Crush & Confession by COBS

Crush & Confession by COBS সুন্দর সুন্দর গল্প পেতে পেজটি ফলো দিয়ে পাশে থাকুন।
(2)

03/11/2025

#দ্যা_সাইলেন্ট_ম্যানর

Part 24

© Dayna Imrose lucky

______________
ফজরের বাতাসটা স্নিগ্ধ শোভন হয়। ফজরের সময়ের বাতাসে মুনাফিকদের নিঃশ্বাস এর দুর্গন্ধ থাকে না।ঘুম থেকে উঠে ভোর বেলা হাঁটাহাঁটি করা শরীর এবং মনের জন্য উত্তম। মুসুল্লিরা দলে দলে মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে যাচ্ছে।পরনে জুব্বা।সাদা রঙের।হাতে তাসবিহ। মাথায় পাগড়ি। বিড়বিড় করে হালকা শব্দে জিকির করতে করতে যাচ্ছে। তাঁদের শরীর থেকে আতরের গন্ধ আসছে।।আতর ব্যবহার করা সুন্নত।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।ভোরের বাতাসটা যেন আতরের গন্ধে মিশে গেছে।

সুফিয়ান এর নাকে আতর এর গন্ধ ভেসে আসে।সে আতর ব্যবহার করেনি, কিন্তু আতরের গন্ধ নাকে আসতে আসতেই তাঁর মনটা কিছুটা হলেও স্বচ্ছ হল।সে উদ্ভ্রান্ত পথিক এর মত ক্ষেতের আইলে হাঁটছে। গতকাল রাতেও সে আজেবাজে স্বপ্ন দেখেছে।তবে পরিষ্কার করে মনে নেই। গতকাল মেলা থেকে ফারদিনা চলে যাওয়ার পর আর তাঁর সাথে দেখা হয়নি। রশীদ তালুকদার তাঁর দুই ছেলে রায়ান ও আরিব কে নিয়ে শহরে গেছে আজ সকালে। প্রতি রাজস্ব তোলার পর সে শহরে যান।কি কাজে যান সুফিয়ান জানে না। ফারদিনা সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেখা করতে আসবে বলেছে।এখনো আসছে না। আজকাল তাঁর জন্য সুফিয়ান উদাসীন হয়ে থাকে।আত্মার সম্পর্ক এমনি হয়।আত্মার সাথে কেউ মিলে গেলে তাকে ভাবতে না চাইলেও তাঁর ভাবনা চলে আসে।তাই হয়ত ব্রিটিশ লেখক জর্জ এলিয়ট তাঁর গ্রন্থে বলেছেন
“দুই মানুষের আত্মার চেয়ে বড় কি হতে পারে, যদি তারা জীবনের জন্য একত্রিত হয়,সব কাজের মধ্যে একে অপরকে শক্তি দেয়া, সব দুঃখে একে অপরের উপর নির্ভর করা, সব কষ্টে একে অপরের সহায়তা করা, শেষ বিদায়ের মুহূর্তে নীরব ও অমোঘ স্মৃতিতে এক হওয়া।”
জর্জ এলিয়ট প্রথম গ্রন্থের প্রধান চরিত্রে ছিল ডেরোথিয়া ব্রক। যিনি ছিলেন ভালোবাসার পা’গল।নারী হয়েও সে ভালোবাসার মানুষটির জন্য পথে পথে হেঁটেছে পাগ’লের মতন।আজ সুফিয়ান হাঁটছে।তবে সে পুরুষ। পুরুষেরা ভালোবেসে বেশি পা’গল হয়। পুরুষের দেহ শক্তিশালী। কিন্তু দেহের ভেতরে থাকা বারো সেন্টিমিটার এর হৃদয় টা যে দুর্বল। শুধু একজন কে ঘিরে।ফারদিনা।কাল আজমাত ফারদিনার হাসির প্রশংসা করেছিল। আজমাত একজন পর্যটক, এবং একজন অতিথি বলে বেঁচে গেছে।নয়ত যে চোখ দিয়ে ফারদিনার রুপ দেখেছে সে চোখ উপড়ে ফেলত।মুখ দিয়ে প্রশংসা করছে।সেই মুখ ভেঙ্গে দিত।ভিনদেশীদের নিজ দেশে সম্মান করতে হয়।বলেছে নিজাম হায়দার। সুফিয়ান কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছিল।সে জানে ফারদিনা তাকে ইচ্ছে করে রাগায়।ফারদিনা জানে না, সুফিয়ান এর ঠিক কতটা কষ্ট হয়।

বদরু,হাবলু,লাল মিয়া আজ একসাথে ক্ষেতে এসেছে।আজ ওদের কাজ ছিল না।কাল সুফিয়ান আসতে বারণ করেছে। একদিন ছুটি দিয়েছে। পারিশ্রমিক দিয়েছে। ওঁরাও বলেছে আসবে না। কিন্তু ওঁরা এসে বাদবাকি কাজ শুরু করেছে।
সুফিয়ান নিরুত্তাপ ভঙ্গিতে বসে আছে।বদরু তাঁর অভিব্যক্তি দেখে বলল “ঐ যে আপনার রানী চলে আসছে।”
সুফিয়ান উল্লসিত হল না।ধীর স্থির দৃষ্টিতে ঘুরে তাকাল ফারদিনার দিকে।আজ সে আগে আগে হাঁটছে ঝিলমিল পেছনে।ওর সাথে আজমাত। সুফিয়ান স্থির হয়েই ছিল, হঠাৎ যেন রাগ উঠতে শুরু করল। না’ অকারণেই রাগ দেখানো যাবে না। মেয়েরা হয় ফুলের মত,ফুল তীব্র বাতাসে ঝড়ে পড়ে।ফারদিনা তাঁর কাছে শুধু ফুল নয়,একটি নক্ষত্র।ফারদিনার হাতে কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। সোনালী কাপড়ে মোড়ানো।

ফারদিনা সুফিয়ান এর কাছে এসে ক্ষীণ গলায় কাশি দিল।যেন সুফিয়ান তাকে দেখেনি। সুফিয়ান আইলের উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো।বলল “খোলা মাঠ থেকে চলো।”
“কোথায়?
“এমন জায়গায় যেখানে তোমাকে আমাকে কেউ দেখবে না”
“সে-ই জায়গা কোথায়? ফারদিনার কন্ঠে খেলাখোলা ভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
“নীরব ঘরে? সুফিয়ান এর মুখে হাঁসি নেই। একরাশ স্তব্ধতা।
“সেখানে কি করবে?
সুফিয়ান দু কোমরে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লম্বা শ্বাস ফেলে বলল “অন্যরা যা করে আমরাও তাই করব। বেয়াদব মেয়ে একটা।সব বুঝেও বাচ্চা সাজে।” বলে ফারদিনার বা হাত ধরে তাঁর বাড়ির দিকে নিয়ে যায়। ঝিলমিল ও আজমাত হা করে তাকিয়ে রইল।বদরু হাবলু লাল মিয়া নিজেদের মধ্যে বলল ‘এদের প্রেমের জোয়ারে ভেসে যাই আমরাও’
ঝিলমিল বলল “নিজেদের প্রেমে ভাসো।অন্যরডার দিকে নজর দিও না।”

সুফিয়ান ফারদিনাকে নিয়ে ঘরে চলে আসে।ফারদিনা চেয়ারে বসে আছে।সুফিয়ান চোখ তুলে দেখছে ফারদিনার হাতের সোনালী কাপড় টা।জিজ্ঞেস করেনি ওটা কি?টেবিল থেকে একটা বই বের করল সুফিয়ান। কিছু পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একটা লকেট বের করল। স্বর্ণের লকেট।ফারদিনা চোখ কুঁচকে বলল “এটা তুমি কোথায় পেলে?
“আমার মায়ের ছিল।লকেট এর ভেতরে খোদাই করা দুটো অক্ষর আছে।”
“অক্ষর দুটো কি?
“স’ফ’”
“এর দ্বারা কি হত?
“স’ আমার আব্বার নামের প্রথম অক্ষর। আমার মায়ের নাম ছিল ফারহিনা।’
“ঠিক আমার নামের মত। এতটা মিল” ফারদিনা শীতল হয়ে গেল।
“হয়ত এটা কাকতালীয়। কিন্তু এক হিসেবে ভালোই হয়েছে‌। আমাদের নাম আর আলাদা করে খোদাই করতে হয়নি।"
“এটা তুমি কি করবে?ফারদিনা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল।
“তোমাকে দেব। আমার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিবে।”
“স্মৃতি হিসেবে রেখে দিব মানে।” ফারদিনা নড়েচড়ে বসল।কেউ কাউকে ছেড়ে চলে গেলে তার স্মৃতি হয়।হয় দুনিয়া থেকে চিরদিনের জন্য,নয় দুনিয়ার কোন অজানা স্থলে চলে গেলে। সুফিয়ান এর স্মৃতি দিয়ে সে কি করবে? সুফিয়ান তাকে ছেড়ে চলে যাবে?
সুফিয়ান কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলল “আমি বলতে চেয়েছিলাম তোমাকে দেয়া আমার প্রথম উপহার। যত্নে আগলে রেখো।”
“তুমি ভুল বলনা কখনো,আজ কেন ভুল বললে?
“কখনো কখনো ভুল বলতে হয়,অপর মানুষটির সত্যতা যাচাই করা যায় না।”
“কেমন সত্য?
“এই যে, তোমার চোখে হঠাৎ আমাকে হারানোর ভয় ফুটে উঠল।” বলে লকেট এর দিকে তাকাল।লকেট টা বইয়ের মধ্যে ছিল,ফারদিনার কাছে বিষয়টি অদ্ভুত লাগল। স্বর্ন অলংকার দামী জিনিস,গোপন জায়গায় রাখতে হয়।বইতে যে কেউ হাত দেয়। সুফিয়ান একা থাকে। তাঁর ঘরে কারো আসার সম্ভাবনা নেই।তবুও..! ফারদিনার মনে প্রশ্ন জমলো!বলল “লকেট বইয়ের মধ্যে কেন রাখলে? তোমার সাথেই তো চো’র থাকে,যদি ওরা নিয়ে যেত।”
“শোনো,দামী জিনিস দামী জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয় না।এমন জায়গায় সংরক্ষণ করতে হয়,যে জায়গাটি সবার সন্দেহের বাইরে থাকে"
“আমি তোমার বুদ্ধিমত্তা এবং কথার ধরনে বিভ্রান্ত হয়ে যাই। তুমি সত্যিই একজন কৃষক, একজন রাখাল তো?
“তোমাদের জন্যই কৃষকেরা পিছিয়ে। কৃষকেরা কি মানুষ না! তাঁদের জ্ঞান থাকতে পারে না, সুন্দর করে কথা বলতে পারে না? অবশ্যই পারে। তাঁরা চাইলে সব পারে। মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষি কাজ।তুমি মানো আর না মানো।”
“তুমি ভুল বললেও, সেই ভুলকে আমি সঠিক বিচার করি।লকেট টা হাতে রাখবে?
সুফিয়ান লকেট টা ফারদিনার গলায় পড়াতে যেয়ে ফারদিনার ঘারের দিকে তাকাল। বাদামি রঙের একটা তিল।যেটা ফারদিনার সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।ফারদিনা হাত দিয়ে ধরে দেখল লকেট। সুফিয়ান একটা মাটির পাত্রে জল নিয়ে আসল।ফারদিনার সামনে ঝুঁকে বলল “নিজেকে দেখো কত সুন্দর দেখাচ্ছে! একদম পরীর মত।” ফারদিনা জলে দেখছে নিজের প্রতিবিম্ব। সুফিয়ান বলল “ চলো দিঘীর পাড়ে যাই।”

দিঘীর পাড়ে বক পাখি বসে ছিল। তাঁদের দেখেই পাখনা মেলে উড়ে গেল।আজ সূর্য উঠেছে।সবেই সূর্য এর দেখা মিলেছে।সকাল থেকে কুয়াশায় ঘেরা ছিল। তখনকার সাথে এখনকার আবহাওয়া পার্থক্য অনেক। পরিবেশ টা শান্ত, শীতল কিন্তু কোন এক কারণে যেন রোদেরা উজ্জ্বল হাসছে। রোদের সৌন্দর্য আজ পরিপূর্ণ ভাবে ফুটে উঠেনি।ফারদিনা দেখছে তীব্র আলো।সুফিয়ান দেখছে না সে-ই আলো। তাঁর চোখে ফারদিনার রুপ সূর্যের আলোর থেকেও দ্বিগুণ উজ্জ্বল।ফারদিনার গলার লকেটটা রোদে পড়ে চিকচিক করছে।রোদেরা যেন ঝিলিক মারছে।
ফারদিনা হাতে সোনালী কাপড়টা মোরাচ্ছে। লম্বা লাঠি জাতীয় কিছু একটা। সুফিয়ান জিজ্ঞেস করল “এটা কি? কখন থেকেই দেখছি হাতে।”
ফারদিনা টান টান চোখে সুফিয়ান কে দেখে বলল “তোমার জন্য একটা উপহার এনেছি।”
“কি এনেছো?
“স্বর্ণের বাঁশি। তোমার কন্ঠে অনেক দিন সুর শুনি না।আজ এখন নয়।অন্য কোন সময় তুমি তোমার অনূভুতির সুরে বাঁশি বাজাবে।”
ফারদিনা কাপড় থেকে বের করল। বাঁশিটা সুফিয়ান হাতে নিল। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল। সুফিয়ান বাঁশি রেখে দিঘীর জলের দিকে তাকাল। নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ।যেন সময় থমকে গেছে। তাঁর দৃষ্টি জলের দিকে। কিন্তু ভাবনার পাতায় অন্য কিছু।ফারদিনা কিঞ্চিৎ বিস্ময়ে ডাকল “সুফিয়ান”।সুফিয়ান তাঁর ডাক খেয়াল করেনি।ফারদিনা এবার গায়ে হাত দিয়ে ডাকল।ঠিক তখনই সুফিয়ান হুঁশে ফিরে যেন। হঠাৎ করে ঝাপসা কন্ঠে বলল বিন্তি।ফারদিনা সুফিয়ান এর মুখে এরকম নাম শুনে আঁতকে উঠল।বলল “বিন্তি কে?
“কেউ না।জলে থাকা ছোট্ট মাছ কে বিন্তি বলে। ওদের দেখছিলাম।” সুফিয়ান এর চোখ এলোমেলো।
ফারদিনা চিন্তার ঘূর্ণিতে হারিয়ে গেল। বলল ‘মিথ্যা বলছো কেন?আমি তোমার সামনে বসা, তোমার জন্য একটা উপহার নিয়ে আসলাম,আর তুমি ছোট্ট মাছ দেখছো!কি হয়েছে তোমার?
“তোমার বাঁশিটা সুন্দর।তবে তোমার থেকে বেশি নয়।”
“মানুষ ভাবনার জগতে তখনই যায় যখন, বর্তমান মুহুর্তের সাথে অতিতের স্মৃতি জড়িয়ে থাকে।”
“কি সব বলছো তুমি, ছোট্ট মাছ কে বিন্তি বলে। বিশ্বাস না হলে তোমার ভাইকে জিজ্ঞেস করে নিও।”
“তুমি আজ মিথ্যা বলছো না। কিছু একটা বলতে গিয়ে তোমার কন্ঠ আটকে গেছে।”
“ধুর বোকা,আমি কখনো কথায় আটকে যাই না।”

ফারদিনা একদম চুপ হয়ে গেল। বিন্তি কোন মেয়ের নাম। সুফিয়ান এর মুখ থেকে হঠাৎ ওর নাম বেরিয়ে গেছে।ছোট্ট মাছের নাম বিন্তি হয় না। চোখের কোণে জল জমল।সুফিয়ান ঝুঁকে ফারদিনার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল “ইশ,আজ আমি শেষ।রাগিনী আজ রাগ করেছে,এই রাগ ভাঙ্গানো মুশকিল। বিশ্বাস কর, আমি সত্যিই মাছের নাম বলেছি। মাছের আরো নাম আছে,বলব?
“আব্বা শহর থেকে ফিরে এসেছে।আমি আজমাত এর সাথে বের হয়েছি বলে আসতে দিয়েছে। এখন চলি।”
“ঐ বাঁদর’টাকে আজ রাঙার সাথে বেঁধে ছেঁড়ে দেব।রাঙা ছুটবে ও মাটিতে গড়াগড়ি খাবে।”
“তোমার কোন অধিকার নেই আজমাত কে কিছু বলার। দ্বিতীয় বার আমি আর তোমার সাথে কথা বলব না।দেখাও করতে আসব না।” কথা বলতে পারছে না ফারদিনা।রাগে গলা থরথর করছিলো যেন।বাকি কথা গিলে হনহন করে উঠে চলে যেতে চাইল। সুফিয়ান দাঁড় করিয়ে বলল “শুধু শুধু আমার উপর রাগ করে এভাবে চলে যেওনা।”
“তুমি তোমার বিন্তি কে নিয়ে থাকো।আমি আজমাত এর সাথে এখন থেকে কথা বলব।রাতেও তাঁর সাথে মিশব।তার ঘরে যাব। দরকার হয় বিয়ে করে বিদেশ চলে যাব।তবুও আর তোমার কাছে আসছি না।”
সুফিয়ান রাগে চোখ লাল করে ফেলল।ফারদিনা চলে যাচ্ছে। সুফিয়ান তির্যক কন্ঠে চেঁচিয়ে বলল “তুমি না আসলে তোমার বাড়ি গিয়ে তোমার সাথে কথা বলব।” ফারদিনা ঘুরে তাকাল না। সুফিয়ান এর কানের কাছে ফারদিনার বলা শেষ কথাগুলো ভাসছে “আজমাত এর সাথে মিশব, তাঁর ঘরে যাব, বিয়ে করে চলে যাব”। সুফিয়ান এর রাগ হচ্ছে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।রাগ দমন করার জন্য সিগারেট বের করল। সিগারেট টা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে আবার ফেলে দিল।কেউ যখন মাত্রাতিরিক্ত রেগে যায় তখন,হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়।রক্তচাপ বেড়ে যায়।রক্তে অ্যাড্রেনালিন ও কর্টিসল বৃদ্ধি পায়। এতে শরীর যুদ্ধের মতো প্রস্তুত হয়ে যায়। সুফিয়ান রাগ প্রয়োগ করার মত কিছু পেল না।ফারদিনা চলে গেছে,এখন রাগ দেখিয়েও কিছু হবে না। নিয়ন্ত্রণ করছে নিজেকে।মাথা পেছনের দিকে ঝুঁকে সূর্য বরাবর তাকাল। সূর্যের রশ্মি সরাসরি তার মুখে পড়েছে।তাপ সহ্য হচ্ছে। সূর্যের তাপ এর থেকে ফারদিনার শেষ কথাগুলো বেশি তিক্ত ছিল। আশেপাশে তাকাল স্থির চোখে।হাতে বাঁশিটা দেখল।আলতো করে স্পর্শ করল,যেন এটি স্বর্ণের নয় তুলার তৈরি।

____________
সন্ধ্যার সময় কুদ্দুস রান্না ঘরে খুঁটিনাটি কাজ করছে।আজ সারাদিন ভেবেছে ফারদিনাকে কিভাবে পাওয়া যায়।ও যেদিন থেকে এ বাড়িতে প্রথম এসেছে সেদিনই ফারদিনাকে দেখে প্রেমে পড়েছে।ফারদিনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে।কিরগিজ ভাষায়।ফারদিনা সেদিন হেসে উড়িয়ে দিলেও বলেছে তাঁর সিদ্ধান্ত জানাবে। কিন্তু জানায়নি।কুদ্দুস হতাশায় ভুগছে। বিকেলের দিকে একজন তান্ত্রিক এর নাম মনে শোনে।কালীচরণ তান্ত্রিক।সে কালো জাদু করছে আজ দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে।কালীচরণ এর খোঁজ দিয়েছে রশীদ এর অন্যতম বিশ্বস্ত অনুচারী। কুদ্দুস ফারদিনার জন্য তান্ত্রিক এর খোঁজ করছে, বিষয়টি লুকিয়ে মিথ্যা বলে সেই তান্ত্রিক এর সন্ধ্যানে যায়। তাঁর কাছে বিস্তারিত বলার পর একটা মাটির পাত্রে জল দিয়েছে।বলেছে এই জল রাত বারোটার আগেই যেন ফারদিনাকে খাওয়ানো হয়। তাহলে সে কুদ্দুস এর প্রেমে পড়ে যাবে।

কুদ্দুস হাসছে।আজ সে ভীষণ খুশি।ফারদিনাকে নিজের করে পাবে।সময় শুরু হয়ে গেছে,এখনি খাওয়ানো দরকার।হাতে জলের পাত্র নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই দেখল রশীদ তালুকদার বৈঠকখানায় বসে আছে।সাথে রায়ান ও আরিব এবং জেবুন্নেছা। কিছুক্ষণ পর রায়ান,আরিব ও জেবুন্নেছা চলে যায়। রশীদ বসেই আছে। কুদ্দুস জলের পাত্র টা পুনরায় রান্নাঘরে নিয়ে গেল। রশীদ বিষয়টি দেখে ডাকল “কালু, খেজুরের রস নাকি, নিয়ে আয়, গলাটা শুকিয়ে গেছে,রস খেলে ভালোই হবে।” কুদ্দুস মহা বিপদে পড়ল। রশীদ শহরে গিয়েছিল,এত তাড়াতাড়ি শহর থেকে আসার কথা নয়। কুদ্দুস কি করবে বুঝতে পারল না। অপ্রস্তুত ভাবে উত্তর দিল “জল তেষ্টা পেলে জল খেতে হয়,রস না।”
“মাথা গরম করিস না। নিয়ে আয়।” কুদ্দুস নিয়ে আসল। কিন্তু এটা রস নয়,জল।কালো জাদুর জল।এই জল কিছুতেই খেতে দেওয়া যাবে না।প্রসঙ্গ বদলে কোন ভাবে এখান থেকে ছুটে পালাতে হবে। সোজা ফারদিনার কাছে। কুদ্দুস বলল “আপনার না শহরে যাওয়ার কথা?
“মাঝপথে গিয়ে ভাবলাম,আজ না গেলেও চলবে।পড়ে একদিন যাব।কেন,আমি আসাতে বুঝি তুই খুশি হসনি।?
“আপনার বাড়ি, আপনি আসবেন। আমার ভালো লাগা না লাগাতে কি আসে যায়।”
“বকবক না করে রস দে”
“এটা রস না”
“তাহলে কি?
কুদ্দুস এখন কি বলবে! রশীদ এর থেকে এত সহজে পালাতে পারবে বলে মনে হয় না। রশীদ ছড়ি পাত্রে ঢুকে বলল “কি হলো,কি আছে এটাতে? এমন ভাবে ধরে রেখেছিস যেন তোর প্রাণ লুকিয়ে রেখেছিস।”
“হুঁ।তেমনি”
“দে দে দে, জলদি দে,তোর সাথে ঝগড়া করার আমার কোন ইচ্ছা নেই।রস টা দে খেয়ে ঘুম দিতে হবে।রস খেলে ঘুম হয় জানিস তো?
“না।সবে জানলাম।আমি রস দেব না। আমার খাওয়ার জন্য এনেছি।”
“পাত্র টা আমার কাছে দে,তুই হা কর আমি ঢেলে দেই।তুই এক চুমুক খা, বাকিটা আমি খাব।”
“না, কিছুতেই দেয়া যাবে না।”
তাঁদের কথোপকথন এর মাঝে হাজির হয় ফারদিনা।সে বলল “তোমরা কি নিয়ে কাড়াকাড়ি করছো?
“দেখ মা, কালু আমায় রস খেতে দিচ্ছে না। ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আয় যা।” রেগে গেলেন রশীদ।ফারদিনা কুদ্দুস কে লক্ষ্য করে বলল “কি কুদ্দুস ভাই,রস টা দিচ্ছ না কেন, আব্বা খেতে চাচ্ছে দাও।” বলে ফারদিনা কুদ্দুস এর হাত থেকে জলের পাত্র টা নিয়ে রশীদ এর হাতে দেয়। কুদ্দুস ভয়ে নিজের হাত নিজে কামড়াতে শুরু করল।ফারদিনা অতিথিশালার দিকে চলে যায়। রশীদ রস বুঝে জল খেয়ে বলল “হতচ্ছাড়া,এটা তো জল। এতক্ষণ আমার সাথে মশকরা করেছিস?” কুদ্দুস কিছু না বলে নিজের ঘরে দৌড়ে চলে যায়। দরজা টা কপাট করে বন্ধ করে দিল। বিছানায় ধব করে বসে পড়ে।আজ ওর অবস্থা দফারফা হয়ে যাবে। তান্ত্রিক কালীচরণ বলেছে এই জল যে খাবে সে সাথে সাথে ওর জন্য বস হয়ে যাবে।ওর প্রেমে হাবুডুবু খাবে।কালীচরণ এর কালো যাদুর কাজ কোনদিন বেফলে যায়নি। রশীদ নিশ্চয়ই এখন ওর ঘরে আসবে। কুদ্দুস এর ভাবনা শুরু হওয়ার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ভেসে আসল। নিশ্চয়ই রশীদ।কুদ্দুস কোন মতেই দরজা খুলবে না।
দরজা এখন ধাক্কাধাক্কি করছে। দরজা ধাক্কানোর আওয়াজে কুদ্দুস লাফিয়ে উঠল।আজ দরজা ধাক্কানোর কথা ছিল ফারদিনার।হল না। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।
এবার রশীদ চেঁচিয়ে ডাকল কুদ্দুস কে। কুদ্দুস উত্তর দিল “আমি ঘুমিয়ে পড়ছি। আপনি আপনার ঘরে যান‌” যতটা সম্ভব জোড় গলায় উত্তর দিয়েছে।দরজায় ওপাশে শব্দ গেছে বলে নিশ্চিত হল না। রশীদ আবার ডাকল। কুদ্দুস ধীরে পায়ে হেঁটে দরজার দিকে গেল। মুখে একটা গামছা চেপে ধরল। রশীদ কে কোন ভাবে মানানোর চেষ্টা করতে হবে।মনে মনে প্রার্থনা করে দরজা খুলে দিল। রশীদ নরম গলায় বলল “তোর এতক্ষণ লাগলো কেন দরজা খুলতে?
“আপনি আমার ঘরে কেন?
“আজ আমি তোর সাথে ঘুমাবো।সর।” বলে কুদ্দুস এর খাটের উপর বসে। কুদ্দুস চোখে মুখে ভেজা ভাব এনে বলল “আমার সাথে কেন ঘুমাবেন?
“তোকে আমি সারাদিন বকাঝকা করি,আজ থেকে আর বকাঝকা করব না। তাছাড়া এতদিন তোর ভালোবাসা আমি বুঝতে পারিনি।”
কুদ্দুস রশীদ এর সামনে গিয়ে বলল “আমায় বকেন,মারেন, বেশি বেশি কথা শোনান,তবুও আমার ঘর থেকে যান”
“তুই আমার সাথে এরকম টা করিস না।আজ..আজ আমি তোর সাথেই থাকব।”
কুদ্দুস কাঁদো কাঁদো গলায় বলল “ইয়া আল্লাহ এ কি বলে,আমি এখন কি করব,কই যাব?
রশীদ ঠান্ডা গলায় ছড়ি ওর দাড়িতে ঠুকে বলল “তোর কি আমাকে পছন্দ না? আমার অর্থসম্পত্তি কোন কিছুর অভাব নেই।কি নেই আমার?সব আছে।কি চাই তোর বল?
কুদ্দুস মেঝেতে বসে পড়ে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল “এ আমি কি করলাম,এখন আমি কোথায় যাব, আপনি দয়া করে আমার ঘর থেকে যান,কেউ আপনাকে এই অবস্থায় দেখলে হাসাহাসি করবে।”
রশীদ কুদ্দুস এর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল “তুই চাস আমি চলে যাই?আমি গেলে তুই সত্যিই খুশি হবি?
“হুঁ,জলদি যান‌।আর আমি দেখতেছি কি করে আমার বস কাটানো যায়।”
“এটা মনের মিল কালু।বস না‌।”
“আপনার ছেলেরা দেখবে, হাসবে। আপনার ঘরে যান‌।”
“তোর ঘরে থাকলে থাকলে সমস্যা তাই না,তুই আমার ঘরে চল।বেশ মজা হবে।"
কুদ্দুস বসা থেকে শুয়ে পড়ল মেঝেতে। কান্না করতে করতে বলল “আমি আর কোনদিন তান্ত্রিক এর কাছে যাব না। আল্লাহ এবার আমায় মাফ করে দাও।”
রশীদ বলল “চুপ,কাঁদিস না,আমি আগে যাচ্ছি।তুই পড়ে আয়।” রশীদ যেতে যেতে কয়েকবার পেছন ঘুরে কুদ্দুস কে দেখল। কুদ্দুস মনে মনে স্বীকার করল, এবারের মত বেঁচে গেছে। কিন্তু যত দ্রুত সম্ভব বস কাটাতে হবে।”

রশীদ গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে সিঁড়ি বেয়ে উপর উঠছে।
চাঁদের আলোয় তোর মুখ জ্বলে,
হৃদয় আমার শুধু তোরে ডাকে।
বাতাসে ভেসে আসে নাম তোর,
প্রেমের সুরে মন খুশিতে নাচে,
জেবুন্নেছা রশীদ এর সামনে বেশ হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো। রশীদ দাঁড়িয়ে গেল। জেবুন্নেছা ফিসফিস করে বলল “ভাই শুনেছিস,গতকাল মেলা থেকে পনেরো টা বাচ্চা গা’য়েব হয়ে গেছে!....

(বানান ভুল থাকলে ছোট্ট একটা সস দিয়ে টুস করে ইনবক্সে দিয়ে দিও। ফ্ল্যাশব্যাক এর সাথে গল্পের মূল কাহিনী। এরপর বর্তমান নিয়ে শেষ। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।)

03/11/2025

#দ্যা_সাইলেন্ট_ম্যানর

Part 23

® Dayna Imrose lucky

সুফিয়ান কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে নিস্তেজ ভঙ্গিতে নিরুত্তাপ গলায় বলল ‘এসব নিয়ে তুমি ভেবো না। স্বপ্নের অর্থ হয় না।’ ফারদিনা দৃষ্টি নিচু করে তাকিয়ে আছে। সুফিয়ান সিগারেট ফেলে দিল নদীর জলে।ঘার ঘুরিয়ে তাকাল ফারদিনার দিকে।আজ মিষ্টি রঙের শাড়ি পড়েছে ফারদিনা। শাড়িতে ফারদিনার শরীরের আবেদনময়ী তন্বী শরীরের একটি বাক স্পষ্ট।যা সুফিয়ান কে আকৃষ্ট করল।কোমর পর্যন্ত লম্বা খোলা চুলে আজ যেন আফিমের নেশা ধরানোর ঘ্রাণ। তাকে আজ অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু মুখ গম্ভীর হয়ে থাকায় বোধহয় সম্পুর্ন সৌন্দর্য টা ফুটে উঠছে না। সুফিয়ান দৃঢ়তার সাথে বলল “হঠাৎ তোমার মন খারাপ কেন হল?কিছুই বলছো না। তুমি চুপ থাকলে আমার যেন সব এলোমেলো মনে হয়।” ফারদিনা এবারো চুপচাপ। সুফিয়ান এর ভালো লাগছে না ফারদিনার নিরবতা। দোষটা তাঁর।সে যদি খারাপ স্বপ্নের কথা না বলতো তবে, তাঁর মন বিষিয়ে উঠত না।মনে মনে নিজেকে দোষারোপ করল।নিয়ম অনুযায়ী কেউ দোষ করে অন্যর মনে আঘাত দিলে তাকেই সুদরে নিতে হয়।সে আঘাত করেছে ফারদিনার মনে।এখন মন ভালো করার দায়িত্ব তাঁর।

সুফিয়ান গলা পরিষ্কার করে বলল “তুমি কথা না বললে নদীতে ঝাঁপ দেব। গভীরতায় ডুবে মরে যাব। তোমার কষ্ট হবে না?” ফারদিনা কোন প্রতিক্রিয়া করছে না।ভুলভাল উপায় মনে হচ্ছে।এই উপায় মন ভালো না, বরং খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রিয় মানুষ টা জলে ডুবে মরে যাবে?এটা কেমন উপায়?এটা কোন মাধ্যম এর মধ্যে পড়ে না মন ভালো করার। সুফিয়ান নিজেই নখ খুঁটতে শুরু করল। তারপর ভেবে বলল ‘আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তোমার আমার বিয়ের পর আমরা শীঘ্রই বাচ্চা নেব।মেয়ে বাঁচ্চা।মেয়েই হবে দেখো।লাল টুকটুকে মেয়ে। তোমার মত সুন্দরী, তোমার মত নাক, তোমার মত চুল, তোমার মত তেজ,সব তোমার মত হবে। আমার আর একটা ফারদিনা হবে।তবে ওর নাম কি রাখা যায় বলোতো!” সুফিয়ান ঢং করে চিন্তা করল।বলল ‘উমম ওর নাম দেব সমুচা।দেখো সমুচা উচ্চারণ করার সময় মুখটা উউউ হয়ে যায়।” সুফিয়ান ভেঙিয়ে দেখালো।ফারদিনা সুফিয়ান এর কথা শুনে হেসে উঠল।হাঁসির বন্যা বইলো যেন।ফারদিনার হাঁসি দেখে সুফিয়ানও নিঃশব্দে হাসল। মুগ্ধতার সাথে তার হাসি দেখে বলল “এভাবে হেসো না সুন্দরী, তোমার হাঁসি দেখলে যে পরান জ্বলিয়া যায়।”
ফারদিনা হাঁসি নিয়ন্ত্রণ করে বলল “সত্যিই জ্বলছে তো?
“তোমার জন্য অন্তর জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আগুনের উত্তাপে-আর সেই উত্তাপ নেভাতে তোমার একরাশ হাসিই যথেষ্ট’
“তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো?
“প্রমাণ লাগবে? ঝুঁকে বলল।
“প্রমাণ দাও,যাও নদীতে ঝাঁপ দাও।” দুষ্টুমির কন্ঠে বলল ফারদিনা।
সুফিয়ান এক ভ্রু কুঁচকে বলল “নদীতে ঝাঁপ দিলে আমি মরব না, সাঁতার কেটে উঠে যাব।আমি তো তোমার মায়াজালে আটকেছি। সেখান থেকে আর চাইলেও বেরোতে পারব না। যদি ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয় তোমাকে সাথে নিয়ে দেব, প্রমাণ সার্থক,আমরাও সফল।’
“এ জনমে তাহলে আমাদের পূর্ণতা মিলবে না। পুনর্জন্ম আর হবে না।”
“ভালোবাসার প্রমাণ হয় না বুদ্ধু মেয়ে। প্রমাণ সে-ই চায় যে ভালোবাসে না।সত্যিকারের ভালোবাসা উপলব্ধি করে নিতে হয়।’
“তোমার আর আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে তো?
“যদি উপর ওয়ালা চান, নিশ্চয়ই হবে।’ বলে মৃদু হাসল।
‘তুমি আদিব ভাইয়ের সাথে কথা বলবে? আব্বার সাথে? আমাদের বিষয়ে?
সুফিয়ান চোখ সরিয়ে বলল “সময় হোক,আমি তাদের সাথে কথা বলব!”
“সত্যি বলবে তো? উৎফুল্ল হল ফারদিনা।
“মিথ্যা যদি প্রেমের সেতুর বন্ধনে জায়গা পায়,তবে সে প্রেম সফল হয় না।’বুঝেছো?
“হুঁ’ নিস্তেজ এর সাথে বলল ফারদিনা। সুফিয়ান বলল “এক অক্ষরে জবাব দিচ্ছ যে,কথা বলার ইচ্ছে নেই?
“আছে!”
“এবার দুই অক্ষরে জবাব দিয়েছো। আমার সাথে একাধিক শব্দে কথা বলবে।যা অকাজের তাও বলবে। তোমার মুখে প্রতিটি কথাই শুনতে ভালো লাগে। মানুষ গান শুনতে পছন্দ করে,কানে যদি গানের সুর ভেসে আসে,সে ধ্যান দিয়ে শুনে।আমি তোমার প্রতিটি কথার শব্দেই সুর পাই।যা আমাকে মুগ্ধ করে।”
“আমি কি সত্যিই তোমার হয়ে গেছি?” গালে হাত দিয়ে নম্র কন্ঠে জিজ্ঞেস করল ফারদিনা।
সুফিয়ান ফারদিনার মুখের দিকে তাকিয়ে কন্ঠ গভীরে নিয়ে বলল “তুমি আমার শিরায় উপশিরায় গেঁথে গেছো।মস্তিষ্কের নিউরন এর ভাজে তুমি। মানুষ তাই জীবন থেকে সরাতে পারে,যার সাথে দেহের সম্পর্ক থাকে।আত্মার সাথে সম্পর্কিত সম্পর্ক কখনো ছিন্ন হয় না।”
“আর যদি মরে যাই? এরুপ প্রশ্ন করতে ফারদিনার ভালো লাগে।ভালোবাসার মানুষটির চোখে নিজেকে হারানোর ভয় দেখতে কার না ভালো লাগে?সবার ভালো লাগে।সে উপভোগ করে সে-ই আনন্দ। সুফিয়ান হয়ত এখন তাকে বকাবকি করবে।রাগে উঠে যাবে। এরপর সে আবার রাগ ভাঙ্গাবে।
সুফিয়ান উত্তেজিত হল না। শান্ত হয়ে বসে রইল।
শান্ত চোখে চেয়ে বলল “তাহলে আমিই আমার জন্য কবর খুঁ’ড়ব।সেই কব’রে তোমাকে নিয়ে চিরদিনের জন্য একটা ঘুম দেব” বলে পেছনে হাত রেখে ভর দিয়ে ঝুকল। ঠোঁটের কোণে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাঁসি আনল।

নীরবতায় কেটে যায় অনেক সময়। নদীর জল শান্ত। কিছু মাঝিরা নৌকা বাইছে।মেলার অনেক মেয়েরা নৌকায় উঠছে।মাঝিরা তাঁদের নিয়ে নদীর মাঝে চলে গেছে। হাঁসি আর আনন্দে কাটছে আজকের দিন। সুফিয়ান বলল “সময় গড়াচ্ছে। কিছু খেয়ে নাও,যাও। ঝিলমিল কে ডাকি”
“তুমি সাথে থাকলে খিদে পায়না।”
সুফিয়ান কিছুটা ধমকের সুরে বলল ‘নাটক বন্ধ কর।চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে। তুমি মেলার দিকে চলে যাও।”
“তুমি আসবে না?
“তোমার সঙ্গে যাব না।পড়ে যাব।”
“যদি চলে যাও?
“যাব না, নদীর তীরে ভালো লাগছে। কিছুক্ষণ বসে থাকি। এরপর আসব।” সুফিয়ান এর মুখে উদ্বিগ্নতা।
ফারদিনা সুফিয়ান এর অভিব্যক্তি দেখে কিছু বলল না। তাকে রাগানোর জন্য এবং মেলায় নেয়ার জন্য বলল “তুমি না আসলে আমি আজমাত এর সাথে কথা বলব।ঘুরব।” সুফিয়ান চোখে অগ্নিময় ভাব নিয়ে তাকালো ফারদিনার দিকে।বলল “ঐ বেটাকে আমি সত্যি সত্যি জলে ডুবিয়ে মারব। তুমি কি সেটা চাও?
“আমি কথা বলব,ওর দোষ কোথায়?
“তোমাকেও ডোবাবো।”
“তুমি যা পারবে না,তা বলো না।”
সুফিয়ান এর রাগ হল। আজমাত এর জন্য প্রসঙ্গ পাল্টে যাচ্ছে।রাগ দেখাতে চাচ্ছে না। কিন্তু না চাইতেও মুখের রং পাল্টে গেল। নিজেকে কয়েক সেকেন্ড এর জন্য নিয়ন্ত্রণ করে বলল “ভালোবাসা বি’ষের চেয়েও বি’ষাক্ত।এই বিষ যে একবার পান করে,সে এমন কিছু নেই যা পারে না।”
“তারমানে তুমি আমাকে মেরে ফেলবে?” সুফিয়ান এবার পুরোপুরি রেগে গেল।বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ফারদিনাও দাঁড়ালো। সুফিয়ান চোখ চওড়া করে বলল “ অপ্রীতিকর ভাবনা কেন তোমার! ভাবনা টা কে বদলে শুভ কিছু ভাবো। তোমাকে মারবো কেন, তোমার জন্য দরকার হয় অন্য কাউকে মারব,এটা ভাবতে পারো।তা রেখে সবসময় উল্টো টা পাব।”
“তুমি রেগে যাচ্ছ।আমি মেলার দিকে যাচ্ছি।রাগ কমলে এসো।”

ফারদিনা ঝিলমিল কে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে মেলার দিকে চলে যায়।ফারদিনা যেতে যেতে পেছন ঘুরে দেখল কয়েকবার। সুফিয়ান দেখছে না তাঁর দিকে। নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুদূর গিয়ে আবার পেছন ঘুরল অনেক আশা নিয়ে। এবার সুফিয়ান এর সাথে চোখে চোখ পড়ল।ফারদিনা একরাশ হাঁসি দিয়ে চলে যায়। সুফিয়ান ফারদিনার যাওয়ার পানে দেখছে। যতক্ষণ না ফারদিনার ছায়া চোখের আড়াল হল ততক্ষনে অবধি চেয়ে থাকল।

রাঙা ঘাস খাচ্ছে। সুফিয়ান ওর কাছে এসে গায়ে হাত বুলিয়ে বলল “বুঝেছিস রাঙা,মেয়ে মানুষ কে বোঝানো কঠিন বিষয়।আর আমারটাকে বোঝানো আরো বড় কঠিন কাজ।যা বারণ করব, ঘুরেফিরে সেটাই করবে।ও জানে,কোন কথায় আমি রাগ করব,কোন কথাটায় ওকে দুটো কথা শোনাবো,আর ও আমার বকাঝকা শোনার জন্য ই আমাকে রাগায়।আমার রাগে আনন্দিত হয়। কিন্তু ও জানে না, ওকে হারিয়ে ফেলার কথা শুনলে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠে।” রাঙা হ্রেষাধ্বনি তুলল লম্বা সুরে।ও যেন বলছে “হুঁ তুমি ঠিক বলেছো,সে বুঝে না।”

দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যার প্রহরে মেলা অন্য মুখ নিয়েছে। চারপাশ মশাল, লন্ঠন এর আলোয় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছি নতুন ভাবে।ভাজা পিঠার গন্ধে চারপাশ মো-মো করছে। নাগরদোলা থেকে ঘররর জাতীয় শব্দ আসছে। তাঁর সাথে নৌকায় লন্ঠন জ্বালিয়ে দম্পতিরা নদীর ঢেউ উপভোগ করছে।

রশীদ তালুকদার বেশ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। গাম্ভীর্য এর ব্যাখা তিনিও জানেন না। আজকাল হঠাৎ হঠাৎ যেন তাঁর মন ওঠানামা করছে। এতক্ষণ বেশ আনন্দে ছিল। গ্রামের অনেক মানুষ এসে ভির জমিয়েছে প্রশংসা করেছে।কেউ কেউ অভিযোগ ও করেছে।অভিযোগ নিয়ে তাঁর মাথা ব্যথা নেই।প্রশংসা যতদিন থাকবে, অভিযোগ ও থাকবে। অন্যর ভালোর জন্য যত করা হবে দিনশেষে কোন না কোন কারণে তাদের জন্যই ঠকে যেতেই হবে।এটাই বিচিত্রময় দুনিয়ার একটি অংশ যেন। মানুষের চাহিদা বেশি,যত পায় ততই চায়। দুনিয়াতে সবচেয়ে সুখি মানুষ কারা? যদি প্রশ্ন করা হয় উত্তরে কি মিলবে?’ দুনিয়াতে সুখি সে-ই যার চাহিদা কম।যে অল্পতে খুশি হয়।

রশীদ এর কাছে এগোয় কুদ্দুস। এতক্ষণ পিঠা খাচ্ছিল। পিঠার ক্ষুদ্র একটা অংশ দাঁতে ঢুকে পড়েছে।আঙুল এর সাহায্যে এনে পুনরায় খেয়ে ফেলল। রশীদ বলল “অসহ্য’ আজকাল তোর ভাব-সাব রাক্ষস এর মত হয়ে গেছে।’
“আপনি কি চান,আমি না খেয়ে থাকি,আমি অসুস্থ হলে আপনার সেবা কে করবে?ঐ দাসীরা!”
“তুই ভালো করেই জানিস, আমার শরীরে কোন নারীর স্পর্শ কোনদিন লাগেনি।আর লাগাতেও চাই না।”
কুদ্দুস মাথা নিচু করে বলল “তাহলে আপনার চার ছেলে,আর মেয়ে আপনার নয়?
রশীদ এবার ওর দিকে কটমট করে তাকাল। দাঁতে দাঁত চেপে বলল “আমি দুধ কলা দিয়ে গাধা পুষেছি।”
“ওটা সা’প হবে।গাধা না।” কুদ্দুস বলল।
“মেরে তোর চামড়া তুলে ফেলব।” রশীদ আশেপাশে তাকাল।আদিব ওরা এবং অনুচারী সবাই নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় ব্যস্ত। কুদ্দুস বলল “উত্তর পেলাম না। তাঁরা আপনার সন্তান কিনা, আমার আগেও সন্দেহ হত। আপনার মত আপনার তিন ছেলে হয় নাই।আদিব ভাই একটু শান্ত।আর ফারদিনা..!” কথা শেষ করতেই রশীদ বলল “ওরা আমারই সন্তান। আমার স্ত্রী ব্যতীত অন্য নারীর ছোঁয়া লাগেনি।আর লাগাবোও না।এটাই বলতে চেয়েছি। বুঝেছিস?
“বুঝেছি!”
‘আমার চার ছেলে আর মেয়ে আমার সন্তান।কার সন্তান?
“আপনিই তো বললেন আপনার।”
রশীদ ছড়ি মাটিতে ঠুকতে ঠুকতে বলল “আজকাল তুই অনেক কথা শিখেছিস।মুখে মুখেও কথা বলছিস।এত সাহস কোথা থেকে এলো দেখে নেব”
‘কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। আপনার সাথে থাকতে থাকতে আমার ও সাহস বেড়ে গেছে।” রশীদ চুপচাপ।ওর সাথে কথা বললে মেজাজ বিগড়ে যাবে।মেলার মধ্যে মাথা গরম করা যাবে না।গলায় কাশি দিল। আশেপাশে অনেক মেয়েরা ঘোরাফেরা করছে।কন্ঠ শীতল করে বলল “আশেপাশে কত মেয়েরা ঘুরছে,দেখ কাউকে পছন্দ হয় কিনা?
“আয় হায়, মাত্রই তো বললেন আপনার শরীরে অন্য মেয়েদের ছোঁয়া লাগতে দিবেন না।এখন মেয়ে দেখতে বলছেন! এই বয়সে বিয়ে করলে আপনার ছেলেরা ছিঃ ছিঃ করবে।এখন তাঁদের বিয়ে করার বয়স।”
“আমি আমার কথা বলিনি কালুর ঘরের কালু,তোর কথা বলেছি।”
কুদ্দুস হা করে বলল “তওবা তওবা, আমি একজনকে ভালোবাসি।তারেই চাই।অন্য কারো দিকে চোখ তুলেও চাই না।”
রশীদ মুখ ভেঙিয়ে বলল ‘আহ আমার প্রেমিক পুরুষরে,এখনি আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।”
কুদ্দুস তাঁর সামনে থেকে সরে গিয়ে পেছনে দাড়িয়ে বলল “আপনার পেছনে দাড়িয়েছি। আপনার আমার দিকে চাইতে হবে না। সামনের দিকে তাকিয়ে বলেন।” রশীদ হেরে যাচ্ছে।আজ অবধি সে কারো সাথে হেরে যায়নি কথায়।আজ হেরে যাচ্ছে।কুদ্দুস ধীরে ধীরে চালাক হয়ে যাচ্ছে।সে আর তাল মেলালো না।প্রসঙ্গ পাল্টে নিল।বলল “ফারদিনা কোথায়?
“আজমাত সাহেব এর সাথে গল্প করে।”
“ওর দিকে নজর রাখতে বলিস অনুচারীদের। আমার একটামাত্র মেয়ে।”
“আমিও আমার আব্বার একমাত্র ছেলে। আব্বা বেঁচে নেই।আমি আছি।”
“তো,তা জেনে আমি কি করব? বড্ড কথা বলিস। বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি।যা,চা এর ব্যবস্থা কর। সন্ধ্যা বেলা চা না,খেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না। নিয়ে আয়।” কুদ্দুস দ্রুত চলে যায়।

আজমাত নুরবেক নদীর তীরে দাঁড়িয়ে এটা ওটা লিখছে।মাথায় বোলার হ্যাট। দিনের বেলা হ্যাট পড়ে।এখন সন্ধ্যা। সন্ধ্যার পর কেউ হ্যাট পড়ে না।ফারদিনা ঝিলমিল তাঁর পাশেই দাঁড়ানো। ঝিলমিল আজমাত কে বলল “আপনে মাথায় ঐটা কি পইরা আছেন?
আজমাত চোখ এক পলকে উপরে নিয়ে তাকিয়ে হ্যাট টা খুলে হাতে নিল। হেসে বলল “এটা বোলার হ্যাট।দিনে মোটামুটি রোদ ছিল। তীব্র না হলেও রোদ শীতেও আমার সহ্য হয় না।তাই হ্যাট পড়েছি।”
“আপনে অনেক ধলা।এত ধলা মানুষ আবার ভালো লাগে না।আপনারে সবাই কি কয় জানেন,ধলা বিলাই।” ফারদিনা আজমাত এর আড়ালে চাপা স্বরে হাসলো। আজমাত ঝিলমিল এর কথা এড়িয়ে গেল।বলল “ফারদিনা, আজ সুফিয়ান কে দেখিনি,সে কেন আসলো না?
“এসেছিল। বিকেল পর্যন্ত তাঁর সাথে ছিলাম।বলেছে পড়ে আসবে,এখনও দেখছি না।মেলা তো শেষ হতে চলল।”
ঝিলমিল বলল “সারাদিন সুফিয়ান সুফিয়ান করিস না তো,আর শুনতে ভালো লাগে না।”
“তুই কাউকে ভালোবেসেছিস,তুই এসব বুঝবি না।”
“আমি ঐসব চেতনায় নাই।খাই দাই ঘুরি ফিরি।”
“এইজন্যই তোর নাম মুচমুচি আর টুংটাং।” আজমাত ফারদিনার কথা শুনে হেসে ফেলল। তাঁর হাসির সময় দীর্ঘ হয়। আশেপাশের কিছু মানুষ তাকিয়ে তাঁকে দেখছে। বিদেশের মানুষ দেখা যায় না সচরাচর। ওঁরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে “এই বেডা হয়ত, বাংলা কইতে পারে না।”

আজমাত ফারদিনাকে বলল “তুমি অনেক মজার মানুষ।”
“আপনিও ভালো মানুষ।”
“আমার এত প্রশংসা কর না।দেখবে বরফ এর মত গলে গিয়েছি।মেয়ে মানুষ এমনিতেই আ’গুন এর মত। ওদের সংস্পর্শে গেলেই ছেলেরা দুর্বল হয়ে পড়ে।”
ঝিলমিল বলল “সবাই পড়ে না।আপনার শরীর দুর্বল তাই অল্পতেই পইড়া যান। বেশি বেশি বাদাম খাইবেন, দেখবেন আর পড়বেন না।”
ফারদিনা এবারো হাসলো। তাঁর হাসির শব্দ হাওয়া তে উড়ে গিয়ে রায়ান এর কানে পৌঁছাল।রায়ান তাঁর আলোচনা রেখে ঘুরে একবার ফারদিনার দিকে তাকাল। আজমাত ফারদিনা, ঝিলমিল একসাথে দাঁড়ানো।

আজমাত বলল “তোমার হাঁসিও সুন্দর। এভাবে কারো সামনে হেসো না।” তখন তাঁর কাঁধে কেউ হাত রাখে। হঠাৎ কেউ হাত রাখায় খানিকটা বিচলিত হল।চেয়ে দেখল সুফিয়ান। সুফিয়ান কে দেখে ফারদিনা নিশ্চুপ হয়ে গেল। আজমাত এর সাথে কথা বলা সুফিয়ান এর পছন্দ না। কিন্তু সে বলছে‌। ইচ্ছে করেই আজমাত এর সাথে কথা বলছিলো। সুফিয়ান আজমাত কে লক্ষ্য করে বলল “ফারদিনার হাঁসি সুন্দর। কিন্তু ও তোমার মায়ের মত।নারী মানেই মায়ের জাত।”
আজমাত ভ্রু উঠিয়ে বলল “এ কি বলছো, তাঁর বয়স কত কম। আমার মায়ের সাথে তাঁর কোন মিল নেই।”
“মিল আমি করিয়ে দিচ্ছি।এই দেখো,চোখ,নাক,হাত,চুল,যা আছে সব তোমার মায়ের আছে।মনে করে দেখো, মস্তিষ্কে একটু চাপ দাও।”
ঝিলমিল ফারদিনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল “ব্যাটার ঈর্ষা হইতেছে। ভালোবাসার আরেক নাম ঈর্ষা।”
আজমাত ফারদিনার দিকে একবার, সুফিয়ান এর দিকে একবার চেয়ে বলল “মা? আশ্চর্য ডাক।এই ডাকে কখনোই একজন সুন্দরী নারী কে ডাকা যায় না। সুফিয়ান সবসময় যৌক্তিক কথা বললেও আজ ভুল বলছে। আজমাত এর মোটেই ভালো লাগছে না।
সুফিয়ান হাত ঘষতে ঘষতে বলল “আচ্ছা আর একটু সহজ করে দিচ্ছি,মা ডাকটা অদ্ভুত শোনাচ্ছে তাই না।খালা,চাচী, এগুলো ডাকা যায়।কি বলো?
আজমাত মাথা আওড়ালো “আচ্ছা।’
ঝিলমিল বিড়বিড় করে বলল “বেচারা বাঙালির কথার প্যাচ বুঝতেছে না।”

মেলার চারদিক জমজমাট।সবাই আনন্দিত।যে যার মত আনন্দ করছে। কিন্তু আনন্দ নেই আদিব এর মনে। আজও সে নূরজাহান এর অপেক্ষায় ছিল। কোথাও তাঁর দেখা মিলেনি। কৃষ্ণপুর এর অনেক এর সাথে দেখা হয়েছে। নূরজাহান এর কথা সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারেনি।সে কেমন আছে? কোথায় আছে? স্বামী সংসার নিয়ে ভালো আছে তো?হয়ত এখন সন্তানের জননী হয়ে গেছে।আদিব ভাবছে।সাথে ঘন দীর্ঘ শ্বাস এর দেখা। আকাশ টা ভারী। কারণে না অকারণে বোঝা যাচ্ছে না।ঠিক তেমনি তার মনটাও ভারী। নূরজাহান আসেনি বলে।দেখা হলে আর কি হত, দুচোখ ভরে একবার দেখত। তাঁর মুখ থেকে শুনতে চাইতো! তুমি সুখে আছো,যতটা সুখে আমি রাখতে চেয়েছিলাম, তাঁর থেকে হয়ত বেশিই আছো। ব্যস। এতটুকু বলার জন্য অপেক্ষা।

সন্ধ্যার আকাশে নীলচে ধূসর ছায়া,বাতাসে হালকা শীতলতা। আদিব একদল জড় হওয়া লোকের ফাঁক দিয়ে তাকাল। তাদের ঠিক ওপাশটায় কাউকে দেখা যাচ্ছে।এক অচেনা সুদর্শনা নারী।কালো রঙের শাড়ির উপর হীরক পাথর বসানো।পাথর গুলো মশাল, লন্ঠন এর আলোয় চিকচিক করছে।আদিব ধীরে ধীরে সেদিকে এগোলো। অচেনা নারী রানীর বেশে দাঁড়িয়ে রশীদ তালুকদার এর সাথে কথা বলছে। তাঁর পেছনে অনুচারীগন।আদিব এগিয়ে গেল। অচেনা নারী আর কেউ নয়, নূরজাহান।
বহু বছর পর, অবশেষে, সে তাকে দেখতে পেল।আদিব ঘুরে ঘুরে নূরজাহান কে দেখল।চোখ দুটো অস্বাভাবিক ভাবে দৃষ্টি মেলল। নূরজাহান আদিব এর দিকে দেখল না। রশীদ তালুকদার হেসে হেসে কথা বলছে। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তাদের দেখাসাক্ষাৎ বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। কুদ্দুস এসে হাজির হয়। চোখে মুখে হতাশার ছোঁয়া নিয়ে রশীদ এর কানে ফিসফিসিয়ে বলল “ঐদিকে চলুন।কথা আছে।” রশীদ নূরজাহান এর থেকে কিছুক্ষণ এর জন্য বিদায় নেয়। কুদ্দুস এর সাথে নীরব স্থানে চলে গেল।

“নূরজাহান…” আদিব কণ্ঠে মাত্র কিছু শব্দ, কিন্তু বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।

নূরজাহান কিছুক্ষণের জন্য স্থির থাকে। তারপর হালকা হাসি ফোটে তার মুখে। “আদিব… তুমি?”

তারা দু’জন কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। বাতাসে শুধু দূরের নদীর ঢেউয়ের কলকল শব্দ। আদিবের চোখে অতীতের ছবি ভেসে ওঠে।যে মুহূর্তগুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। স্মৃতির পাতায় গেল না।আর ভেবে কিছু হবে না। তাঁর সামনে থাকা মানুষ টা এখন অন্য কারো।

“বহু বছর হয়ে গেছে। আমি ভাবিনি কখনো, তোমাকে আবার দেখব।” আদিবের কণ্ঠে মিশ্র অনুভূতি,আশা, ব্যথা, আর শান্তি।

“ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে যাওয়ার পর দেখা না হওয়াই ভালো।এতে যন্ত্রণা বাড়ে।”
“কেমন আছো? আদিব বিমর্ষ কন্ঠে বলল।
“এতক্ষণ পড়ে?
“এটাতো আমার প্রশ্নের উত্তর নয়।”
“সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাদের নদী পথে যেতে হবে। আবার কখনও ভাগ্যে থাকলে গল্প করব!”
“এড়িয়ে যাচ্ছ?
নূরজাহান চুপচাপ।আদিবের দিকে স্পষ্ট চোখে দেখছে না। কিছুক্ষণ মাটির দিকে দেখছে, কিছুক্ষণ আশেপাশে।আদিব নূরজাহান এর আড়ালে চোখের জল মুছল।চোখ দুটো নিমিষেই লাল হয়ে গেল। আড়ালে মুছলেও নূরজাহান দেখে ফেলল। কিন্তু বিষয়টি উপেক্ষা করে বলল “আমি যতক্ষন তোমার সামনে থাকব, তোমার কষ্ট আরো বেড়ে যাবে।” আদিব ভেজা চোখেই চোখ মেলে তাকাল। তাঁর সামনে দাঁড়ানো মানুষটি কে নিয়ে সে কত স্বপ্ন দেখেছে।তার সাথে, সারাটা জীবন পাড় করবে,সুখে দুঃখে পাশে থাকবে,একে অপরের হাঁসি কান্নার সঙ্গী হবে।আজ নূরজাহান ঘর বেঁধেছে ঠিকই,তবে অন্য কারো সাথে।আদিব ভাবতে পারছে না।
“আমি চলে যাচ্ছি।দেরি হয়ে যাচ্ছে।” নূরজাহান বলল।
“নতুন করে যাওয়ার কি আছে’ জীবন থেকে তো অনেক আগেই চলে গেছো।”
“বাধ্য হয়েছি।”
“কে বাধ্য করেছে?
“সেসব বলতে চাচ্ছি না।আজ দীর্ঘ সময় পাড় হয়ে গেছে।অতিতের স্মৃতি আর মনে করতে চাই না।”
“তোমার স্বামী কেমন আছেন, তাকে দেখতে পাচ্ছি না যে’
নূরজাহান এর উজ্জ্বল মুখটা হঠাৎ করেই শীতল হয়ে গেল। নিঃশ্বাসে ভারী কিছুর আভাস।আদিব বুঝতে পারছে না। অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল “বলো না,সে কেমন আছে? নিশ্চয়ই খুব সুখে আছো, সন্তানের জননী হয়েছো!”
“আর একদিন কথা হবে‌। আব্বা রাগ করবেন। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
“কি লুকাচ্ছো? তোমার স্বামীর কথা বলতেই তোমার আচরণ বদলাল কেন?বলো,সব কিছু ঠিক আছে তো?
নূরজাহান ভাঙ্গা কন্ঠে বলল “একটা যুদ্ধে সে মা’রা গেছে।”

‘মারা গেছে, কিভাবে? আশ্চর্য মুখে জিজ্ঞেস করল রশীদ। কুদ্দুস বলল “হুম। কিছুক্ষণ আগে জয়নব এর বাড়ি থেকে একজন লোক আসছিল।সেই বলছে, ঝুমকু কে কেউ মেরে বাড়ির সামনে ফেলে গেছে।_

(গতকাল টার্গেট ফিলাপ হয়নি। গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। মন্তব্য এর বেড়াজালে আটকে ফেলো।)

Address

17/2
Dhaka

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Crush & Confession by COBS posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share