Bonolota Media

Bonolota Media content creator

02/08/2023

New Bengoli Short Film

Bangladesh Railway
31/07/2023

Bangladesh Railway

28/07/2023

Heart touching story

28/07/2023

Romantic love story

Send a message to learn more

23/07/2023

shuru hui haiAbhi toh party Full Songkhoobsurat movie songskhoobsuratkhoobsurat full songskhoobsurat full moviekhoobsurat songsTseriesbadshah all songsBadsha...

01/05/2023

সিঙ্গাপুরকেও উড়িয়ে দিলো বাঘিনীরা



29/04/2023

ব্রিকসের মুদ্রায় বিনাশ ডলারের!!! রিজার্ভে মুদ্রার মর্যাদা হারাচ্ছে

28/04/2023
28/04/2023

ব্রিকসের মুদ্রায় বিনাশ ডলারের

মার্কেট থেকে ফিরেই আম্মার ঘরে গেলাম। দুটো শপিং ব্যাগ আম্মার হাতে দিয়ে বললাম,'দুই ব্যাগে দুটো শাড়ি। তোমার জন্য কফি কালা...
27/04/2023

মার্কেট থেকে ফিরেই আম্মার ঘরে গেলাম। দুটো শপিং ব্যাগ আম্মার হাতে দিয়ে বললাম,'দুই ব্যাগে দুটো শাড়ি। তোমার জন্য কফি কালারেরটা।আর আমার শাশুড়ির জন্য খয়েরি কালারের টা।'
আম্মা আমার শাশুড়ির নাম শুনেই ছ্যাঁৎ করে জ্বলে উঠলেন। শপিং ব্যাগ দুটো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন,'এইসব ঢং আমার পছন্দ না! শুধু শাড়ি কিনছস কেন শাশুড়ির জন্য।একসেট সোনার গয়না তৈয়ার করে গিফট করতি! '
আমি একটু সামনে গিয়ে মেঝেতে পড়ে থাকা ব্যাগ দুটো হাতে তুলে নিতে নিতে বললাম,'কী হয়েছে মা? একটা শাড়িই তো উনাকে দিচ্ছি। তোমাকে দিতে পারলে তাকে দিতে পারবো না কেন? তুমি যেমন আমার মা,তিনিও তো আমার মা!'
মা রাগের গলায় বললেন,'এইসব মেয়েলিপনা আলাপ এসে আমার কাছে করবি না। এইসব আমি একদম পছন্দ করি না! শশুর বাড়ির মুরিদ হয়ছস!যা এখন থেকে ওইখানে বসবাস করা শুরু কর গিয়ে। বেতন ভাতা যা পাস তাদেরকেই দিয়ে দে সব।'
আমি কিছুই বুঝতে পারিনি মা কেন এমন করছে।
রোজার বিকেল ছিল ।ভেবেছি মার বোধহয় রোজাটা ধরেছে। কষ্ট হচ্ছে।তাই একটু এমন করছে।
আমার ঘরে আসতেই দেখি জবা কাঁদছে চুপিচুপি।নিঃশ্বব্দে।তার চোখ থেকে শুধু জল গড়িয়ে পড়ছে গালের উপর।
আমি ওর পাশে বসে বললাম,'কী হয়েছে? কাঁদছো কেন জবা? মা এসব বলেছে বলে তাই না?'
জবা এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। কিছু বলতে পারে না।আমি ব্যাগ দুটো খাটের দিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরি শক্ত করে।জবা আমার বুকের ভেতর মিলিয়ে যেতে যেতে যে কথাগুলো আমায় বললো তা আমার ভেতরটা পুড়িয়ে দিচ্ছিলো লজ্জার আগুনে।সে বললো,'কেন কিনতে গেলে দুটো শাড়ি? আমার মায়ের কী শাড়ি নেই? দেখো গিয়ে আমার চার ভাই মায়ের জন্য কম করে হলেও চার জোড়া শাড়ি কিনে দিয়েছে। আমার তিন‌ বোন জামাই কিনে দিয়েছে। তুমি কেন কিনতে গেলে? আমার মাকে অপমান করবার খুব শখ হয়েছিল তোমার তাই না?'
আমি জবার এই কথাগুলোর জবাবে একটি কথাও বলতে পারিনি তখন। শুধু নিরব থেকে এটা ভেবেছি যে,এই পৃথিবীর মেরুদন্ডহীন পুরুষগুলোর একজন আমি।
'
রোজার আটাশ।ঈদ আগামীকাল হবে নাকি এরপর দিন হবে এ নিয়ে বিরাট আলোচনা চলছে।
জবার মন একটু ভালো হয়েছে।আমি ওকে বুঝিয়ে সুজিয়ে ম্যানেজ করেছি। কিন্তু ওই শাড়িটা আর আমার শাশুড়িকে দিতে দেয়নি।সে বলেছে, এই শাড়ি আমার মাকে দিলে এটা হবে আমার মাকে অপমান করার শামিল। তুমি যদি আমার মাকে অপমান করতে পছন্দ করো তবে শাড়ি দিয়ে আসো গিয়ে।আমি আর কিছু বলবো না।জবার এমন কথার পর আর যাই হোক শাশুড়ি মায়ের জন্য শাড়িটা পাঠানো যায় না।শেষে মাকেই দিলাম দুটো শাড়ি।মা নিয়ে কোন কিছু বলেনি আমায়।তার হাব ভাব দেখে বোঝা গেছে মা আমার প্রতি খুবই বিরক্ত। আমাকে এখনও তার নিজের অযোগ্য সন্তানই মনে করছেন তিনি।
রাতের খাবার খাচ্ছি। অনেকক্ষণ আগে জবার কাছে ডাল চেয়েছি।ও নিয়ে আসছে না।রাগ লাগছে আমার।
জবা দেরি করে ডাল নিয়ে ফিরতেই রাগ দেখিয়ে বললাম,'কখন বলেছি ডাল আনতে? এতোক্ষণ লাগে কেন? কী করেছিলে এতোক্ষণ তুমি?'
জবা ওড়না টেনে কপালের ঘাম মুছে বললো ,'দুলাভাই এসেছেন। শরবত করে দিয়েছি। তরমুজ কেটেছি।'
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কেন দুলাভাই এসেছে তা জানতে।
জবা বলার আগেই মা ডাকতে শুরু করলেন আমায়।
'রুহান,দেখে যা এক্ষুনি।তোর মেজো দুলাভাই এসেছে রে । এক্ষুনি আয়।'
আমি মার কথা শুনে তাড়াহুড়ো করলাম না খাবারে।আস্তে ধীরেই খেলাম। খাবার শেষ করে মার ঘরে গিয়ে দেখি দুলাভাই চেয়ারে বসে আছে।তার মুখে পান। তার মানে জবা আমার সামনে ডাল দিয়ে এসে দুলাভাইকে সুপুরি কেটেও দিয়েছে।এই মেয়েটা কী যে পরিশ্রম করে! রোজা রেখে আমি একটু কিছু করলেও কেমন হাঁপিয়ে উঠি।কেউ কিছু বলতেই চেত করে জ্বলে উঠি।গলা কর্কশ করে কথা বলি। কিন্তু ওর কিছুতেই কিছু হয় না। সবকিছুই সে ঠিকঠাক ভাবে করে।ও যেন একটা কাজের মেশিন। ওই যে সন্ধ্যা বেলায় একটা খেজুর খেলো।এক গ্লাস পানি খেলো।আর আমি জোর করে আধ গ্লাস শরবত খাওয়ালাম,ওটুকুই। এরপর আর কিছু খায়নি। খাওয়ার সময়ই তো পায়নি। ঘরের কতো যে কাজ!
'
মা ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এসে হাসি হাসি মুখে খাটের একপাশ থেকে তিনটি শপিং ব্যাগ বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন,'এই দেখ জামাই কী এনেছে! আমার জন্য শাড়ি।তোর জন্য পাঞ্জাবি।বউমার জন্য ত্রিপিস।'
আমি কাপড়গুলো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। অনেকক্ষণ ধরে। তারপর বললাম,'সুন্দর। অনেক সুন্দর। পছন্দ হয়েছে।'
তারপর টেবিলের উপর ব্যাগ গুলো রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। এখানে ওখানে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরাফেরা করে ঘরে ফিরলাম অনেক পরে। ততোক্ষণে দুলাভাই চলে গেছেন।মা বসে আছেন।তসবির দানা ধরে ধরে দোয়া জপছেন।
আমি মার পাশে বসলাম তখন। চুপচাপ বসে রইলাম।
মা বুঝলেন কিছু বলতে চাই আমি।তাই তসবি পড়া দ্রুত শেষ করে তসবির শেষ দানায় চুমু খেয়ে বললেন,'কিছু বলবি রে বাবা?'
আমি আরো খানিকটা সময় চুপচাপ বসে থেকে বললাম,'মা, দুলাভাই কী কাজটা ঠিক করেছেন?'
মা অবাক হয়ে বললেন,'কোন কাজটা?'
'ওই যে তোমার জন্য, আমার জন্য আর জবার জন্য, আমাদের ঘরের সবার জন্য ঈদের গিফট দিয়ে গেলো। এটা কী ঠিক হয়েছে? জামাইদের পক্ষ থেকে শশুর বাড়িতে কোন গিফট দেয়া কী ভালো কাজ মা?'
মা আমার এই কথা শুনে হঠাৎ কেমন চুপ হয়ে গেলেন।চুপ বলতে একেবারে চুপ। একটি কথাও আর বললেন না।আমি অনেকক্ষণ মার পাশে বসে রইলাম তার জবাবের অপেক্ষায়।মা কোন জবাব দিলেন না।শেষে রাত বাড়ছে বলে মার ঘর থেকে আমার ঘরে গেলাম।জবা তখনও জেগে আছে।পড়ছে। হুমায়ূন আহমেদের 'অপেক্ষা' বইটা তার ভীষণ রকম পছন্দের।এই বই পড়ে সে কাঁদতে কাঁদতে চোখে নদী বইয়ে দেয় একেবারে।
এখনও এই বইটিই পড়ছে।
আমাকে রুমে ঢুকতে দেখেই সে একটা পাতা ভেঙে বইটা খাটের পাশে টেবিলের উপর রাখলো। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো,'কাজটা মোটেও ভালো করোনি তুমি!'
আমি বললাম,'কোন কাজটা?'
জবা বললো,'মা বৃদ্ধ মানুষ। সেদিন না হয় মা এরকম একটা আচরণ করেছেন তোমার সাথে।বুঝতে পারেননি! তাই বলে তুমিও আজ তার সাথে এমন করবে? মা তোমার এই আচরণে খুব কষ্ট পেয়েছেন! তুমি এভাবে না বললেই ভালো হতো! কাজটা অনেক খারাপ হয়েছে রুহান!'
আমি শুধু বললাম,'জবা,মা হোক আর যেই হোক তার ভুলটা ধরিয়ে দেবার প্রয়োজন আছে। ভুল না ধরিয়ে দিলে একটা মানুষ বুঝবে কী করে তাকে সঠিক পথে আসতে হবে? আমরা মানুষ। মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত। আশরাফুল মাখলুকাত ভুল করে,অন্য একজন তার ভুল ধরিয়ে দেয়, তারপর ভুলকারী আবার সঠিক পথে ফিরে আসে।এটাই তো বিউটি।'
জবা এ নিয়ে আর কিছু বলেনি। বিছানা ঝেড়ে দিয়ে শুধু বললো ,'শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছে।'
আমি বললাম,'আচ্ছা।'
'
পরদিন দুপুর বেলা মা হুট করে জবাকে বললেন,'বউমা রেডি হও। মার্কেটে যাবো।'
জবা মার কথা নিয়ে তেমন ঘাঁটে না।সে জানে মার রাগ বেশি।
সে বরং রেডি হয়ে মার সাথে গেলো।
তারা বাসায় ফিরলো ইফতারের আগে আগে।
বাসায় ফিরেই মা আমায় ডাকলেন।
'রুহান, এইদিকে আসো বাবা।'
আমি খিঁচুড়ি রান্না করছিলাম। ওদের ফিরতে দেরি হচ্ছে দেখে নিজেই ইফতারির রান্না করতে শুরু করলাম। ভাবলাম জবা ক্লান্ত হয়ে ফিরবে, এরপর আবার রাঁধতে গেলে ওর উপর জুলুম হবে।তাই নিজের এক্সপেরিমেন্ট কাজে লাগালাম।
মা ডাকলেও কিচেন থেকে মার কাছে গেলাম না। এদিকে আবার কখন পাতিলের তলায় খিচুড়ি বসে যায়!
আমি যাইনি বলে মা নিজেই আমার কাছে এলেন। তার হাতে পাঁচটি ব্যাগ।মা আমার হাতে ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন,'একটা তোর শাশুড়ির,আর বাকী চারটা বউমার চার ভাইয়ের জন্য।আজ রাতেই তুই যাবি। দিয়ে আসবি গিয়ে।'
আমি এবারেও কোন কথা বললাম না।চুপ করে রইলাম।
মা আমায় চুপ করে থাকতে দেখে বললেন,'বাবা,আমি যে সেদিন কাজটা করেছি এটা নিতান্তই গর্হিত কাজ। শাশুড়ি মায়ের মতই। তাকে উপহার দেয়া আর নিজের মাকে উপহার দেয়া তো সমান কথাই। আমি ভুল করেছিলাম সেদিন বাবা। এরপর আর এরকম ভুল হবে না।'
আমি মৃদু হাসলাম। মায়ের এই কাজটা আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।কেউ যদি তার নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং এই ভুল থেকে সে সঠিক পথে ফিরে আসে এটা তো আনন্দেরই কথা।



#ভুল_ভাঙনের_গল্প
#অনন্য_শফিক

26/04/2023

বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে ৮টি চুক্তি স্বাক্ষর
Bonolota Media Robi Robin Khan ROBIN Rabiul Haque Robert Lewandowski Roger Federer Ricardo Laguna

25/04/2023

ডলার রির্জাভ মুদ্রার মর্যাদা হারাচ্ছে

14/04/2023

চীন তাইওয়ান উত্তেজনার সর্বশেষ সংবাদতাইওয়ানের চারদিকে মহড়া চালাচ্ছে চীন, তাইপের কড়চীন তাইওয়ান যুদ্ধচীন তা....

How to manufacturing cooking pan form wasted aluminium
12/04/2023

How to manufacturing cooking pan form wasted aluminium

How To Manufacturing Cooking 🍳 Pan From Wasted Aluminium! Amazing Pan Manufacturing Wasted Aluminium

07/04/2023

অফিস থেকে বেরিয়েছি মাত্র।পান সুপারির দোকানে যেতে হবে। আসার সময় মা বার বার করে বলে দিয়েছেন, গতকাল থেকে বাসায় পান নাই।পান নিয়ে যেতে।পানের দোকানে আর যাওয়া হলো না।এর আগেই কলির ফোন।কলি ফোন করে ভীষণ কাঁদছে।ওর কান্না শুনে আমার ভেতরটা কেঁপে উঠলো। বুঝতে পারছি না কি হয়েছে ওর!কলি পাঁচ মাসের গর্ভবতী। জটিল কিছু হয়েছে কি ওর?
আমি বললাম,' কি হয়েছে কলি? কোন সমস্যা?'
কলি কাঁদতে কাঁদতেই বললো,' মিথুনের ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। আমি এখন এম্বুলেন্সে।'
পান আর কেনা হলো না আমার। জিজ্ঞেস করলাম,' কোন হাসপাতালে যাবি?'
ও বললো,' ময়মনসিংহ মেডিকেল।'
বলে ফোন রেখে দিল।
শুনে আমার পায়ের মাটি কেমন সরে গেল যেন। মাকে ফোন দিলাম সঙ্গে সঙ্গে।মা ফোন রিসিভ করলে কি বলবো বুঝতে পারলাম না। মাকে যদি এই খারাপ সংবাদ দেই তবে মাকে সামলাবে কে? একমাত্র মেয়ের স্বামীর এই করুণ পরিণতি সহ্য করার ক্ষমতা সব মায়ের জন্য কঠিন। আমার মায়ের জন্য আরো বেশি কঠিন। কারণ মিথুন মাকে নিজের মায়ের মতো আদর করতো।মাও তাকে অসম্ভব রকম পছন্দ করতেন।
মার কাছে কিছু না বলেই ফোন কেটে দিলাম।পথ ধরলাম ময়মনসিংহের।এখান থেকে ময়মনসিংহ গেলে দু ঘন্টা সময় লাগবে।আমি বাসে উঠলাম তাড়াহুড়ো করে।বাস চলছে। আমার ভেতর কেমন অস্থিরতা যে কাজ করছে! কলি আমার বড় আদরের বোন। আমি আল্লাহর কাছে খুব করে দোয়া করলাম। বললাম, আমার হায়াত থেকে কিছু নিয়ে হলেও মিথুনকে তুমি বাঁচাও আল্লাহ। আমার এই দোয়া কবুল হলো না।আমি ময়মনসিংহ পৌঁছার আগেই কলির চাচা শশুর আমায় কল করে বললেন,' তুমি কতদূর আসছো মহিন?'
আমি বললাম,' আরো আধঘন্টা লাগবে।'
কলির চাচা শশুর বললেন,' মিথুন মারা গেছে।'
শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ছোট বোনের স্বামী মারা গেলে কি কাঁদতে হয়? পুরুষ মানুষ কাঁদে? অদ্ভুত বিষয় হলো বাসের ভেতর এতো এতো লোকের সামনেই আমি হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলাম। আমার হঠাৎ করে মনে হলো, আমার বোনের সুন্দর একটা জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে।ওর সুখের দিন গুলো এখানেই থমকে গেছে।ওর গর্ভের বাচ্চাটার কথা ভেবে এতো কষ্ট লাগছিলো আমার!নিষ্পাপ বাচ্চাটা জন্ম নিবেই এতীম হয়ে। বড় হতে হতে দেখবে সবার বাবা কাঁধে করে তার মতো ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আবদার পূরণ করে। শুধু তাকেই কাঁধে নেয়ার মতো কেউ নাই! যদি কেউ জিজ্ঞেস করে তোমার বাবা কী করে ? সে তখন কি বলবে? তার কি তখন খুব কষ্ট হবে না?
আম্মাকে আমি ফোন দেবার সাহস করতে পারলাম না। ফোন করলাম ছোট চাচীকে। বললাম,' ছোট মা, মাকে কিছু না বলে গাড়ি করে নিয়ে কলিদের বাড়ি চলে যাও।'
ছোট চাচী কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন,' কলির কোন সমস্যা নাকি রে মহিন? কি হয়েছে ওর?'
আমি বললাম,' ওর কিছুই হয়নি। তুমি আমায় কিছুই জিজ্ঞেস করো না আর। মাকে নিয়ে শুধু চলে আসো।মা যেন কিছুই বুঝতে নিয়ে পারে।'
বলে ফোন রেখে দিয়েছি আমি।আমি জানি মা ঠিকই সব বোঝে ফেলবে। মা গাড়িতে বসে খুব কাঁদবে। চোখের জলে শাড়ির আঁচল ভেজাবে।
আমার খুব খারাপ লাগছে কলির জন্য।কলির মতো ফুটফুটে সুন্দরী মেয়ে আমি কম দেখেছি।ও যতোটা না সুন্দরী এরচেয়ে বেশি মায়াবী। মনও খুব কোমল ওর।ও কারোর দুঃখ সহ্য করতে পারে না।আজ ওর জীবনেই এতো বড় দুঃখ নেমে এলো! আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে কলির সামনে গিয়ে দাঁড়াবো!
'
হাসপাতালে গিয়ে আমি ভীষণ অবাক হলাম।কলি কাঁদছে না। তার শাশুড়ি পাগলামি করছেন। চিৎকার করে কাঁদছেন।দেয়ালে কপাল টুকছেন বার বার। অদ্ভুত বিষয় হলো কলি নিজেকে শক্ত রেখে সে তার শাশুড়িকে সান্তনা দিচ্ছে।
আমি যাবার পর আমার দিকে একবার তাকালো। তারপর বললো,' এখানে কি কি করতে হবে দেখ ভাইয়া। ওদের বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করছে। আমার যে চাচা শশুর এসেছিলেন,তার প্রেশার হঠাৎ বেড়ে গেছে। তাকে নিয়েই টানা হেঁচড়া হচ্ছে। এদিকে আমি মাকে নিয়ে ব্যস্ত। তুই দেখ একটু তাড়াতাড়ি করা যায় কি না!'
ওর দিকে তাকিয়ে,ওর কথা শুনে আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে।আমি জানি ওর ভেতরে এখন কী চলছে! আমার এইটুকু বোন যে সামান্য রক্ত দেখলেই ভয় পেতো, আমি ফুটবল খেলে পায়ে ব্যথা পেয়ে এলে তার চোখ জলে ভিজে চুপসে যেতো। কাঁদতো। সে তার এমন শোকের দিনে পাথর হলো কি করে?
কলির সামনে থেকে গিয়ে একবার মিথুনকে দেখে এলাম। সাদা কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা। কাপড় সরিয়ে চেহারা দেখে মনে হলো ও মিটিমিটি হাসছে।হাসবেই তো! ওর মতো ভালো মানুষ আমি কখনোই দেখিনি।
'
হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেতে আরো খানিক সময় লাগলো। এরিমধ্যে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে গেল।লাশ তখন তোলা হয়েছে এম্বুলেন্সে।কলি বসেছে লাশের পাশে।তার শাশুড়ি, ফুফু শাশুড়িও বসেছে।আমি বসবো ড্রাইভারের পাশে।এম্বুলেন্স যখন স্টার্ট করবে ঠিক তখনই একটা মেয়ে দৌড়ে এলো। তার চেহারা কেমন রুক্ষ।রাগে ফুসফুস করে তেড়ে আসছে। ওকে আমি চিনি।কলি একবার এই মেয়েটির ছবি দেখিয়ে আমায় বলেছিল,' ওর নাম মৈত্রী। আমার ফুফু শাশুড়ির মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল ওর।তিন মাস সংসার করেছে। এরপর ডিভোর্স হয়ে গেছে।'
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,' কেন ডিভোর্স হয়েছে?'
কলি বলেছিল,' ও বলেছে, ছেলের সমস্যা।'
কী সমস্যা তখন পরিস্কার করে আমায় বলেনি কলি।কেন জানি এড়িয়ে গিয়েছিল।পরে মার সঙ্গে যখন কলি কথা বলছিল এই বিষয়ে।আমি আমার ঘর থেকে একটু আধটু শুনে আন্দাজ করেছিলাম, যে ছেলের সঙ্গে মৈত্রীর বিয়ে হয়েছিল, ওই ছেলে আসলে কোন ছেলেই না।না পুরুষ। মেয়েদের প্রতি ওর কোন আগ্রহ নেই। মৈত্রী তিন মাস অপেক্ষা করেছে।কোন পরিবর্তন নাই।শেষে ডিভোর্স নিয়ে চলে এসেছে।
এরপর আরেকবার মৈত্রী প্রসঙ্গে কথা বলেছিলো কলি আমার সঙ্গে।কলি বলেছিল, মৈত্রী এখন মিথুনদের বাড়িতেই থাকে। এখানে একটা কিন্ডারগার্ডেনে পড়ায়।
শেষবার যখন মৈত্রী প্রসঙ্গে কথা বলছিল কলি, তখন মনে হয়েছিল ওর প্রতি কেন জানি বিরক্ত সে।
সে যায়হোক, মৈত্রী এসেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলো। পাগলের মতো আচরণ করতে লাগলো। কলির চুল ধরে টেনে ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে লাগলো।গর্জন করে বলতে লাগলো,' তুই একটা খু *নি। মিথুনের মৃত্যুর জন্য তুই- ই দায়ী! তুই ওকে মেরেছিস।তোর জন্যই ওর স্ট্রোক হয়েছে। গতকাল রাতেও ওর সঙ্গে কথা হয়েছে আমার।তুই কি কি করেছিস এর সবকিছুই ও বলেছিল আমায়।আমি তোকে ছেড়ে দিবো না!।'
'
'

(গল্প শেষ হয়নি।পরবর্তী পর্বে শেষ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ!)

#মুখ_ও_মুখোশ
#অনন্য_শফিক
'
'

07/04/2023

চাকরি হবার পর প্রথম মাসের বেতন এনে ভাবলাম মাকে দিবো।কারণ মা-ই কঠোর মেহনত করে আমায় পড়াশোনা করিয়েছেন।বাবা সেই শুরু থেকেই বাঁধা দিতেন। বলতেন, তার সঙ্গে রাজ মিস্ত্রীর কাজ করতে।এতে করে দুটো পয়সা বেশি আসবে ঘরে। নিজেদের উন্নতি হবে।
সবাই তো আর সমান বোঝে না।বাবা হয়তো কাজের বিনিময়ে উপস্থিত ক'টা টাকা বেশি ঘরে আসবে এই স্বপ্নই দেখছিলেন। কিন্তু মা স্বপ্ন দেখেছিলেন আকাশ সমান। তিনি বাবার অমতে গিয়ে আমায় স্কুলে দিলেন। মায়ের গয়না ঘাঁটি,নানার দেয়া সামান্য টাকা এসব বেছে যা টাকা এলো তা বাড়িয়ে বলিয়ে যা হয়েছিল তা আমার পড়াশোনার পেছনে ঢাললেন। মাধ্যমিক পর্যন্ত মার কাছ থেকে খরচ নিতে হতো আমার। উচ্চ মাধ্যমিকের সময় টিউশন পেয়ে গেলাম। নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারতাম তখন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হওয়ার পর মাকে মাস শেষে হাজার দুয়েক দিতে পারতাম। পড়াশোনা শেষ হবার পর চাকরি হলো। প্রথম মাসের বেতন পেলাম। এই বেতন আজ মার হাতে তুলে দিবো বলে মাকে খুঁজছি। খুঁজতে গিয়ে দেখি মা পুকুর ঘাটে।কলসি ভরে পানি তুলছে।মার হাত থেকে কলসি নিয়ে বললাম,' চোখ বন্ধ করো তো একটু মা।'
মা অবাক হলো।মার সঙ্গে কখনোই আমি এরকম রসিকতা করিনি। এই জন্যই অবাক হয়েছে।
মা বললো,' কেন? চোখ বন্ধ করলে কী হবে?'
আমি বললাম,' করে দেখো না কী হয়! ভালো কিছুই হবে।'
মা চোখের পাতা বন্ধ করলো। এবার মায়ের ডান হাত নিয়ে সেই হাতে টাকা ভর্তি হলুদ খামটা মুঠোতে দিয়ে বললাম,' আরো তিন মিনিট পর চোখ খুলে দেখবে এটা কি!'
বলে আমি কলসি নিয়ে ঘরে চলে এলাম।
মিনিট কয়েক পর মাও এলো। মায়ের চোখ জলে ভেজা।আমি জানি এটা দুঃখের জল না। সুখের জল। নিজের পরিশ্রমের স্বার্থকতার পর যে মনে আনন্দ হয়, সেই আনন্দের জল।
মা ঘরে এসে বললো,' এই টাকা দিয়ে আমি কি করবো মহিন? আমাকে দশ টাকা না দিলেও আমি খুশি। তুই এই টাকা নিয়ে তোর বাপকে দে।'
আমার রাগ লাগলো।আমি বললাম,' বাবাকে দিবো কেন? তিনি তো আমায় রাজমিস্ত্রীর কাজে লাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন!'
মা হাসলেন। বললেন,' সহজ সরল মানুষ। সহজ সরল মানুষেরা ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে না।তারা বর্তমান নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া আমাদের অবস্থাও তো তেমন ভালো ছিল না।তোর বাপ একা উপার্জন করতো।একা এই সংসারের বোঝা টানতে হতো তার। নিজের কাঁধের ভার হয়তো লাঘব করতে চেয়েছিল সে!'
আমি কোন কথা বলি না।চুপ হয়ে থাকি।
মা বলেন,' তোর বাপের পাঞ্জাবিটা পুরনো হয়ে গেছে। ছিঁড়ে গেছে এক জায়গায়।নিচের সেন্ডো গেঞ্জিটা তো জালের মতো ছোট ছোট ছিদ্র হয়ে গেছে। একজোড়া ভালো জুতো নাই।তোর বাপ নিজের জন্য কিছুই করেনি। হয়তো তোর পড়াশোনার পেছনে তেমন খরচ করেনি। কিন্তু টাকা পয়সা উপার্জন করে যে কিছু ক্ষেত খামার করেছে,ঘরটা বেঁধেছে তা তোর জন্যই বাবা।'
মার কথা আমার ভালো লাগলো।আমি জানি আমার মা কতোটা জ্ঞানী।কতোটা স্বার্থহীন।সেই সময়ই আমি বাবাকে বললাম,' বাবা, তোমার একটু সময় হবে? তোমাকে নিয়ে আমি বাজারে যেতে চাইছিলাম একটু!'
আমার চাকরি হবার পর থেকেই বাবা আমায় অন্য রকম চোখে দেখে। পছন্দ করে। বাবা তখনই বললেন,' এখন যাবি?"
আমি বললাম,' হ্যা ‌।'
বাবা বললেন,' আচ্ছা।'
ঘরে গিয়ে বাবা ঘিয়ে রঙা পুরনো পাঞ্জাবি পরলেন। অনেক দিন না কাঁটা চুল আঁচড়ে এলেন। পুরনো স্যান্ডেল তার পায়ে।এক জায়গায় সেলাই করা। ছিঁড়ে গিয়েছিল সম্ভবত।
বাবাকে নিয়ে অটো করে বাজারে গেলাম। তারপর প্রথমেই সেলুনে গিয়ে ব বাবার চুল কাটালাম। মার্কেটে নিয়ে গেলাম। বাবার জন্য যখন কাপড় বের করি তখন বাবা জোর জবরদস্তি করে। কিনতে চায় না।বলে,' আরে আমার তো আছে। শুধু শুধু কেন টাকা খরচ করবি!'
আমি বাবার কথা শুনি না। পাঞ্জাবি কিনে দেই দুটো।একটা ফতুয়া কিনি। লুঙ্গি কিনি। জুতো কিনি দু 'জোড়া। একজোড়া সেন্ডেল একজোড়া চামড়া। তারপর বাকী সব টাকা বাবার হাতে তুলে দেই।বলি,' বাবা, আমার চাকরির প্রথম মাসের বেতন। কেনাকাটা করে এগুলো অবশিষ্ট আছে।'
বাবা টাকাগুলো কাঁপা কাঁপা হাতে নেন। আমার সামনেই দোকানির কাছ থেকে শাড়ি নেন।জুতো নেন। মাথায় দেয়ার সুগন্ধি তেল নেন।সাবান নেন।শেষে ফেরার সময় বেশি করে মিষ্টি নেন।বাড়ি ফিরে মাকে উপহার দেন।নিজে নতুন পাঞ্জাবি লুঙ্গি আর চামড়ার জুতো পরে পাড়া প্রতিবেশীর ঘরে মিষ্টি বিলাতে যান।জনে জনে বলে বেড়ান,' আর যাই করো বাচ্চা কাচ্চার পড়াশোনা ঠিক রাইখো। পড়াশোনা করাইয়ো।বাপ মায়ের সম্পদ হইলো তাদের সন্তান।আর সন্তানের সম্পদ হইলো তাদের শিক্ষা দীক্ষা।'
আমার বড় ভালো লাগে বাবার এসব পাগলামি দেখতে।

সময় যাচ্ছে। চাকরি হয়েছে অনেক দিন।বাড়ি থাকতে পারি না। চাকরি সুবাদে দূরে থাকতে হয়। বাবাকে বলি আমার এখানে এসে থাকতে।বাবা আসেন না। বলেন,' গ্রামের মানুষ গুলো কম বোঝে। শিক্ষা দীক্ষার প্রতি এদের মনোযোগ কম।আমি যদি বাড়ি থেকে চলে যাই তবে এদের শিক্ষা দীক্ষার কথা বলবে কে?'
আমি এসব শুনে হাসি।
মা ফোন করে বলেন,' তোর বাপ ইদানিং যা কান্ড করে!'
আমি জিজ্ঞেস করি,' কি করে?'
মা বলেন,'
নিজের কাজ কর্ম রেখে মানুষের কাজ কর্ম করে বেড়ায়।কেউ তার বাচ্চাকে কাজে লাগালে সে গিয়ে বলে,আমি কাজ করে দেই। তোমার ছেলে পড়ুক গিয়ে। তারপর তোর বাবা কাজে লেগে পড়ে।'
শুনে আমার হাসি পায়। আনন্দ হয়।সে যে কি অসীম আনন্দ বুঝাবো কি করে?
'
'
#বাবার_অদ্ভুত_কান্ডকারখানা
#অনন্য_শফিক

30/03/2023

শাশুড়ি মায়ের সাথে রান্নাঘরে ইফতার বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার বাবা এসে বাড়ির দরজায় এসে ধপ করে বসে পড়লেন। শাশুড়ি মা সেটা খেয়াল করে আমাকে বলতেই আমি বাবার কাছে দৌঁড়ে এসে পাশে বসে শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। বাবার এই বিকেলের রোদে ঘেমে একাকার অবস্থা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো, দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো বাবা অনেক ক্লান্ত। শাশুড়ি রান্না থামিয়ে তিনিও বাহিরে এসে দাঁড়ালেন। বাবাকে তুলে ভেতরে বসিয়ে দিলাম। বাবার হাতে ব্যাগভর্তি রোজার বাজার। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, আমার বাবা কখনো এত বাজার একসাথে করে নি। আজ হঠাৎ এত বাজার দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।
বাবা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এক টুকরো হাসি মুখে ফুটিয়েই শাশুড়ি মাকে বলল-

" বেয়াইন এই বাজারগুলো আপনাদের জন্য, মেয়েকে তো কিছু দিতে পারি না রমজানেও যদি এতটুকু না দিতে পারি তাহলে কেমন দেখায় বলেন? আমার তো অনেক কিছু দেওয়ার সামর্থ নেই, এতটুকুই সামর্থ হয়েছে। মেয়েকে তো অনেক কিছুই দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারি না। বাড়িওয়ালী অসুস্থ তারও ওষুধ কিনতে হয় আমার জন্য ও কিনতে হয়। বড় মেয়ে গত সপ্তাহে কল দিয়ে বলল ইফতার পাঠানোর কথা, আমারই উচিৎ ছিল আগে আগে পাঠানো আর মেয়ে যেহেতু বলল তাই আর দেরি না করে মেয়ের বাড়ি পৌঁছে দিলাম। আমার দেওয়ার সামর্থ্য তো অনেক কম, বড় বেয়াইনকে বলেছি রোজা শেষ হতে হতে আবার কিছু পাঠাবো, উনার বাড়িতে নিয়ম ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতি রোজায় ইফতার পাঠাবে।"

বাবা কথাগুলো বলে থামলেন। শাশুড়ি আমার দিকে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার কথায় হয়তো উনি বিরক্ত হয়েছেন। বিরক্ত হবারই কথা ভুলটা আসলে আমারই। শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই আমি বুঝে গেলাম আমাকে কি করতে হবে। আমি রুমে গিয়ে আলমারি থেকে শাশুড়ির দেওয়া যত্নে রাখা টাকা আর বাবা-মায়ের জন্য কেনা শাড়ি পাঞ্জাবির প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমি শাশুড়ি পাশে দাঁড়াতেই উনি আমার হাতে থেকে ওগুলো নিয়ে নিলেন। বাবার দিকে মুচকি হেসে বললেন,

" বেয়াই, মেয়ে তো দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মেয়ে একদম গর্দভ। এই মেয়ের মাথায় কোন বুদ্ধি নেই। রোজার আগে আমি আর আপনার বেয়াই মার্কেট গিয়েছিলাম যেন রোজার মধ্যে এসবে সময় নষ্ট না হয়। দুজন মিলে বাড়ির সবার জামা-কাপড় আর দুই ছেলের শ্বশুরবাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি, এই নিন দেখুন তো পছন্দ হয় কি না? আর শুনুন আমাদের বাসায় ইফতার দেওয়ার কোন নিয়ম নেই, সামনে বছর থেকে এরকম ভুল আর করবেন না। এবার যেহেতু উপহার নিয়েই এসেছেন তাই আর ফেরত দিচ্ছি না এগুলো আমরা রেখে দিচ্ছি।"

আমার শাশুড়ি প্যাকেট দুইটা বাবার দিকে বারিয়ে দিলেন। বাবার মুখে কোন কথা নেই, বাবা বেশ অবাক হয়েছেন আমার শাশুড়ির ব্যবহারে। আমি জানি বাবা আর মা এবার ঈদে কিছু নিতো না কারণ আমার বাবার হাতে যে আর কিছুই নেই। বড় আপুর বিয়ে হয়েছে চার বছর, বিয়ের পর প্রতিবছর রোজায় ইফতার আর ঈদে ওদের জামাকাপড় দিতে হয়। ওদের জন্য আমিও ঈদে ভালো কিছু নিতে পারতাম না। আমার বিয়ে হয়েছে পাঁচ মাস, এ বাড়ির পরিবেশ একদম ভিন্ন। আমি এমন একটা পরিবার পেয়েছি যেই পরিবার নিয়ে বাহিরে কারো কাছে কিছু বলতে খুব ভয় লাগে যদি নজর লেগে যায়! আমি এরকম পরিবার কিছুতেই হারাতে চাই না। বুদ্ধির পর থেকে জেনে এসেছি শাশুড়ি আর ছেলের বউয়ের সম্পর্ক একদম দা কুমড়ার মতো। আপুর শাশুড়িকে দেখে আমার বিয়ে করতেও ভয় লাগতো কিন্তু এখানে এসে জানলাম শাশুড়িও নিজের মায়ের মত হয়।

বাবা প্যাকেট দুটো নিয়ে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,

" এসবের কি দরকার ছিল বেয়াইন? আমারই উচিৎ আপনাদের কিছু দেওয়া, আমার মেয়ের প্রথম ঈদ বিয়ের পর কিন্তু দেখুন........."

" শুনুন বেয়াই, আপনার মেয়েকে কেমন রাখতে পেরেছি জানি না। তবে আপনার ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না যে আপনি আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ও তার দায়িত্ব বয়ে নিয়ে বেড়াবেন। আপনার মেয়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে আমাদের, বলতে গেলে এত সুন্দর একটা মেয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের ওপর ও আমাদের কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। আপনার কষ্টে লালন পালন করা মেয়েটা কত সহজেই আমাকে দিয়ে দিয়েছেন এর প্রতিদান তো প্রাপ্য। আমি চাই সম্পর্কটা অটুট থাকুক তবে একটাই অনুরোধ আপনি দয়া করে এই বাড়ির জন্য কিছু করবেন না হাসিমুখে দুটো কথা বলবেন আমার ছেলেকে ভালোবাসবেন বাকি সব আমি দেখব। আর আপনি এসব কেন নিয়ে আসবেন আপনার মেয়ের সংসারে কি কম আছে বলেন? আপনার জামাই মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে, তার দায়িত্ব আপনাদের দেখা।"

" না না বেয়াইন এসব কি বলছেন? আমার মেয়ে সুখে থাকলেই আর কিছু চাই না আমি। একটা বাবা আর কিইবা চায় মেয়ের ভালো থাকা ছাড়া?"

বাবার কথায় আমার শাশুড়ি তেমন কিছু বললেন না আমার হাতে টাকাগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

" তোমার পক্ষ থেকে তোমার বাবার উপহার তুমিই দাও, তোমার বাবা খুশি হবেন।"

শাশুড়ি মায়ের চেষ্টায় আমি একটা ভালো চাকরি পেয়েছি মাসে পয়ষট্টি হাজার টাকা বেতন। আমি ভেবেছিলাম মা -বাবা, শ্বশুর-শাশুড়িকে কিছু উপহার দিব কিন্তু আমার শাশুড়ি বললেন পুরো টাকা বাবার হাতে তুলে দিতে কারণ বাবা এত কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন এই টাকার দাবিদার শুধুমাত্র আমার বাবা। আমি সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম, উনি তো বলেছিলেন তবুও বাবাকে টাকাগুলো দিতে দ্বিধা করছিলাম কারণ পরে যদি এটা নিয়ে কোন কথা ওঠে!
আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে তিনি কথাটা আবার বললেন। আমি বাবার পায়ের নিকট বসে গেলাম। বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার আমার শাশুড়িরদিকে। আমার শাশুড়ি মিটমিটিয়ে হাসছেন। আমি বাবার হাতে টাকা তুলে দিয়ে বললাম," বাবা এটা তোমার মেয়ের প্রথম উপার্জন। এটায় আর কারো অধিকার থাকুক আর না থাকুক এখানে তোমার আর আমার শাশুড়ির অধিকার সবথেকে বেশি। তবে আমার শাশুড়ির মতে এখানে শুধু তোমার অধিকার। বাবা বিশ্বাস করো আপুর শাশুড়িকে দেখে আমি যতটা ভয় পেতাম এখন তার থেকে বেশি ভয় পাই আমার ভাগ্যকে, এটা ভেবে ভয় পাই যে এই ভাগ্যটা কোনদিন বদলে যাবে না তো! এই বাড়ির মানুষগুলো আমার হৃদয়ে মিশে গিয়েছে। এই যে মহিলাকে দেখছো উনি আমাকে প্রতিদিন মায়ের মতো বকে মাঝেমাঝে তো মায়ের মতোই পিঠের ওপর দ্রুম করে মে*রেও দেয় আবার জানো বাবা উনিই আমাকে তার মেয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। উনার জন্যই হয়তো আমার বেঁচে থাকার খুব লোভ হয়। মনে হয় শুধু মাত্র এই বাড়িতেই আমার হাজার বছর পেরিয়ে যাক। বাবা এই বাড়ির মানুষের কোন তুলনা হয় না, সময় সময় মনে হয় আমার ভালোবাসাই হয়তো যথেষ্ট নয়, এত ভালোবাসা আমি পাই যে এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়। বাবা তুমি দোয়া করো আমি যেন আমার শাশুড়ির মেয়ে হয়েই থাকতে পারি।"

আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না, কান্নায় কথা জড়িয়ে আসছিল। আমার কান্নায় বাবার মুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। তিনি হয়তো আমার মাধ্যমে খুশি অনুভব করছেন।
হঠাৎ আমি আমার কাধে শাশুড়ির হাত অনুভব করলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখি শাশুড়ির চোখেও পানি। আমি দাঁড়িয়ে উনার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম, " মা আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?"

কোন উত্তর না দিয়ে তিনিই আমাকে আলগোছে জড়িয়ে নিলেন। এ যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি। এ প্রশান্তি সকল দুঃখকে ছুড়ে ফেলতে সক্ষম।

#সমাপ্ত
#অণুগল্প_শাশুড়িমা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)

গল্পটি কাল্পনিক, জানি বাস্তবে এমন শাশুড়ি হয়তো কেউ পায় না, সম্ভব ও হয় না। এত এত নেগেটিভিটির মাঝে একটু পজেটিভ চিন্তাভাবনার রেশ থেকে যাক।

Address

Dhaka
1215

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Bonolota Media posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share