19/08/2025
তোমাদের প্রিয় বই ‘ভূতের বন্ধু টুত’
আব্দুস সামাদ আজিজ
বই : ভূতের বন্ধু টুত
লেখক: কাদের বাবু
ধরন : শিশুতোষ গল্প
প্রচ্ছদ : সোহাগ পারভেজ
অলংকরণ : মোমিন উদ্দীন খালেদ
প্রকাশনী : সাহস পাবলিকেশন্স
দাম : ১৫০ টাকা মাত্র
ছোট্ট বন্ধুরা! তোমরা তো গল্পের বই পড়তে ভালোবাসো। আজ একটি চমৎকার বইয়ের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেবো। মজার মজার গল্প রয়েছে বইটিতে। লিখেছেন তোমাদের প্রিয় শিশুসাহিত্যিক ও ছড়াকার কাদের বাবু। ওহ্, বইয়ের নামই তো বলা হয়নি। হ্যাঁ, বলছি নাম হলো ‘ভূতের বন্ধু টুত’। কী সুন্দর নাম! তাই না? অবশ্যই তোমাদের পছন্দ হয়েছে। বইয়ের ভেতরে থাকা শিশুতোষ গল্পগুলোর নামও খুব মিষ্টি মিষ্টি ‘ভূতের বন্ধু টুত’, ‘বিড়াল ছানা’, ‘ভূতং পুতং’ ও ‘আনন্দের হইচই’। কী...পড়তে ইচ্ছে করছে? করবেই তো। মচমচে, ঝরঝরে ও কোমল গদ্যে লেখা শিক্ষণীয় গল্পগুলো তোমাদের মনে দাগ কাটবে, চারপাশের জগৎ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখাবে, চিন্তাশীল করে তুলবে, নতুন কিছু শেখার জন্য উদ্দীপনা ও আগ্রহ জাগাবে মনে। পাশাপাশি তোমাদের চোখ জুড়াবে গল্প নিয়ে পাতায় পাতায় আঁকা রঙিন রঙিন ছবি। এই ছবিগুলো তোমাদের ভাবনার জগতে রংয়ের পরিচয় ঘটাবে। তুমি হবে প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ।
লেখক কাদের বাবু জানেন, তোমাদের মনোজগৎ বিকাশের জন্য চাই অবারিত আকাশ। মুক্ত বিহঙ্গের মতো আকাশে ওড়ার স্বপ্নসাধই পারে প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে। তাই তো তিনি সবসময় তোমাদের নিয়েই ভাবেন। সেই ভাবনা থেকেই লিখেছেন দারুণ দারুণ ছড়া ও গল্পের বই। সেগুলো থেকে ‘মেঘ ছুটিতে লাটিম ফোটে’ ‘তিন বন্ধুর ছড়া’ ‘পরীবাগের পরী’ ‘ছোটদের চিরকালীন মজার মজার ছড়া’ উল্লেখযোগ্য। নিয়মিত সম্পাদনা করছেন পত্রিকা ও ম্যাগাজিন।
শিশুতোষ গল্পের বই ‘ভূতের বন্ধু টুত’ এর প্রথম গল্পই ভূতকে নিয়ে লেখা। তোমরা তো প্রতিদিন ঘুমের আগে ভূতের গল্প শোনো দাদা-দাদি, মা-বাবার মুখে। আচ্ছা, তোমরা কি ‘ভূতের বন্ধু টুত’কে চেনো? কী, অবাক হলে! ভূতেরও আবার বন্ধু থাকে বুঝি? হ্যাঁ, থাকে তো। তাকে কেউ কেউ হয়তো চিনে থাকবে। যারা চেনো না, তারাও চিনে নিও তোমাদের বন্ধু অর্পির মতো করে। অর্পিও যখন তার আবির ভাইয়ার কাছে প্রথম শুনেছিল ভূতেরও বন্ধু আছে, সেই বন্ধুর নাম টুত, তখন খুব অবাক হয়েছিল। খানিক পরেই যখন জানল ভূত তার বন্ধুর সাথে খেলাধুলা করে, ঘুরে বেড়ায় আর দুষ্ট মানুষকে ভয় দেখায়, আর টুত হলো ভূতের মতোই এক অমানব জাতি, তাদের খালি চোখে দেখা যায় না, এই টুতও ভয়ানক দুষ্টু তখন ভাইয়াকে প্রশ্ন করল, ‘তুমি তাদের কথা জানলে কেমন করে?’ উত্তরে ভাইয়া বললেন, ‘আমি অনেক বই পড়ি। আমি জানব না তো তুই জানবি? তুই তো পিচ্চি।’ হ্যাঁ, বই পড়লে অনেক কিছু জানা যায়। তাই বলে অর্পিকে পিচ্চি বলবে? তার মেজাজ গেলো গরম হয়ে! দৌড়ে গেলো আম্মুর কাছে। তারপর কী হয়েছিল? টুত আসলে কে? কী করলে অর্পি টুতের সাথে খেলতে পারবে?
বিড়ালছানা। বইয়ের দ্বিতীয় গল্পের নাম। গল্পটিতে লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন মাতৃপ্রেমের কথা। মাতৃপ্রেমে পিছিয়ে নেই বিড়ালও। সেই বিড়ালের তুলতুলে ছানা যে তোমাদের মতো শিশুদের খুব প্রিয় তা-ও জানা যাবে গল্পটি পড়লে। গল্পের শুরুতেই রয়েছে চমক ও রহস্য, যা তোমাদের কপালে চিন্তা ভাঁজ ফেলবেই! একজন লেখকের সার্থকতা তো এখানেই। চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল ছোট্টমোট্ট মেয়ে মনির কপালেও। যখন সে দেখল ঘরে বিড়ালের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছে। ঘটনা উদঘাটনের জন্য মনি ডিটেকটিভের মতো আচরণ করে দেখে, শাদা রঙের একটা বিড়াল ঘন ঘন তার ঘরে আসা-যাওয়া করে এক ঘণ্টা পর পর। খাটের নিচে গিয়ে দশ পনেরো মিনিট অবস্থান করে আবার চলে যায়। খাটের নিচে বিড়াল কী করে? শীতের দিনে মনির দরজা লাগানো ঘরে বিড়াল কেমন করে ঢুকে?
মনিকে তার মা বিড়াল সম্পর্কে কী কী বলেছিল? স্কুল থেকে ফিরে তার মন খারাপ হলো কেন? কেনই বা সে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিল? তার রাগ পরে কে ভাঙিয়েছিল?
পরের গল্পটা সেই ভূতকেই নিয়ে। তবে এই ভূতের নাম ভূতো। ভূতো থেকে ভূতং। ও ভূতের সন্তান। কী বন্ধুরা, ভয়ে গা ছমছম করছে? আহা, পড়ে তো দেখবে! ‘ভূতং পুতং’ নামের গল্পটার ছোট্ট এই ভূতং নিয়মিত স্কুলে যায়, ক্লাসের পড়াশোনা করে আর ভূত-সংগীতের তালে তালে ডিগবাজি দেয় অর্থাৎ পিটি করে। ক্লাসের টিচাররা নাচতে নাচতে তাদের ভূতাংক করান, ভূতংলা পড়ান। সব ছাত্র-ছাত্রী মনোযোগ দিয়ে পড়ে। তারা মানুষ জাতিকে হারানোর জন্য কঠিন সাধনা করে। কী ভয়ানক! কিন্তু দুঃখজনক হলো এই ভূতংয়ের কোনো বন্ধু নেই। থাকবেই বা কোত্থেকে, তাদের রাজ্যে যে কোনো ভূতো কিংবা ভূতি নেই। আচ্ছা, সে কি বন্ধু পেয়েছিল? যদি পেয়ে থাকে তাহলে সে কেমন— খুব বেশি চঞ্চল, পটপটি, চটপটি কি?
বইয়ের সর্বশেষ গল্প ‘আনন্দের হইচই’। আনন্দ তোমাদের মতোই শিশু। যার মনের কোণে উঁকি দেয় নানারকম বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন। জানার আগ্রহে প্রশ্নগুলো সে করে তার বাবা-মা ও মামাকে। আদরের করা দারুণ দারুণ প্রশ্নেই বুঝা যায় এযুগের ছেলেমেয়েরা কত অ্যাডভান্স। আশ্চর্য না হয়ে পারেন না বড়রা। মাঝেমধ্যে এমন আজব প্রশ্ন করে বসে আনন্দ যে, থতমত খেতে হয়! এই যেমন— ‘ডিম আগে না মুরগি আগে?’ কিছু প্রশ্ন শুনে তো না হেসে পারা যায় না— ‘ধানগাছ থেকে কী কাঠ হয়?’ আনন্দেরই বা কী দোষ, সে তো আর গ্রামে যায়নি কখনো। পরে কি আনন্দ গ্রামে গিয়েছিল? তার করা বুদ্ধিদীপ্ত সেই প্রশ্নগুলো কী ছিল? কী উত্তর দিয়েছিলেন তার বাবা-মা ও মামা?
ছোট্ট বন্ধুরা! দেখেছ কত্ত মজার মজার গল্প রয়েছে বইটিতে। উপরোক্ত সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে বইটি অবশ্যই তোমাদের পড়তে হবে। লেখকের শব্দের প্রয়োগ, বাক্যের ব্যবহার ও গল্পের গাঁথুনি মুগ্ধ করার মতো! বইয়ের বাইন্ডিংও খুব মজবুত। তাহলে আর দেরি কেন, চট জলদি সংগ্রহ করে ঝটপট পড়ে ফেলো প্রিয় লেখকের ‘ভূতের বন্ধু টুত’ বইটি।
আব্দুস সামাদ আজিজ : শিশুাসাহিত্যিক