থেকে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে।
ডাক্তার আনলাম, প্রথমে বললেন নিউমোনিয়া—ইনজেকশন দিলেন, কোন লাভ হলো না।
আরেক ডাক্তার এলেন, তিনি বললেন পেটে পয়জন।
বেশ কিছু ইনজেকশন, ওষুধ দেওয়া হলো, কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি নেই।
দু’দিন পার হয়ে গেলো, গরু দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিল না।
পেট ফুলে যাচ্ছিল।
রাতে গিয়ে দেখি চার পা চারদিকে ছড়িয়ে কাতরাচ্ছে—চোখে পানি এসে গেলো।
কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
কসাই ডাকলাম, তারা বললো অবস্থা ভালো না। দাম বললো ৭০ হাজার, পরে ৮০ হাজার।
কিন্তু ভাবলাম—একটা গরু তো শুধু গরু না, মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে এটা একটা বড় পুঁজি, একটা স্বপ্ন।
যেটার দাম কোরবানির সময় হয়েছিল ১২০ হাজার, সেটা কি শুধু ৮০ হাজারে ছেড়ে দেবো?
ভাবলাম—যদি মরে যায়, যাক। তবুও বিক্রি করবো না।
কিন্তু গরুটার কষ্ট দেখে বুক ফেটে যাচ্ছিল।
ভিডিওতে দেখেছিলাম পাইপ দিয়ে ভুরি পরিষ্কার করা যায়, চেষ্টা করলাম।
কিছুটা বের হলো, গরু দাঁড়িয়ে গেলো, পানি খেলো।
সেই মুহূর্তে মনে হলো—আবার হয়তো বেঁচে উঠবে।
রাত পেরিয়ে সকাল হলো, কিন্তু গরু কোনোভাবেই পায়খানা করলো না।
আবার ডাক্তার আনলাম, বললেন—সব ঠিক আছে, শুধু অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু বিকেল নাগাদ গরুর কষ্ট আর সহ্য করা যাচ্ছিল না।
শেষমেশ কসাই আনলাম। নিজেই জবাই করলাম।
হৃদয়টা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছিল, তবুও গরুর কষ্ট দেখে আর কোনো উপায় ছিল না।
জবাই করার সময়ও সুস্থ গরুর মতোই বেগ পেতে হলো।
তারপর ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করে দিলাম। মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো সব।
কিন্তু আসল ধাক্কাটা খেলাম যখন ভুঁড়ি পরিষ্কার করতে গেলো।
দেখি—একটা লোহার জিআই তার শক্ত করে বিদ্ধ হয়ে আছে ভেতরে।
বুঝতে পারলাম—এই অভাগা টুকরো তারের জন্যই হারিয়ে গেলো আমাদের গরু, আমাদের স্বপ্ন, আমাদের পুঁজি
©©