06/04/2025
কথাগুলো একবার হলেও পড়ুন।
জীবনে কখনো কি কোন মৃতকে গোসল করিয়েছেন? সুযোগ পেলে মৃতদের গোসল করাবেন, খুব কাছ থেকে দেখবেন মৃত্যুর পরে মানুষের দেহটা কত অসহায় হয়, মৃত্যুর পরে মানুষের মৃতদেহ কতটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সুযোগ পেলে রাতে লাশ পাহারা দিবেন। তখন বুঝতে পরবেন মৃত্যুর পরে প্রিয় মানুষটার লাশ রাতের বেলা আপনার কাছে কত অদ্ভুত লাগে, কত ভয়ের কারণ হয়ে উঠে, কত আতঙ্কের কারণ হয়ে যায়।
সুযোগ পেলে মৃত ব্যাক্তির শরীরে একটু হাত লাগিয়ে কিছুক্ষণ স্পর্শ নিবেন। আপনি তখন উপলব্ধির সুযোগ পাবেন এই পৃথিবীতে বিশাল প্রভাব-প্রতিপত্তি রেখে যাওয়া মানুষগুলো মৃত্যুর পরে কত নির্জীব রূপ ধারন করে।
সুযোগ পেলে আপনজনদের লাশ কবরে নামাবেন- খুব আগ্রহ নিয়ে শেষবারের মতো মৃতদেহের মুখটি দেখার চেষ্টা করবেন এবং বারবার উপলব্ধির চেষ্টা করবেন এই মৃতদেহের সাথে অনন্তকালের যাত্রার পথে এটাই আপনার জীবনের শেষ দেখা।
জীবনে সুযোগ পেলে মাঝেমধ্যে কবরস্থানে গিয়ে নিরবে কিছুক্ষণ দাঁড়াবেন। এরপর মনে মনে চিন্তা করবেন জীবনের লাভ ক্ষতির হিসাবে এই মৃত মানুষগুলো এই পৃথিবীতে কি করে গেছেন? কাদের রেখে গেছেন? যাদের রেখে গেছেন তারা কি কখনও এই মৃত মানুষগুলোকে স্মরণ করার জন্য কবরস্থানের আশেপাশে আসে?
আমাদের সবার শরীরেই কমবেশী রক্তকণা আছে। একথা চিরসত্য যে আমাদের শরীরের প্রতিটি রক্তকণা শরীরে খুবই গুরুত্ব বহন করে। অথচ আমাদের শরীর থেকে কোন রক্তকণা বেরিয়ে গেলে সেটির যেমন কোন গুরুত্ব থাকে না তদ্রুপ আমাদের দেহ থেকে প্রাণটা বেরিয়ে গেলে আমাদের শরীরেরও অন্যের কাছে কোন মূল্য থাকে না।
আমাদের জীবনটা বড় বৈচিত্রময়। বেঁচে থাকতে আমরা এর জন্য ওর জন্য কত মায়া দেখাই, কত ভালবাসা দেখাই। এ আমার ছেলে তো সে আমার মেয়ে, এ আমার ভাই তো সে আমার বোন। অথচ মরে গেলে এই মানুষগুলোই সবার আগে তোড়জোড় শুরু করে কিভাবে মৃতকে দাফন করা যায়! কত দ্রুত মৃতকে কবরস্থ করা যায়! সেই চিন্তায় সবাই তটস্থ থাকে।
আমাদের জীবনটা আসলেই সাময়িক। এই সাময়িক জীবনটা মাত্র চল্লিশ-পঞ্চাশ-ষাট অথবা বড়জোর সত্তর বছরের সমষ্টি। অথচ এই জীবনে আমরা কখনো মৃত্যুর কথা না ভেবে কিভাবে অঢেল সম্পদ অর্জন করা যায় সেই চিন্তায় সর্বদা বিভোর থাকি।
এই পৃথিবীতে যার অঢেল সম্পদ আছে সে আরো সম্পদ চায়। যার সম্পদ নেই সে সম্পদ নেই ভেবে সর্বদা দুশ্চিন্তায় সময় কাটায়। আমাদের ১০% মানুষ ব্যতীত ৯০% মানুষেরই ধান্ধা ইহকাল আগে এবং পরকাল পরে। সম্পদ আগে এবং ইবাদত পরে।
এজন্য আমরা প্রায় সবাই দিনরাত চেষ্টা করি যে যেভাবে পারি, চুরি করে অথবা ডাকাতি করে অথবা অন্য কোন উপায়ে যাকে তাকে ঠকিয়ে যেভাবে পারি আগে সম্পদ অর্জন করি। এরপর এই অবৈধ সম্পদের অর্থে কয়েকবার হজ করে, মসজিদ মাদরাসায় বড় অংকের টাকা দান করে, গরীব এতিমখানায় খাইয়ে, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় দানখয়রাত করে একেবারে বেহেস্ত কনফার্ম হয়ে যাবে মনে করি।
রমজান মাসে সারা পৃথিবীর মানুষ যেখানে ইবাদত মশগুলে সময় পার করে সেখানে বাংলাদেশের অনেকেই কিভাবে একে অন্যকে ঠকানো যায় সেই চিন্তায় মশগুল থাকি। আমাদের দেশে মসজিদ গুলো মুসল্লিতে ভরপুর থাকে অথচ ঈমানী শক্তিতে আমাদের মনোবল খুবই দুর্বল।
আমাদের দেশে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, যে সর্বদা নিজেকে ইসলামি ব্যক্তি হিসাবে সবখানে জাহির করে সেও সুযোগ পেলে সাধারণ কিছু টাকা-পয়সার কাছে হঠাৎ নিজেকে হারিয়ে ফেলে। এজন্য বলি যে মৃত্যু চিরসত্য সে মৃত্যু নিয়ে আমরা খুব কমই চিন্তা করি।
আমাদের সততা সাধারণত টাকার কাছেই হেরে যায়। অথচ মৃত্যুর পর একজন মৃত ব্যক্তির কি হিসাব নিকাশ শুরু হবে সেটি উপলব্ধি করিনা তয় করতে পারলে আমরা কিছুতেই এত খারাপ হতাম না, আমরা কিছুতেই অন্যের হক মারার চিন্তা করতাম না, এমনকি অন্যের সাথে দুর্ব্যবহারের চিন্তাও করতাম না। মহান প্রভু সবাইকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করার সুযোগ দিন। আমিন🤲