01/08/2025
আমেরিকা ছিল তাদের কাছে স্বপ্নের দেশ। শুনেছিলেন, একবার সেদেশের মাটিতে পা রাখতে পারলে জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। এজন্য বহু অর্থ ব্যয় করেছেন, পুড়িয়েছেন অনেক কাঠখড়। অবশেষে, পা-ও রেখেছিলেন স্বপ্নের দেশে। কিন্তু, স্বপ্ন তাদের কাছে ধরা দেয়নি। ফিরে এসেছে দুঃস্বপ্ন হয়ে। আমেরিকার উন্নত জীবনের মোহে পড়ে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এমনই ভাগ্যবিড়ম্বিত এক যুবক নোয়াখালীর চৌমুহনীর শাহাদাত হোসেন। অবৈধপন্থায় আমেরিকা যাওয়ার জন্য তিনি দালালের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৩২ লাখ টাকা। কথা ছিল, যেভাবেই হোক তাকে আমেরিকা পৌঁছে দেয়া হবে। কথাও রেখেছিল দালাল। কিন্তু বিধিবাম! মেক্সিকো সীমান্ত পার হওয়ার পরপরই তিনি পাকড়াও হন পুলিশের হাতে। এরপর আইনি লড়াইয়ে হেরে দেশে ফেরত আসতে হয় তাকে। শুধু শাহাদাত-ই নয়, ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে নিয়মিতই ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশিদের। পরিসংখ্যান বলছে, গত ২ মাসে ১৩জন বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে, সাম্প্রতিককালের মধ্যে আগামীকাল শনিবার সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান সি-৭ এ করে ৬১ জনকে ডিপোর্ট করা হবে। ওইদিন সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে তারা হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন।
নোয়াখালীর শাহাদাত বলেন, প্রথমে তাকে ব্রাজিলের ভিজিট ভিসা দেয়া হয়। ২০২৪ সালের জুনে বিমানে করে দুবাইয়ে ট্রানজিট নিয়ে ব্রাজিল পৌঁছান তিনি। এরপর সড়ক পথে একের এক পার হন অন্তত ১১টি দেশ। তার সঙ্গে ছিলেন আরও ৬ বাংলাদেশি। শাহাদাত জানান, ব্রাজিল হয়ে সড়কপথে তারা চলে যান বলিভিয়া। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যান পেরু। এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে পা রাখেন ইকুয়েডর। এভাবে একে একে পার হন কলাম্বিয়া, পানামা সিটি, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা সীমান্ত। তিনি বলেন, একেকটি দেশ পাড়ি দিচ্ছিলেন আর মনে হচ্ছিল স্বপ্নের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন। এরপর প্রবেশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোতে। মেক্সিকো সীমান্ত পার ফাইনালি ৬ জনের এই দলটি ঢুকে পড়ে তাদের স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তাদের পুলিশ আটক করে। এভাবে আমেরিকা পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছিল ১ মাস ২০দিন।
এই যুবক আরও জানান, এসব দেশের সীমান্ত পাড়ি দিতে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। সব দেশেই আগে থেকেই বাংলাদেশি ওই দালালের প্রতিনিধি সেট করা ছিল। কখনও কখনও দালাল আসতে দেরি করলে তারা নিজেরাই বাংলাদেশি দালালকে ফোন করতেন। তখন কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি তার প্রতিনিধি পাঠাতেন। শাহাদাত বলেন, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া এবং পুলিশের হাতে আটক হওয়া সবকিছুই পরিকল্পনা মাফিকই হয়েছে। তবে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে পরবর্তীতে। তারা ভেবেছিলেন, আইনি লড়াইয়ে সেদেশে থাকার একটা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন তাদের সেই আশাভঙ্গ করেছে। অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কঠোর হওয়ায় ৭-৮ মাসেই তাকে দেশে ফিরতে হয়েছে।
একই চক্করে পড়া ভাগ্যবিড়ম্বিত আরেক যুবক রতন মণ্ডল। তিনিও নোয়াখালীর বাসিন্দা। বিগত ৪-৫ বছর ধরে রতন দক্ষিণ আফ্রিকাতে ছিলেন। সেখানে ব্যবসা করতেন। ভালোভাবেই চলছিল তার ব্যবসা। এরপর পড়েন দালালের খপ্পরে। তাকে আমেরিকার উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখানো হয়। প্রলোভনে পড়ে তিনি ঘানার এক দালালের হাতে তুলে দেন ৪০ লাখ টাকা। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিমানে করে প্রথমে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাজিল। এরপর শাহাদাতের মতোই একই রুটে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। রতন বলেন, প্রত্যেক দেশে যাওয়ার পর দালাল সিন্ডিকেট তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ওই দেশ থাকা দালালের ছবিসহ কন্ট্রাক্ট নাম্বার পাঠাতো। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন দেশ ঘুরে দীর্ঘ সময় পর মেক্সিকান সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করি। তিনি বলেন, প্রত্যেক দেশের দালালের আলাদা টাকা দিতে হয়েছে। এজন্য সবমিলে তার প্রায় ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।