03/10/2025
ফিলিস্তিনের এই ছেলেটার নাম ফারেস আল আওয়াদ।
বয়স খুব বেশি না, ১১ বছর মাত্র। ছেলেটা প্রায় প্রতিদিনই সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসে থাকে এবং আনমনে হাঁটে।
একজন ফটোগ্রাফার প্রায় সময়ই লক্ষ্য করতো ছেলেটাকে। দেখতো ছেলেটা এসে চুপচাপ বসে থাকে আর কি যেন খুঁজে।
ফটোগ্রাফার কৌতূহলী হয়ে একদিন ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিল- তুমি প্রতিদিন এই সমুদ্রের পাড়ে এসে কার জন্যে অপেক্ষা করো?
ছেলেটা ভারাক্রান্ত মনে উত্তর দিলো- সমুদ্রের ওই পার থেকে আসা জাহাজগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি আমি। সবাই বলাবলি করছিল কিছু জাহাজ না-কি আসতেছে।
এতে না-কি মানুষজন আছে এবং তারা আমাদেরকে বাঁচাতে চেষ্টা করছে। আমি তাদের অপেক্ষাতেই আছি। ওরা আসলে আমার ভাই-বোনগুলো হয়তো একটু ভালো খাবার খেতে পারবে।
যতবারই কোন জাহাজ আসার খবর পায় এই ছেলেটা ভোরবেলা থেকে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে কখন আসবে সেই জাহাজ।
কিন্তু সেই জাহাজগুলো আর আসতে পারে না, প্রতিবারই ধরে পড়ে যায় ই*সরা*য়েলি বাহিনীদের হাতে।
তারপর একরাশ মনখারাপ নিয়েই বাড়িতে ফিরে আসে ছেলেটা।
গতকাল সুমুদ ফ্লোটিলা জাহাজ আসার খবর শুনে অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছিল ছেলেটা। শুনেছিল এবারে না-কি অনেক বেশি জাহাজ একসাথে আসতেছে, অনেক নামি-দামি লোক আসতেছে।
তাই সে ভেবেছিল এবার যে করেই হোক জাহাজ আসবেই, তাদেরকে এখান থেকে উদ্ধার করবে।
তাই ভোর থেকেই সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করছিল ছেলেটা। বাড়িতে তার বাবা-মা, ভাই-বোনেরাও অপেক্ষা করছিল।
কিন্তু ফিলিস্তিনের সমুদ্রের তীরের প্রায় কাছাকাছি পৌঁছানোর পরপরই ই*সরা*য়েলি জালিম বাহিনীরা জব্দ করে ফেলে জাহাজগুলোকে। তারপর সবাইকে গ্রেফতার করে ফেলে।
আশেপাশের সবাই বুঝতে পারছিল এবারেও জাহাজগুলো আসতে পারবে না। তাই সবাই যার যার মতো বাড়ি ফিরে যাচ্ছিল।
কিন্তু এই ছেলেটা তখনো সমুদ্রের পাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখ দুটো পানিতে ছলছল করছিল, মনে হচ্ছিল যেকোন মুহুর্তে কেঁদে দিবে।
এবারে সে অনেক বেশি আশাবাদী ছিল। ভেবেছিল এবারে যে করেই জাহাজগুলোকে পৌঁছাবে, ওদেরকে উদ্ধার করবে, একটু ভালো খাবার দিয়ে যাবে।
দিন যায়, মাস যায় কিন্তু ছেলেটার আশা আর পূর্ণ হয় না। তার পরিবারে ক্ষুধার্ত বাবা-মা আছে, ছোট ছোট
ভাইবোন আছে, তাদের খাবারের দরকার।
না খেয়ে প্রায় মুমুর্ষু হয়ে মারা যাচ্ছিল সবাই। তাই জাহাজগুলো আসাটা অনেক বেশি দরকার ছিল তার।
তাই আজকে সবাই বাড়ি চলে গেলেও মনখারাপ করে সমুদ্রের পাড়েই দাঁড়িয়ে ছিল ছেলেটা। পুরোটা সময় জুড়ে ছলছল করা চোখে তাকিয়ে ছিল সমুদ্রের তীরের দিকে।
অপেক্ষা করছিল ভুল করেও যদি কোন জাহাজ চলে আসে। কিন্তু কোন জাহাজই আসতে পারেনি, সবগুলোই জব্দ করে ফেলেছে ।
ছেলেটা তবুও যায়নি। ছলছল করা চোখ নিয়ে পুরোটা সময় জুড়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল!
লেখা- Ibrahim Khalil Shawon