19/10/2025
স্বামীর কারণেই পরিবারে অন্য সদস্যরা স্ত্রীকে ছোট করার সাহস পায় 💔
🌿 বাংলাদেশের পারিবারিক কাঠামো এখনো অনেকাংশে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতায় গড়া। পরিবারের সব সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্য। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, একজন স্বামী নিজের স্ত্রীর প্রতি ন্যায্য সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হন। তার এই অবহেলা, নীরবতা বা সমর্থনই পরিবারের অন্য সদস্যদের — যেমন শাশুড়ি, ননদ বা দেবরদের — স্ত্রীকে ছোট করার সাহস জোগায়। অথচ একটিমাত্র কথা বা অবস্থান বদলে দিতে পারত পুরো সম্পর্কের গতি।
🌸 মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, “যেখানে ন্যায়ের পাশে নেতৃত্বের অভাব থাকে, সেখানে অন্যায় মাথা তোলে।” স্বামী যদি স্ত্রীকে যথাযথ মর্যাদা না দেন, তাহলে অন্যরা ধরে নেয় যে তাকেও ছোট করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৬৩% নারী কখনো না কখনো স্বামীর পরিবারের কাছ থেকে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন (সূত্র: নারী নির্যাতন জরিপ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ২০২৩)। এই নির্যাতনের পেছনে স্বামীর নীরবতা বা পক্ষপাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
একজন স্ত্রী যখন দেখে তার স্বামী অন্যদের সামনে তাকে অসম্মানজনকভাবে “চুপ করো” বা “তুমি কিছু জানো না” বলে থামিয়ে দেন, তখন শুধু তার আত্মসম্মানই আঘাতপ্রাপ্ত হয় না, সেই পরিবারের অন্য সদস্যরাও বার্তা পায়—এই নারীকে হেয় করা নিরাপদ। এই প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এক “অঘোষিত পারিবারিক শ্রেণিবিন্যাস”, যেখানে স্ত্রী সবসময় নিচের স্তরে থেকে যায়।
মনোবিজ্ঞানী ড. সায়মা ইসলাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২০২২) উল্লেখ করেছেন,
“যখন স্বামী স্ত্রীকে রক্ষা করার পরিবর্তে নিরবে নির্যাতন সহ্য করতে দেন, তখন পরিবারে এক ধরনের ‘গ্রুপ পারমিশন’ তৈরি হয়—যেখানে সবাই ভাবে, স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া দোষের নয়।”
অন্যদিকে, যে পরিবারে স্বামী প্রকাশ্যে স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করেন, সেখানকার সদস্যরা সাবধান থাকে। সম্মানের এই সীমারেখা স্বামীই নির্ধারণ করেন। স্ত্রীকে সঙ্গী হিসেবে নয়, যদি “কর্তৃত্বাধীন” মনে করা হয়, তখন পরিবারেও সেই দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে পড়ে।
সামাজিক বাস্তবতা ও উদাহরণ 🌺
সমাজে এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে যেখানে স্ত্রীর উপর পরিবারের অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ স্বামীর অনীহা থেকেই শুরু হয়। কোনো মন্তব্য, উপহাস বা তুলনা যদি স্বামী থামিয়ে না দেন, তবে তা নিয়মে পরিণত হয়। ২০২৪ সালের এক সমীক্ষায় (BRAC Gender Study) দেখা গেছে, ৭৮% নারী মনে করেন, স্বামী পাশে থাকলে তার পরিবার থেকে কেউ তাকে তুচ্ছ করার সাহস পেত না। অর্থাৎ, স্বামীর নীরবতা স্ত্রীকে একা করে দেয়, আর এই একাকীত্বই নির্যাতনের প্রথম ধাপ।
করণীয় 🌼
১️⃣ স্বামীকে বুঝতে হবে, স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা তার “কর্তব্য” নয়, বরং “দায়িত্ব ও ভালোবাসার প্রকাশ।”
২️⃣ পারিবারিক সিদ্ধান্তে স্ত্রীকে যুক্ত করা উচিত, যাতে অন্যরা তাকে ‘অন্য কেউ’ না ভাবে।
৩️⃣ কেউ যদি স্ত্রীর সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে, স্বামীকে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে—শান্তভাবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে।
৪️⃣ পরিবারে পারস্পরিক সম্মানবোধ তৈরিতে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ উদ্যোগ দরকার।
🌷 পরিবারে স্ত্রীকে ছোট করার সাহস কেউ তখনই পায়, যখন স্বামী নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে না। একজন স্বামী যদি তার স্ত্রীর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা এবং সমান মর্যাদা প্রদর্শন করেন, তবে পুরো পরিবার সেই সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়। তাই সম্পর্কের নিরাপত্তা শুধু ভালোবাসায় নয়, সম্মান ও সাহসে গড়া অবস্থানেই টিকে থাকে।
📚 তথ্যসূত্র:
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS), “নারী নির্যাতন জরিপ ২০২৩”
BRAC Institute of Governance and Development, “Gender and Family Dynamics Study ২০২৪”
ড. সায়মা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, “Domestic Power and Silence in Bangladeshi Families,” ২০২২
#পরিবার #স্বামীস্ত্রী #সুখেরসংসার #সুখীপরিবার #জীবন #জীবনেরস্বাদ #জীবনযাপন #লাইফস্টাইল #জীবনভাবনা