
16/06/2020
গল্প: ⚔༺L̶I̶F̶E̶ ̶I̶S̶ ̶S̶T̶R̶A̶N̶G̶E̶ ̶༻⚔
লেখক: STORY PEDIA
পার্ট: ১ম
ছেলেটির নাম মো: ইয়াসিন হোসাইন রিজু। বয়স ১৯ চলছে। ছেলেটি ছোট থেকেই বেশ মেধাবী কিন্তু তার পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে ১০ বছর বয়স থেকেই পরিবারের হাল ধরতে হয় তাকে। কারন তার বাবার স্ট্রোকের পর থেকে সেভাবে কাজ করতে পারে না আর বাসায় উপার্জনের ব্যাক্তি তার বাবায় এবং তার একটি ছোট বোনও রয়েছে তার বাবার একার উপার্জনে হয়ে উঠছিলো না। সে পড়ালেখার পাশাপাশি কাজ করতে শুরু করে তবে বেশিদিন সেভাবে যায়নি। কয়েক মাস পরেই সে পড়াশোনা ছেড়ে পুরোপুরি কাজে মন দেয়। সে কাজের ফাকে তার মালিকের কাছে মাঝে মাঝেই তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ জানাতো এবং সে যেই কাজটাই করতো বেশ মেধার সাথেই করতো। সে যেখানে কাজ করতো সেখানকার মালিক তার কাজের মেধা এবং পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে পরামর্শ দেয় যেনো সে নাইট স্কুলে ভর্তি হয় কেননা তার দিনে পড়াশোনা করা অসম্ভব। সে একটি এনজিও চালিত স্কুলে ভর্তি হয় এবং সাড়াদিন কাজ করে রাত ১০ পর্যন্ত নাইট ক্লাস করতো। আর এখন তার S.S.C এর রেজাল্ট দিয়েছে সে গোল্ডেন A+ এ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো এখনই কেননা সে কলেজে ভর্তি হলে কাজ করতে পারবে না। তার সাথে আরেকটি সমস্যা হলো কলেজে পড়াশোনা করার মতো সামর্থ্য তার ছিলো না। সে এনজিওর এক ভাইয়ার সাথে বিষয়টা আলোচনা করে। সে ভাইয়া তাকে বলে সে এই বিষয়ে কিছু করতে পারবে না কারণ তাদের এনজিও শুধু মাত্র স্কুল পর্যন্তই। তবে সে তাদের উপরের ভাইয়াদের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বলবে বলে। রিজু এক প্রকার আশা ছেড়েই দিয়েছে হয়তো তার আর পড়াশোনা হবে না। কয়েক সপ্তাহ পরে এনজিওর সেই ভাইয়া তাকে ডেকে পাঠায়। রিজু সেখানে যায় এবং যেয়ে দেখে এনজিওর প্রধানদের মধ্যে একজন শাওন ভাইয়া বসে আছে। শাওন ভাইয়া একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং তার নিজেস্ব একটি কোম্পানি আছে সে সেখানে বিভিন্ন বিজনেস বিষয়ক সফটওয়্যার তৈরি করে থাকে। শাওন ভাইয়া তাকে ডাকে,
শাওন ভাইয়া: কেমন আছো রিজু?
রিজু: আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া। আপনি কেমন আছে?
শাওন ভাইয়া: আলহামদুলিল্লাহ। তোমার সমস্যা গুলোর বিষয়ে পুরোপুরি শুনলাম। তা তুমি ইংরেজি কেমন পারো?
রিজু: আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া যথেষ্ট পারি।
শাওন ভাইয়া : তুমি কি কখনও কম্পিউটারে লেখালেখি করেছ?
রিজু: জ্বি ভাইয়া। আমাদের স্কুলের যখন কোনো প্রোগ্রাম থাকতো তখন সাধারণত পোস্টারে বিভিন্ন লেখালেখি প্রিন্ট গুলো আমিই করে থাকতাম।
শাওন ভাইয়া: আচ্ছা খুবই ভালো। শোনো তাহলে আগামীকাল থেকে তুমি যেখানে করো সেখানে আর যাওয়ার দরকার নেই। তুমি আমার অফিসে চলে আসো আমি দেখছি কি করা যায়। কি পারবে তো?
রিজু: নিশ্চয়ই। ধন্যবাদ ভাইয়া!
শাওন ভাইয়া: এই নাও আমার কার্ড এই ঠিকানায় চলে এসো কাল বেলা ১১ টার দিকে।
রিজু: ইনশাআল্লাহ ভাইয়া।
পরের দিন সকাল ১১ টায় রিজু হাজির হয় শাওন ভাইয়ার অফিসে। ভেতরে ঢুকে দেখে একটা পুরো ফ্লোর নিয়ে তার অফিস ১০-১২ জন কর্মচারী প্রত্যেকে কম্পিউটারে কাজে ব্যাস্ত। সে আস্তে করে পিওন এর কাছে গিয়ে বলে শাওন ভাইয়া আমাকে আসতে বলেছিলো আমার নাম রিজু। পিওন তাকে বসতে বলে শাওন ভাইয়ার কেবিনে চলে যায়। একটু পর বেড়িয়ে এসে ভেতরে যেতে বলে। ভেতরে গিয়ে দেখে শাওন ভাইয়া শাওন ভাইয়া ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে দেখে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ব্যাস্ত। শাওন ভাইয়া তাকে বসতে বলে। প্রায় ২০ মিনিট চুপ করে বসে থাকে শুধু কিবোর্ডের টিপ টিপ আওয়াজ ছাড়া কিছুই শোনা যাচ্ছে এতো নিরব কেবিন। কিছুক্ষণ পর শাওন ভাইয়া নীরাবতা কাটিয়ে উঠে বলে,
শাওন ভাইয়া: তোমাকে এখানে যে জন্য ডেকেছি। তুমি আমার এসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
রিজু: ভাইয়া আমি কিভাবে? আমিতো মাত্র S.S.C দিলাম। আমি কিভাবে করবো? 😥
শাওন ভাইয়া : ভয় পাবার কিছুই নেই। বাইরে অতো জন কেন বসেছে আছে বুঝছো না? তোমার তেমন কোনোই কাজ নেই। তুমি আমার মেইল কন্ট্রোল করবে। কে কি মেইল দিলো টাইম মতো চেক করবে তাদের সঠিক ভাবে মেইলের রিপ্লাই দেবে। আমার কোথায় কখন কি কাজ তা নোট করবে কখন কার সাথে মিটিং সেই তালিকা তৈরি করবে এবং আমার ছোট খাটো কাজে হেল্প করবে ব্যাস এইটুকুই তেমন কিছু না। আর তোমার পারিশ্রমিক নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। তোমার পরিবারের দায়িত্ব আমার! মাসের শেষে সময় মতো সব পৌছে যাবে আর প্রতি মাসে তোমার কাজের উপর ভিত্তি করে কিছু পকেট মানি দেওয়া হবে। তুমি আমার কাজের লোক না তুমি আমার ছোট ভাই হিসেবে থাকবে এখানে। মনে থাকবে তো?
রিজু ভাষা হারিয়ে কান্না করে ফেলেছে। শাওন ভাইয়া এগিয়ে এসে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলে,
শাওন ভাইয়া: এই পাগল ছেলে এইভাবে কান্না করলে চলে এগুলো তো কিছুই না দেখবে তুমি যদি তোমার মেধা সঠিক ভাবে ব্যাবহার করো তবে ইনশাআল্লাহ বড় কিছু করতে পারবে। আর তোমার পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না কিছু দিনের ভেতরেই সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। 😊
রিজু: ভাইয়া আপনার এই ঋণ আমার শরীরের সমস্ত রক্ত দিয়েও পরিশোধ করতে পারবো না। (কান্না জড়িত কণ্ঠে)
শাওন ভাইয়া: এই এইসব আর যেনো কখনও মুখে আনবে না। নইলে আমি কিন্তু রেগে যাবো।
পরের দিন সকাল ৮ টা থেকে রিজু শাওন ভাইয়ার অফিসে চলে আসে এবং সবার কাছে থেকে শেখা শুরু করে কার মেইলের কি ধরনের রিপ্লাই দিতে হবে। বাকী যত কাজ আছে সব শিখতে শুরু করে। প্রায় ২ সপ্তাহের ভেতর সে সব কাজ পুরোপুরি শিখে ফেলে। এবং সে শহরের ভালো একটা কলেজে চান্স পেয়ে যায়। যেহেতু সে এখন কলেজে পড়া শুরু করেছে সেহেতু তাকে এখন পড়াশোনাতেও মন দেওয়া লাগবে এইজন্য শাওন ভাইয়া তাকে দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮ টার ভেতরে সমস্ত কাজ শেষ করতে বলে। এইভাবে সে কলেজেও যেতে পারে আবার অফিসের কাজও করতে পারে।
এইভাবে সময় গড়িয়ে চলল.......
প্রায় দুই বছর পর এখন তার HSC পরিক্ষা শেষ হয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা। সময়টা ঈদের ভেতরে হঠাৎ শাওন ভাইয়া রিজুকে ডেকে পাঠায় জরুরি কাজের জন্য। রিজু অফিসে যেয়ে দেখে ভাইয়া খুবই চিন্তিত। রিজু শাওন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে,
রিজু: ভাইয়া কোন সমস্যা হয়েছে কি?
শাওন ভাইয়া: হ্যা রে রিজু অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে L ক্যাটাগরির প্রজেক্টটা কালকের ভেতরেই দেওয়া লাগবে।
রিজু: কেনো ভাইয়া এইটার ডেলিভারি তো এখনও প্রায় ১৫ দিন পরে।
শাওন ভাইয়া: হ্যা ছিলো কিন্তু ক্লাইন্ট এখন জোর করছে তাদের ইমার্জেন্সি লাগবে কালকেএ ভেতরেই দিতে হবে আর আমার পরিচিত ক্লাইন্ট তাই অনেক চেষ্টা করেও পারলাম না কালকের ভেতরেই ডেলিভারি দিতে হবে।
রিজু: আচ্ছা ভাইয়া শান্ত হোন। এই প্রজেক্টের কাজ বেশি বাকি নেই। আজ রাতের ভেতরেই শেষ করা যাবে সমস্যা নেই।
শাওন ভাইয়া: তুই কি পাগল হয়েছিস আমি একা কিভাবে শেষ করবো এতো কাজ!
রিজু: আপনাকে একা কে করতে বলছে আমি আছি তো এই প্রজেক্টের পুরোটা আমার জানা আছে আপনি ভরসা রাখতে পারেন আমার উপর তারিখ ভাইয়ার থেকে দেখে দেখে শিখেছি কিভাবে করতে হয়।
শাওন ভাইয়া যেনো আকাশ থেকে পরলো ছেলে বলে কি সে নাকি দেখে দেখে শিখেছে তাও আবার সফটওয়্যার বানানো! হাসবে না কাদবে বুঝে উঠতে পারছে না।
শাওন ভাইয়া: এই তুই কি কিছু খাওয়া শুরু করেছিস নাকি কি আবল তাবল বলিস দেখে তো তোর চোখ দেখি।
রিজু: ভাইয়া কি বলেন এইসব! আমি আস্থা রাখতে পারেন আমি পারবো।
শাওন ভাইয়া: আচ্ছা তাহলে তুই 15 কোডের ফাইলটা আগে কমপ্লিট করে নিয়ে আয়।
রিজু: এইটা কোনো ব্যাপার হলো আমাকে ৫ মিনিট সময় দেন আনছি।
শাওন ভাইয়া তার পেছনে গিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখে সে প্রতিধাপ নিপুনভাবে করছে। ভূল হবার কোনো চান্স নেই! ঠিক ৫ মিনিটের ভেতরে ফাইল কমপ্লিট! শাওন ভাইয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রিজুর দিকে। যেহেতু অফিসে কেউ নেই তাই আর কোনো পথ না পেয়ে রিজু কেই কাজটা করতে দেয়। সাড়ারাত ধরে রিজু আর শাওন ভাইয়া কাজ করে। সকাল ৯ টা নাগাদ কাজ শেষ। শাওন ভাইয়া শেষ বারের মতো প্রতিটা কোডের ফাইল মিলিয়ে চমকে উঠে। কি করে সমভব শুধু মাত্র দেখে দেখে কিভাবে একটা মানুষ এতো কিছু শিখতে পারে তাও আবার এতো কম সময়ে..............
চলবে.........
[ভূল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। পুরো গল্পটি পরার জন্য ধন্যবাদ।❤ নতুন গল্প প্রথমের দিকে যদি ভালো না লাগে তবে পরের পার্ট গুলোও পরে দেখুন ইনশাআল্লাহ ভালো লাগবে। একটি মেধা, পরিশ্রম, জীবনে আশা আচমকা উথাল-পাতালের ঘটনা নিয়ে লেখা গল্প।]