31/01/2020
#"জাতীয় ঐক্য এবং বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য"
বার বার বলা হয়েছিল যে, যুদ্ধ শুরু করলে শেষ করতে পারবেন না তারা। তারা আমলে নিলেন না। তাদের নেতা ভিডিও গেমস ট্রাম্প লোহা লক্কর আর ইউরিয়া অস্ত্রের হিসেবে ইরানকে গুড়িয়ে দেয়ার চিন্তা করেছিল। ওরা ভেবেছিল দুনিয়া ব্যাপী যেমন জ্বী হুজুর করে, ইচ্ছে মত চড় থাপ্পড় মেরেই চলবে। কিন্ত বলেছিলাম যে, একটি জাতি মাথা নোয়ায় না। ১৯৭৯ সালে রক্তস্নাত বিপ্লবের মধ্য দিয়ে একটি জাতি পূনর্গঠনের শুরুতে পোষা সাদ্দামকে দিয়ে একটি যুূ্দ্ধ চাপিয়ে দিল শয়তান রাষ্ট্রটি, দিল অবরোধ কিন্ত তারা মাথা নোয়ায় নি। শাতিল আরব কি সাদ্দামের পূর্ব পুরুষের ভিটা ছিল যে, তার দখল বুঝে পাওয়ার জন্য যুদ্ধটা বাধাল? পায়ে পাড়া দিয়ে যেমনটা বলে তেমন একটা সংঘাত শুরু করল ইরাক, নেপথ্যে আমেরিকা। কিন্ত তারা কেউ শেষ করতে পারে নি। শেষ হয়েছে ইরানিদের হাতে।
শেষ কথা বলার সময় আসে নি। তবে ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত যে, কোনো কিছু ইরানের কাছ থেকে বিনা জবাবে পার পায় নি। ২০১২ সালে ইরানের নৌবাহিনী আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজকে উত্যক্ত করার সংবাদ এখনো গুগলে ছবিসহ পাওয়া যায়। কী এমন শক্তি তাদের যে, তারা একমাত্র বৈশ্বিক সুপার পাওয়ার আমেরিকার যুদ্ধ জাহাজকে উত্যক্ত করে। আরেকবার জলসীমা অতিক্রম করলে মার্কিন নৌসেনাদের ধরে নিয়ে আসে। যেখানে দুনিয়ার সর্বত্র যারে তারে চড় থাপ্পড় মেরে বেড়ায় বিশ্ব রংবাজ যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অজানা শক্তির তুচ্ছ ইরান কিভাবে তাদের নৌ সেনাদের ধরে নিয়ে আসে, তাদের যুদ্ধ জাহাজকে পাকড়াও করে।
এই ত গ্লোবাল হক উড়িয়ে আরেক বার মার্কিনীদের কৌলিন্যে কালিমা লেপন হয়েছে ২০১৮ সালে। তাদের হক পাখি ৬০,০০০ ফুট উপর দিয়ে উড়ছিল। যে রঙের পাখিটা তাতে রাডার ফাকি দিয়ে গোয়েন্দাগিরি চালাতে পারবে ভাবা হয়েছিল। কিন্ত পাখিটা রাডারের নজর এড়াতে পারে নি। আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করার আগেই তাকে সিগন্যাল দেয়া হলো দুই বার, অগ্রাহ্য করল পাখিটা। সীমান্ত লঙ্ঘন করার সময় তৃতীয় বার সিগন্যাল দিয়ে তাদের তৃতীয় সারির শক্তিশালী ক্ষেপনাস্ত্র দিয়ে পাখিটার পাখনা ভেঙে দেয়া হলো। পাখিটা গুড়ো হয়ে পড়ে গেল। এরপর কুটনৈতিক চেষ্টায় আলোচনাসাপেক্ষে ইরান কর্তৃক নির্বাচিত ফাকা জায়গায় দুয়েকটা ক্ষেপনাস্ত্র মেরে মুখ রক্ষা করতে চাইলেন কুলীন মার্কিনদের রাজা টেরম। বেরসিক ইরান তাও অনুমোদন করল না। ততদিনে কুলীনদের এবং তাদের বানিজ্যও, সামরিক জাহাজগুলো ভয়ে ভয়ে সাগরে চলতে আরম্ভ করল।
একটি জাপানি তেলবাহী জাহাজ ফুটো করে তারা ইরানের ঘাড়ে দোষ দেয়ার চেষ্টা করল। কিন্ত জাপান সেটা নাকচ করে দেয়ায় আবারো হতাশ হলেন ভিডিও গেমস টেরম। ইরানের তেল বিক্রিসহ অন্যান্য বিষয়, ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো নতুন করে। তারাও কুলীনদের একটি জাহাজ আটকে দিল। ব্যাস খেলা জমে গেল আরেকটু। ইউরোপের দালালগুলো পরমানু সমঝোতা থেকে ইরানকে না বেরুনোর ছবক দিয়ে যাচ্ছে কিন্ত আমেরিকাকে সরি বলে সমঝোতায় ফিরে আসতে চাপ দিতে পারছে না। মুখ রক্ষার জন্য আলোচনায় বসার চেষ্টা চালাতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে লাগিয়ে রেখেছে টেরম প্রশাসন। তারা ইরান থেকে ফোন গেলে ধরবে বলে ফোনের সামনে অধীর আগ্রহে বসে থাকার খবর ছাপে। এক দিকে সমঝোতা, আলোচনার কথা অন্য দিকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তি নজরদারিতে আনার শর্ত এক সাথে চলতে পারে না বলে ইরান সে সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ম্যাক্রন ইরানী প্রেসিডেন্টকে রুমে নিয়ে কৌশলে ট্রাম্পের সাথে কথা বলানোর চেষ্টা করেছেন জাতিসংঘের সভা চলাকালে। ইরানী নেতা সে প্রস্তাবেও সাড়া দেন নি।
মাত্রই অভিশংসনের ঝুকিতে টেরম, তার উপর সামনে ইলেকশন। ইয়েমেনে মার খেয়ে সৌদী আলোচনার টেবিলে আসছে। সংলাপও চলছিল যাতে মূল ভূমিকায় ইরানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছিলেন। এখানে উল্লেখ করা দরকার পাল্টা আঘাত করে সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারলে কেউ আলোচনার টেবিলে আসে না। দুনিয়াটা জোর যার মুল্লুক তার অবস্থা। এ কারণে ইয়েমেমের সাথে সৌদী আলোচনায় বসার তাগিদ অনুভব করল। একই কারণে আমেরিকাও গেল বছর ইরানের সাথে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছে। যেভাবেই হোক আলোচনা ইতিবাচক। কিন্ত সমস্যা হলো সৌদী ইরান আলোচনা হলে ইরানের ক্যারিশম্যাটিক কুটনীতি সেটাকে দীর্ঘস্থায়িত্ব দিয়ে ফেলবে। ইরাকের মধ্যস্থতায় ইরাকে দু দেশের প্রতিনিধিদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সমস্যা হলো ইরান সৌদী সমঝোতার দিকে আগালে ইসরাইল আমেরিকার স্বার্থে অনেকাংশেই ভাটা পড়বে বলে এ সমঝোতা হতে দেয়া যাবে না। ইসরাইলে কাকুতি মিনতির প্রেক্ষিতে তা ভেস্তে দেয়ার জন্য আমেরিকার প্রয়াস বলে অনেকেই ধারণা করছেন।
জেনারেলকে হত্না করে তারা সীমিত মাত্রায়, সমানুপাতিক হারে প্রতিশোধ নেয়ার আহ্বান জানায় মার্কিনীরা। মানে বিষয়টা নিয়ে আপোষরফায় যেতে চেয়েছিলেন। কিন্ত তাদের আহ্বান আমলে নেয় নি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের নেতারা। সুলাইমানি দাফনের আগেই ক্ষোভের জানান দেয়া হলো কেনিয়াতে। দাফনের কয়েক ঘন্টা পর ইরাকে দুটি মার্কিন ঘাটি গুড়িয়ে দেয় সিরিজ ক্ষেপনাস্ত্র হামলায়। টেরমরা একজনও মার্কিন সেনা নিহত হয় নি বলে যে দাবি করেছে দুটি হামলায় ৮০ জন মার্কিন সেনা হত্নার ইরানী দাবি অধিক যৌক্তিক। নেতা বললেন, 'আমেরিকাকে একটা চড় মারা হয়েছে মাত্র, এটা প্রতিশোধ নয়। তার মানে এর চেয়ে বেশি কিছু আমেরিকার জন্য অপেক্ষা করছে। আমেরিকার ক্ষয়ক্ষতি অস্বীকার করার মানে হলো পরবর্তী আঘাতটা তারা এ মুহুর্তে নেয়ার কথা ভাবতে পারছে না বা ভাবছে না।
১৭ টি জানাজায় কাছাকাছি চার কোটি মানুষের সমাগম হয়েছে। বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে দেখিয়েছে মাইলের পর মাইল মাইলের পর মাইল শহরের চারদিকের রাস্তাগুলোতে মানুষের স্রোত প্রিয় জেনারেলকে শ্রদ্ধা জানাতে। সপ্তাহব্যাপী শোক পালন চলেছে দেশব্যাপী। দেশবাসীর এমন সম্মানের সাথে বিদায় কেউ নিয়েছেন কিনা আপনারা দেখেছেন কি? আমি আমন্ত্রণ জানাই সে খবর জানানোর জন্য কে সেই ভাগ্যবান মহান ব্যক্তিত্ব। কোনো নেতিবাচক, সন্ত্রাসী, নির্মম ব্যক্তি তার জাতির ভালবাসা এভাবে পায় নি। আপনারা যারা দুর্ভাগা মুসলিম খুব সহজে রায় দিয়ে দিলেন উত্তরাধিকার রাজনীতির পথ পরিস্কার করার জন্য তাকে হত্না করা হতে পারে আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, ইরানিরা মেধা, সচেতনতায় আপনাদের চেয়ে অনেক উপরে। তারা নিশ্চয় এ ইঙ্গিত বুঝে নেয়ার কথা। যদি এমনটাই হতো তাহলে তারা দেশে বিদেশে সোচ্চার হতো তাদের নয়নের মনি উপড়ে ফেলার প্রতিবাদে। কাজেই আপনাদের অন্তরের ইয়াজিদপ্রীতির বিষ দিয়ে জ্বালা নিবারণ করা নিরর্থক। আপনাদের কালেমা এবং ধর্ম জ্ঞান এ কারণে হয়তো এমন যে, আপনাদের আদর্শ ব্যক্তিত্ব যারা তারা এমন নোংরা খেলায় অভ্যস্ত ছিলেন। নইলে শোকবিহ্বল একটি জাতির একজনও যেখানে এমন গন্ধ খুঁজে পান নি সেখানে আপনারা পেয়েছেন।
পরিস্থিতির বিবেচনায় সমগ্র ইরানি জাতি একাট্টা হয়েছে যা একটি জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি। যা ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত। ইরাকে যে পরিস্থিতি তাতে আরেকটি ভিয়েতনাম হওয়া যৌক্তিক দাবি। লোহা লক্কড় আর ইউরিয়ার হাতিয়ার মুখ্য নয়। একজন এ অস্ত্রের সুইচ চাপতে গেলে আরেকজন টেনে ধরবে। এ শক্তি ইরানের আছে, আমেরিকার নেই। আমেরিকাতে টেরমের মাতলামি, ভ্রান্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে রাজ পথ থেকে সংসদ পর্যন্ত৷ একজন কাশেম সুলাইমানির মৃত্যুতে চার কোটির বেশি মানুষ বের হয়ে আসা, ভিড়ে ৫৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় কোনো হৈ চৈ, উচ্চবাচ্য না করা জাতিটাকে পিছে ঠেলে দেয়া ট্রাম্পের পক্ষে সম্ভব? খবরে এসেছে যারা অন্য দেশের নাগরিক বা সুলাইমানির প্রদেশের বাইরে থেকে সুলাইমানির শহরে জানাজায় অংশ নিতে গেছে তাদের চিনতে পারলে ট্যাক্সিওয়ালারা ভাড়া নেয় নি, বিক্রেতারা পণ্যের বিনিময় নেয় নি। তাদেরকে বলা হয়েছে যে, আপনারা শহীদ কাশেম সুলাইমানির মেহমান, আপনাদের খেদমত করা আমাদের দায়িত্ব। গরীব দেশের গরীব নাগরিকদের কাছ থেকে এমনটা বিস্ময়কর ভালবাসা, শ্রদ্ধার নিদর্শন।
আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়া রাখতে পারবা না- বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ভাষণে এ কথা বলেছিলেন। ঐক্য বড় শক্তি ছিল ১৯৭১ এ। ইরানিরা মরতে আপত্তি করবে না। কারণ তারা কাঁদতে ও মরতে শিখেছে। এ প্রসঙ্গে পরে বলছি। হাজার হাজার মানুষ মরে গেলেও তারা ইসরাইল কিংবা আমেরিকার সাথে পিছিয়ে পড়া পছন্দ করবে না। কিন্ত মহান আমেরিকার মহান নেতা কতজন সাধারণ নাগরিক বা সেনা হত্নার দায় নিয়ে সংসদ, জনগন, মিডিয়াকর্মীদের ঠেলা সামলাতে পারবেন? সংখ্যাটা কয়েকশ কি? এরই মধ্যে বলাবলি শুরু হয়ে গেছে যে, ভিডিও গেমস ট্রাম্প তার দেশের নাগরিক এবং স্বার্থকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন।
পিছনে হুসাইন সামনে মাহদি যাদের তারা মরতে পারে, কাঁদতে পারে কিন্ত মাথা নোয়াতে পারে না। তেল আবিবে ইসরাইলিরা ইরানের অদম্য মানসিকতা, ভীত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য একটি গবেষণাকেন্দ্রকে দায়িত্ব দেয়। তারা একটি সিদ্ধান্তে আসে যে, ইরানীদের শক্তির বড় উতস হলো তারা পিছনে হুসাইনের জন্য কাঁদে আর সামনে ইমাম মেহেদির আগমনে বিজয়ের অপেক্ষা করে। যাদের অতীত এবং আগামী সব সময়ের প্রেরণা তারা বর্তমান প্রতিকূলতা ভেদ করে যাবে এ ব্যাপারে সন্দেহ থাকা অনুচিত।
প্রতিরোধ যোদ্ধা তারা তাদের সন্ত্রাসী বলা বিবেক বর্জিত মানুষের কাজ। খেয়াল করে দেখা দরকার যে, তারা অন্য দেশে, অন্য এলাকায় মারতে যায় নি, লুট করতে যায় নি। তারা তাদের দেশে হানা দেয়া খুনি, লুটেরাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করছে মাত্র। তাদেরকে দখলদার, লুটেরারা সন্ত্রাসী বলে আর আমাদের মগজওয়ালারা কোরাস করে। যখন বাশার আল আসাদের দেশে তুর্কী সীমান্ত হয়ে হাজার গাড়ির বহর নিয়ে সিরিয়া ইরাকে ঢুকল তখন আইএসকে কেউ সন্ত্রাসী বলে নি। যখন সেখানে শিয়া সুন্নী নির্বিশেষে গণহত্না শুরু করল তখন স্থানীয়দের টনক নড়ল। এরপর যখন শক্ত প্রতিরোধের মুখে পিছু হটার পর্যায়ে তখন তাদের সন্ত্রাসী বলা শুরু হয়ে গেল।
১৯৮০ সাল এপ্রিল মাস। আমেরিকার চুলকানি ছিল সোভিয়েতের নাস্তিকরা আফগানিস্তানে ঢুকে পড়েছে আগের বছর। নতুনভাবে দাঁড়ানো দেশটাতে ঢুকতে চাইল আমেরিকা। উদ্দ্যেশ মাতব্বরি, অস্ত্র বিক্রি, সোভিয়েত প্রভাব প্রতিরোধ। কিন্ত ইরান সব কিছুই প্রত্যাখ্যান করে। ফলে মোড়লদের সাথে বিপ্লবীদের টানাপোড়েন বাড়ে। এক পর্যায়ে ইরানে সর্বতো ঝটিকা আক্রমণের জন্য প্রস্তুত আমেরিকা। পারস্য উপসাগরে উপস্থিতি সীমান্তের মরুভুমিতে এফ সিক্সটিনের বহর শেষ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সংবাদ পেয়ে খোমেনির শুভাকাঙ্খীরা তাকে আত্নগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। খোমেনি রাগতস্বরে বললেন, 'আমাকে পালাতে বলছ কেন? আমি কি নিজের চাওয়ায় কিছু করেছি?' সঙ্গীরা চুপ হয়ে গেলেন। উড়তে গিয়ে ১২ টা এফ সিক্সটিন কোথায় হারালো সেটা আজও রহস্য।
তাদের কুটনীতিও অনেক ক্ষরধার যা তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। নইলে এত অবরোধ, সম্পদ জব্দ করার পরও তারা টিকে থাকতে পারত না। যুদ্ধের কৌশলও ভালই রপ্ত করেছে। তাদের নেতৃত্বে প্রতিরোধ যোদ্ধারা আধিপত্যবাদীদের বিভিন্ন ফ্রন্টে আটকে রেখেছে। যে কারণে যুদ্ধক্ষেত্রগুলো ইরানের ভুখন্ডের বাইরে। যদি আসাদের পতন হতো, নড়বড়ে ইরাকী শাসনব্যবস্থা ভেদ করে ইসরাইল ইরান সীমান্তে অবস্থান নিয়ে নিত। তাদের পোষা প্রাণী আইএসের হামলায় যখন বাশার দিশেহারা, বিভিন্ন মাধ্যমে আসাদের নির্বাসনের খবর চলে আসছে তখন সুলাইমানির সাথে দুই ঘন্টা বৈঠক শেষে বুক টানটান করে বেরিয়ে এসেছিলেন আসাদ। প্রায় অর্ধেক ভূখন্ড হারানো ইরাকও পতন থেকে রক্ষা পায় সুলাইমানির কৌশল, দূরদর্শিতায়। দায়েশের পরাজয় মানেই ইসরাইলের পরাজয়। তাই এতদিনের দোসর সৌদীকে পাশ কাটিয়ে তারা সুলাইমানিকে হত্নার পরিকল্পনা করে।
আজকের ইরান আমেরিকার ভুখন্ডে যুদ্ধ করতে যায় নি৷ তাদের দেশেও যুদ্ধক্ষেত্রটা আসছে না সম্ভবত। তাদের যত শক্তিই হোক, সব শক্তি নিয়ে তারা ইরান আক্রমণ করতে আসতে পারবে না। আক্রমণে আসলে যদি সেটা ঠেকিয়ে রাখা যায় কিছু ক্ষয়ক্ষতির মুখেও আমেরিকা দম বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে না। আর বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আক্রমণে তাদের সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়বে, ধৈর্য হারিয়ে ফেলবে। কাজেই আমেরিকা আলোচনাকেই বেছে নেবে সম্ভবত। ইরাকের সংসদ তাদের দেশে আমেরিকাকে দখলদার হিসেবে বিল পাশ করেছে। অবৈধ ভাড়াটেদের নৈতিক অবস্থান থাকে না, মনের জোরও থাকে না। কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির ভয়ে তারা আগের চেয়ে ভীত থাকবে। কারণ কোনো কিছুর ব্যাপারেই তারা কারো সমর্থন পাবে না, না জাতিসংঘ না আন্তর্জাতিক আইন। কারণ তারা সেখানে অবৈধ। শেষ পর্যন্ত তাদের ইরাক ছাড়াই লাগবে হয়তো। তাই তাদের এখন আলোচনার টেবিলে আসতে হবে। শেষ পর্যন্ত যাই হোক টিকে থাকলে এ অঞ্চলে ইরান আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠবে আর আমেরিকা ইসরাইল হবে কোনঠাসা। এ কথা বলতে আমার খুব একটা কার্পণ্য নেই যে, সৌদী সমর্থন ঘুরিয়ে দিলে সাত দিনে ইসরাইল সাইজ হবে আর আমেরিকা লেজ গুটাবে।