10/02/2020
#ভয়ংকর_দিঘির_মৃত্যু_রহস্য
২য় পর্ব......
চাচা সব কিছু বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তখন কি এমন ঘটেছিলো এই দিঘিতে,যার ফলে এত বছর পর রাকিব ফিরে এসেছে...
"বৃদ্ধ চাচা -- হ্যাঁ....মা, তা'হলে শুনো সেই দিন ঘটে যাওয়া দিঘির ঘটনার কথা--
-"দিঘিটি প্রথমে ততটা ভয়ানক ছিলো না।
পরবর্তীতে যতটা ভয়ানকে রুপান্তরিত হয়।
-প্রায় রাতেই দিঘির অপর পাশে লাল গোলাকার দমকা আলো দেখা যেতো। কিসের আলো এটা কেউ বলতে পারতো না। যেই আলোটির রহস্য জানতে রাতে দিঘির ঐ পাড়ে যেতো, সেই এসে বলতো-ঐপাড়ে যাওয়ার পর তার দিকে প্রচন্ড দমকা হাওয়া বয়ে আসতো এবং দূর থেকে দেখা যেতো আলোটি ছোট থেকে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকতো এবং তার দিকে এগাতো।
ভয়ে সেখান থেকে চলে আসতো হতো।
"একদিন দেখা গেলো দিঘির মাঝখানে পানিতে বুদবুদ ফোঁটা নিচ থেকে উঠছে এবং পুরো দিঘির পানি ঘোলা হয়ে যায়!"
___সবাই ভয় ও আতঙ্কে হয়ে পরে।
-বহু যুগের পুরনো এই দিঘিটি, কখনো এমন কিছু দেখা যায় নি, এবং ঘটে নি,এখন কেনো এমন হচ্ছে!
-ভয়ে কেউ দিঘিতে নামতে রাজি হয় নি।
দিঘির মাঝখানে পানিতে বুদবুদ ফোটা নিচ থেকে উঠা ও পুরো দিঘির ঘোলা পানি আজ তিন দিনেও ঠিক হয় নি।
এলাকায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
-"প্রতিদিন হাজারো মানুষ দিঘিটির এইরূপ দেখতে আসে।
-বাড়িওয়ালা ও এলাকার মানুষের সিদ্ধান্তে,
কিছু হুজুর এনে দোয়া পড়ানো হয়।
-"পরদিন সকালে উঠেই দেখতে পাওয়া যায়,
দিঘির মাঝখানে পানির নিচ থেকে বুববুদ ফোটা উঠা বন্ধ এবং দিঘির ঘোলা পানি সেই আগের মতো স্বাভাবিক পরিস্কার।
______সব কিছুই ভালো যাচ্ছিলো।
- সবাই ভেবেছিলো সব ঠিক হয়ে গিয়েছে,আর কোনো সমস্যাই হবে না। সবাই আগের মতো দিঘিতে গোসল করা শুরু করেছে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ স্বাভাবিক ভাবেই করা শুরু করেছে।
-"কিছুদিন পর, একজন বৃদ্ধলোক গোসল করতে দিঘিতে নামে, উনার 'পা' ধরে কিসে যেনো টানা হিঁচড়া করে!
বৃদ্ধ লোকটি চিল্লাচিল্লি করলে সবাই আসে।
-উনি সবাইকে বললো উনার পা কে যেন টানা হিঁচড়া করছে। উনি অনেক কষ্টে উপরে উঠে আসছে।
-"কেউ বৃদ্ধ লোকটির কথার কোনো মূল্য দিলো না।সবাই বলছে,আপনি বৃদ্ধ লোক হয়তো কাঁদায় 'পা' ডেবে গিয়ে আটকিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ছাড়া আর কিছুই না।
দিঘিতে এমন কোনো ঘটনাই আজ অব্দি ঘটে নি।
______বৃদ্ধ লোকটির কথা কেউ দাম দিলো না!
-"পরদিন দিঘিতে পরে একটি চার বছরের
বাচ্চা মারা যায়!
--তখনও কেউ কিছু বুঝতে পারি নি,কেনো বাচ্চাটি মারা গিয়েছিলো।
সবাই ভাবলো- বাচ্চাটা ছোট, সাঁতার জানে না,দিঘির পাড়ে আসছে পরে গিয়ে মারা গিয়েছে।
এক সাপ্তাহ পর--
-"প্রতিদিনের মতো আজ ও পাঁচ জন ১০/১২ বছরের ছেলে দিঘিতে নেমে ডুবাডুবি করছে।"
সারাদিন চলে গেলো কোনো ছেলেই ঘরে আসে নি এখনও। ছেলে গুলোর বাবা-মা সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। খোঁজ ও নেয় নি ছেলেগুলোর। কোথায় রয়েছে তারা।
-সন্ধ্যা গড়ালো। তাও কেউ ঘরে ফিরছে না।
এলাকায় খোঁজ নিলো,কেউ বলতে পারবে না ছেলেগুলো কোথায়।
এইদিকে রাত যতো গড়াচ্ছে ছেলেগুলোর বাবা-মা ততটা চিন্তার মুখে পড়ছে।
"পাশের ঘরের একটি মেয়ে বললো,দুপুরে ওদেরকে দেখলাম,দিঘিতে ডুবাডুবি করছে। তার পর আর কিছুই বলতে পারবে না।"
-"দিঘিতে তো থাকার কথা না, কারণ তারা সবাই সাঁতার জানে। আবার মনে মনে ভাবছে গঞ্জে কোনো চলে গেলো নাকি যাত্রা দেখার জন্য।।
-এই যাত্রা দেখার জন্য তাদেরকে কত যে মারছে তাদের বাবা-মা, তারপরও যাওয়া বন্ধ করে নি।
যে দিন যাত্রা দেখতে যায়, সে রাত্রে আর বাড়ি ফিরে নি। সেই ভোরে বাড়ি ফিরে।
-ছেলে গুলোর বাবা-মা ভাবলো হয়তো তারা একসাথে গঞ্জে যাত্রা দেখতে গিয়েছে। এমন তো প্রায় সময়ই করতো। কিন্তু তখন যাওয়ার সময় বাড়ির অন্য ছেলেগুলোকে বলে যেতো,
কিন্তু আজ বলে যায় নি।
____রাত্রে সবাই ঘুমিয়ে পরলো।
-"সকাল প্রায় ৯ টা বেজে গেলো কেউ ফিরে আসে নি এখনও। এতক্ষণ দেড়ি তো তারা কখনো করে নি।
আবার সেই চিন্তায় সবাই। কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের। বিকেল তিনটার সময় একজন চিৎকার করে বলতে লাগলো, কে কোথায় আছো তারাতাড়ি আসো- ফাহিম,শুভ ও সাগর কে পাওয়া গিয়েছে,
মরে দিঘিতে ভেসে উঠেছে!
___তাদের তিন জনের লাশ উঠানো হলো।
-"পুরো বাড়িতে চিৎকারের বর্ণা বয়ে গেলো।
-এলাকা জুড়ে হা হা কার শুরু হলো। দিঘিতে লাশ ভেসে উঠেছে।
-একজন বললো-- কেউ তাদের মেরে পানিতে পেলে দিয়েছে।
কেউ বলছে- দিঘিতে নিশ্চয়ই কিছু রয়েছে,তাড়াই হয়তো ছেলে গুলোকে মেরে পেলেছে। কিন্তু তারা তো ৫ জন ছিলো, রাকিব ও হৃদয় কোথায়.?
এটা নিয়ে নানান জন নানা রকম কথাবার্তা বলাবলি শুরু করছে।
ফাহিম, শুভ ও সাগর-- তাদের তিন জনের গলায় ফাঁস দেওয়ার মতো দাগ ও পুরো শরীরে কেউ কাউকে কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করলে যে ভাবে দাগ স্পষ্ট থাকে, ঠিক তেমন দেখা যাচ্ছে।
-এখন সবাই ভাবছে নিশ্চয়ই দিঘিতে কোনো একটা জীব রয়েছে। সেই এইভাবে মেরে তাদের তিন জনকে রেখেছে। রাকিব ও হৃদয়কে মনে হয় খেয়ে ফেলছে।
"ফাহিম,শুভ ও সাগরকে গোসল করিয়ে মাটি দেওয়া হয়!"
চারদিন চলে যায় কেউ আর ভয়ে দিঘিতে গোসল করে নি।
___৪র্থ দিন হৃদয়ের লাশ দিঘিতে ভেসে উঠে!
--"সবাই ধরাধরি করে হৃদয়কে পাড়ে উঠায়।
-কিন্তু না এ ক্ষেত্রে বিপরীত কিছু দেখা গেলো।
হৃদয় জীবিত ছিলো!
-"জ্ঞান ফিরে শুধু ফাহিম, শুভ ও সাগরের কথা জিজ্ঞেস করছে,ওরা কি বেঁচে ফিরছে নাকি তাদেরকে ওরা মেরে ফেলছে.?
সবাই হৃদয়ের মুখ থেকে এমন শব্দ ব্যবহার হওয়ার পর ভেবে নিয়েছে,ফাহিম,শুভ ও সাগরকে কেউ হত্যা করেছিলো নাকি.?এই ছেলেগুলোর কি এমন শত্রু রয়েছে যে তাদেরকে হত্যা করতে হলো!
- পাশ থেকে একজন বললো,ফাহিম,শুভ ও সাগরকে দিঘিতে মৃত পাওয়া যায়।
হৃদয় বললো--তাহলে তাদের কথাই সত্যি ছিলো!
তারা ফাহিম, শুভ ও সাগরকে হত্যা করিয়েই ছাড়লো।
-"তাদের কি কথা- একটু খুলে বলবে.?
সেই দিন তোমাদের সাথে কে এমন করলো,আর কারাই বা কিসের লোভে ফাহিম, শুভ ও সাগরকে হত্যা করেছিলো?
_____হৃদয়- সে এক বিশাল ঘটনা...
"-আমরা ৫ জন প্রতিদিনের মতো ঐদিনও দিঘিতে ডুবাডুবি করতেছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম আমাদের চারপাশে পানিতে বুদবুদ ফোটা নিচ থেকে উঠছে।পুরো দিঘিতে প্রচুর ঢেউ। আমাদের 'পা' ধরে রেখেছে কারা জানি। অনেক চেষ্টা করেও উপরে উঠতে পারি নি। আমরা অনেক চিৎকার করি। আমাদের চিৎকারের আওয়াজ কেউ শুনে নি। আমাদের চিৎকার উল্টো আমাদের কানে এসেই বাড়ি খাচ্ছে।
- কিছুক্ষণের মধ্যেই দিঘির ঐপাশ থেকে বিশাল একটা ঢেউ আসে। আমাদেরকে ডুবিয়ে দিয়ে যায়। চোখ মেলে দেখি আমাদেরকে হাওয়ার উপর ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বিশাল কিছু দানব।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছে জানি না।
-"আমরা অনেক চিৎকার করি,
- আমাদেরকে একটি প্রাসাদে নিয়ে যায়।
অসংখ্য দানব সেখানে। দানবগুলোর দিকে আমরা তাকাতে পারছি না। খুবই ভয়ানক চেহারা।
চোখ দিয়ে দানব গুলোর রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে। বুক থেকে মাথা যতটুকু লম্বা, সেই হারে বুক থেকে পা খুবই ছোট। তাদের মধ্যে পুরুষরা কালো পোশাক পড়া এবং মেয়েরা নীল পোশাক পড়া।
- ওরা আমাদেরকে অনেক আঘাত করে। আমরা চিৎকার করতে থাকি, আমাদের চিৎকারে তাদের আঘাত আরো বেড়ে যায়। আর সবাই উচ্চস্বরে হাসতে থাকে।
-"একটি দানব বলে মানব জাতির কারণে আমরা এই দিঘিতে বসবাস করে পারছি না, তাদের ব্যবহারে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই তারা মানবজাতিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, আমাদেরকে এইখানে ধরে নিয়ে আসছে।
তাদের মধ্য থেকে সবচেয়ে বড় একটি দানব বললো-
এই পাপী মানবগুলোকে ফাঁসি দিয়ে মেরে পেলো,
এবং তাদের লাশ গুলো পুরো মানবজাতিদের উপহার দাও।
-"তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ ছিলো, উনি আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে কি যেন সকল দানবগুলোর সাথে বললো। একটু পর সকল দানব এক সাথে হাসতে থাকলো। আমি কিছুই বুঝতে পারি নি, কি বলেছিলো বৃদ্ধ দানবটি।
-- আমাকে সেই বৃদ্ধ দানবটি একটি ঘরে বন্দী করে রাখে।
কিন্তু কেনো আমাকে আলাদা ঘরে বন্দী করে রাখা হয়, আমি কিছুই বলতে পারি না।
আমি কিছুই জিজ্ঞেস করার সাহস পাই নি। আমি গত চারদিন প্রতিটা মুহুর্ত কান্না করি।
চারদিন পর- বৃদ্ধ দানবটি আমাকে কিছু একটা পড়ে 'ফু' দিয়েছিলো, আমি অজ্ঞান হয়ে পরে যাই, তারপর আর কিছুই আমি বলতে পারবো না।
-"সবাই অবাক হয়ে গেলো হৃদয়ের কথা গুলো শুনে।
ফাহিম,শুভ ও সাগরকে মেরে ফেললো,অথচ তাকে জীবিত ফিরে দিয়েছে! কি ছিলো এইসব, আর কেনোই বা হলো এইসব।।
- সবাই জিজ্ঞেস করলো..?
আচ্ছা তোমরা সবাই ফিরে আসলে তাহলে রাকিব কোথায়?
- হৃদয় --রাকিবকে কি ঐ দিন পুকুরে পাওয়া যায় নি?
-- না, রাকিব তো আজও আসে নি।
- হৃদয় --আমরা তো চারজন সেই দানব গুলোর কাছে ছিলাম, রাকিব তো আমাদের সাথে ছিলো না।
______তাহলে রাকিব কোথায় যাবে?
সবাই অস্থির, রাকিবের কি হলো তাহলে..?
-- এইদিকে রাতে হৃদয়ের প্রচন্ড জ্বর আসে। ঘুমের মধ্যে হৃদয় একা একা আবোলতাবোল কথা বলে, তাকে নাকি ওরা মেরে ফেলবে,তার রুহ নাকি চারদিন আগে মারা গিয়েছে। সে আজই মারা যাবে!
কি সব অজন্তা কথাবার্তা।
- হৃদয় ঘুমের মাঝে এই সব বলে চিৎকার দিয়ে উঠে।আর বলে মা আমায় বাঁচাও,আমি বাঁচতে চাই।
ওরা আমায় মেরে ফেলবে।
_____হৃদয় রাতেই মারা যায়!
-" এইদিকে রাকিবের লাশ কখন ভেসে উঠবে, রাকিবের নানা সারা দিন-রাত্র দিঘির পাড়ে এসে বসে থাকতো।
_____কিন্তু রাকিব আর ফিরে আসে নি।
-- কিছুদিন পর দেখা গেলো- দিঘির পানি প্রতি রাতেই শুকিয়ে যায়,আবার ভোর হলে ভরে যায়!
- কেউ কিছুই বলতে পারছে না কেনো এমন হচ্ছে।
______৩য় পর্বের লিংক কমেন্টে দেওয়া হয়েছে।
[আমি অনেক গল্প লেখককেই দেখেছি গল্প লেখা বন্ধ করে দিতে। একমাত্র কপি পোস্ট করে লেখকের নাম ব্যবহার না করে নিজেদের নাম লিখার কারনে।
(আমি লেখক নই,কিন্তু গল্প লিখতে ভালোবাসি।এই গল্পের পর আর গল্প লিখবো না।)একটি গল্প লিখতে কতটা কষ্ট আরেকজন গল্প লেখা ব্যক্তি ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না। (আজ একটি গ্রুপে আমার গল্পের ১ম পর্ব একজনের নাম দিয়ে পোস্ট করতে দেখলাম,
এই নিয়ে অনেকবার,সত্যি খুবই কষ্ট পেলাম।)
**ইনশাআল্লাহ ৩য় পর্ব আগামীকাল পোস্ট করা হবে এবং ৩য় পর্বের লিংক ২৪ ঘন্টা পর কমেন্টে দেওয়া হবে।
- যারা গল্পের ১ম পর্ব এখনও পড়েন নি, কমেন্টে লিংক দেওয়া হবে।
-- এই পর্যন্ত গল্পটা কেমন লেগেছে সবার মন্তব্য জানাবেন।
_______ভালো লাগলে শেয়ার করুন।]
........চলবেই.......