29/06/2025
চট্টগ্রামের এক সাদামাটা বাড়িতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা মামিয়া চৌধুরীর। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তার ছিল প্রবল আগ্রহ। পরিবার, সমাজ বা আর্থিক সীমাবদ্ধতা—কোনো কিছুই তাকে থামাতে পারেনি।
২০১৫ সালে কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মামিয়া। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেন। অনেকের কাছে হয়তো এটি সাধারণ একাডেমিক পথ মনে হতে পারে, কিন্তু মামিয়া নিজের মধ্যে লালন করেছিলেন ব্যতিক্রম কিছু করার স্বপ্ন।
২০২২ সালে তিনি মাস্টার্সে ভর্তি হন গাজীপুরে অবস্থিত ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (ডুয়েট)। এখান থেকেই শুরু হয় তার গবেষণা-ভিত্তিক বাস্তব পথচলা। ২০২৩ সালে মামিয়া ডুয়েটে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। সেখানে তিনি গবেষণার পাশাপাশি একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন এবং দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন।
শুধু গবেষণাই নয়, একইসঙ্গে তিনি ২০২৪ সালে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি-তে সহকারী অফিসার হিসেবে যোগ দেন। একদিকে চাকরি, অন্যদিকে গবেষণা—দুয়ের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যান স্বপ্নের পথে।
গবেষণা, একাডেমিক ফলাফল এবং নিজের প্রচেষ্টার কারণে তিনি স্কলারশিপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। সবকিছু পেরিয়ে অবশেষে তিনি সুযোগ পান Tennessee Technological University-তে মাস্টার্স করার জন্য, একটি সম্পূর্ণ ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ-সহ। এতে রয়েছে ফুল টিউশন মওকুফ, প্রতি মাসে স্টাইপেন্ড এবং অতিরিক্ত সামার স্টাইপেন্ড।
আগামী ফ্যাল সেমিস্টার থেকেই তার ক্লাস শুরু হচ্ছে। মামিয়া এখন ব্যস্ত প্রস্তুতি নিতে—বিদেশ যাত্রার, নতুন জীবনের, নতুন স্বপ্নের।
মামিয়া চৌধুরীর এই অর্জন প্রমাণ করে, শুধুমাত্র ঢাকা বা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই নয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, গবেষণায় দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে পৌঁছানো যায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
তার এই যাত্রা শুধু তার নিজের নয়—এটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর জন্য এক আলোকবর্তিকা। মামিয়া আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন, সঠিক লক্ষ্য, কঠোর পরিশ্রম আর অবিচল ইচ্ছাশক্তি থাকলে সীমাবদ্ধতাও হার মানে।