27/02/2025
লাভ ক্ষতির চালচিত্রে লেগে থাকে রক্তের দাগ
চালচিত্র : The Frame Fatale
পরিচালনা - প্রতীম ডি গুপ্ত
অভিনয় - টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, রাইমা সেন, শান্তনু মহেশ্বরী, জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, তনিকা বসু, স্বস্তিকা দত্ত, ইন্দ্রজিৎ বোস, ব্রাত্য বসু, প্রিয়া ব্যানার্জী, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।
OTT - হইচই
MY RATING - 4/5
জাস্ট ভাবছিলাম, কীকরে শুরু করব। সম্প্রতি হইচইয়ে রিলিজ করল গতবছরের সবথেকে ভাল সিনেমাগুলোর মধ্যে একটা, চালচিত্র। একই নামের আরো একটি সিনেমা বাংলায় থাকলেও দুটোর কনসেপ্ট আলাদা।
কলকাতা শহরে ঘটে যাচ্ছে সিরিয়াল কি*লিং। প্রত্যেক খু*নের প্যাটার্ন এক। মে*রে ভিক্টিমের বডি বধূবেশে চালচিত্রে গেঁথে দিচ্ছে খু*নী। কলকাতা পুলিশ এই নিয়ে তিতিবিরক্ত। ইন্সপেক্টর কণিষ্ক চ্যাটার্জী (টোটা) ও তাঁর দল সবরকম চেষ্টা করে চলেছে রহস্য উন্মোচন করার। এই ঘটনা মিলে যাচ্ছে ১১ বছর আগের একই ঘটনার সঙ্গে। তফাৎ একটাই। সেখানে মা*রার পর দেবী বেশে ঝোলানো হত এবং এখানে দয়িতা (বধূ)রূপে এবং প্রত্যেক ভিক্টিমেরই সাম্প্রতিক বিয়ে ভেঙেছে।
পুলিশ কি এই রহস্যের কিনারা করতে পারবে ? কে ঘটাচ্ছে এই ঘটনাগুলো ?
কীই বা তার কারণ? ১১ বছর আগের ধাঁচই কেন নিতে হল কি*লারকে? এত প্রশ্নের উত্তর পেতে হইচইতে দেখতে হবে এই ফিল্ম।
এই ফিল্মে প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের নিজস্ব জীবনের অন্তর্দ্বন্দ্ব, আত্মাভিমান, ব্যক্তিগত টেনশন এই কেসের সঙ্গে ভালভাবে ব্লেন্ড করেছেন পরিচালক। সে পতিতাপল্লীতে ভালবাসা খুঁজতে যাওয়া বিশ্বরুপই (ইন্দ্রজিৎ) হোক বা সদ্য জয়েন করা অফিসার রীতেশ কুমারকে (শান্তনু) নিয়ে সিনিয়রদের খিল্লি এবং প্রেমিকার মায়ের টেনশন। স্পেশাল চাইল্ড পুতুলকে (তনিকা) নিয়ে বাবা নাসিরের (অনির্বাণ) অসহায়তা বা কণিষ্ক ও তার স্ত্রী মিলির (রাইমা) মনোমালিন্য, এমন সমান গতিতে এগিয়ে চলেছে, কখনোই তা ছবির গতি শ্লথ করেনি।
সিনেমার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ BGM & Music। সানাইয়ের আওয়াজ, একটি বিশেষ দৃশ্যে বেদনাদায়ক টিউন ও শেষে রবীন্দ্র সঙ্গীত দর্শককে মুগ্ধ করতে বাধ্য।
থ্রিলারে তিনটে জিনিস মূল। Who Done It, Why Done It, How Done It. এই গল্পটা Who Done It format এ বানানো হয়নি, হয়েছে Why Done It format এ।
অভিনয় - এই ছবির কাস্ট খুব প্রমিসিং, টোটা খুব ভাল, বিশেষ কিছু দৃশ্যে তাঁর অভিনয় খুব ভাল লাগে, শান্তনু বেশ ভাল, তাঁর বাংলা উচ্চারণ ঠিকঠাক, তনিকা বসু এককথায় অসাধারণ! স্পেশালি এবল্ড চরিত্রে অভিনয় করা এমনিতেই চাপের, কিন্তু তনিকা অভিনয়ে সসম্মানে উতরে গিয়েছেন। একটি বিশেষ দৃশ্যে তাঁকে দেখে আপনার চোখে জল আসবেই। And অপূর্ব ! তাঁর এন্ট্রি অনেক পরে, কিন্তু যখন তিনি এলেন, তারপর থেকেই ছবিটা কোথাও একটা গিয়ে অপূর্বের সিনেমা হয়ে গেল। তাঁর হাসি, অভিনয় এবং ডায়লগ ডেলিভারি দর্শককে মাত করার জন্য এনাফ।
স্বল্প সময়ে রাইমা সেন ঠিকঠাক, ব্রাত্য বসু বেশ ভাল। অনির্বাণ চক্রবর্তী খুব ভাল। বাবা হিসেবে তাঁর অসহায়তা, মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার সিনগুলো ভাল করে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। স্বল্প সময়ে দেবেশ বাবুকে দেখে ভাল্লাগে।
ছবির মেকিং বেশ ভাল। বেশ কিছু দৃশ্য অতীব যত্ন করে তৈরি করেছেন পরিচালক।
নেগেটিভ: যেহেতু এটা Why Done It format এ বানানো, তাই গল্পের শুরুতে যদি এই সাবপ্লটটা দেখানো হত, তাহলে হয়ত ক্লাইম্যাক্সের ইমপ্যাক্ট আরো গভীর হত বলে আমার মনে হয়। এছাড়াও শেষে যেন বড্ড তাড়াহুড়ো করে ফেললেন পরিচালক। শেষ দশ মিনিট এত জলদি ঘটে, কোথাও একটা গিয়ে বাস্তবের সঙ্গে মেলাতে problem হয় এবং মনে হয় বেশ কিছু জিনিস skip করে করে চলে যাওয়া হল।
Overall, চালচিত্র : The Frame Fatale একটি বেশ ভাল সিনেমা। দেখুন, সচরাচর তো টলিউডে "ভাল থ্রিলার" কেউ বানায় না, তাই সেরকম ভাল কনটেন্টের অভাব প্রকট। সেদিক থেকে প্রতীমবাবুকে ধন্যবাদ, উনি অন্তত out of the box ভেবেছেন।
© সোমনাথ ব্যানার্জী