20/04/2024
নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান না থাকলেও আমার অনুমান এই যে, বর্তমানে দেশে ব্যবসার জন্য গড়ে উঠা প্রতি দশটি দোকানের মধ্যে কমপক্ষে একটি বা ততোধিক হয় ঔষুধের দোকান বা ফার্মেসী।
দেশে ফার্মেসী ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ড্রাগ লাইসেন্স, মালিক ফার্মাসিস্ট না হলে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ, দোকানের নির্দিষ্ট পরিমাপ (আলো-বাতাস ও পরিষ্কার , প্রযোজ্যক্ষেত্রে ফ্রিজার রাখাসহ) ইত্যাদির প্রয়োজন রয়েছে। রয়েছে ওভার-দ্য-কাউন্টার ( OTC ) ড্রাগের বাহিরে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অন্যান্য ঔষুধ বিক্রি না করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশে প্রতিদিন গড়ে উঠা ফার্মেসী ও আগে গড়ে উঠা ফার্মেসীর মোট সংখ্যা কত, কতজন নিয়ম মেনে চালাচ্ছেন এই পরিসংখ্যানও আমার অজানা। তবে এখানেও আমার অনুমান, এই নিয়ম মানার সংখ্যাটা খুব একটা বেশি না।
আবার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রায়ই উঠে আসছে দেশে গড়ে উঠা নকল ঔষুধ তৈরির খবর। এরা ভেজালে এতটাই দক্ষ যে খালি চোখে আসল-নকল চেনাও কঠিন। ফলে দেশে থাকা এত এত ঔষুধের দোকান থেকে কে ঔষুধ পাচ্ছে, কে পাচ্ছে পাউডার তাও বুঝা কঠিন।
ওদিকে গ্রামে-গঞ্জে গড়া উঠা এসব ঔষুধের দোকান যেন সব কিছুর প্রাপ্তিস্থান। দোকানে থাকা প্রতিটি লোক একেকজন মস্ত চিকিৎসক। এই দোকানে যেমন থাকে এ্যালোপেথিক ঔষুধ, তেমন থাকে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির ঔষুধ। থাকে নানা নামে অনুমোদনবিহীন শক্তিবদ্ধক, হজমবদ্ধক, লিভার-কিডনী পরিষ্কারকের মতো আশ্চর্য মস্ত মস্ত সিরাপও। এসব ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনতে লাগে না কোন প্রেসক্রিপশন। ঔষুধের নাম কিংবা সমস্যার কথা বললেই মিলে সব ধরণের ঔষুধ। আর একারণেই যেমন বাড়ছে জটিল শারিরিক সমস্যা, বাড়ছে এন্টিবায়োটিক অকার্যকরের মতো ভয়াবহ ঘটনাও।
ঔষুধ কোম্পানিদের অসুস্থ মার্কেটিং, ঔষুধ নিয়ে বিজ্ঞাপন আর এইসব দোকান যেভাবে মানুষকে নিজে নিজে ঔষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে যা অর্থনৈতিক ও শারিরিক ক্ষতি করছে, তা বিশ্বের আর কয়টা দেশে আছে তাও সন্দেহ।
এসব প্রতিরোধে ঔষুধ প্রশাসনের কাজ করার কথা থাকলেও, এই দপ্তর যে পুরোপুরি ব্যর্থ তা বলতে কোন দ্বিধা নেই। কোন এক অজানা কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত থেকে সরকার, চিকিৎসক থেকে জনস্বাস্থ্যবিদ, প্রশাসন থেকে আইন, সবাই চুপ! চালু হয়েছে সুস্থ হওয়ার তাগিদে এক অসুস্থ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।
রতন রায়
জনস্বাস্থ্যের শিক্ষার্থী।